ফাইল চিত্র।
পরতে হবে কানে দুল, আঙুলে আংটি কিংবা নাকে নথ। তাতে লাগানো থাকবে নির্দিষ্ট হরমোন। ত্বকের সংস্পর্শে এলেই সেই হরমোন মিশে যাবে রক্তে। যে-সে হরমোন নয়, ওই হরমোন আসলে জন্ম নিয়ন্ত্রক।
শুয়োরের উপরে পরীক্ষা চালিয়ে এই ধরনের জন্ম নিয়ন্ত্রণ প্রক্রিয়ার কার্যকারিতা সম্পর্কে নিশ্চিত হয়েছেন আমেরিকার জর্জিয়া ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির এক দল গবেষক। ওই দলের অন্যতম গবেষক মার্ক প্রসনিৎজ়ের মন্তব্য, ‘‘গয়না পরাটা মেয়েদের স্বভাব। এটা তাঁদের নিত্যদিনের অভ্যাস। তাই যাঁরা সন্তান চান না, তাঁরা ঝঞ্ঝাটহীন এই জন্ম নিয়ন্ত্রণের পদ্ধতিতে উৎসাহী হবেন।’’
মানুষের উপরে তাঁদের পরীক্ষা উতরে গেলেই মহিলাদের এই জন্ম নিয়ন্ত্রক বাজারে আসতে পারে বলে জানাচ্ছেন গবেষকেরা। তাঁদের দাবি, যে-ভাবে তাঁরা গোটা প্রক্রিয়াটি তৈরি করেছেন, তাতে কোনও পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার আশঙ্কা খুবই কম।
মহিলাদের পাশাপাশি পুরুষদের জন্ম নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রেও নতুন এক প্রযুক্তি উদ্ভাবনের কথা শুনিয়েছেন আমেরিকারই ইউনিভার্সিটি অব ওয়াশিংটনের এক দল বিজ্ঞানী। চিকিৎসাবিজ্ঞানী স্টিফেনি পেজের দাবি, তাঁরা এমন একটি ক্যাপসুল নিয়ে কাজ করছেন, যা পুরুষদের স্পার্ম কাউন্ট কমিয়ে দেয়। সেই সূত্রে ওই ক্যাপসুল পুরুষদের জন্ম নিয়ন্ত্রক পিলের কাজ করছে। তবে গবেষকেরা জানাচ্ছেন, এই পিলের ব্যবহারে কয়েকটি পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াও রয়েছে। এতে মাথা ধরা কিংবা অল্প পরিশ্রমেই ক্লান্ত হয়ে পড়ার মতো প্রতিক্রিয়া হয় শরীরে। এই সব পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া যাতে না-হয়, পরবর্তী পর্যায়ের গবেষণায় তাঁরা সে-দিকে লক্ষ রাখবেন।
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
মহিলাদের ক্ষেত্রে জন্ম নিয়ন্ত্রণে পিলের ব্যবহার অতিপরিচিত পদ্ধতি। গোটা বিশ্বেই তা জনপ্রিয়। পিলের বাইরে এখন আরও অনেক সহজ জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি চালু রয়েছে মহিলাদের ক্ষেত্রে। কিন্তু পুরুষদের ক্ষেত্রে এ বিষয়ে এখনও তেমন কোনও পদ্ধতি জনপ্রিয় হয়নি। মূল গবেষক স্টিফেনি বলেন, ‘‘আমরা যে-গবেষণা চালাচ্ছি, তা সফল হওয়ার পথে। আমাদের বিশ্বাস, আমরা পুরুষদের জন্য এক ধরনের পিল তৈরি করে ফেলতে পারব। যা পুরুষদের জন্ম নিয়ন্ত্রণে আরও উৎসাহী করে তুলবে।’’
আবার গয়নাকে জন্ম নিয়ন্ত্রণের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহারের গবেষণা প্রসঙ্গে জর্জিয়া ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির গবেষকেরা বলছেন, চামড়ার উপরে লাগানো স্ট্রিপের মাধ্যমে জন্ম নিরোধক হরমোন শরীরের ঢোকানোর প্রক্রিয়া (ট্রান্সডার্মাল স্ট্রিপ) এখন খুবই জনপ্রিয়। সেই পদ্ধতি থেকেই এই গবেষণায় হাত দিয়েছেন তাঁরা। তাঁদের মন্তব্য, শুয়োরের উপরে পরীক্ষায় সফল হওয়ার পরে তাঁরা এখন মানুষের উপরে পরীক্ষা শুরু করবেন।
জর্জিয়া ইনস্টিটিউটের ওই গবেষণাপত্র সম্প্রতি একটি আন্তর্জাতিক জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। রবিবার ইউনিভার্সিটি অব ওয়াশিংটনের গবেষকেরা তাঁদের গবেষণাপত্র এন্ডোক্রিনোলজির একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনে পাঠ করেছেন।
আমেরিকার দু’টি বিশ্ববিদ্যালয়ের দু’টি গবেষণাই জন্ম নিয়ন্ত্রণের আন্দোলনকে অনেকটা এগিয়ে যাবে বলে মনে করেন কলকাতার অনেক এন্ডোক্রিনোলজিস্ট। তবে পুরুষদের পিল কতটা কার্যকর হবে, সেই প্রশ্ন তুলেছেন কেউ কেউ। শারীরিক ভাবে কোনও বাধা নেই, কিন্তু পুরুষেরা তা ব্যবহার করবেন কি না, সেই বিষয়েই সন্দেহ রয়েছে এসএসকেএম হাসপাতালের এন্ডোক্রিনোলজিস্ট সতীনাথ মুখোপাধ্যায়ের। তিনি বলেন, ‘‘পুরুষদের পিল তৈরি হয়েছে বেশ কয়েক বছর আগেই। বেশ কয়েকটি সংস্থা এই পিল তৈরি করেছিল। কিন্তু পুরুষেরা তা ব্যবহার করতে চাননি। তাই সেই পিল জনপ্রিয় হয়নি।’’
ট্রান্সডার্মাল স্ট্রিপের ব্যবহার ভারতের সরকারি স্বাস্থ্য পরিষেবায় শুরু হয়েছে। তবে গয়নাকে এই প্রক্রিয়ায় শামিল করার বিষয়ে সতীনাথবাবুর প্রতিক্রিয়া, ‘‘সংশ্লিষ্ট গবেষণাপত্রটি এখনও পড়িনি। তাই মন্তব্য করতে পারব না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy