Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

স্রষ্টা সুভাষকে সম্মান জানাতে শহরে কানুপ্রিয়া

শুক্রবার অবরোধের শহরে হাঁসফাঁস করতে করতে অবশেষে পৌঁছলেন তিনি। লজ্জা মাখা হাসি নিয়ে লাল ব্লাউজ এবং ডিজাইনার শাড়িতে ঝকঝকে কানুপ্রিয়া অগ্রবাল ঢুকেই নমস্কার জানালেন অধ্যাপক সুনীত মুখোপাধ্যায়কে।

দেশের প্রথম টেস্ট টিউব বেবি কানুপ্রিয়া এখন চল্লিশ ছুঁইছুঁই। শুক্রবার বাবা প্রভাত অগ্রবাল (বাঁ দিকে ) ও অধ্যাপক সুনীত মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে শহরে। —নিজস্ব চিত্র

দেশের প্রথম টেস্ট টিউব বেবি কানুপ্রিয়া এখন চল্লিশ ছুঁইছুঁই। শুক্রবার বাবা প্রভাত অগ্রবাল (বাঁ দিকে ) ও অধ্যাপক সুনীত মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে শহরে। —নিজস্ব চিত্র

জয়তী রাহা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ এপ্রিল ২০১৮ ০২:৫৮
Share: Save:

গোটা দেশ জানত তিনি বিশ্বের দ্বিতীয় এবং এ দেশের প্রথম টেস্ট টিউব বেবি। কিন্তু তাঁর বাবা-মা সে নিয়ে সরাসরি কিছু জানাননি। প্রতিবেশী-আত্মীয়দের থেকেই প্রথম শুনেছিলেন ছোট্ট কানুপ্রিয়া। এ দেশে অবশ্য তাঁর প্রথম পরিচয় দুর্গা নামে। জন্মের দু’ঘণ্টার মধ্যে সাংবাদিকদের কাছে এই নামেই নাতনির পরিচয় করিয়েছিলেন দাদু।

শুক্রবার অবরোধের শহরে হাঁসফাঁস করতে করতে অবশেষে পৌঁছলেন তিনি। লজ্জা মাখা হাসি নিয়ে লাল ব্লাউজ এবং ডিজাইনার শাড়িতে ঝকঝকে কানুপ্রিয়া অগ্রবাল ঢুকেই নমস্কার জানালেন অধ্যাপক সুনীত মুখোপাধ্যায়কে। তাঁর জন্মের পিছনে যাঁদের অবদান সব থেকে বেশি, তাঁদেরই এক জন এই সুনীতবাবু। চিকিৎসক সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের অন্যতম সহযোগী বন্ধু তিনি।

বৃহস্পতিবার থেকে সায়েন্স সিটি অডিটোরিয়ামে শুরু হওয়া বন্ধ্যত্ব চিকিৎসকদের সংগঠন ‘ইন্ডিয়ান সোসাইটি ফর অ্যাসিস্টেড রিপ্রোডাকশন’-এর ২৩তম জাতীয় সম্মেলনে আমন্ত্রিত ছিলেন কানুপ্রিয়া। বাবা প্রভাত অগ্রবালকে নিয়ে সেখানে ঢুকেই সোজা চলে গেলেন সুনীতবাবুর সঙ্গে দেখা করতে। ‘‘চিকিৎসা জগতে সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের অবদান স্মরণীয় করে রাখতে, কানুপ্রিয়ার ছবির স্ট্যাম্প এবং সুভাষবাবুর ছবি দিয়ে কভার তৈরির পরিকল্পনাটা সংগঠনের তরফে স্বতঃপ্রণোদিত ভাবেই হয়েছিল’’, বলছিলেন অনুষ্ঠানের আয়োজক-সম্পাদক চিকিৎসক গৌতম খাস্তগীর।

এখনও চল্লিশে পৌঁছননি কানুপ্রিয়া। পড়াশোনা এ শহরেই। পুণের একটি প্রতিষ্ঠান থেকে এমবিএ পাশ করে সেই মেয়ে এখন মুম্বইয়ে কর্মরত। পাঁচ বছরের ছোট্ট মেয়ের মা, সমান ভাবে ঘর ও অফিস সামলে চলেছেন। অথচ এই মেয়ে সুস্থ হয়ে জন্মাবে কি না, সে দিন সেই নিশ্চয়তা দিতে পারেননি তাঁর সৃষ্টিকর্তা চিকিৎসক সুভাষ মুখোপাধ্যায়। বড়বাজারের ব্যবসায়ী প্রভাত অগ্রবাল আজও মনে করতে পারেন এনআরএসে সুভাষবাবুর সঙ্গে প্রথম সাক্ষাতের কথা। বললেন, “শুরুটাই ছিল সততা দিয়ে। কোনও মিথ্যে প্রতিশ্রুতি দেননি। বলেছিলেন, ‘পশুর উপরে পরীক্ষামূলক ভাবে ইন-ভিট্রো ফার্টিলাইজেশনের গবেষণা করছি। আপনারা যদি রাজি থাকেন, মানুষের উপরে প্রয়োগে আপনারাই হবেন প্রথম। তবে সন্তান সুস্থ না-ও হতে পারে। এ সব জেনেও যদি আসতে চান, আসবেন|’ আর সময় নষ্ট করতে চাইনি আমরা।’’

কানুপ্রিয়া জানান সুভাষবাবুর স্ত্রী নমিতা মুখোপাধ্যায়ের কথা। ‘‘মাঝেমধ্যেই আমাদের বাড়ি চলে যেতেন নমিতাদেবী। আমার জন্যে ওঁর জীবনে এত বড় ঝড় বয়ে গিয়েছিল। অথচ তার জন্য আমাকে এতটুকু কম ভালবাসেননি।’’ কথা শেষ হতেই চোখের জল মুছলেন সাতাশি বছরের সুনীতবাবু। বললেন, ‘‘এখন সুভাষের কৃতিত্ব সবাই মানছেন ঠিকই। কিন্তু সে দিন এর সিকিভাগ মানলে মানুষটাকে ওই ভাবে চলে যেতে হত না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Subhash Mukhopadhyay Kanupriya Agarwal
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE