Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪
Science News

সুমেরু মহাসাগরের এক-তৃতীয়াংশ বরফ উধাও এই গরমেই!

গলতে গলতে আর্কটিকের জলের উপরে থাকা বরফের স্তরের সাম্রাজ্যের চৌহদ্দিটা কমে পৌঁছয় ১৬ লক্ষ বর্গ মাইল বা ৪১ লক্ষ ৫০ হাজার বর্গ কিলোমিটারে। গত ১৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। ৪০ বছরে (সাতের দশকের শেষাশেষি থেকে) দ্বিতীয় সর্বনিম্ন।

নেই-বরফের রাজ্য? ছবি সৌজন্যে: নাসা

নেই-বরফের রাজ্য? ছবি সৌজন্যে: নাসা

সুজয় চক্রবর্তী
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ১৪:১৯
Share: Save:

হাড়জমানো ঠান্ডার সুমেরু। তবু এ বছরের গ্রীষ্মে আর্কটিক (সুমেরু) মহাসাগরের উপরে ভাসা বরফের সাম্রাজ্য যে ভাবে আকারে, আয়তনে ছোট হয়ে গিয়েছে, তা চমকে দিয়েছে বিজ্ঞানীদের।

গলতে গলতে আর্কটিকের জলের উপরে থাকা বরফের স্তরের সাম্রাজ্যের চৌহদ্দিটা কমে পৌঁছেছে ১৬ লক্ষ বর্গ মাইল বা ৪১ লক্ষ ৫০ হাজার বর্গ কিলোমিটারে। গত ১৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। যা সুমেরু মহাসাগরের উপরে থাকা বরফের স্তরের এক-তৃতীয়াংশ। ৪০ বছরে (সাতের দশকের শেষাশেষি থেকে) দ্বিতীয় সর্বনিম্ন।

সবচেয়ে বেশি কমেছিল ২০১২-য়। কিন্তু সে বছর সাইক্লোন হয়েছিল। এ বার ওই সময় সাইক্লোন না হলেও, আর্কটিক তার বরফের এলাকা খুইয়েছে। উদ্বেগজনক ভাবে।

পুণের ‘ন্যাশনাল সেন্টার ফর অ্যান্টার্কটিক অ্যান্ড ওশ্‌ন রিসার্চ’ (এনসিএওআর)-এর অধিকর্তা এম রবিচন্দ্রন ‘আনন্দবাজার’কে এই খবর দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘‘নাসা ও ‘ন্যাশনাল স্নো অ্যান্ড আইস ডেটা সেন্টার’ (এনএসআইডিসি)-এর বিভিন্ন উপগ্রহের পাঠানো তথ্যাদি এ কথা জানিয়েছে।’’

যে ভাবে কমেছে সুমেরু মহাসাগরের বরফ, দেখুন নাসার ভিডিয়ো

শীতেও তেমন বরফ জমছে না সুমেরু মহাসাগরে!

শীতেও আগের মতো জমছে না আর্কটিক মহাসাগরের উপরে থাকা বরফের স্তর। এত দিন গরম কাল আর বসন্তে গলত মহাসাগরের উপরে ভেসে বেড়ানো বরফের স্তর। এখন ভরা শীতেও আর্কটিক মহাসাগরের উপরের বরফের স্তর দ্রুত পাতলা হয়ে যাচ্ছে। সুমেরুর ভয় পাওয়ানো শীতও আর্কটিকের উপরের জলস্তরকে আর জমিয়ে দিয়ে বরফ করতে পারছে না!

স্বর্গরাজ্যেই আকাল বরফের!

ফলে, বরফের আকাল দেখা দিচ্ছে বরফেরই স্বর্গরাজ্যে! উত্তরোত্তর ছোট হয়ে আসছে আর্কটিক মহাসাগরের উপরে ভেসে বেড়ানো বরফের ‘সাম্রাজ্য’। বরফের সাম্রাজ্যে আরও আরও ফাটল দেখা দিচ্ছে। শীতেও আগের মতো বরফ জমছে না বলে সেই ফাটল দিনকে দিন বেড়েই চলেছে। তাতে বরফের পুরু স্তরকে ফাটিয়ে নীচে থাকা আর্কটিক মহাসাগরের জলকে দেখা যাচ্ছে উপরে উঠে আসতে।

এই গ্রীষ্মে কী হাল হয়েছে আর্কটিক মহাসাগরের?

রবিচন্দ্রনের কথায়, ‘‘নাসা এবং এনএসআইডিসি জানাচ্ছে, গলতে গলতে তার জলের উপরে থাকা বরফের স্তরের সাম্রাজ্যের চৌহদ্দিটা কমে পৌঁছেছিল ১৬ লক্ষ বর্গ মাইল বা ৪১ লক্ষ ৫০ হাজার বর্গ কিলোমিটারে। গত ৪০ বছরে (সাতের দশকের শেষাশেষি থেকে) দ্বিতীয় সর্বনিম্ন। সবচেয়ে বেশি কমেছিল ২০১২-য়।’’

আরও পড়ুন- হকিংয়ের সন্দেহ কি অমূলকই? তার কোনও চুল নেই! জানাল ব্ল্যাক হোল​

আরও দেখুন- ইনিই নাকি প্রথম টাইম ট্রাভেলার! সিআইএ-র গোপন মিশনে ঘুরে এসেছেন ২১১৮-র পৃথিবী!

সুমেরু মহাসাগরের উপরের বরফ স্তরে ভয়াবহ ফাটল

এর ফলে খুব দ্রুত বদলে যাচ্ছে ওই এলাকার যাবতীয় বাস্তুতন্ত্র। বদলে যাচ্ছে আশপাশে থাকা অন্য সাগর ও মহাসাগরগুলির গতিবিধি, চালচলনও। অতলান্তিকের মতো মহাসাগরের জলস্তর অনেকটা উপরে উঠে আসার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। স্থানীয় ও বিশ্বের আবহাওয়া পরিবর্তনেও বড় ভূমিকা নিচ্ছে আর্কটিক মহাসাগরের উপরকার ক্ষীয়মান বরফের স্তর।

ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি আর্কটিকের বরফ সাম্রাজ্য, জানাচ্ছে নাসা

গত ৪০ বছর ধরে আর্কটিকের উপরের বরফের স্তর উত্তরোত্তর ক্ষয়ে যাওয়ার পর তা ‘ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা শুরু করেছে, আবার দ্রুত বরফ জমতে শুরু করেছে আর্কটিকের উপর, এমন প্রমাণ বা ইঙ্গিত এখনও পর্যন্ত মেলেনি’, বলছেন রবিচন্দ্রন। সংশ্লিষ্ট গবেষণাপত্রে একই কথা লিখেছেন নাসার গর্ডার্ড স্পেস ফ্লাইট সেন্টারের বিশিষ্ট জলবায়ু বিশেষজ্ঞ ক্লেয়ার পারকিনসনও।

নাসা এবং এনএসআইডিসি-র সাম্প্রতিক তথ্য জানিয়েছে, এই বছর গরম কাল শুরু হওয়ার সময়েই আর্কটিকের উপরের বরফের স্তরের এলাকা আগের চেয়ে অনেকটাই ছোট হয়ে গিয়েছিল। যেটুকু ছিল, জুলাইয়ে তা খুব দ্রুত হারে গলতে শুরু করেছিল। অগস্টের মাঝামাঝি সময়ে পৌঁছে তার হার অবশ্য কিছুটা কমে। মহাকাশ থেকে বিভিন্ন উপগ্রহের মাধ্যমে আর্কটিকের উপরকার সেই বরফের স্তরের হ্রাস-বৃদ্ধির উপর নজর রাখা হয়েছিল।

বরফ খুইয়ে উত্তরোত্তর নিঃস্ব হয়ে পড়ছে সুমেরু মহাসাগরের উপরের স্তর

২০১২ সালেই আর্কটিকের উপরের বরফ-সাম্রাজ্যের এলাকা সবচেয়ে বেশি কমে গিয়েছিল। গত ৪০ বছরে আর কখনই সেই এলাকা অতটা কমেনি।

২০১২-য় সাইক্লোন ছিল, এ বার তা হয়নি, তবু...

তবে রবিচন্দ্রন বলছেন, ‘‘তার জন্য দায়ী ছিল কয়েকটি ভয়ঙ্কর সাইক্লোন। সেই সব সাইক্লোনই আর্কটিক মহাসাগরের উপরকার বরফের স্তরকে উড়িয়ে, ঠেলে সরিয়ে দিয়েছিল। কিন্তু এই বছর সেটা ঘটেনি। যদিও আর্কটিক এলাকায় এ বার গ্রীষ্মে ভালই গরম পড়েছিল। আর্কটিকের মধ্যাঞ্চলে যেটা স্বাভাবিক তাপমাত্রা, এ বারের গরম কালে তাপমাত্রা ছিল তার সাত থেকে নয় ডিগ্রি ফারেনহিট (বা, চার থেকে পাঁচ ডিগ্রি সেলসিয়াস) উপরে। আর্কটিক সংলগ্ন এলাকার দাবানল বা ইউরোপে তাপপ্রবাহের ঘটনা গ্রিনল্যান্ডের বরফ গলালেও আর্কটিক মহাসাগরের উপরের বরফের স্তরকে গলাতে কিন্তু ততটা ভূমিকা নেয়নি।’’

ছবি ও ভিডিয়ো সৌজন্যে: নাসা

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE