আল্টিমা টুলির কাছে নাসার মহাকাশযান নিউ হরাইজন। ছবি নাসা নিউ হরাইজন টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে।
সৌর জগতের প্রান্তে গ্রহাণু রাজ্যের বাসিন্দা এটি। বয়সেও সম্ভবত সৌর জগতের সমান। পৃথিবী থেকে প্রায় ৬৪০ কোটি কিলোমিটার দূরের সেই খুদে গ্রহাণু ‘আলটিমা টুলে’-র কাছে পৌঁছে গেল নাসার মহাকাশযান ‘নিউ হরাইজ়ন’। ইংরেজি নববর্ষে ৩০ কিলোমিটার চওড়া বরফ-সদৃশ এই মহাজাগতিক বস্তুটির কান ঘেঁষে ছবি তুলতে তুলতে গিয়েছে নাসার যানটি।
ঘন অন্ধকার, হিমায়িত ‘কুপিয়ার বেষ্টনীর’ একেবারে শেষ সারিতে রয়েছে আলটিমা টুলে। প্লুটোর থেকেও অন্তত ১০০ কোটি কিলোমিটার দূরে। মহাকাশে মানুষের দেখাশোনার পরিধির মধ্যে দূরতম। নাসা জানিয়েছে, আলটিমা টুলের মতো কয়েক লক্ষ গ্রহাণু ঘুরে বেরাচ্ছে কুপিয়ার বেষ্ঠনীতে। এগুলি সম্পর্কে ঠিক মতো খোঁজ চালালে ৪৬০ কোটি বছর আগে সৌর জগতের সৃষ্টির সময় সম্পর্কে অনেক তথ্য মিলতে পারে। নাসা জানিয়েছে, আয়ু ফুরনোর আগে কুপিয়ার বেল্টের আরও বেশ কিছু গ্রহাণুর তত্ত্বতালাশ নেবে ‘নিউ হরাইজ়ন’। অভিযানের নেতৃত্বে রয়েছেন অ্যালেন স্টার্ন। তিনি বলেছেন, ‘‘আলটিমা এমন একটা ‘ডিপ ফ্রিজের’ মতো জায়গায় রয়েছে যে সেটির গঠন প্রথমে যেমন ছিল, ঠিক তেমনটি রয়েছে এখনও।’’
নাসার এই ঐতিহাসিক অভিযানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে ভারতীয় এক বিজ্ঞানীর। মুম্বইয়ের শ্যাম ভাস্করন। ‘নিউ হরাইজ়ন’ কোন পথে আলটিমা টুলের দিকে যাবে, তা নির্ধারণে বিশেষ ভূমিকা রয়েছে তাঁর। ভাস্করন জানাচ্ছেন, খুদে গ্রহটি যেহেতু একেবারেই বিচ্ছিন্ন, তাই এটির কাছে পৌঁছনো অনেক সোজা। তবে তিনি এ-ও বলেছেন, ‘‘অভিযানটি অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং। কারণ, আকারে অত্যন্ত ছোট, কালো ও সম্পূর্ণ অচেনা এই বস্তুটিকে খুঁজে পাওয়াই বেশ কঠিন।’’
২০১৪ সালে হাব্ল স্পেস টেলিস্কোপে প্রথম ধরা পরেছিল এর অস্তিত্ব। ২০১৫ সালে আলটিমার নিকটতম প্রতিবেশী প্লুটোর পাশ দিয়ে প্রথম উড়ে যায় ‘নিউ হরাইজ়ন’। সে অভিযান সফল হওয়ার পরেই আলটিমা টুলের দিকে নিউ হরাইজ়নকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি শুরু করে নাসা। মহাকাশ গবেষণা সংস্থাটি জানিয়েছে, ঘণ্টায় ৩২ হাজার মাইল বেগে ছুটছে ‘নিউ হরাইজ়ন’। আলটিমা টুলের বাইশশো মাইলের মধ্যে পৌঁছে গিয়েছে নাসার যানটি। আলটিমা টুলের গা ঘেঁষে যাওয়ার সময়ে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে ৯০০টি ছবি তোলার কথা ‘নিউ হরাইজ়ন’-এর। তবে কী ভাবে সেটি আলটিমা টুলের কাছে যাচ্ছে, তা সরাসরি সম্প্রচার করা সম্ভব নয়। কারণ, মহাকাশযানটি থেকে কোনও বার্তা পৃথিবীতে পৌঁছতে সময় লাগে ৬ ঘণ্টা। পৃথিবী থেকে কোনও নির্দেশ পাঠালেও তা ‘নিউ হরাইজ়ন’-এ পৌঁছতেও লাগছে ততটা সময়। ফলে এ নিয়ে ভিডিয়ো তৈরি করা সম্ভব নয় আপাতত। এমনকি, আলটিমা কেমন দেখতে তা-ও এখনও জানেন না বিজ্ঞানীরা। সোমবার ১২ লক্ষ মাইল দূর থেকে তোলা একটি অস্পষ্ট ছবি প্রকাশ করেছে নাসা। তবে সেটা একটিই বস্তু না একাধিক বস্তুর সমষ্টি, অসমান না মসৃণ — স্পষ্ট নয় তা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy