Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

মিল্কি ওয়ে ছাড়িয়ে খোঁজ বাঙালি বিজ্ঞানীর

তারা ছিলই। কিন্তু বয়োজ্যেষ্ঠের সম্মান মিলল এত দিনে। তাদের সেই সম্মান এনে দিলেন ‘হার্ভার্ড স্মিথসোনিয়ান সেন্টার ফর অ্যাস্ট্রোফিজিক্স’-এর তরুণ বাঙালি গবেষক শৌনক বসু।

শৌনক বসু

শৌনক বসু

সায়ন্তনী ভট্টাচার্য
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৩:৪৫
Share: Save:

তারা ছিলই। কিন্তু বয়োজ্যেষ্ঠের সম্মান মিলল এত দিনে। তাদের সেই সম্মান এনে দিলেন ‘হার্ভার্ড স্মিথসোনিয়ান সেন্টার ফর অ্যাস্ট্রোফিজিক্স’-এর তরুণ বাঙালি গবেষক শৌনক বসু।

আমাদের মিল্কি ওয়ে গ্যালাক্সি বা ছায়াপথকে কেন্দ্র করে তার চারপাশে পাক খাচ্ছে বেশ কিছু ছোট ছোট গ্যালাক্সি। ‘উপ-গ্যালাক্সি’ও বলা যায়, কারণ, চাঁদ যেমন পৃথিবীর চারপাশে ঘুরছে, এরা তেমনই প্রদক্ষিণ করছে মিল্কি ওয়েকে। বিজ্ঞানীরা বলেন, ‘স্যাটেলাইট গ্যালাক্সি’। তাদের অস্তিত্বের কথা আগেই জানতে পেরেছিলেন মহাকাশ বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু এ কথা জানা ছিল না, এদের কয়েক জন মহাবিশ্বের প্রবীণতম সদস্য। যেমন, সেগ-১, বুটস-১, টুকানা-২, উরসা মেজর-১। অঙ্কের হিসেবনিকেশ ও টেলিস্কোপের মহাকাশ পর্যবেক্ষণ থেকে পাওয়া তথ্য মিলিয়ে প্রায় নিভে আসা আলোর ওই সব খুদে গ্যালাক্সিকে মহাকাশ পরিবারের প্রবীণতমের সম্মান দিয়েছে শৌনকের নেতৃত্বাধীন গবেষক দল।

শৌনক জানান, গত দু’দশকে ‘সোলান ডিজিট্যাল স্কাই সার্ভে’ এবং ‘দ্য ডাক এনার্জি সার্ভে’, এই দুই শক্তিশালী টেলিস্কোপের মাধ্যমে ওই সব গ্যালাক্সির খোঁজ মিলেছে। তার পর থেকে তাদের উপর নজর রাখা হচ্ছে। জানা গিয়েছে বহু অজানা তথ্যই। যেমন, তারা পৃথিবী থেকে কত দূরে রয়েছে, ওই সব গ্যালাক্সির তারারা কী পরিমাণ আলো বিকিরণ করে (যাকে বিজ্ঞানের ভাষায় বলে ‘লুমিনোসিটি ফাংশন’) ইত্যাদি। শৌনকের কথায়, ‘‘এই কাজগুলো আগেই হয়েছিল। আমরা সুপার কম্পিউটারের মাধ্যমে থিয়োরিটিক্যাল মডেলের সাহায্যে মিল্কি ওয়ের স্যাটেলাইটদের ‘লুমিনোসিটি ফাংশন’ অঙ্ক কষে বার করি। তা থেকেই জানা যায়, কোন গ্যালাক্সির বয়স হয়েছে আর কারা নবীন।’’

শৌনক বলেন, ‘‘এর পর তা টেলিস্কোপের পর্যবেক্ষণ মারফত পাওয়া তথ্যের সঙ্গে তুলনা করে দেখা হয়। দুয়ের তথ্য মিলে যায়। তখনই বোঝা যায়, আমরা ঠিক পথে হাঁটছি। এর পর ‘লুমিনোসিটি ফাংশন’ হিসেব করতে গিয়ে জানা যায়, ফিকে হয়ে যাওয়া এই গ্যালাক্সিগুলোর বয়স আমাদের মিল্কি ওয়ের থেকে অনেক বেশি। বলা যায়, কসমসের প্রবীণতম সদস্য তারা।’’ ‘দ্য অ্যাস্ট্রোফিজিক্যাল জার্নাল’-এ শৌনকদের গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে। এই গবেষণায় শৌনকের সঙ্গে ছিলেন ডরহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ইনস্টিটিউট ফর কম্পিউটেশনাল কসমোলজি’র দুই অধ্যাপক, অ্যালিস ডেসন এবং কার্লোস ফ্রেঙ্ক।

কলকাতার সল্টলেকের ছেলে ২৬ বছর বয়সি শৌনক ছোট থেকেই প্রবাসী। তিন বছর বয়সে মা-বাবার সঙ্গে দুবাই চলে যাওয়া। সেখান থেকে পরবর্তী কালে লন্ডনে। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক, স্নাতকোত্তর। এর পর ডরহাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি।

এই মুহূর্তে হার্ভার্ড স্মিথসোনিয়ান সেন্টার ফর অ্যাস্ট্রোফিজিক্স-এ রয়েছেন শৌনক। বললেন, ‘‘এটা অনেকটা ডাইনোসরের জীবাশ্ম খুঁজে পাওয়ার মতো। আলো ফুরিয়ে আসা ওই সব গ্যালাক্সি মহাকাশের ইতিহাস বয়ে নিয়ে চলেছে। বলা যায় না, এদের সূত্রেই হয়তো এক দিন আরও স্পষ্ট ভাবে জানা যাবে, গ্যালাক্সির জন্ম-বৃত্তান্ত।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Milky Way Galaxy Astronomer
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE