Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

প্লাস্টিক-অসুর বধে নয়ডার বিজ্ঞানীরা

আনুমানিক হিসেব বলছে, ভারতে প্রতি বছর ১ কোটি ৬৫ লক্ষ মেট্রিক টন প্লাস্টিক-বর্জ্য তৈরি হয়। ‘অল ইন্ডিয়া প্লাস্টিক ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন’ জানাচ্ছে, প্লাস্টিক শিল্পক্ষেত্রে ১ কোটি ৪০ লক্ষ মেট্রিক টন পলিস্টাইরিন তৈরি হচ্ছে, যা সহজে পচনশীল নয় এমন বর্জ্য (নন বায়োডিগ্রেডেবল)।

রিচা প্রিয়দর্শিনী

রিচা প্রিয়দর্শিনী

সংবাদ সংস্থা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১১ অক্টোবর ২০১৯ ০২:৩৯
Share: Save:

অবশেষে মিলল ‘প্লাস্টিক-অসুর’ বধের অস্ত্র। এমনটাই দাবি করছেন গ্রেটার নয়ডার শিব নাদর বিশ্ববিদ্যালয়ের এক দল গবেষক।

পৃথিবীকে প্লাস্টিক-মুক্ত করতে বিশ্বজুড়ে নানা প্রচার চলছে। পিছিয়ে নেই ভারতও। দেশকে প্লাস্টিক-মুক্ত করার ডাক দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও। প্লাস্টিকের ব্যাগ, কাপ, প্লেট, গ্লাস বা স্ট্র-এর মতো এক বার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক-পণ্যের ক্ষতিকর দিকটি তুলে ধরে তার ব্যবহার ধাপে ধাপে ২০২২-এর মধ্যে বন্ধ করার লক্ষ্য নিয়েছে সরকার। এমনকি এ বছর ‘প্লাস্টিক-অসুর’ দমনের বার্তা চোখে পড়েছিল অনেক পুজোমণ্ডপেও। এরই মধ্যে সুখবর দিলেন ভারতীয় গবেষকেরা। তাঁদের দাবি, গ্রেটার নয়ডার জলাভূমি থেকে ‘প্লাস্টিক-নাশক’ দু’টি ব্যাকটিরিয়া স্ট্রেন খুঁজে পেয়েছেন তাঁরা, যা প্লাস্টিক-বর্জ্য সাফ করার পরিবেশবান্ধব ব্যবস্থা হয়ে উঠতে পারে। ব্যাকটিরিয়ার স্ট্রেন দু’টি পলিস্টাইরিনকে পচিয়ে (ডিকম্পোজ়) মাটিতে মিশিয়ে দিতে পারে। এরা হল— ‘এগজ়িগুয়োব্যাকটিরিয়াম সিবিরিকাম স্ট্রেন ডিআর১১’ এবং ‘এগজ়িগুয়োব্যাকটিরিয়াম আনডি স্ট্রেন ডিআর১৪’।

আনুমানিক হিসেব বলছে, ভারতে প্রতি বছর ১ কোটি ৬৫ লক্ষ মেট্রিক টন প্লাস্টিক-বর্জ্য তৈরি হয়। ‘অল ইন্ডিয়া প্লাস্টিক ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন’ জানাচ্ছে, প্লাস্টিক শিল্পক্ষেত্রে ১ কোটি ৪০ লক্ষ মেট্রিক টন পলিস্টাইরিন তৈরি হচ্ছে, যা সহজে পচনশীল নয় এমন বর্জ্য (নন বায়োডিগ্রেডেবল)। এই পলিস্টাইরিন ভূখণ্ড ও সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্র, দু’য়ের পক্ষেই ক্ষতিকর। পলিস্টাইরিনের ভারী আণবিক ওজন এবং দীর্ঘ শৃঙ্খলের মতো পলিমার আকার। এই কারণে এরা সহজে ভেঙে গিয়ে পরিবেশে মিশে যায় না। বিভিন্ন ক্ষেত্রে পলিস্টাইরিন জাতীয় পণ্য তৈরি ও ব্যবহার করা হলেও ‘ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট’ বা বর্জ্য সাফ করতে গিয়ে তাই সমস্যায় পড়তে হয়। গবেষকেরা উদাহরণ দিয়ে জানাচ্ছেন, একটি প্লাস্টিকের কাঁটা-চামচ পচে-গলে মাটিতে মিশতে অন্তত সাড়ে চারশো বছর সময় লাগে।

শিব নাদর বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণাপত্রটি ‘রয়্যাল সোসাইটি অব কেমিস্ট্রি (আরএসসি) অ্যাডভান্সেস’ জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘স্কুল অব ন্যাচরাল সায়েন্স’-এর জীববিজ্ঞান বিভাগের গবেষক রিচা প্রিয়দর্শিনী এই বিজ্ঞানী দলটির নেতৃত্বে রয়েছেন। অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর প্রিয়দর্শিনী বলেন, ‘‘আমাদের গবেষণায় পাওয়া তথ্য থেকে স্পষ্ট, প্লাস্টিকের রাসায়নিক গঠন ভাঙতে সক্ষম এগজ়িগুয়োব্যাকিটিরিয়াম। ফলে প্লাস্টিক জাতীয় পণ্য থেকে পরিবেশ দূষণ রুখতে ভবিষ্যতে এদের ব্যবহার করা যেতে পারে।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘জলাজমিগুলোতে অণুজীব বৈচিত্র সব চেয়ে বেশি পাওয়া যায়। যদিও ওই এলাকাগুলোকে নিয়ে বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা হয়েছে সব চেয়ে কম। কিন্তু ভাল ব্যাকটিরিয়া খোঁজার জন্য এই সব জলাজমিই আদর্শ জায়গা।’’

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য রূপমঞ্জরী ঘোষের কথায়, ‘‘ক্যাম্পাসের মধ্যেই জলাজমি থেকে নমুনা নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু হয়েছিল। কিন্তু তা থেকে যে তথ্য হাতে এসেছে, সেটা যুগান্তকারী আবিষ্কার। প্লাস্টিক-বধে সমাধান দিচ্ছে প্রকৃতিই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Plastic Eating Bacteria Noida
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE