Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

ছয় যুগ পরে আজ মাটির কাছাকাছি পূর্ণিমার চাঁদ

একে পূর্ণিমা। তার উপরে এত কাছাকাছি দু’জনে। চাঁদ আর পৃথিবী। এমন মাহেন্দ্রযোগ সহজে মেলে না! জ্যোতির্বিজ্ঞান জানাচ্ছে, আজ, সোমবার পূর্ণিমার রাতে অনেকটাই কাছাকাছি আসছে চাঁদ ও পৃথিবী। কতটা কাছাকাছি?

চাঁদ দেখতে...। প্রায়-পূর্ণ চাঁদের দিকে হাত বাড়িয়েছে একটি বিমান। রবিবার কাঠমান্ডুতে। ছবি: রয়টার্স

চাঁদ দেখতে...। প্রায়-পূর্ণ চাঁদের দিকে হাত বাড়িয়েছে একটি বিমান। রবিবার কাঠমান্ডুতে। ছবি: রয়টার্স

কুন্তক চট্টোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ১৪ নভেম্বর ২০১৬ ০৩:১৩
Share: Save:

একে পূর্ণিমা। তার উপরে এত কাছাকাছি দু’জনে। চাঁদ আর পৃথিবী। এমন মাহেন্দ্রযোগ সহজে মেলে না!

জ্যোতির্বিজ্ঞান জানাচ্ছে, আজ, সোমবার পূর্ণিমার রাতে অনেকটাই কাছাকাছি আসছে চাঁদ ও পৃথিবী। কতটা কাছাকাছি? সৌর পরিবারের গ্রহ পৃথিবী আর পৃথিবীর উপগ্রহ চাঁদের গড় দূরত্ব তিন লক্ষ ৮৪ হাজার ৪০০ কিলোমিটার। আজ সেটা ২৭ হাজার ৮৮৯ কিলোমিটার কমে হবে তিন লক্ষ ৫৬ হাজার ৫১১ কিমি। জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের হিসেব অনুযায়ী কোনও পূর্ণিমার দিনে পৃথিবী ও চাঁদকে এত কাছে শেষ দেখা গিয়েছিল প্রায় ৬৯ বছর আগে। সে-বার উভয়ের মধ্যে অবশ্য আরও একটু বেশি দূরত্ব কমেছিল— ২৭ হাজার ৯৩৮ কিলোমিটার। এবং ফের দু’জনকে এত কাছাকাছি দেখতে হলে ২০৩৪ সাল পর্যন্ত অর্থাৎ ১৮ বছর অপেক্ষা করতে হবে এই গ্রহের বাসিন্দাদের।

ক্ষুধার রাজ্যে গদ্যময় পৃথিবীতে পূর্ণিমাচাঁদকে ঝলসানো রুটি মনে হয়েছিল সুকান্ত ভট্টাচার্যের। তবে আদ্যিকাল থেকে সারা পৃথিবীর কবি-শিল্পীদের চোখে চাঁদ আর পৃথিবীর সম্পর্ক রোমান্সে রঙিন। জ্যোৎস্নার আঙুল দিয়ে ছোঁয়াছুঁয়ি চললেও সেই রোমান্স চিরবিরহের বলেই চিরজীবী। চিরবিরহ, কেননা কখনওই তাদের মিলন হয় না, হওয়ারও নয়। তাই উভয়ের কাছাকাছি আসাটুকুই প্রাপ্তি। দীর্ঘ ব্যবধানে একটু বেশি কাছে আসাটা বাড়তি প্রাপ্তি পৃথিবীর। উভয়ের মধ্যে দূরত্ব কমে কী ভাবে? কে-ই বা কার কাছে আসে?

বিজ্ঞানের বিশ্লেষণ, সূর্যকে ঘিরে পৃথিবী ঘোরে তার নির্দিষ্ট কক্ষপথে। আর পৃথিবীকে কেন্দ্র করে উপবৃত্তাকার (অনেকটা ডিমের মতো) কক্ষপথে পাক খায় চাঁদ। পৃথিবীকে এক বার পাক খেতে তার সময় লাগে সাড়ে সাতাশ দিন। এই সাড়ে সাতাশ দিনের মধ্যে চাঁদ এক বার পৃথিবীর কাছে চলে আসে এবং এক বার পৃথিবীর থেকে দূরে চলে যায়। দূরত্বটা যখন সব থেকে কমে যায়, সেটাকে বলে ‘অনুসূর’ অবস্থান এবং তারা যখন একে অপরের থেকে সর্বাধিক দূরত্বে থাকে, সেই অবস্থানের নাম ‘অপসূর’। চাঁদই কাছে আসে পৃথিবীর। কিন্তু সেই কাছে আসাটা যে কখনওই মিলনের পূর্ণতা পায় না, তার কারণ উভয়ের কক্ষপথ পৃথক।

যথাসম্ভব কাছে আসার ক্ষেত্রেও দূরত্বের হেরফের হয়। বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, প্রতিটি অনুসূর অবস্থানে দূরত্ব সমান হয় না। বেশির ভাগ সময়েই চাঁদ ও পৃথিবীর দূরত্ব তিন লক্ষ ৫৭ হাজার কিলোমিটার বা তার বেশি হয়। অনুসূর অবস্থানে সব সময় পূর্ণিমাও মেলে না। এই সব দিক থেকেই আজকের পূর্ণিমা গুরুত্বপূর্ণ। কেন্দ্রীয় সরকারি সংস্থা পজিশনাল অ্যাস্ট্রোনমি সেন্টারের অধিকর্তা সঞ্জীব সেন বলেন, ‘‘সোমবার পৃথিবী থেকে চাঁদের দূরত্ব কমে তিন লক্ষ ৫৬ হাজার ৫১১ কিলোমিটার তো হচ্ছেই। সেই সঙ্গে লগ্নটা পূর্ণিমা।’’

সঞ্জীববাবু জানান, এর আগে ১৯৪৮ সালের ২৬ জানুয়ারি পূর্ণিমার রাতে এমন ঘটনা ঘটেছিল। সে-দিন পৃথিবী ও চাঁদের দূরত্ব ছিল তিন লক্ষ ৫৬ হাজার ৪৬২ কিলোমিটার। ২০৩৪ সালের ২৫ নভেম্বর পূর্ণিমায় ফের চাঁদ ও পৃথিবী এত কাছাকাছি আসবে। সে-দিন দূরত্ব কমে হবে তিন লক্ষ ৫৬ হাজার ৪৪৭ কিলোমিটার। বিজ্ঞানীদের একাংশ জানাচ্ছেন, ১৬ অক্টোবরও অনুসূর অবস্থানে ছিল চাঁদ। কিন্তু দূরত্ব এতটা কমেনি। পজিশনাল অ্যাস্ট্রোনমি সেন্টার জানিয়েছে, চাঁদ আজ ভারতীয় সময় বিকেল ৪টে ৫২ মিনিটে অনুসূর বিন্দুতে প্রবেশ করবে। কলকাতায় সূর্যাস্ত হবে ৪টে ৫৩ মিনিটে। ৪টে ৫৮ মিনিটে চন্দ্রোদয়।

‘সুপারমুন’ বলে একটি বিষয় নিয়ে চর্চা চলে নেট-দুনিয়ায়। জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা জানান, বিজ্ঞানের পরিভাষায় ‘সুপারমুন’ বলে কিছু নেই। তবে নেট-জগতে বা সোশ্যাল মিডিয়ার চর্চা থেকে তাঁরা দেখেছেন, পূর্ণিমা এবং চাঁদের অনুসূর অবস্থান— এই দু’টি মিলে গেলেই সাধারণত ‘সুপারমুন’ বলে প্রচার শুরু হয়ে যায়। সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘুরছে, সোমবার সুপারমুনের ফলে চাঁদ নাকি অনেক বড় দেখাবে। ঔজ্জ্বল্যও বেড়ে যাবে অনেকটা। আর চাঁদের চার পাশে দেখা যাবে মায়াবী বলয়!

এক জ্যোতির্বিজ্ঞান-গবেষক জানান, চাঁদ ও পৃথিবী কাছাকাছি আসবে ঠিকই। তার ফলে চাঁদকে কিছুটা বড় দেখাতে পারে। ঔজ্জ্বল্যও বাড়া উচিত। কিন্তু সেগুলো খালি চোখে ধরা পড়ে না। মায়াবী বলয়েরও কোনও বাস্তব ভিত্তি নেই। অনেক সময় বায়ুমণ্ডলের উচ্চ স্তরে বরফকণা তৈরি হলে তার মধ্য দিয়ে চাঁদের আলো প্রতিসৃত হওয়ায় ছটা দেখা যায়। কিন্তু তার সঙ্গে অনুসূর অবস্থান বা সুপারমুনের কোনও সম্পর্ক নেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Earth Super moon
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE