Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
science news

আইনস্টাইনের সংশয় দূর করেই পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল রজার পেনরোজের, সঙ্গে আরও দুই

পেনরোজের সেই পথদেখানো গাণিতিক সমাধানের ভিত গড়ে উঠেছিল এক বাঙালি পদার্থবিজ্ঞানীর উদ্ভাবিত সমীকরণের উপর।

মধ্যমণি রজার পেনরোজ। দু’পাশে রেনহার্ড গেঞ্জেল ও আন্দ্রিয়া ঘেজে। ছবি- নোবেল ফাউন্ডেশনের সৌজন্যে।

মধ্যমণি রজার পেনরোজ। দু’পাশে রেনহার্ড গেঞ্জেল ও আন্দ্রিয়া ঘেজে। ছবি- নোবেল ফাউন্ডেশনের সৌজন্যে।

সংবাদ সংস্থা
স্টকহোম শেষ আপডেট: ০৬ অক্টোবর ২০২০ ১৪:৩৫
Share: Save:

পদার্থবিজ্ঞানে এ বছরের নোবেল পুরস্কারে জয়জয়কার হল ব্ল্যাক হোলের!

আইনস্টাইনের দীর্ঘ কয়েক দশকের সংশয় মোচন করেছিলেন যিনি তাঁর মৃত্যুর ১০ বছর পর, সেই ৮৯ বছর বয়সী রজার পেনরোজকে এ বছর পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার দিয়ে সম্মান জানাল রয়্যাল সুইডিশ অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সেস।

পুরস্কার-মূল্যের (১০ লক্ষ সুইডিশ ক্রোনার) বাকি অর্ধেকটা ভাগ করে দেওয়া হল রেনহার্ড গেঞ্জেল ও আন্দ্রিয়া ঘেজের মধ্যে। এঁরাই প্রথম পূর্বাভাস দিয়েছিলেন আমাদের মিল্কি ওয়ে গ্যালাক্সির মতো এই ব্রহ্মাণ্ডের কোটি কোটি গ্যালাক্সির প্রতিটিরই কেন্দ্রে রয়েছে একটি করে সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাক হোল বা দৈত্যাকার কৃষ্ণগহ্বর। আন্দ্রিয়া পদার্থবিজ্ঞানে নোবেলজয়ী চতুর্থ মহিলা। নোবেল ইতিহাসে এর আগে মাত্র তিন মহিলা পেয়েছিলেন পদার্থবিজ্ঞানে এই সেরা পুরস্কার।

‘রায়চৌধুরি ইক্যুয়েশন’ই পথ দেখিয়েছিল পেনরোজকে

পেনরোজের সেই পথদেখানো গাণিতিক সমাধানের ভিত গড়ে উঠেছিল এক বাঙালি পদার্থবিজ্ঞানীর উদ্ভাবিত সমীকরণের উপর। তিনি তদানীন্তন প্রেসিডেন্সি কলেজের অধ্যাপক অমলকুমার রায়চৌধুরি। তাঁর সেই সমীকরণের নাম ‘রায়চৌধুরি ইক্যুয়েশন’।

খেলিছো এ বিশ্ব লয়ে...

১৯১৫ সালের নভেম্বরে সাধারণ আপেক্ষিকতাবাদ নিয়ে আইনস্টাইনের গবেষণাপত্র প্রকাশিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই আলোড়ন পড়ে যায় গোটা বিশ্বে। আইনস্টাইন দেখান গোটা ব্রহ্মাণ্ডকে নিয়ে খেলছে অভিকর্ষ বল (‘গ্র্যাভিটি’)। এই ব্রহ্মাণ্ড অভিকর্ষের মুঠোবন্দি। এটাই ব্রহ্মাণ্ডকে প্রতি মুহূর্তে দুমড়েমুচড়ে দিচ্ছে। তার আকার, আকৃতি বদলে দিচ্ছে। এই অভিকর্ষ বলই আমাদের পৃথিবীর সঙ্গে বেঁধে রাখে। সূর্যকে কোন কোন কক্ষপথে প্রদক্ষিণ করবে সৌরমণ্ডলের গ্রহগুলি তা ঠিক করে দেয় এই বলই। ঠিক করে দেয় মিল্কি ওয়ে গ্যালাক্সিতে কোন কোন কক্ষপথ ধরে প্রদক্ষিণ করবে আমাদের সূর্য। এই বলের জন্যই আন্তর্নক্ষত্র মেঘ থেকে তারাদের জন্ম হয়। আবার এই বলের জন্যই সেই তারাদের মৃত্যু হয়।

‘নাগপাশ’ এড়াতে পারে না আলোও

আইনস্টাইন দেখালেন কোনও ভারী মহাজাগতিক বস্তুর অভিকর্ষ বলই মহাকাশের স্থান ও সময়কে বাঁকিয়েচুরিয়ে দেয়। আর খুব ভারী কোনও মহাজাগতিক বস্তুর অসম্ভব জোরালো টানে তার আশপাশে থাকা প্রায় সব কিছুই তার মধ্যে ঢুকে পড়ে। তার ‘নাগপাশ’ থেকে বেরিয়ে আসতে পারে না আলোও। এরাই ব্ল্যাক হোল। আলো বেরিয়ে আসতে পারে না বলেই এদের এমন নামকরণ।

এম-৮১। এখনও পর্যন্ত শুধু এই ব্ল্যাক হোলের ছবি তোলা সম্ভব হয়েছে। ছবি সৌজন্যে: নাসা।

খুব ধন্দে পড়ে গিয়েছিলেন আইনস্টাইন

কিন্তু সেটা কী ভাবে সম্ভব সেটাই বুঝে উঠতে পারছিলেন না সাধারণ আপেক্ষিকতাবাদের জনক আইনস্টাইন। সেটা ছিল ১৯১৫ সালের নভেম্বর। আইনস্টাইন প্রকাশ্যেই বলতে শুরু করেন, ‘‘সত্যি সত্যিই এমন কিছু ব্রহ্মাণ্ডে আছে বলে মনে হয় না।’’ পরে বিভিন্ন গবেষণা জানায় এই ব্ল্যাক হোলের চার পাশে থাকে একটা এলাকা। যার নাম ‘ইভেন্ট হরাইজন’।

কিন্তু এদের অস্তিত্ব সম্ভব এটা বিশ্বাসই করে উঠতে পারছিলেন না আইনস্টাইন।

আইনস্টাইনের মৃত্যুর ১০ বছর পর

৫০ বছর পর আইনস্টাইনের সেই সংশয় দূর করেছিলেন পেনরোজ। গাণিতিক ভাবে দেখিয়েছিলেন ব্ল্যাক হোল সত্যি সত্যিই আছে ব্রহ্মাণ্ডে। সেগুলি কী ভাবে তৈরি হয়, সেটাও দেখিয়েছিলেন গাণিতিক, সেটাও প্রথম দেখিয়েছিলেন গাণিতিক ভাবে। আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে পেরেছিলেন আইনস্টাইনের সাধারণ আপেক্ষিকতাবাদকে।

গাণিতিক ভাবে দেখিয়েছিলেন ব্ল্যাক হোলের অন্দরে রয়েছে এমন একটি সীমানা যেখানে পৌঁছে প্রকৃতির সব নিয়মই ভেঙে পড়ে। সেটা ১৯৬৫। আইনস্টাইনের মৃত্যুর ১০ বছর পর।

লন্ডনের রাস্তা পেরোতে গিয়ে সমাধান খুঁজে পেলেন পেনরোজ

তখন ’৬৪-র শরৎকাল। ব্রিটেনের ব্রিকবেক কলেজের গণিতের অধ্যাপক পেনরোজ তাঁর এক সহকর্মীর সঙ্গে লন্ডনের একটি রাস্তা পেরোচ্ছিলেন। পাশের রাস্তায় যাবেন বলে যখন সবে মো়ড়ের মাথায় পৌঁছেছেন তখনই হঠাৎ তাঁর মাথায় এল ভাবনাটা। সেটাই হল ‘ট্র্যাপড সার্ফেস’। এই ট্র্যাপড সার্ফেসে পড়লে সব রশ্মিই সার্ফেসের কেন্দ্রের দিকে চলে যায়। সেই সার্ফেস কতটা দুমড়েমুচড়ে আছে তার উপর নির্ভর করে না।

সেই ধারণাই পেনরোজকে পৌঁছে দিয়েছিল একটি অত্যন্ত জটিল গাণিতিক সমস্যার সমাধানে। ব্ল্যাক হোল কী ভাবে তৈরি হয়, ৫০ বছরের সেই ধাঁধার জট খুলে ফেলেছিলেন পেনরোজ।

রাক্ষুসে ব্ল্যাক হোল। শিল্পীর কল্পনায়।

প্রেসিডেন্সি কলেজ, অমল রায়চৌধুরি ও পেনরোজ

তারই স্বীকৃতিতে মঙ্গলবার নোবেল পুরস্কার পেলেন কেম্ব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক পেনরোজ। কয়েক দশক আগে পেনরোজ এসেছিলেন কলকাতায়। প্রেসিডেন্সি কলেজের (অধুনা প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়) প্রয়াত বিশিষ্ট অধ্যাপক অমল রায়চৌধুরির সঙ্গে ছিল তাঁর যোগাযোগও।

পুরস্কার-মূল্যের বাকি অর্ধেকটা যাঁরা এ দিন ভাগাভাগি করে নিলেন সেই বার্কলের ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রেনহার্ড গেঞ্জেল ও লস এঞ্জেলসের ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আন্দ্রিয়া ঘেজ নয়ের দশকে দেখান গ্রহগুলি সূর্যক‌ে কোন কক্ষপথে প্রদক্ষিণ করবে তা নির্ধারণ করে সেই গ্যালাক্সির ঠিক কেন্দ্রে থাকা একটি সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাক হোল বা দৈত্যাকার কৃষ্ণগহ্বরের অত্যন্ত জোরালো অভিকর্ষ বল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Nobel Prize 2020 nobel physics prize 2020
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE