বাংলাদেশের সঙ্গে বিদেশি প্রত্যর্পণ চুক্তি না হলে অসম থেকে ‘বাংলাদেশিদের’ ফেরত পাঠানো যে অসম্ভব সে বিষয়ে একমত কংগ্রেস ও অগপ। আজ বিধানসভায় বিষয়টি নিয়ে দীর্ঘ আলোচনার অগপ-র বক্তব্য, স্থল-সীমান্ত চুক্তি অপেক্ষা এই চুক্তির উপরে কেন্দ্রের বেশি জোর দেওয়া উচিত ছিল। মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈও বলেন, “বাংলাদেশ যতক্ষণ না সেখানকার নাগরিকদের ফেরত নিতে রাজি হচ্ছে, ততক্ষণ রাজ্য থেকে বিদেশি বহিষ্কার সম্ভব নয়।”
আজ বিধানসভায় অসম-বাংলাদেশ সীমান্তে বেড়া দেওয়া ও বিদেশি নাগরিক বহিষ্কারের বিষয়টি নিয়ে অগপ প্রশ্ন তোলে। রাজ্য সরকার তাদের উত্তরে জানায়, অসম ও বাংলাদেশের মধ্যে ২৬৭ কিলোমিটার সীমান্ত রয়েছে। এর মধ্যে ১৭৬ কিলোমিটার সীমান্ত সম্পূর্ণ বন্ধ করা গিয়েছে। সাড়ে তিন কিলোমিটার স্থলভাগ বিতর্কিত এলাকার মধ্যে পড়েছে। সীমান্তের ২১৩.৭৪ কিলোমিটার এলাকায় ফ্লাড-লাইট বসানো হচ্ছে। এই বাবদ কেন্দ্রীয় বরাদ্দের ৬৩ কোটি ৯৫ লক্ষ টাকার মধ্যে ৫৮ কোটি ৩৪ লক্ষ টাকা রাজ্য হাতে পেয়েছে। তবে জলভাগে ৪৪ কিলোমিটার এখনও উন্মুক্ত। তা বন্ধ করার জন্য একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গড়া হয়েছিল। তাদের রিপোর্ট কেন্দ্রের অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়েছে।
বিদেশি বহিষ্কার প্রসঙ্গে রাজ্য সরকারের দাখিল করা রিপোর্ট অনুযায়ী, ১৯৮৫ সাল থেকে চলতি বছর অবধি, মোট ৭১ হাজার ২০১ জনকে বিদেশি হিসেবে শনাক্ত করা হয়েছে। এদের মধ্যে ৩৮ হাজার ১৮৬ জন ১৯৭১ সালের পরে এ দেশে এসেছেন। সেই কারণেই বহিষ্কারের যোগ্য। কিন্তু বহিষ্কারের যোগ্য হিসেবে চিহ্নিত হওয়ার পরেও তিন দশকে মাত্র ২৪৪৮ জনকে ফেরত পাঠানো গিয়েছে বলে রাজ্য সরকার জানায়। এ ছাড়া, ডিটেনশন সেন্টারে রয়েছেন ৬৮ জন। এর আগে, অন্য একটি রিপোর্টে রাজ্য সরকার হিসেব দিয়েছিল, প্রত্যেক বাংলাদেশিকে চিহ্নিত করা ফেরত পাঠাতে খরচ হয়েছে মাথাপিছু গড়ে ১ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা!
অগপ প্রশ্ন তোলে, বাকি ৩৫ হাজার ৬৭০ জন শনাক্ত হওয়া বাংলাদেশি কোথায় গেল? রাজ্য সরকারের তরফে মন্ত্রী ভূমিধর বর্মন জানান, তাঁরা হয় পলাতক, না হলে মৃত। অগপ বিধায়ক ফণীভূষণ চৌধুরী, বিজেপির যাদবচন্দ্র ডেকা বলেন, বিদেশি শনাক্ত হওয়ার পরেই নিয়মানুযায়ী বাংলদেশিদের ফেরত পাঠানো বা গ্রেফতার করে ডিটেনশন সেন্টারে রাখার কথা। তা কেন করা হয়নি? কেন পলাতক বাংলাদেশীদের খোঁজা হয়নি? কেন তাদের নামে এফআইআর নেই? বর্মন এর কোনও সঠিক জবাব দিতে পারেননি।
বাংলাদেশে বিদেশিদের ফেরত পাঠানোর সংখ্যা কম হওয়ার যুক্তিতে তিনি বলেন, “বাংলাদেশের সঙ্গে কোনও প্রত্যর্পণ চুক্তি না হওয়ায় ওরা এখান থেকে পাঠানো ব্যক্তিদের নিজেদের নাগরিক বলে স্বীকার করে না। আমরা এখান থেকে যাদের সীমান্তপার করিয়ে দিই, তারা ফের ফিরে আসে। ওপারের পুলিশ বা প্রশাসন হস্তান্তরে আসতেই চায় না।” প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা অগপ সভাপতি প্রফুল্ল মহন্তও সমস্যাটি মেনে নিয়ে বলেন, “আমার আমলেও একই সমস্যার সম্মুখীন হয়েছি। আদালত যতই চাপ দিক, বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক চুক্তি না হওয়া অবধি ‘পুশ ব্যাক’ পদ্ধতি আদতে কার্যকর হবে না।” তাঁর অভিযোগ, কেন্দ্র অসমের জমি বাংলাদেশকে দেওয়া নিয়ে যতটা আগ্রহী, বিদেশী প্রত্যর্পণ চুক্তি নিয়ে সেই আগ্রহ বা উদ্যোগ কেন্দ্রের নেই। মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈও প্রত্যর্পণ চুক্তির অভাব স্বীকার করে বলেন,
“আমরা বিদেশিদের তাড়ালেও বাংলাদেশ তাদের ফেরত নেয় না। কখনওই ওরা অসম থেকে শনাক্ত হওয়া বাংলাদেশিদের বাংলাদেশের নাগরিক হিসাবে মানেনি। চুক্তি না হলে রাজ্য থেকে বিদেশি বিতাড়ন সম্ভব হচ্ছে না।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy