Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

জটিল ম্যালেরিয়া রুখতে যাত্রা শুরু নয়া প্রতিষেধকের

গবেষণাগারের পরীক্ষায় সাফল্যের হার ছিল দশে চার। ম্যালেরিয়ায় প্রাণসংশয়ের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, এমন ক্ষেত্রে সাফল্যের হার দশে তিন। এ বার পাইলট প্রজেক্ট হিসেবে বাস্তবের মাটিতে বিশ্বের প্রথম ম্যালিগন্যান্ট ম্যালেরিয়ার প্রতিষেধকের যাত্রা শুরু হল।

প্রায় ৩০ বছরের পরীক্ষানিরীক্ষার পরে ম্যালিগন্যান্ট ম্যালেরিয়ার কোনও অনুমোদিত প্রতিষেধক তৈরি হল

প্রায় ৩০ বছরের পরীক্ষানিরীক্ষার পরে ম্যালিগন্যান্ট ম্যালেরিয়ার কোনও অনুমোদিত প্রতিষেধক তৈরি হল

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২৫ এপ্রিল ২০১৯ ০২:৫৩
Share: Save:

গবেষণাগারের পরীক্ষায় সাফল্যের হার ছিল দশে চার। ম্যালেরিয়ায় প্রাণসংশয়ের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, এমন ক্ষেত্রে সাফল্যের হার দশে তিন। এ বার পাইলট প্রজেক্ট হিসেবে বাস্তবের মাটিতে বিশ্বের প্রথম ম্যালিগন্যান্ট ম্যালেরিয়ার প্রতিষেধকের যাত্রা শুরু হল।

প্রায় ৩০ বছরের পরীক্ষানিরীক্ষার পরে ম্যালিগন্যান্ট ম্যালেরিয়ার কোনও অনুমোদিত প্রতিষেধক তৈরি হল। স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা, আফ্রিকার কয়েকটি দেশের সঙ্গে যৌথ ভাবে এই প্রতিষেধক প্রক্রিয়া তৈরির প্রক্রিয়ায় যুক্ত ছিল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)। প্রাথমিক ভাবে মালাউয়িতে দু’বছর পর্যন্ত শিশুদের এই প্রতিষেধক দেওয়া হবে। পরবর্তী ধাপে পাইলট প্রজেক্টের অঙ্গ হিসেবে ঘানা এবং কেনিয়ায় ‘আরটিএসএস’ নামে এই প্রতিষেধক দেওয়া হবে। মোট তিন লক্ষ ৬০ হাজার শিশুকে এই প্রতিষেধক দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। এর পরে বিশ্বের আর কোন দেশে এই প্রতিষেধক পাঠানো যায়, তা ঠিক করবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।

হু-এর ডিরেক্টর জেনারেল টেড্রস অ্যাধেনম গেবরাইসিস বলেন, ‘‘১৫ বছর ধরে বিভিন্ন কর্মসূচি এবং মশারি বিতরণের মাধ্যমে ম্যালেরিয়া নিয়ন্ত্রণে সাফল্য মিলেছে। কিন্তু সে-সবের হাত ধরে আসা সাফল্যের হার থমকে গিয়েছিল। ম্যালেরিয়া নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির গতি ফেরাতে নতুন কিছুর দরকার ছিল। এই প্রতিষেধক সেই কাজ করবে বলে আমরা আশাবাদী।’’ হু-এর চিকিৎসক ম্যারি হ্যামেল জানান, সারা বিশ্বেই এখনও পর্যন্ত শিশুমৃত্যুর অন্যতম কারণ হল ম্যালেরিয়া। তবে আফ্রিকার শিশুরা সব চেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। সেখানে প্রতি দু’মিনিটে একটি শিশুর মৃত্যু হয় ম্যালেরিয়ায়। আফ্রিকায় প্রতি বছর ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা আড়াই লক্ষেরও বেশি। এই অবস্থায় পাইলট প্রজেক্ট হলেও প্রতিষেধকের যাত্রাকে স্বাগত জানিয়েছেন দেশ-বিদেশের গবেষকেরা।

আরটিএসএসের পথ চলা ভারতে কী প্রভাব ফেলবে? বিশেষত যেখানে জাতীয় পতঙ্গবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির তথ্য বলছে, ২০১৮ সালে এ দেশে ম্যালেরিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা তিন লক্ষ ৯৯ হাজার ১৩৪। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসক অরুণাংশু তালুকদার জানান, ম্যালেরিয়া দু’ধরনের হয়। ভাইভ্যাক্স এবং ফ্যালসিপেরাম বা ম্যালিগন্যান্ট ম্যালেরিয়া। আফ্রিকার দেশগুলিতে ম্যালিগন্যান্ট ম্যালেরিয়া বেশি হয়। ভাইভ্যাক্স ম্যালেরিয়া বেশি হয় এশিয়ার দেশগুলিতে। পাইলট প্রজেক্টের অঙ্গ হিসেবে যে-প্রতিষেধক যাত্রা শুরু করেছে, তা ফ্যালসিপেরাম ম্যালেরিয়ার জন্য এবং শুধুই শিশুদের এই প্রতিষেধক দেওয়া যাবে। প্রথম তিনটে ডোজ এক বছরের মধ্যে। চতুর্থ ডোজ দিতে হবে দু’বছরের মধ্যে। ক্লিনিক্যাল পরীক্ষায় প্রতিষেধকের সাফল্যের হার ৪০ শতাংশ। বাস্তবেও সেই হার বজায় থাকবে এমন কোনও নিশ্চয়তা নেই। প্রতিষেধকের গুরুত্ব বোঝাতে তিনি বলেন, ‘‘ম্যালেরিয়া নিয়ন্ত্রণে যে-সব কর্মসূচি রয়েছে, তার পাশাপাশি বাড়তি পাওনার কাজ করবে এই প্রতিষেধক। তাতে ম্যালেরিয়া পুরোপুরি নির্মূল হবে না ঠিকই। তবে প্রকোপ কমানোর ক্ষেত্রে এটি একটি বড় পদক্ষেপ।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Malaria Disease Health
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE