Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

ভিন গ্রহে ‘প্রাণ’ আবিষ্কার বছর কুড়ির মধ্যেই?

আর বড়জোর দশ কি কুড়িটা বছর! ‘প্রাণ’ বলতে যা বুঝি আমাদের এই গ্রহে, তা হয়তো পেয়ে যেতে পারি এই ব্রহ্মাণ্ডের অন্য কোথাও। অন্য কোনও সৌরমণ্ডলে। দাবি করলেন ‘ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ অ্যাস্ট্রোফিজিক্স’-এর বিশিষ্ট জ্যোতির্বিজ্ঞানী।

সুজয় চক্রবর্তী
শেষ আপডেট: ১৬ নভেম্বর ২০১৫ ১৫:৩৫
Share: Save:

আর বড়জোর দশ কি কুড়িটা বছর! ‘প্রাণ’ বলতে যা বুঝি আমাদের এই গ্রহে, তা হয়তো পেয়ে যেতে পারি এই ব্রহ্মাণ্ডের অন্য কোথাও। অন্য কোনওখানে। অন্য কোনও সৌরমণ্ডলে। অন্য কোনও তারা বা নক্ষত্রের ‘সংসারে’! সেই ‘প্রাণ’ নাই বা হল ‘ইন্টেলিজেন্ট লাইফ’ বা বুদ্ধিমান জীব। ভিন গ্রহের পরিবেশে ওজোন স্তরের দেখা মিললেই যথেষ্ট। সেটাই তো ‘বায়ো সিগনেচার’। প্রাণের প্রমাণ।

বেঙ্গালুরু থেকে টেলিফোনে এই দাবি করলেন কেন্দ্রীয় জ্যোতির্বিজ্ঞান গবেষণা সংস্থা ‘ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ অ্যাস্ট্রোফিজিক্স’-এর অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর, বিশিষ্ট জ্যোতির্বিজ্ঞানী সুজন সেনগুপ্ত।

সুজনবাবুর কথায়, ‘‘আমার ধারণা, ভিন গ্রহে যে ‘প্রাণী’দের কাছ থেকে আমরা ‘সিগন্যাল’ বা সঙ্কেত পাওয়ার আশা করছি, সেই ‘ইন্টেলিজেন্ট লাইফ’-এর হদিশ মেলার আগেই হয়তো আমরা অন্য কোনও গ্রহে পেয়ে যাব বায়ো সিগনেচারের সন্ধান।’’

কী ভাবে এতটা আত্মবিশ্বাসী হতে পারছেন জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা?


কোন কোন ভিন গ্রহে থাকতে পারে প্রাণ

সুজনবাবুর ব্যাখ্যা, ‘‘এই ব্রহ্মাণ্ডে আমরা মোট ১৮টি জাত/গোত্রের গ্রহ পেয়েছি। তার মধ্যে এই সৌরমণ্ডলে রয়েছে পাঁচটি জাতের গ্রহ। আকার, আকৃতি, তাপমাত্রা, ঘনত্ব ও গঠন কাঠামোর বিচারে গ্রহগুলির ‘গোত্র’ আলাদা আলাদা হয়েছে। সেই ‘গোত্র’গুলি হল- ‘আর্থ’, ‘সাব-আর্থ’ (যেমন, বুধ), ‘জোভিয়ান’ (যেমন, বৃহস্পতি), ‘নেপচুনিয়ান’ (যেমন, নেপচুন) ও ‘ডোয়ার্ফ প্ল্যানেট’ বা বামন গ্রহ (যেগুলি বুধের চেয়েও আকারে ছোট)। কিন্তু, এর বাইরেও অন্য অন্য সৌরমণ্ডলে আরও ১৩টি জাত/গোত্রের গ্রহ রয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম- ‘সুপার আর্থ’। এই সুপার আর্থগুলি যে পৃথিবীর থেকে উন্নততর, তা নয়। তবে তা আকারে অনেকটা বড়। পৃথিবীর দেড় গুণ বা তার চেয়ে কিছু কম। ওই গ্রহগুলিতে গ্যাস ও পাথর দু-ই রয়েছে। আর তারা সকলেই অনেকটা আমাদের গ্রহের মতো। এর অর্থ, আমাদের গ্রহের মতো ‘সুপার আর্থে’ও কার্বনই সব জৈব যৌগের প্রাথমিক মৌল উপাদান। ‘সুপার আর্থ’গুলির তাপমাত্রাও শূন্য থেকে একশো ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে। যাতে জল সেখানে তরল অবস্থায় থাকতে পারে। ওই ‘সুপার আর্থ’গুলির মধ্যে এমন অন্তত ৫০টি গ্রহ রয়েছে, যেগুলি তাদের নক্ষত্র বা তারাদের চেয়ে রয়েছে অনেক অনেক দূরে। দূরে রয়েছে বলেই তারা যে নক্ষত্রকে ঘিরে চক্কর মারছে, সেই নক্ষত্রের তাপে তার ঝলসে যাওয়ার সম্ভাবনা কম। তার ফলে, সেখানে ‘প্রাণে’র সহায়ক পরিবেশ থাকার সম্ভাবনা অনেকটাই বেশি। আমরা এটাকেই বলছি, ‘হ্যাবিটেবল জোন’। তবে ‘হ্যাবিটেবল জোন’-এ আমরা খুব সামান্য কয়েকটা ‘আর্থ’ ও ‘সুপার আর্থ’-এর সন্ধান পেয়েছি। এত দিন তেমন শক্তিশালী টেলিস্কোপ আমাদের হাতে ছিল না বলে। ভারতে এখন যে টেলিস্কোপ ব্যবহার করা হয়, তার ব্যাস দু’ মিটার। আর অন্য দেশগুলিতে ব্যবহার করা হয় দশ মিটার ব্যাসের টেলিস্কোপ। কিন্তু, আর সাত-আট বছরের মধ্যেই আমরা ভারতীয় জ্যোতির্বিজ্ঞানীরাও আরও ১৫ গুণ বেশি ব্যাসের টেলিস্কোপ হাতে পেয়ে যাব। তার ফলে, আরও সহজে, আরও দ্রুত আরও আরও ‘সুপার আর্থ’ আমরা দেখতে পারব, অন্য অন্য সৌরমণ্ডলে। ২০২২/২০২৪ সালের মধ্যেই ওই টেলিস্কোপগুলি আমরা পেয়ে যাব।’’


অন্য সৌরমণ্ডলের গ্রহ ‘জি-৫৮১ডি’। যেখানে মিলতে পারে প্রাণের হদিশ!

ভিন গ্রহে ‘প্রাণ’ খুঁজে পাওয়ার জন্য কোন বিষয়টিকে দেওয়া হচ্ছে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব?

বিশিষ্ট জ্যোতির্বিজ্ঞানী সুজন সেনগুপ্ত জানাচ্ছেন, ‘‘বায়ো সিগনেচার। তার জন্য আমরা আপাতত খুঁজছি একটি ‘সায়ানো ব্যাকটেরিয়া’কে। এই ব্যাকটেরিয়াই পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্যাসের অণুকে ভেঙে অক্সিজেন গ্যাসের অণুর জন্ম দিয়েছিল। তাতে এই গ্রহে প্রাণের জন্ম হলেও তাকে বাঁচিয়ে রাখা যেত না। কারণ, মহাজাগতিক বিকিরণের ঝাপটায় সেই প্রাণ নিশ্চিহ্ন হয়ে যেত। তাই মহাজাগতিক বিকিরণের হাত থেকে পৃথিবীর প্রাণকে বাঁচাতে অক্সিজেন গ্যাসের অণু ওই বিকিরণের অক্সিজেন পরমাণুর সঙ্গে জোট বেঁধে ওজোন গ্যাসের অণু বানিয়েছিল। সেই ওজোন স্তর এখনও মহাজাগতিক বিকিরণের হাত থেকে আমাদের বাঁচিয়ে যাচ্ছে। আমাদের ধারণা, একই ভাবে ভিন গ্রহেও, বিশেষ করে কোনও ‘কার্বন প্ল্যানেটে’ কোনও ব্যাকটেরিয়া ওজোন গ্যাসের স্তর তৈরি করেছে। এটাই ‘বায়ো সিগনেচার’। এটার হদিশ মিললেই আমরা নিশ্চিত হয়ে যাব, ওই ভিন গ্রহে প্রাণ রয়েছে। আর সেই প্রাণ আমাদের পৃথিবীর মতোই। নতুন শক্তিশালী টেলিস্কোপ ভিন গ্রহে ‘বায়ো সিগনেচার’ পেতেও আমাদের খুব সাহায্য করবে।’’

সৌরমণ্ডলের বাইরে প্রথম গ্রহের আবিষ্কর্তা মিশেল মেয়রের (ডান দিকে) সঙ্গে বিজ্ঞানী সুজন সেনগুপ্ত।

এই ব্রহ্মাণ্ডে আমরা যে মোটেই ‘একা’ নই, সে ব্যাপারে একশো ভাগ নিশ্চিত হতে আর বড়জোর এক বা দু’দশক লাগবে, এমনটাই দাবি করছেন ভারতীয় জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের একাংশ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

exo-planet solar sun space deep
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE