Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
Science

ডেঙ্গির টিকা থেকে এ বার ছড়াচ্ছে ভয়ঙ্কর জিকা?

সদর দরজায় খিল দিয়ে ভাবছেন, যাক তা হলে রাতবিরেতে আর চোর পড়বে না বাড়িতে! নিশ্চিন্তে ঘুমোতে গেলেন। আর রাত একটু গড়াতেই পিছনের খিড়কির দরজা ভেঙে ঢুকে পড়ল ডাকাত! বন্দুক উঁচিয়ে ঘর তোলপাড় করে দিল। নিয়ে গেল সব লুঠপাট করে! ডেঙ্গির ভাইরাস ঠেকাতে গিয়ে টিকা দিলেই দেখা দিচ্ছে আরেকটি বিপদ! বেড়ে যাচ্ছে জিকা ভাইরাসের সংক্রমণ।

একই সঙ্গে হানাদারি ডেঙ্গি ও জিকার।

একই সঙ্গে হানাদারি ডেঙ্গি ও জিকার।

সুজয় চক্রবর্তী
শেষ আপডেট: ১৭ নভেম্বর ২০১৬ ২১:৪৬
Share: Save:

সদর দরজায় খিল দিয়ে ভাবছেন, যাক তা হলে রাতবিরেতে আর চোর পড়বে না বাড়িতে! নিশ্চিন্তে ঘুমোতে গেলেন। আর রাত একটু গড়াতেই পিছনের খিড়কির দরজা ভেঙে ঢুকে পড়ল ডাকাত! বন্দুক উঁচিয়ে ঘর তোলপাড় করে দিল। নিয়ে গেল সব লুঠপাট করে!

গল্প নয়, এটাই সত্যি! এটাই হচ্ছে ডেঙ্গি ভাইরাসের হানাদারি রুখতে গিয়ে। ডেঙ্গির ভাইরাস ঠেকাতে গিয়ে টিকা দিলেই দেখা দিচ্ছে আরেকটি বিপদ! বেড়ে যাচ্ছে জিকা ভাইরাসের সংক্রমণ।

আর এটা যে খুব বিক্ষিপ্ত একটা ঘটনা বা খুব ছোট্ট একটা এলাকাজুড়ে ঘটছে, তা কিন্তু নয়। বিশ্বের মোট জনসংখ্যার এক-তৃতীয়াংশেরও বেশি মানুষের বসবাস যে সব এলাকায়, সেখানে দীর্ঘ দিন ধরেই ভয়াবহ হয়ে উঠেছে ডেঙ্গি ভাইরাসের হানাদারি। যেহেতু ওই সব এলাকায় দীর্ঘ দিন ধরেই চলছে ডেঙ্গি ভাইরাসের দাপাদাপি, তাই তা ঠেকানোর জন্য সংশ্লিষ্ট এলাকাগুলিতে টিকা দেওয়ার কর্মযজ্ঞও শুরু হয়ে গিয়েছে বেশ কিছু দিন ধরে। আর তা করতে গিয়েই দেখা যাচ্ছে, ডেঙ্গির খপ্পরে পড়া এলাকাগুলিতে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে জিকা ভাইরাস। মানে, যাকে বলে একেবারে ‘সাঁড়াশি আক্রমণ’!


ডেঙ্গি ভাইরাস, অণুবীক্ষণের নীচে


জিকা ভাইরাস, অণুবীক্ষণের নীচে

ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয় ও চিনের শিয়ান জিয়াওতং বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌথ গবেষণায় এই চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গিয়েছে। ‘ইমপ্লিকেশন অফ ভ্যাকসিনেশন এগেনস্ট ডেঙ্গি ফর জিকা আউটব্রেক’ শীর্ষক গবেষণাপত্রটি নভেম্বরের গোড়ার দিকে ছাপা হয়েছে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান-জার্নাল ‘সায়েন্টিফিক রিপোর্টস’-এ।

তাতে কী বলছে, জানেন?

সহযোগী গবেষক আমেরিকার জন্স হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইরোলজি বিভাগের অধ্যাপক অনিতা সরকার বলছেন, ‘‘ডেঙ্গি আর জিকা ভাইরাসের হানাদারিটা এক রকম হাত ধরাধরি করেই চলে। মানে, টিকা দিয়ে কোনও একটি ভাইরাসকে রোখার চেষ্টা করা হলে, তা যে শুধুই অন্য আরেকটি ভাইরাসকে রোখার শারীরিক ক্ষমতাটা কমিয়ে দেয়, তা-ই নয়; অন্য ভাইরাসটিকে আরও সহজে শরীরে ছড়িয়ে পড়ার সুযোগটা করে দেয়। আমাদের গবেষণা প্রমাণ করেছে ডেঙ্গি ভাইরাসকে রোখার জন্য শরীরে যে অ্যান্টিবডিগুলি রয়েছে বা টিকা দিয়ে যা বাড়ানো হয়, সেগুলিই আমাদের শরীরে জিকা ভাইরাসকে আরও দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে সাহায্যের হাতটা বাড়িয়ে দেয়।’’

কেন এ ভাবে ডেঙ্গি আর জিকা ভাইরাস কার্যত, হাত ধরাধরি করে এগোয় কোনও এলাকায়? কেন এক রকম হাত ধরাধরি করেই তারা ছড়িয়ে পড়ে কোনও বিশেষ একটি এলাকায়?


ডেঙ্গির বাহক মশা এডিস ইজিপ্টাই

মূল গবেষক চিনের শিয়ান জিয়াওতং বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইরোলজি বিভাগের অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর বিয়াও তাং ওয়াশিংটন থেকে তাঁর ই-মেল জবাবে আনন্দবাজারকে লিখেছেন, ‘‘দু’টি ভাইরাসই একটি বিশেষ ভাইরাস পরিবারের সদস্য। মানে, যাকে বলে আত্মার আত্মীয় বা হরিহর আত্মা! ওই ভাইরাস পরিবারটির নাম- ‘ফ্ল্যাভাইভিরাইডি’। আর ডেঙ্গি বলুন বা জিকা, দু’টি ভাইরাসই মূলত ছড়ায় একটি বিশেষ প্রজাতির মশা ‘এডিস ইজিপ্টাই’ বা ‘এডিস’ প্রজাতির মশাদেরই আরেক ‘দোসর’। ফলে, তারা একে এলে, অন্যদেরও ডেকে আনে। প্রায় একই সঙ্গে চলে আসে, হাত ধরাধরি করে, আমাদের শরীরে হামলা চালাতে। তাই আমাদের গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে, যে এলাকায় ডেঙ্গির প্রকোপ বেশি বা ডেঙ্গি ঠেকাতে টিকা দেওয়ার মাধ্যমে যে যে এলাকায় ডেঙ্গির অ্যান্টিবডি বেশি করে তৈরি হচ্ছে, সেই সব এলাকাতেই ওই অ্যান্টিবডিগুলি জিকা ভাইরাসকে আরও দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে সাহায্য করছে।’’


ডেঙ্গি ভাইরাস, অণুবীক্ষণের নীচে


জিকা ভাইরাস, অণুবীক্ষণের নীচে

কী ভাবে গবেষণাটি চালিয়েছেন ভাইরোলজিস্টরা?

জন্স হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইরোলজি বিভাগের অধ্যাপক অনিতা সরকারের কথায়, ‘‘আমরা একটি গাণিতিক মডেল তৈরি করেছি। তাতে দেখা যাচ্ছে, কোনও একটি এলাকায় ডেঙ্গির টিকা যত বেশি করে দেওয়া হচ্ছে (সেই সব এলাকায় ডেঙ্গির প্রকোপ বেশি বলেই ডেঙ্গির টিকার চল বেশি), ততই সেই সব এলাকায় জিকা ভাইরাসের হামলা বাড়ছে। জিকা ভাইরাস ততই দ্রুত হারে ওই সব এলাকায় ছড়িয়ে পড়ছে। ওই গাণিতিক মডেল দেখিয়েছে, আগে ওই সব এলাকায় ডেঙ্গির হানাদারি রুখতে যত বেশি সংখ্যায় মানুষকে টিকা দেওয়া হয়েছে, ততই বেশি করে ওই সব এলাকায় এখন জিকা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ছে অনেক বেশি দ্রুততায়। তবে আশার কথা ওই গাণিতিক মডেলই এটাও দেখিয়েছে, বিশেষ প্রক্রিয়ায় একই সঙ্গে দু’টি হানাদার ভাইরাসকে ভবিষ্যতে জব্দ করা সম্ভব।’’


ডেঙ্গি ভাইরাসের গঠনকাঠামো

গবেষকরা কিন্তু এটাও জানিয়ে দিচ্ছেন, ডেঙ্গি প্রতিরোধে যে সব টিকা এখন বাজারে চালু রয়েছে বা বিশ্বের বড় একটি অংশে এখন প্রায় রোজকার আবশ্যকীয় পণ্যের মতোই বিক্রি বা ব্যবহৃত হচ্ছে, তাঁরা তাঁর বিরোধিতা করছেন না। তবে যাতে একই সঙ্গে আগামী দিনে ডেঙ্গি ও জিকা ভাইরাসকে কোনও একটি এলাকায় অনেক বেশি সংগঠিত ভাবে প্রতিরোধ করা যায়, তারও উপায় উদ্ভাবনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন গবেষকরা।

ছবি সৌজন্যে: জন্স হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়।

আরও পড়ুূন- এ বার বাড়িতে বসে ইউএসবি ড্রাইভেই এড্‌সের রক্তপরীক্ষা?

ক্যান্সারের নতুন সাত বাহকের হদিশ মিলল

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE