Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪

বেসরকারি ছোট্ট আশা যাবে চাঁদে

এক লাফে মঙ্গলের কক্ষপথে পাড়ি দিয়ে রেকর্ড গ়ড়েছিল ভারত। শুধু তা-ই নয়, জীবনীশক্তিতেও তাক লাগিয়েছে মঙ্গলযান। ছ’মাসের অভিযানের কথা ভেবে তৈরি করা হলেও চার বছর পার করেও তরতাজা রয়েছে সেটি। ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর ভারত থেকে লাল গ্রহে পাড়ি দিয়েছিল যানটি।

টিম ইন্ডাসের ‘ছোটি সি আশা’

টিম ইন্ডাসের ‘ছোটি সি আশা’

কুন্তক চট্টোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ নভেম্বর ২০১৭ ০১:৫৬
Share: Save:

চেহারা তার ছোট্ট একটা দেশলাই বাক্সের মতো। শক্তিও আহামরি কিছু নয়। তবু সেই খুদে রোবটই এখন এ দেশের তাবড় ইঞ্জিনিয়ার-বিজ্ঞানীদের কাছে মস্ত বড় আশা। চেহারা এবং গুণের সঙ্গে মিলিয়েই রাখা হয়েছে তার নাম— ‘ছোটি সি আশা’।

এক লাফে মঙ্গলের কক্ষপথে পাড়ি দিয়ে রেকর্ড গ়ড়েছিল ভারত। শুধু তা-ই নয়, জীবনীশক্তিতেও তাক লাগিয়েছে মঙ্গলযান। ছ’মাসের অভিযানের কথা ভেবে তৈরি করা হলেও চার বছর পার করেও তরতাজা রয়েছে সেটি। ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর ভারত থেকে লাল গ্রহে পাড়ি দিয়েছিল যানটি।

এ বার আশা নতুন রেকর্ডের। ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা (ইসরো) সূত্রের খবর, এই প্রথম চাঁদে কোনও বেসরকারি অভিযান হতে চলেছে। তার দায়িত্বে রয়েছে ভারতের একটি বেসরকারি সংস্থা ‘টিম ইন্ডাস’। সেই অভিযানে চাঁদের মাটিতে নামবে রোবট-গাড়ি তথা মহাকাশ বিজ্ঞানের ভাষায় রোভার ‘ছোটি সি আশা’। উপগ্রহের মাটিতে তার চাকা গড়ালেই ফের মহাকাশ বিজ্ঞানের দুনিয়ায় নতুন পালক জুড়বে আর্যভট্ট-বরাহমিহিরের দেশের মুকুটে।

টিম ইন্ডাসের তরফে জানানো হয়েছে, ‘ছোটি সি আশা’র শরীরে দু’টি ক্যামেরা, ব্যাটারি এবং টেলি-যোগাযোগের যন্ত্র বসানো হয়েছে। চাঁদের মাটিতে নামার পরে ৫০০ মিটার গড়াবে ‘আশার’ চাকা। তারই মাঝে ছবি তুলে পৃথিবীতে পাঠাবে সে। স্পেন, আমেরিকা, ভারত, ইন্দোনেশিয়া ও অস্ট্রেলিয়ায় বসানো অ্যান্টেনা মারফত সেই তথ্য চলে আসবে টিম ইন্ডাসের কাছে।

চাঁদে অভিযানের জন্য একটি প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছিল তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থা ‘গুগল’। সেই প্রতিযোগিতায় জেতে টিম ইন্ডাস। শুরু হয় চাঁদে পাড়ি দেওয়ার প্রস্তুতি। সংস্থার অন্যতম কর্ণধার রাহুল নারায়ণ জানিয়েছেন, ‘ছোটি সি আশা’-কে চাঁদে পাঠানোর দায়িত্বে রয়েছে ইসরো। আগামী ডিসেম্বর থেকে মার্চ— এই সময়ের মধ্যেই শ্রীহরিকোটার সতীশ ধবন মহাকাশ কেন্দ্র থেকে চাঁদে পা়ড়ি দেবে সে। তবে এখনও চূড়ান্ত দিনক্ষণ ঠিক হয়নি। ভারতের মাটি থেকে চাঁদে পৌঁছতে তার দিন দশেক লাগবে। রাহুলের কথায়, ‘‘মহাকাশ অভিযান প্রযুক্তিগত দিক থেকে ভীষণ জটিল এবং ঝুঁকিরও। তাই অভিযানের দিন ঠিক করার আগে বেঙ্গালুরুতে চূ়ড়ান্ত পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। গোটা অভিযানের খরচ প্রায় ৭ কোটি ডলারে পৌঁছে যেতে পারে।’’ তিনি জানিয়েছেন, চন্দ্র অভিযানের মহাকাশযান এবং ‘ছোটি সি আশা’-কে তৈরি করতে প্রাণপাত করেছেন ইন্ডাসের সহকর্মীরা। সাহায্য করেছেন ইসরোর অবসরপ্রাপ্ত কয়েক জন বিজ্ঞানী ও ইঞ্জিনিয়ারও। পুরস্কারমূল্যের বাইরেও টাকা জোগাড় করা হয়েছে স্পনসর এবং আমজনতার কাছ থেকে।

শুধু রেকর্ড গড়াই নয়, বাণিজ্যের ক্ষেত্রেও দেশের নতুন উদ্যোগপতিদের আশার আলো দেখাছে এই অভিযান। রাহুল বলছেন, গোটা বিশ্বেই মহাকাশ বাণিজ্যের গ্রাফ ঊর্ধ্বমুখী। এমন সময়ে ভারতীয় ইঞ্জিনিয়ারদের সাফল্য দেশে লগ্নি আনতে পারে। তাঁর কথায়, ‘‘ভারতে গা়ড়ির যন্ত্রাংশ নির্মাণ শিল্প মাত্র দু’দশক আগে গতি পেয়েছে। আজ বিশ্বের তাব়়ড় তাবড় সংস্থা এ দেশে তাঁদের যন্ত্রাংশ তৈরি করছে। ভবিষ্যতে মহাকাশযান এবং বিভিন্ন যন্ত্রাংশের ক্ষেত্রেও এমন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।’’ রাহুলের কথায় সায় জোগাচ্ছেন ইসরোর অনেকেই। তাঁরা বলছেন, ভিন্ দেশের উপগ্রহ মহাকাশে পাঠানো এখন তাঁদের বাণিজ্যিক সংস্থা ‘অ্যানট্রিক্স’-এর মূল আয়ের উৎস। গত ক’বছরে সেই বাণিজ্যে রীতিমতো জোয়ার এসেছে। এ বার বেসরকারি সংস্থাও সফল হলে তা মহাকাশ বাণিজ্যে ভারতকে অনেকটাই উপরে ঠেলে দিতে পারে।

সফল হবে কি ছোটি সি আশা? আশায় বুক বাঁধছেন অনেকে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE