Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

নৌকো বাঁচাতে মোদীর কাছে জিতনরাম

যুদ্ধ ঘোষণা হয়ে গিয়েছিল গত কালই। আজ সেই যুদ্ধে বিজেপির সাহায্য পেতে দিল্লিতে নরেন্দ্র মোদীর কাছে দরবার করলেন জিতনরাম মাঁজি। গত কালই জেডিইউ পরিষদীয় নেতার পদ থেকে জিতনরামকে সরিয়ে দিয়েছিলেন নীতীশ কুমার। নিজে দলনেতা হয়ে ফের মুখ্যমন্ত্রীর গদিতে ফেরার প্রক্রিয়াও শুরু করেছেন তিনি। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দেননি জিতনরাম। সেই পদাধিকার বলেই নীতি আয়োগের বৈঠকে যোগ দিতে দিল্লিতে এসেছেন তিনি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি ও পটনা শেষ আপডেট: ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০২:৪১
Share: Save:

যুদ্ধ ঘোষণা হয়ে গিয়েছিল গত কালই। আজ সেই যুদ্ধে বিজেপির সাহায্য পেতে দিল্লিতে নরেন্দ্র মোদীর কাছে দরবার করলেন জিতনরাম মাঁজি।

গত কালই জেডিইউ পরিষদীয় নেতার পদ থেকে জিতনরামকে সরিয়ে দিয়েছিলেন নীতীশ কুমার। নিজে দলনেতা হয়ে ফের মুখ্যমন্ত্রীর গদিতে ফেরার প্রক্রিয়াও শুরু করেছেন তিনি। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দেননি জিতনরাম। সেই পদাধিকার বলেই নীতি আয়োগের বৈঠকে যোগ দিতে দিল্লিতে এসেছেন তিনি।

আজ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বিহার পরিস্থিতি নিয়ে বৈঠক করেন জিতনরাম। বিজেপি সূত্রের খবর, নীতীশ-বিরোধী বিধায়কদের ভাঙিয়ে আনা সম্ভব কিনা তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে বিজেপির শীর্ষ স্তরেও। মোদীর সঙ্গে বৈঠক থেকে বেরিয়ে জিতনরাম দাবি করেন, “নীতীশ মিথ্যে কথা বলছেন। আমার পক্ষে ৯০ জন বিধায়ক রয়েছেন। ভোটাভুটি হলে আমি জিতব। কেননা মাঁজির নৌকা কখনও ডোবে না। প্রয়োজনে আমি বিজেপিরও সাহায্য নেব।”

বিহারে জেডিইউ সরকার ফেলে দিয়ে দ্রুত ভোটে যেতে উৎসাহী বিজেপির একটি অংশ। তাঁদের মতে, এই ধাক্কায় সরকার ফেলে বিহারে ভোট করলে ক্ষমতা দখল করতে পারবে বিজেপি। নীতীশ মুখ্যমন্ত্রীর গদিতে বসলেই ফের ঘর গুছিয়ে নিতে সক্রিয় হবেন।

কিন্তু সরকার ফেলার দাবি যে রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠী এত সহজে মেনে নেবেন না তা খুব ভাল করেই জানেন বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্ব। সংবিধান বিশেষজ্ঞ সুভাষ কাশ্যপ বলেন, “বিহারে নির্বাচন হতে এখনও প্রায় আট মাস বাকি। ফলে সময়ের আগে নির্বাচন ঘোষণা করে দেওয়াটা রাজ্যপালের পক্ষে কিছুটা হলেও সমস্যার। রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা অবনতির প্রশ্নে বিধানসভা ভেঙে দেওয়ার যুক্তি এ ক্ষেত্রে খাটছে না।” তা ছাড়া কোনও রাজ্যের বিধানসভা সময়ের আগে ভেঙে দিতে গেলে সংশ্লিষ্ট রাজ্যপালকে রাষ্ট্রপতির কাছ থেকে অনুমতি নিতে হয়। কিন্তু রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায় বরাবরই ‘টেক্সট বুক ম্যান।’ সাংবিধানিক গণ্ডির সীমারেখা পেরোনো পছন্দ নয় তাঁর। তাই নীতীশকে শক্তি পরীক্ষার সুযোগ না দিয়েই, রাইসিনা হিল্স থেকে বিধানসভা ভেঙে দেওয়ার জন্য কোনও নির্দেশ আসবে এমন দুরাশা করছেন না শীর্ষ বিজেপি নেতৃত্ব।

কিন্তু রাজ্যপাল বিধানসভা ভেঙে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিতেও পারেন বলে মনে করছেন জেডিইউ নেতৃত্ব। তাই প্রয়োজনে রাজ্যপালের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপতি ভবনের সামনে ধর্না-বিক্ষোভের কর্মসূচিও তৈরি রেখেছেন তাঁরা। যেমন নব্বইয়ের দশকে উত্তরপ্রদেশের তৎকালীন রাজ্যপাল রমেশ ভাণ্ডারীর অপসারণ চেয়ে বিক্ষোভ দেখান মুলায়ম সিংহ যাদবেরা।

তবে জেডিইউয়েরই অন্য একটি অংশের মতে, এই পরিস্থিতিতে আগ বাড়িয়ে বিহারের সরকার ভেঙে দেওয়ার মতো কোনও পদক্ষেপ রাষ্ট্রপতি করবেন না। কারণ, বিহারেই ২০০৫ সালে সব চেয়ে বেশি আসন পাওয়া সত্ত্বেও নীতীশ কুমারের দলকে সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণে না ডেকে বিতর্ক সৃষ্টি করেছিলেন তৎকালীন রাষ্ট্রপতি এ পি জে আব্দুল কালাম। এ যাত্রাতেও সংখ্যা নীতীশের পক্ষে বলেই মনে করা হচ্ছে। তাই রাজ্যপাল পরামর্শ চাইলে প্রণববাবু নিয়মমাফিক নীতীশকে শক্তি পরীক্ষার সুযোগ দেওয়ার সুপারিশ করতে পারেন বলেই রাষ্ট্রপতি ভবন সূত্রের খবর।

ভোটাভুটি হলে বিধানসভায় জেতার ব্যাপারে আশাবাদী নীতীশ শিবির। বিহার বিধানসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য ১২০ জনের সমর্থন প্রয়োজন। জেডিইউ পরিষদীয় দলের বৈঠকে ১১৫ জন বিধায়কের মধ্যে ৯৭ জন নীতীশকে সমর্থন জানিয়েছেন। পাশে রয়েছে আরজেডি, কংগ্রেস ও বাম দলগুলি মিলিয়ে মোট ৩৫ জনের সমর্থন।

সব মিলিয়ে প্রায় ১৩০ জন বিধায়কের সমর্থন পাবেন বলে মনে করছেন নীতীশ। আজ সকালে নীতীশের সমর্থনে ১৩০ জন বিধায়কের স্বাক্ষর নিয়ে রাজভবনে গিয়েছিলেন জেডিইউয়ের প্রদেশ সভাপতি বশিষ্ঠ নারায়ণ সিংহ। তাঁর সঙ্গে ছিলেন কংগ্রেস, আরজেডি, সিপিআই নেতারাও। বশিষ্ঠ নারায়ণ সিংহ বলেন, “নীতীশকে শাসক দলের নতুন নেতা হিসেবে বেছে নেওয়ার পরে জিতনরামকে ইস্তফা দিতে বলেছেন দলের জাতীয় সভাপতি শরদ যাদব। সেই চিঠিও রাজভবনে জমা পড়েছে।” জেডিইউ সূত্রে খবর, রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠী পটনায় আসার পর নীতীশ তাঁর সঙ্গে দেখা করে সরকার গঠনের আর্জি জানাবেন। রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করবেন শরদ যাদবও।

রাজভবন সূত্রে খবর, আগামী কাল সকাল ১০টা নাগাদ পটনায় পৌঁছতে পারেন রাজ্যপাল ত্রিপাঠী। দেড়টা নাগাদ তাঁর সঙ্গে দেখা করে সরকার গড়ার দাবি পেশ করতে পারেন নীতীশ। ইতিমধ্যে জেডিইউ পরিষদীয় দলের নেতা হিসেবে নীতীশ কুমারকে স্বীকৃতি দিয়েছেন বিহার বিধানসভার স্পিকার উদয়নারায়ণ চৌধুরিও।

নৌকো ডুববে কিনা তা বোঝা যাবে শীঘ্রই। কিন্তু স্রোত আপাতত মাঁজির বিরুদ্ধে বলেই মনে করছেন রাজনীতিকেরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE