Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

হাতির তাণ্ডবে মৃত ২

রবিবার রাত ও সোমবার ভোরে মাদারিহাটে হাতির হানায় মৃত্যু হল দু’জনের। উত্তর রাঙালিবাজনা ও মধ্য ছেকামারি গ্রামে এই ঘটনা ঘটে। বন দফতর সুত্রে জানা গিয়েছে, মুজনাই চা বাগান লাগোয়া উত্তর রাঙালিবাজনা গ্রামের গদি লাইনে মারা যান ৯০ বছরের বৃদ্ধা সাইলি লামা। মধ্য ছেকামারি গ্রামে মারা যায় ৫০ বছরের কুচু মুন্ডা। বাড়ি ভেঙেছে চারটি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
মাদারিহাট শেষ আপডেট: ১৬ জুন ২০১৫ ০২:১৩
Share: Save:

রবিবার রাত ও সোমবার ভোরে মাদারিহাটে হাতির হানায় মৃত্যু হল দু’জনের। উত্তর রাঙালিবাজনা ও মধ্য ছেকামারি গ্রামে এই ঘটনা ঘটে। বন দফতর সুত্রে জানা গিয়েছে, মুজনাই চা বাগান লাগোয়া উত্তর রাঙালিবাজনা গ্রামের গদি লাইনে মারা যান ৯০ বছরের বৃদ্ধা সাইলি লামা। মধ্য ছেকামারি গ্রামে মারা যায় ৫০ বছরের কুচু মুন্ডা। বাড়ি ভেঙেছে চারটি।

বন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে সোমবার ভোর সাড়ে পাঁচটা টা নাগাদ বৃদ্ধা সাইলি লামা বাড়ির পাশে কাঁচা রাস্তা দিয়ে পায়চারি করার সময় একটি ক্ষিপ্ত হাতি তাকে পিছন দিক থেকে লাথি মেরে ফেলে দেয়। এরপর পা দিয়ে থেতলে দেয় তাঁকে। আর রবিবার রাতে মধ্য ছেকামারি গ্রামে একটি বাড়িতে হাতির তাণ্ডবে কুচু মুন্ডা মারা যান । তবে, দুই গ্রামে একই হাতি হামলা চালিয়েছিল কি না তা নিয়ে সন্দেহ আছে।

গত তিন দিন ধরে মাদারিহাটের ধুমচির, ডিপাধুরা , দলদলির এম এল এ হাট , উত্তর খয়েরবাড়ি, চাঁপাগুড়ি সহ বিভিন্ন গ্রামে রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দল বেঁধে জঙ্গলি হাতিরা কাঁঠাল, ভুট্টা, হাড়িয়ার লোভে হানা দিচ্ছে। হাতিরা হানা দিচ্ছে বীরপাড়ার বিভিন্ন চা বাগানেও । দিন তিনেক আগে নাংডালা চা বাগানের ম্যানেজারের বাংলোতে হানা দেয় প্রায় ৬০ টি হাতির দল। সেখানে ম্যানেজারের বাংলোর জানালা ভেঙে দেয় তারা। বিভিন্ন গাছ-পালাও নষ্ট করে হাতির দলটি। মাদারিহাট – বীরপাড়ায় প্রায় প্রতিরাতে দলবদ্ধ হাতির তাণ্ডব চললেও কার্যত নিরুপায় বন দফতর। বনকর্মীদের অভিযোগ, নতুন করে কোনও বনকর্মী নিয়োগ না হওয়ায় অবসর নিতে নিতে এলিফ্যান্ট স্কোয়ার্ডের কর্মী সংখ্যা তলানিতে এসে ঠেকেছে। রাতের অন্ধকারে হাতি তাড়াতে কোনও রেঞ্জে গাড়ির চালক, রেঞ্জ ও বিট অফিসার মিলিয়ে কর্মী সংখ্যা ৭ জন, কোথাও ৯ জন। তার মধ্যেও কেউ কেউ থাকেন ছুটিতে। কাজেই রাতের অন্ধকারে ৪-৫ জন কর্মী ডিউটি করতে হিমসিম খাচ্ছে। এক গ্রামে হাতি তাড়াতে না তাড়াতেই খবর আসছে অন্য গ্রামে হাতিরা বাড়ি-ঘর ভাঙছে। এক গ্রাম থেকে হাতি তাড়িয়ে অন্য গ্রামে ঢুকতে দেরি হলেই বনকর্মীদের ঘিরে চলে বিক্ষোভ। অনেক সময় সাধারন রেঞ্জ থেকে বনকর্মীদের নিয়ে গিয়ে কোন রকমে অবস্থা সামাল দেওয়ার চেষ্টা করা হয়।

মুজনাই চা বাগানে সুখা মুন্ডা, উত্তর রাঙালবাজনা গ্রামের মোহন লামা বা ছেকামারি গ্রামের বিরাজ ওড়াঁওরা অভিযোগ করে বলেন , চা বাগান বা গ্রামে হাতি ঢুকলে খবর দেওয়ার পরেও বনকর্মীরা আসতে অনেক দেরি করে । ততক্ষণে বাড়ি-ঘর ভেঙে বা মানুষজন মেরে চলে যায় হাতিরা। আমাদের হাতে কোন অস্ত্র থাকে না হাতিদের তাড়াতে । দু’চারটি পটকা ফাটালেও হাতিরা সরে না। তখন আমরা দর্শক হয়ে দাঁড়িয়ে থাকি বা জীবন নিয়ে দৌঁড়ে পালাই। এ ভাবে আর কতদিন গ্রামে বসবাস করা যাবে?’’

কোচবিহারের বন্যপ্রাণ ৩ বিভাগের ডিএফও ভাস্কর জেভি বলেন, “শুনেছি মাদারিহাটের দুই গ্রামে হাতির হামলায় দু’জন মারা গিয়েছে। সাইলি লামার মৃত্যু হাতির হামলায় হয়েছ। তবে মধ্য ছেকামারির কুচু মুন্ডার মৃত্যু হাতির হামলায় হয়েছে কি না তা ময়নাতদন্তের রিপোর্ট এলে স্পষ্ট হবে । তার শরীরে হাতির আঘাতের প্রাথমিক কোন চিহ্ন দেখা যায়নি। তবে কুচু মুন্ডার বাড়ি ভেঙেছে হাতি। যাই হোক, ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পেলে ওরা সরকারি সাহায্য পাবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE