এ বার মহাকাশে মানুষ পাঠাচ্ছে পাকিস্তানও। ছবি- সংগৃহীত।
ভারতের সঙ্গে প্রতিযোগিতাকে এ বার মহাকাশ পর্যন্ত নিয়ে গেল পাকিস্তান। যেন ভারতের সঙ্গে টক্কর দিতেই হবে পাকিস্তানকে। আর সে ব্যাপারে সহায়তা নেওয়ার জন্য চিনকেই বেছে নিল ইসলামাবাদ।
ভারতের ঘোষণার আড়াই মাস পর বৃহস্পতিবার পাকিস্তানও জানিয়ে দিল, আর চার বছর পর, ২০২২ সালে তারাও মানুষ পাঠাবে মহাকাশে। আর ভারতকে যেমন মহাকাশচারী পাঠাতে সাহায্য করবে বলে হালে কথা দিয়ে গিয়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন, তেমনই ইসলামাবাদও জানিয়েছে, মহাকাশে মানুষ পাঠাতে তাদের সাহায্য করবে চিন।
বৃহস্পতিবার ইসলামাবাদে পাক মন্ত্রিসভার বৈঠকে ওই সিদ্ধান্ত নতুন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের অনুমোদন পাওয়ার পর সে দেশের তথ্যমন্ত্রী ফাওয়াদ চৌধুরী তা সাংবাদিকদের জানান। তিনি বলেন, ‘‘চিনের সাহায্যেই আমরা এই প্রথম কোনও পাকিস্তানি নাগরিককে পাঠাতে চলেছি মহাকাশে। আর তা পাঠানো হবে ২০২২-এই।’’ ফাওয়াদ এও জানান, মহাকাশে মানুষ পাঠানোর ব্যাপারে যাবতীয় সাহায্য নিতে ইতিমধ্যেই চিনের একটি সংস্থার সঙ্গে চুক্তি হয়েছে পাক মহাকাশ সংস্থা ‘পাকিস্তান স্পেস অ্যান্ড আপার অ্যাটমস্ফিয়ার রিসার্চ কমিশন’ (‘সুপারকো’)-এর। দায়িত্ব নেওয়ার পর পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান আগামী ৩ নভেম্বর তাঁর প্রথম চিন সফরে যাচ্ছেন বেজিং-এ।
গত ১৫ অগস্ট, দিল্লির লাল কেল্লায় স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ঘোষণা করেছিলেন, আর দেরি করা যাবে না। ২০২২-এই মহাকাশে মানুষ পাঠাবে ভারত। ওই ঘোষণার পর মহাকাশে মানুষ পাঠানোর জন্য তড়িঘড়ি একটি বিশেষ কমিটি গড়ে ফেলে ভারতের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরো। জানানো হয়, তিন জন ভারতীয়কে পাঠানো হবে মহাকাশে। তাদের কস্টিউমের মডেলও ইসরোর ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়। এ মাসের গোড়ায় দিল্লিতে এসে রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন জানান, ভারতকে মহাকাশে মানুষ পাঠাতে সাহায্য করবে রাশিয়া। তাঁদের অত্যন্ত শক্তিশালী রুশ রকেট ‘সয়ুজ’-এর পিঠে চাপিয়ে পাঠানো হবে মহাকাশে। সেই রকেট মহাকাশে পাড়ি জমাবে কাজাখস্তানের বৈকানুর উৎক্ষেপণস্থল থেকে। এ ব্যাপারে ভারতকে যাবতীয় প্রযুক্তিগত সাহায্য দিতেও তারা রাজি বলে রুশ প্রেসিডেন্ট জানান।
আরও পড়ুন- ডোকলাম এড়িয়ে ঘুরপথে চিনের চোখ শিলিগুড়ি করিডর!
আরও পড়ুন- কেন মহাকাশ স্টেশনে ভারতীয় পাঠাতে পারেনি ইসরো? প্রশ্ন বিজ্ঞানীদের
কোনও সন্দেহ নেই, ইসলামাবাদের গতকালের ঘোষণা দিল্লির ঘোষণার প্রেক্ষিতেই।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মহাকাশে মানুষ পাঠানোর ব্যাপারে পাকিস্তান যে চিনের সহায়তা নেবে, এটাই প্রত্যাশিত। কারণ, গত কয়েক বছর ধরেই প্রতিরক্ষা ও মহাকাশ গবেষণায় ইসলামাবাদকে চিনা সহায়তা উত্তরোত্তর বেড়েই চলেছে। চিনা সমরাস্ত্রের উল্লেখযোগ্য ক্রেতাদের মধ্যে সামনের সারিতে রয়েছে পাকিস্তানের নাম। এ বছরের গোড়ায় চিনা রকেটের পিঠে চাপিয়েই পাকিস্তান নিজেদের বানানো দু’টি কৃত্রিম উপগ্রহকে পাঠিয়েছে মহাকাশে। সেই উপগ্রহগুলি পাঠানো হয়েছিল চিনের গোবি মরুভূমির জিশান উপগ্রহ উৎক্ষেপণ কেন্দ্র থেকে। ‘চাইনিজ লং মার্চ’ (এলএম-টু-সি) রকেটের পিঠে চেপেই সেই পাক উপগ্রহগুলি পাড়ি জমিয়েছিল মহাকাশে। তাদের মধ্যে একটি পাক উপগ্রহ ছিল রিমোট সেন্সিং স্যাটেলাইট (পিআরএসএস-ওয়ান)। ভূ-পর্যবেক্ষণ ও দূর সংযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের লক্ষ্যেই ওই উপগ্রহটিকে পৃথিবীর কক্ষপথে পাঠিয়েছে পাকিস্তান। দ্বিতীয় উপগ্রহ (‘পিএকে-টেস-ওয়ান-এ’)-টিকে পাকিস্তান পাঠিয়েছে দেশের আবহাওয়ার পূর্বাভাসকে আরও নিখুঁত করে তোলার জন্য।
শুধু তাই নয়, এই শতাব্দীতে পা দেওয়ার পর গুরুত্ব দিয়ে মহাকাশ গবেষণা শুরুর মাত্র তিন বছরের (২০০৩ সাল) মাথায় মহাকাশে মানুষ পাঠিয়েছিল চিন। আর সেই প্রযুক্তিটাও দেশেই বানিয়েছিল চিন। বাইরে থেকে আমদানি করেনি। এখনও পর্যন্ত আমেরিকা ও রাশিয়া ছাড়া যে কৃতিত্ব আর কারও নেই। তবে মহাকাশ গবেষণা শুরুর পর চিন যত দ্রুত নিজের কৃতিত্বে মহাকাশ মানুষ পাঠাতে পেরেছিল, তা এখনও পর্যন্ত আমেরিকা বা রাশিয়া কেউই পারেনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy