মহাকাশে নজরদারির সেই যন্ত্র।
পৃথিবীর বুকে বসে নয়। ব্রহ্মাণ্ডের অপার রহস্যের আঁচ পেতে এ বার চাঁদের মাটিতে শিবির গাড়তে চলেছেন এক দল বাঙালি বিজ্ঞানী।
২০১৭-র শেষে শুরু হবে দেশের প্রথম বেসরকারি মহাকাশ অভিযান। তাতে চন্দ্রপৃষ্ঠে শুধু যানই পৌঁছবে না, ২০১৮-র প্রজাতন্ত্র দিবসে চাঁদের বুকে ভারতের জাতীয় পতাকা ওড়ানোরও পরিকল্পনা রয়েছে। যাতে যুক্ত রয়েছেন কলকাতার কিছু বিজ্ঞানী। ওঁদের তৈরি যন্ত্র চাঁদে বসে ব্ল্যাক হোল বা গামা রশ্মির মতো মহাজাগতিক কর্মকাণ্ডে নজর রাখবে। তথ্যও পাঠাবে।
ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা (ইসরো) সূত্রের খবর: অভিযানটির পুরোভাগে রয়েছে ‘টিম ইন্ডাস’ নামে এক বেসরকারি সংস্থা। উপরন্তু চাঁদের মাটিতে গাড়ি (রোভার) চালিয়ে পাঁচশো মিটার গিয়ে ছবি তুলে পাঠাতে পারলে গুগলের তরফে কয়েক কোটি ডলার ইনাম মিলবে। বেসরকারি উদ্যোগটির সঙ্গে ইসরো গাঁটছড়া বেঁধেছে। তারা পিএসএলভি রকেটে চাপিয়ে যানকে মহাকাশে পৌঁছে দেবে, যোগাযোগের পরিষেবাও জোগাবে। বিনিময়ে পাবে প্রায় ১৩০ কোটি টাকা। সূত্রের ইঙ্গিত, দেশের কিছু শিল্পপতিও টাকা ঢালছেন। যার প্রেক্ষাপটে বিজ্ঞানী মহলের ধারণা, এর হাত ধরে বেসরকারি মহাকাশ অভিযান ও কৃত্রিম উপগ্রহ পাঠানোর কারবারের দরজাও খুলবে। মার্কিন মুলুকে যেমন হয়ে থাকে।
আর এই প্রকল্পেই বিজ্ঞান গবেষণার অংশীদার হয়েছেন গড়িয়ার ‘ইন্ডিয়ান সেন্টার ফর স্পেস ফিজিক্স’-এর বিজ্ঞানীরা। দলের প্রধান তথা এসএন বোস ন্যাশনাল সেন্টার ফর বেসিক সায়েন্সেস-এর অ্যাস্ট্রোফিজিক্সের অধ্যাপক সন্দীপ চক্রবর্তী জানাচ্ছেন, চাঁদের মাটি কিংবা বায়ুমণ্ডল তাঁদের গবেষণার বিষয় নয়। বরং চাঁদে বসে গামা রশ্মি, ব্ল্যাক হোলের মতো মহাজাগতিক বস্তুতে নজরদারি চালাবে কলকাতার বিজ্ঞানীদের যন্ত্র। সেটা কী রকম?
সন্দীপবাবু জানান, যন্ত্রটির নাম এক্স-রে স্পেকট্রোস্কোপি ফর লুনার সারফেস। তাঁর কথায়, ‘‘চার-পাঁচ বছর ধরে এটা তৈরি হয়েছে। খরচ পড়েছে প্রায় আধ কোটি টাকা।’’ প্রতিষ্ঠানের সিংহভাগ ব্যয়ভার রাজ্য সরকার বহন করে বলেও জানিয়েছেন সন্দীপবাবু। কিন্তু ব্ল্যাক হোল বা গামা রশ্মি নিয়ে গবেষণা তো নতুন নয়! এর জন্য চাঁদে পাড়ি কেন?
সন্দীপবাবুর ব্যাখ্যা: পৃথিবীর কোনও জায়গায় সূর্যের আলো একটানা মেলে বারো ঘণ্টা। চাঁদে প্রায় চোদ্দো দিন। অর্থাৎ, চাঁদে বসে কোনও মহাজাগতিক বস্তুকে টানা দু’সপ্তাহ ধরে পর্যবেক্ষণ করা যায়। অনেক বেশি তথ্যও ঝুলিতে ভরা সম্ভব। ‘‘কৃত্রিম উপগ্রহ পাঠিয়েও এতটা হয় না।’’— মন্তব্য বিজ্ঞানীর।
কী ভাবে চাঁদে পা়ড়ি জমানো হবে?
‘টিম ইন্ডাস’ একটা প্রাথমিক রূপরেখা নিজেদের ওয়েবসাইটে দিয়েছে। পিএসএলভি’তে চড়ে মহাকাশে পৌঁছে চন্দ্রযান ছুটে চলবে চাঁদের দিকে। চাঁদের কক্ষপথে পৌঁছে তার গতি ধীরে ধীরে কমবে। সন্তর্পণে চাঁদের মাটি ছোঁবে তার চারটি পা। স্বয়ংক্রিয় অবতরণ কর্মসূচিটি (প্রোগ্রাম) আগাগোড়া কম্পিউটার মারফত যানের মগজে আগাম ঠেসে দেবেন বিজ্ঞানীরা।
অবতরণ মিটলে পরবর্তী পর্ব—যানের সঙ্গে পৃথিবীর কন্ট্রোল রুমের যোগাযোগ। কন্ট্রোলের ‘নির্দেশ’ মোতাবেক যান থেকে আলাদা হবে চাঁদের গাড়ি (রোভার)। তার চাকা চাঁদের বুকে গড়াতে থাকবে। বেসরকারি কন্ট্রোল রুমের নির্দেশাবলি অবশ্য সরাসরি চাঁদে পৌঁছবে না। যাবে বেঙ্গালুরুর ইসরো মারফত। চাঁদে পাওয়া তথ্য একই রুটে পৃথিবীতে ফিরবে। ইসরো-সূত্রের বক্তব্য, জাতীয় নিরাপত্তার খাতিরেই মহাকাশে যোগাযোগের প্রযুক্তি (ডিপ স্পেস নেটওয়ার্ক) বেসরকারি হাতে ছাড়া হয় না।
সরকারি অভিযানে তিন হাজার কেজির ‘চন্দ্রযান-২’ রওনা দেবে ২০১৮-র ডিসেম্বরে। দেখা যাক, তার আগে বেসরকারি উড়ান মহাকাশে কী রং ছড়িয়ে আসে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy