Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪

চাঁদের কিরণে ‘ফিট’ বিক্রম

তিনি সুত্তসোম (অর্থ চাঁদের কিরণ) সিংহ। আদতে বারাসতের বাসিন্দা এই বাঙালি ইঞ্জিনিয়ারের হাত দিয়ে চাঁদে যাওয়ার ‘ফিট সার্টিফিকেট’ পেয়েছে চন্দ্রযান-২। চাঁদে অবতরণের আগে স্বাভাবিক ভাবেই উত্তেজিত তিনি। বিষয়টি কী?

সুত্তসোম সিংহ

সুত্তসোম সিংহ

কুন্তক চট্টোপাধ্যায়
বেঙ্গালুরু শেষ আপডেট: ০৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০৫:৩১
Share: Save:

নামে চাঁদ। চাঁদে গিয়ে ভারতের দূতেরা ঠিক মতো কাজ করতে পারবে কি না, তাতেও জড়িয়ে রয়েছেন তিনি।

তিনি সুত্তসোম (অর্থ চাঁদের কিরণ) সিংহ। আদতে বারাসতের বাসিন্দা এই বাঙালি ইঞ্জিনিয়ারের হাত দিয়ে চাঁদে যাওয়ার ‘ফিট সার্টিফিকেট’ পেয়েছে চন্দ্রযান-২। চাঁদে অবতরণের আগে স্বাভাবিক ভাবেই উত্তেজিত তিনি। বিষয়টি কী?

দিনের বেলা গনগনে তাপ, রাত হলেই হিমাঙ্কের বহু নীচে তাপমাত্রা। এমন পরিস্থিতিতে বিক্রম ও প্রজ্ঞানকে সুস্থ ও স্বাভাবিক থাকতে হবে। দিনের বেলা কাজও করতে হবে। বেঙ্গালুরুতে ইউ আর রাও স্যাটেলাইট সেন্টারে যে প্রযুক্তিবিদদের দল তাদের সুস্থ রাখার ব্যবস্থা করেছে, তার অন্যতম সদস্য সুত্তসোম (মহাভারতে ভীম-দ্রৌপদীর সন্তান সুত্তসোম)। বস্তুত, এই অভিযানের পিছনে বাঙালি বিজ্ঞানী-ইঞ্জিনিয়ারদের মধ্যে রয়েছেন চন্দ্রকান্ত কুমার, গৌতম মণির মতো বিজ্ঞানী-ইঞ্জিনিয়ারেরাও।

সুত্তসোম বলছেন, চাঁদে দিনে তাপমাত্রা প্রায় ২০০ ডিগ্রির কাছে পৌঁছে যেতে পারে, রাতে হিমাঙ্কের প্রায় ১৫০ ডিগ্রি নীচে নেমে যায়। এই তাপমাত্রায় বৈদ্যুতিন যন্ত্রাংশ নষ্ট হয়ে যেতে পারে। কিন্তু অরবিটার, বিক্রম বা প্রজ্ঞানের শরীরে বসানো যন্ত্রাংশ যাতে খারাপ না-হয়, তার জন্য ভ্যাকুম চেম্বারে সেই কৃত্রিম উপগ্রহ ঢুকিয়ে তাপমাত্রা বাড়িয়ে বা কমিয়ে পরীক্ষা করা হয়েছে। সেই পরীক্ষায় উতরোনোর পরেই তা মহাকাশে যাওয়ার ছাড়পত্র পেয়েছে। তবে এ পরীক্ষা এক দিনে হয়নি। গত ডিসেম্বর মাস থেকে ছুটিছাটা বাদ, কার্যত নাওয়া-খাওয়া ছেড়ে এ কাজে পড়ে থাকতে হয়েছে।

শুধু চন্দ্রযান-২ নয়, এর মধ্যে আরও কয়েকটি কৃত্রিম উপগ্রহকে ‘ফিট সার্টিফিকেট’ দিয়েছেন সুত্তসোমেরা।

সুত্তসোমের পড়াশোনা বারাসত গভর্নমেন্ট স্কুলে। দ্বাদশ শ্রেণি পেরিয়ে ভর্তি হন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রোডাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে। ২০১০ সালে ইসরোতে যোগদান। প্রথমে বৈদ্যুতিন সরঞ্জাম তৈরির কাজে ছিলেন। পরে চলে আসেন এই পরীক্ষানিরীক্ষার বিভাগে। সুত্তসোম জানান, তাঁর বাবা রঞ্জিতকুমার সিংহ ন্যাশনাল টেস্ট হাউজ়ে চাকরি করতেন। তাই ছোট থেকেই বিজ্ঞানের প্রতি আগ্রহ। তবে পড়াশোনার ক্ষেত্রে মা পুষ্পিতার কথা বলেছেন সুত্তসোম। দশম শ্রেণি পর্যন্ত ছেলের পড়াশোনার খেয়াল রাখতেন গৃহবধূ পুষ্পিতাদেবীই।

তবে এ দিন গ্রামের বাড়িতে থাকায় টিভির সামনে থাকতে পারবেন না বাবা-মা। কিন্তু ঘটনার খুঁটিনাটি জেনেছেন তাঁরা। শুক্রবার পুষ্পিতা বলেন, ছেলের জন্য গর্ব তো হচ্ছেই! মা-ই জানালেন, ছেলে নানান দুষ্টুমি করত। তবে ছোট থেকেই বিজ্ঞানে ঝোঁক ছিল। আর ছিল অধ্যবসায়। বাবা রঞ্জিতবাবু বলছেন, ‘‘ছেলের জন্য গর্ব হচ্ছেই। তার থেকেও বেশি গর্ব অনুভব করছি এক জন ভারতীয় হিসেবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Chandrayaan 2 ISRO Vikram Lander
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE