Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

ধূসর বাক্সে বন্দি হল হকিংয়ের কণ্ঠস্বর

এ ভাবেই তিন বছরে শেষ হয় ৫০৭৫০ শব্দের ‘আ ব্রিফ হিস্ট্রি অব টাইম’ (এক কোটিরও বেশি কপি বিক্রি হওয়া এই বইটি গতকাল অ্যামাজনে ফের রেকর্ড সংখ্যক বিক্রি হয়েছে)। তত দিনে টাইপ করা শব্দ কণ্ঠস্বরে রূপান্তরিত করার প্রযুক্তি ব্যবহার করে ফের ‘কথা বলতে’ শুরু করেছেন অধ্যাপক।

শ্রাবণী বসু
লন্ডন শেষ আপডেট: ১৬ মার্চ ২০১৮ ০১:৩২
Share: Save:

কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের একটা ঘরে রয়েছে একটা ছোট্ট, ধূসর বাক্স। এই বাক্সেই রয়েছে ঘরের সব থেকে মূল্যবান বস্তু— অধ্যাপক স্টিফেন হকিংয়ের কণ্ঠস্বর।

‘অ্যামিওট্রোপিক ল্যাটারাল স্ক্লেরোসিস’ (এএলএস)-এ আক্রান্ত অধ্যাপক হকিংকে গত ৩০ বছর ধরে বৈদ্যুতিন স্বরক্ষেপণ প্রযুক্তি ব্যবহার করেই ‘কথা’ বলতে হত। ১৯৮৫ সালে শ্বাসপ্রশ্বাস নেওয়ানোর জন্য হকিংয়ের গলা ফুঁড়ে ট্র্যাকিওস্টোমি করা হয়েছিল। যার ফলে কথা বলার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেন হকিং। নিজের ধ্যান-ধারণা ও তত্ত্ব প্রকাশ করতে হকিং টাইপ করা শুরু করেন। কিন্তু ক্ষয়িষ্ণু পেশিশক্তির ফলে সেটাও যথেষ্ট কষ্টকর কাজ ছিল। মিনিটে খুব বেশি হলে মাত্র ১৫টি শব্দ টাইপ করতে পারতেন হকিং।

এ ভাবেই তিন বছরে শেষ হয় ৫০৭৫০ শব্দের ‘আ ব্রিফ হিস্ট্রি অব টাইম’ (এক কোটিরও বেশি কপি বিক্রি হওয়া এই বইটি গতকাল অ্যামাজনে ফের রেকর্ড সংখ্যক বিক্রি হয়েছে)। তত দিনে টাইপ করা শব্দ কণ্ঠস্বরে রূপান্তরিত করার প্রযুক্তি ব্যবহার করে ফের ‘কথা বলতে’ শুরু করেছেন অধ্যাপক।

কিন্তু রোগকে যে বেঁধে রাখা যায় না! কয়েক বছরের মধ্যেই বুড়ো আঙুল চালানোর ক্ষমতাও হারিয়ে ফেলেন হকিং। মিনিটে একটা শব্দের বেশি বলা সম্ভব হচ্ছিল না। বন্ধ হয়ে যায় টাইপ করা। এবং ‘কথা বলা’ও।

তখন কম্পিউটার নির্মাতা সংস্থা ইন্টেলের সহ-প্রতিষ্ঠাতা গর্ডন মুরকে চিঠি লেখেন হকিং। অধ্যাপকের প্রশ্ন ছিল, ‘‘আজকাল আমার স্পিচ ইনপুটের গতি খুব ধীর হয়ে গিয়েছে। আপনারা কী কোনও ভাবে আমাকে সাহায্য করতে পারেন?’’

সেই সমীকরণ।

মুরের নির্দেশে যুদ্ধকালীন তৎপরতায় কাজে নামেন ইন্টেলের ইঞ্জিনিয়াররা। হকিংয়ের গালের একটা পেশি ও চোখের কুঞ্চন, রেটিনার স্ক্যান এবং মস্তিষ্কের তরঙ্গ— এ-টুকু সম্বল করেই এক অসম লড়াই শুরু হয়। অধ্যাপকের শরীরে মারণ এএলএসের দ্রুত বংশবিস্তারের সঙ্গে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির লড়াই। গত কয়েক দশক ধরে কিন্তু রোগকে জিততে দেননি কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়াররা। অসংখ্য বক্তৃতা দিয়েছেন অধ্যাপক, সারা পৃথিবী শুনেছে তাঁর যান্ত্রিক কণ্ঠস্বর। সেই কণ্ঠস্বরই এখন বাক্সবন্দি।

আরও পড়ুন: প্রশ্ন করতে শিখিয়েছেন, প্রশ্নের মুখে ফেলেছেন

এই কাঁপাকাঁপা যান্ত্রিক কণ্ঠেই হকিং এক বার তাঁর সহকর্মীদের বলেছিলেন, ‘‘আমার সমাধি প্রস্তরে যেন শুধু ওই সমীকরণটি লেখা থাকে।’’ কোন সমীকরণ? যার সাহায্যে হকিং দেখিয়েছিলেন যে, ব্ল্যাক হোল থেকেও তেজস্ক্রিয় রশ্মির বিকিরণ হয়। আর এই শেষ ইচ্ছে পালন করতেই ফাঁপরে পড়ে গিয়েছেন কেমব্রিজের পাথর খোদাইকারেরা।

কারণ তাঁরা তো জানেনই না, কী করে লিখতে হয় ‘পাই’!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE