কান্নায় ভেঙে পড়লেন ইসরোর চেয়ারম্যান কে শিবন। তাঁকে জড়িয়ে ধরে সান্ত্বনা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর। শনিবার সকালে বেঙ্গালুরুতে। পিটিআই
দ্বিতীয় দফায় মোদী সরকারের প্রথম একশো দিনের কাজের সাফল্যের ‘তাজ’ হওয়ার কথা ছিল চাঁদের মাটিতে বিক্রমের সফল অবতরণ। কিন্তু শেষ মুহূর্তে যান্ত্রিক বিভ্রাটে তা ভেস্তে গেলেও শনিবার সকালে ফের ইসরোর দফতরে এসে বিজ্ঞানীদের পাশে দাঁড়িয়ে পালে হাওয়া টানতে চাইলেন নরেন্দ্র মোদী। কান্নায় ভেঙে পড়া ইসরো চেয়ারম্যান কে শিবনকে বুকে জড়িয়ে সান্ত্বনা দিলেন। এই ভিডিয়ো প্রচারের পরেই নেট-দুনিয়ায় জাতীয়তাবাদী আবেগ উস্কে দিতে নেমে পড়লেন মোদী অনুরাগীরা।
দেশে অর্থনীতির বেহাল দশা। প্রতিদিন কাজ হারাচ্ছেন বহু কর্মী। কাশ্মীরে ৩৭০ অনুচ্ছেদ প্রত্যাহারের এক মাস পরেও পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়নি। এনআরসি নিয়ে জেরবার দশা অসমে। আজ সরকারের একশো দিন পূর্তির ক্ষণে এ সব নিয়ে বিরোধীরা যে সরব হবেন, বিলক্ষণ জানত বিজেপি। অনেকের মতে, শাসক দল চেয়েছিল চন্দ্রাভিযানের সাফল্যকে প্রচারের এমন উচ্চতায় নিয়ে যেতে, যাতে হারিয়ে যায় কাজ হারানোর যন্ত্রণা, ফিকে হয়ে যায় কাশ্মীরে ছররা লাগা কিশোরের মুখ বা বিদেশির তকমা জোটা অসমের মানুষের যন্ত্রণার ছবি। আমজনতাকে বোঝানোর লক্ষ্য ছিল যে, যা হয়েছে তা প্রধানমন্ত্রীর কুশলী নেতৃত্বের কারণেই। তাই প্রথম দফায় চন্দ্রযান ২-এর উৎক্ষেপণ যান্ত্রিক কারণে ভেস্তে গেলেও তড়িঘড়ি ফের তাকে মহাকাশে পাঠিয়ে আগের নির্ঘণ্ট অনুযায়ী ৬ তারিখ রাতেই বিক্রমকে চাঁদে নামানোর পরিকল্পনা করা হয়।
আর সেই ঘটনা চাক্ষুষ করতে বেঙ্গালুরুতে ইসরো ভবনে পৌঁছে যান প্রধানমন্ত্রী। আনা হয়েছিল ক্যুইজ প্রতিযোগিতায় জয়ী ৬০ স্কুলপড়ুয়াকে। কিন্তু শেষ লগ্নে সব ওলটপালট হয়ে যায়। কন্ট্রোল রুম থেকে বেরনোর সময় মোদী বিজ্ঞানীদের কাজের প্রশংসা করেন। কথা বলেন পড়ুয়াদের সঙ্গে। এক পড়ুয়ার প্রশ্নের উত্তরে জানান, ব্যর্থতা ভুলে জীবনে এগোতে পারাই জরুরি। কিন্তু গাড়িতে ওঠার সময় মোদীর মুখ দেখে বোঝা যায়, বেশ অখুশি তিনি। ভোর চারটে নাগাদ আচমকা টুইট করে প্রধানমন্ত্রী জানান, সকাল আটটায় ইসরোর কন্ট্রোল রুমে বিজ্ঞানীদের সঙ্গে কথা বলবেন।
সকালে যখন এলেন মোদী, তখন কন্ট্রোল রুম জুড়ে শোকের ছায়া। সংগঠনের অন্দরে ইসরো-প্রধান কে শিবনের আত্মবিশ্বাস সুবিদিত। কিন্তু এ দিন তিনি ছিলেন দৃশ্যতই বিধ্বস্ত। আধ ঘণ্টা বক্তৃতা দিয়ে মোদী যখন বেরিয়ে যাচ্ছেন, তখন কেঁদে ফেলেন শিবন। তাঁকে জড়িয়ে ধরেন মোদী। এই অভিযানের মিশন ডিরেক্টর রীতু কারিঢালও শুক্রবার রাতের বিপর্যয়ের পর থেকে থম মেরে গিয়েছিলেন। এ দিন সকালেও তাঁর চোখমুখ ফোলা।
তাই মোদীর বক্তব্যের বেশির ভাগ জুড়েই ছিল ভোকাল টনিক। তিনি বলেন, বিক্রমের অবতরণ ব্যর্থ হলেও চন্দ্রাভিযান দেশকে গর্বিত করেছে। গোটা দেশ বিজ্ঞানীদের পাশে রয়েছে।
অনেকে বলছেন, মোদী এ দিন বিজ্ঞানীদের কাছে না-এলে তাঁকে আক্রমণ করতেন বিরোধীরা। তিনি সেই সুযোগ দিতে চাননি। বিজেপি পাল্টা বলছে, প্রতিকূল পরিস্থিতি অনুকূলে আনার ব্যাপারে মোদীর জুড়ি মেলা ভার। এক বিজেপি নেতার কথায়, ‘‘বিজ্ঞানীরা যাতে হতাশ না হয়ে এগিয়ে চলার প্রেরণা পান, প্রকৃত অভিভাবকের মতো সেই বার্তাই দেন প্রধানমন্ত্রী। যে ভাবে তিনি শিবনকে জড়িয়ে ধরেন, তা দেশবাসীর মনে গেঁথে গিয়েছে। তিনি আজ নিজেকে যে উচ্চতায় প্রতিষ্ঠিত করলেন, তাতে সরকারের সাফল্য-ব্যর্থতার প্রশ্ন গৌণ হয়ে গিয়েছে। অভিযান সফল হলেও হয়তো যা হত না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy