ফারাক: দক্ষিণ মেরু অঞ্চলের ওজোন স্তরের ২০০০ (বাঁ দিকে) ও ২০১৮ (ডান দিকে) সালে তোলা নাসার দুই চিত্র। এপি
আশার বার্তা দিল রাষ্ট্রপুঞ্জ। ক্ষত সারছে ওজোন স্তরের!
পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের উপরের ভাগে, স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারে ওজোন গ্যাসের (O3) এই চাদরটি খুবই পাতলা। কিন্তু বড় কাজের। সুর্যের আলো বা তাপ দিব্যি ঢুকতে পারে। ভেদ করে আসে চাঁদ-তারাদের নরম আলোও। কিন্তু সূর্য থেকে আসা সবই যে আমাদের পক্ষে ভাল, তা নয়। ক্ষতিকর রশ্মিগুলিকে আটকে দেয় ওই পাতলা চাদরটিই। যা না থাকলে, পৃথিবীতে জীবনই থাকত না। এমন একটি রক্ষাকবচ আমরা নষ্ট করে ফেলছিলাম। শিল্প-কলকারখানা ও আধুনিক জীবনের সুবিধা নিতে গিয়ে ওই পাতলা চাদরটি ফুটো করে ফেলেছে মানুষ। উত্তর ও দক্ষিণ, দুই মেরুতেই ছেঁদা হয়ে গিয়েছে ওজনের স্তর। বড় ফুটোটি হয়েছে দক্ষিণ মেরুর আকাশে। তবে ভরসার কথা এটাই যে, সময়ে সতর্ক হওয়ায় ওজোন স্তরের ক্ষতি পূরণ হতে শুরু করছে। যদিও খুব ধীরে। রাষ্ট্রপুঞ্জের এক রিপোর্ট বলছে, ২০০০ সাল থেকে প্রতি দশকে ১-৩ শতাংশ হারে ওজোন স্তরের ক্ষত কমছে।
সূর্য থেকে আসা অতিবেগুনি রশ্মি আমাদের পক্ষে ক্ষতিকর। চোখে ঢুকলে দৃষ্টিশক্তির ক্ষতি, চামড়ায় লাগলে হয় ক্যানসারের মতো রোগ। ওজোন স্তর ওই রশ্মি থেকে আমাদের বাঁচায়। দীর্ঘদিন ধরে মানুষের তৈরি নানা ধরনের রাসায়নিক ও গ্যাসের প্রভাবে ভেঙে যাচ্ছিল সেই ওজোন স্তর। তাতেই বিজ্ঞানীদের কপালে ভাঁজ বাড়ছিল। পৃথিবীকে আসন্ন বিপদ থেকে রক্ষা করতে ১৯৮৭ সালের ২৬ অগস্ট স্বাক্ষরিত হয় মন্ট্রিল চুক্তি। সে সময় ফ্রিজ, স্প্রে করার
ক্যান ইত্যাদি নিত্যব্যবহার্য কিছু জিনিসে ক্লোরোফ্লুরোকার্বন (সিএফসি)-এর মতো গ্যাসের ব্যবহার অবাধ ছিল। নিয়ম করে এই ধরনের কিছু গ্যাসকে নিষিদ্ধ করা হয়। মন্ট্রিল চুক্তি অনুযায়ী, প্রতি চার বছর অন্তর ওজোন স্তরের অবস্থা খতিয়ে দেখা শুরু হয়।
রাষ্ট্রপুঞ্জের পরিবেশ সংক্রান্ত দফতর এবং আন্তর্জাতিক আবহাওয়া সংগঠনের মতে, এত দিনে ফল মিলতে শুরু করেছে। প্রতি দশকে ১-৩ শতাংশ হারে ওজোন স্তরের ক্ষত সারছে। এ ভাবে এগোলে, ২০৩০ সালের মধ্যে উত্তর গোলার্ধে, ২০৫০ সালের মধ্যে দক্ষিণ গোলার্ধে এবং দুই মেরু অঞ্চলে ২০৬০ সালের মধ্যে ওজোন স্তরের ক্ষত পুরোপুরি নিরাময় হতে পারে।
তবে আশঙ্কার একটি তথ্যও রয়েছে রাষ্ট্রপুঞ্জে রিপোর্টে। তা হল মন্ট্রিল চুক্তি ভেঙে পূর্ব এশিয়ার কিছু দেশে এখনও সিএফসি-১১ গ্যাসটি ব্যবহার করা হচ্ছে। অবিলম্বে তা বন্ধ না হলে, ক্ষত-মেরামতের প্রক্রিয়াটি ৭ থেকে ২০ বছর পিছিয়ে যাবে। কোন কোন দেশ গ্রহশত্রুর কাজটি করছে, এ বার তা খতিয়ে দেখবে রাষ্ট্রপুঞ্জ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy