Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
Science News

সূর্যের জন্মের আগেকার বিরল পদার্থের হদিশ মিলল উল্কাপিণ্ডের খাঁজে!

অ্যালেন্দে উল্কাপিণ্ডটির খাঁজেই ছিল ঝাপসাটে সাদা পদার্থটি। কিন্তু সেটি আদতে কী, তা কী দিয়ে তৈরি, এত দিন জানা সম্ভব হয়নি। আর তাই ওই পদার্থটির নাম দেওয়া হয়েছিল ‘কিউরিয়াস মারি’। দু’-দু’বার নোবেল পুরস্কারজয়ী রসায়নবিদ মারি ক্যুরির স্মরণে।

উল্কাপিণ্ডের খাঁজে থাকা সেই আদিমতম কঠিন পদার্থ ‘কিউরিয়াস মারি’ (লাল তিরচিহ্নিত)।

উল্কাপিণ্ডের খাঁজে থাকা সেই আদিমতম কঠিন পদার্থ ‘কিউরিয়াস মারি’ (লাল তিরচিহ্নিত)।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ৩০ জানুয়ারি ২০২০ ১৮:০২
Share: Save:

আমাদের সূর্যের জন্মের আগে ব্রহ্মাণ্ডে যে আদিমতম কঠিন পদার্থের সৃষ্টি হয়েছিল, তার হদিশ মিলল পৃথিবীতে। এই প্রথম। সাড়ে ৫০০ কোটি বছর আগে ব্রহ্মাণ্ডের প্রচণ্ড তাপমাত্রায় ওই কঠিন পদার্থের বেশি ক্ষণ টিকে থাকা একেবারেই অসম্ভব ছিল। সেই প্রচণ্ড তাপমাত্রায় গলে বা বাষ্পীভূত হয়ে যাওয়ার কথা কোনও কঠিন পদার্থের। কিন্তু পদার্থটি গলেনি। এমনকি, এখনও তা কঠিনই রয়েছে।

সেই বিরল পদার্থটির হদিশ মিলেছে আজ থেকে ৫১ বছর আগে উত্তর মেক্সিকোতে আছড়ে পড়া একটি উল্কাপিণ্ড থেকে। যার নাম- ‘অ্যালেন্দে’। ১৯৬৯-র ফেব্রুয়ারিতে অ্যালেন্দে আছড়ে পড়ে পৃথিবীর বুকে। ব্রহ্মাণ্ডের আদিমতম ওই কঠিন পদার্থকে বলা হয়, ‘প্রি-সোলার গ্রেইনস’।

অ্যালেন্দে উল্কাপিণ্ডটির খাঁজেই ছিল ঝাপসাটে সাদা পদার্থটি। কিন্তু সেটি আদতে কী, তা কী দিয়ে তৈরি, এত দিন জানা সম্ভব হয়নি। আর তাই ওই পদার্থটির নাম দেওয়া হয়েছিল ‘কিউরিয়াস মারি’। দু’-দু’বার নোবেল পুরস্কারজয়ী রসায়নবিদ মারি ক্যুরির স্মরণে।

রাসায়নিক বিশ্লেষণের পর এ বার জানা গেল, অ্যালেন্দের খাঁজে থাকা পদার্থটি আসলে ক্যালসিয়াম ও অ্যালুমিনিয়াম ধাতুর একটি যৌগ। আর তার মধ্যে রয়েছে সিলিকন ও কার্বনের একটি যৌগ- সিলিকন কার্বাইড। যা রয়েছে আদ্যোপান্ত কঠিন অবস্থায়। ব্রহ্মাণ্ডে যার সৃষ্টি হয়েছিল সূর্যেরও জন্মের আগে। আজ থেকে অন্তত ৫০০/৫৫০ কোটি বছর আগে।

সেন্ট লুইয়ে ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষণা এই খবর দিয়েছে। গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান-জার্নাল ‘নেচার-অ্যাস্ট্রোনমি’তে।

আরও পড়ুন- কলকাতার শীত এ বার নোবেলবর্ষী, শহরের লাভ হল কি!​

আরও পড়ুন- এ বার সব ক্যানসার সারবে একই উপায়ে? যুগান্তকারী আবিষ্কার​

মূল গবেষক ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ওলগা প্রাভদিভ্‌তসেভা বলেছেন, ‘‘ব্রহ্মাণ্ডের যে সময়ে ওই কঠিন পদার্থের সৃষ্টি হয়েছিল, সেই সময় তার পক্ষে বেশি ক্ষণ কঠিন অবস্থায় থাকা সম্ভব ছিল না। কারণ, ব্রহ্মাণ্ডের তাপমাত্রা তখন খুব বেশি। যে তাপমাত্রায় যে কোনও পদার্থই কঠিন অবস্থায় বেশি ক্ষণ স্থায়ী হতে পারে না। যা আমাদের যথেষ্টই অবাক করে দিয়েছে। আরও অবাক করেছে সেই পদার্থটি তৈরি হয়েছিল ক্যালসিয়াম ও অ্যালুমিনিয়ামের মতো দু’টি ধাতু (যাদের বলা হয়, ‘ক্যালসিয়াম-অ্যালুমিনিয়াম-রিচ ইনক্লুশন (সিএআই)’ দিয়ে। যাদের গলনাঙ্ক (মেল্টিং পয়েন্ট) খুব বেশি নয়।’’

মূল গবেষক ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ওলগা প্রাভদিভ্‌তসেভা। ছবি-টুইটারের সৌজন্যে।

৫১ বছর আগে পৃথিবীর বুকে আছড়ে পড়া অ্যালেন্দে উল্কাপিণ্ডটি রাখা আছে শিকাগো ফিল্ড মিউজিয়ামের ‘প্রিৎজকার সেন্টার ফর মেটিওরিটিক্স অ্যান্ড পোলার স্টাডিজ’-এ। এই উল্কাপিণ্ডটি এর আগেও খবরের শিরোনাম হয়েছিল। বেশ কয়েক বছর আগে যখন তার খাঁজে আটকে থাকা পদার্থটি সম্পর্কে বিন্দুবিসর্গ না জানা সত্ত্বেও তার নামকরণ করা হয়েছিল দু’-দু’বার নোবেল পুরস্কারজয়ী রসায়নবিদ মারি ক্যুরির নামে।

মূল গবেষক প্রাভদিভ্‌তসেভার কথায়, ‘‘আমাদের সূর্যের জন্মের আগে নেবুলার কোনও কোনও জায়গায় হয়তো এমন তাপমাত্রা ছিল, যাতে সিলিকন কার্বাইডের মতো কঠিন পদার্থ সৃষ্টির পর তা কয়েকশো কোটি বছর ধরে স্থায়ী হতে পারে। এর মানে, সূর্যের জন্মের আগে যে কঠিন পদার্থগুলির জন্ম হয়েছিল, তাদের সকলেই প্রচণ্ড তাপমাত্রায় গলে বা বাষ্পীভূত হয়ে যায়নি।’’

ছবি সৌজন্যে: নাসা

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE