Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
Science News

সত্যিই টেলিস্কোপে ধরা দিল ব্ল্যাক হোল? বিজ্ঞানী মহলে উত্তেজনা তুঙ্গে

তা হলে টেলিস্কোপের চোখে শেষমেশ ধরা দিল ‘যম’? ধরা পড়ল সেই ‘সর্বভূক রাক্ষস’? বিজ্ঞানী মহলে উত্তেজনা তুঙ্গে। এত এত বছরের পর হয়তো এ বার সত্যি-সত্যিই টেলিস্কোপে ধরা গিয়েছে এই ব্রহ্মাণ্ডে ‘আমাদের পাড়া’ মিল্কি ওয়ে গ্যালাক্সির একেবারে মাঝখানে থাকা সেই দানবাকৃতির সুপার ম্যাসিভ ব্ল্যাক হোলটিকে!

এই সেই ব্ল্যাক হোল।শিল্পীর কল্পনায়।

এই সেই ব্ল্যাক হোল।শিল্পীর কল্পনায়।

সুজয় চক্রবর্তী
শেষ আপডেট: ১৫ এপ্রিল ২০১৭ ১০:০০
Share: Save:

তা হলে টেলিস্কোপের চোখে শেষমেশ ধরা দিল ‘যম’? ধরা পড়ল সেই ‘সর্বভূক রাক্ষস’?

বিজ্ঞানী মহলে উত্তেজনা তুঙ্গে। এত এত বছরের পর হয়তো এ বার সত্যি-সত্যিই টেলিস্কোপে ধরা গিয়েছে এই ব্রহ্মাণ্ডে ‘আমাদের পাড়া’ মিল্কি ওয়ে গ্যালাক্সির একেবারে মাঝখানে থাকা সেই দানবাকৃতির সুপার ম্যাসিভ ব্ল্যাক হোলটিকে! যার নাম- ‘স্যাজিটেরিয়াস-এ-স্টার’। যার খাই-খাই স্বভাবের জন্য ভয়ে থরহরিকম্প এই গ্যালাক্সির সবক’টি নক্ষত্র। কখন তার কাছে এসে পড়ে, সেই ভয়ে। কাছে এসে পড়লেই মহা বিপদ, সেই হতভাগ্য নক্ষত্রটিকে চলে যেতে হবে তার পেটে! তারা খায়, নক্ষত্র খায়, যাবতীয় মহাজাগতিক বস্তু চেটেপুটে খায়। তার যাকে পাই, তাকে খাই- রাক্ষুসে খিদের হাত থেকে রেহাই মেলে না এমনকী, আলোরও। আলোও বেরিয়ে আসতে পারে না তার ‘নাগপাশ’ থেকে! তাই সে ঘোর কালো। আর সে জন্যই ব্ল্যাক হোল বা কৃষ্ণগহ্বরকে দেখতে পাওয়া যায় না। যার পিঠ থেকে ঠিকরে বেরিয়ে আসতে পারে না আলো, তাকে কী ভাবেই-বা দেখা যাবে? তাই তাকে দেখতে পাওয়ার আশাটা এক রকম ছেড়েই দিয়েছিলেন জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা।

কিন্তু শেষমেশ এপ্রিলের ৭ থেকে ১১ তারিখের টানা পাঁচটি রাতে ভয়ঙ্কর সেই ‘রাক্ষস’-এর ছবি তোলার দুঃসাহসটা দেখিয়েই ফেলেছেন বিজ্ঞানীরা! একই সময়ে, একই সঙ্গে পৃথিবীর চার-চারটি মহাদেশ থেকে। আন্টার্কটিকা, উত্তর আমেরিকার আরিজোনা, মেক্সিকো, দক্ষিণ আমেরিকার চিলি ও ইউরোপের স্পেনের মোট ৮টি এলাকা থেকে। প্রকল্পটির তত্ত্বাবধানে রয়েছে ম্যাসাচুসেটস ইন্সটিটিউট অফ টেকনোলজি (এমআইটি)।

একেবারে পৃথিবীর মাপের সুবিশাল টেলিস্কোপ (ইভেন্ট হরাইজন টেলিস্কোপ) দিয়ে টানা পাঁচ-পাঁচটি রাত ধরে খচাখচ খচাখচ ছবি তোলা হয়েছে এই গ্যালাক্সির সেই ভয়ঙ্কর ‘রাক্ষস’-এর। যার ভর আমাদের সূর্যের চেয়ে অন্তত ৫০০ কোটি গুণ বেশি। আর যা আমাদের সৌরমণ্ডল থেকে রয়েছে কম করে ২৬ হাজার আলোকবর্ষ দূরে। মানে, আলোর গতিতে ছুটলে যার কাছে যেতে সময় লাগবে ২৬ হাজার বছর।


আন্টার্কটিকায় বসানো রেডিও টেলিস্কোপ।

পৃথিবীর মাপের টেলিস্কোপ বানানো কি আদৌ সম্ভব? কী ভাবেই-বা তা বানানো হল?

ইভেন্ট হরাইজন টেলিস্কোপের প্রোজেক্ট ম্যানেজার নেদারল্যান্ডসের রাবাউদ বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাস্ট্রোপার্টিকল ফিজিক্স ও রেডিও অ্যাস্ট্রোনমি বিভাগের অধ্যাপক হেইনো ফালকে আনন্দবাজারের পাঠানো প্রশ্নের জবাবে ই-মেলে লিখেছেন, ‘‘পৃথিবীর মাপের টেলিস্কোপ আদৌ বানানো সম্ভব নয়। কারণ, অত বড় টেলিস্কোপ নিজের ভারেই ভেঙে পড়বে। তাই আমরা পৃথিবীর চারটি মহাদেশের আটটি এলাকায় বসানো রেডিও টেলিস্কোপকে একই সময়ে, একই সঙ্গে আকাশের একই দিকে তাক করে রেখে চেষ্টা করেছি ওই সুপার ম্যাসিভ ব্ল্যাক হোলটির ছবি তোলার। ওই আটটি টেলিস্কোপ দিয়েই বানানো হয়েছে ইভেন্ট হরাইজন টেলিস্কোপ। অপটিক্যাল টেলিস্কোপগুলি যেমন দৃশ্যমান আলোকতরঙ্গগুলিকে ধরে, ঠিক তেমনই গ্যালাক্সির নক্ষত্র, গ্রহগুলি থেকে যে রেডিও তরঙ্গ বেরিয়ে আসে, সেগুলি ধরা পড়ে রেডিও টেলিস্কোপে। কিন্তু সেই রেডিও তরঙ্গগুলি হয় অত্যন্ত দুর্বল। তাই সেগুলিকে ধরার জন্য সুবিশাল টেলিস্কোপ বানানোর প্রয়োজন হয়। শুধু তাই নয়, ওই রেডিও টেলিস্কোপগুলিকে বসাতে হয় খুব উঁচু উঁচু পাহাড়ের মাথায়। না হলে বায়ুমণ্ডলের আর্দ্রতা ওই রেডিও তরঙ্গগুলিকে শুষে নেয়। ফলে, তাদের দেখতে পাওয়ার সম্ভাবনা আরও কমে যায়। গত ৩০ বছরে এই ভাবে পৃথিবীর সব প্রান্ত থেকে একই সঙ্গে একই সময়ে ওই আটটি টেলিস্কোপকে আকাশের একই দিকে তাক করে পর্যবেক্ষণ চালানো হয়নি। টানা ১০ দিন ধরে ওই পর্যবেক্ষণ চালানোর কথা ছিল আমাদের। কিন্তু আকাশ পরিষ্কার না থাকায় আমরা টানা পাঁচ দিনের বেশি ওই পর্যবেক্ষণ চালাতে পারিনি। তবে আমরা খুশি, প্রতি রাতে ওই আটটি টেলিস্কোপের প্রত্যেকটি কম করে ২০ থেকে ৩০ লক্ষ গিগাবাইট তথ্য জোগাড় করতে পেরেছে। আর সেগুলি সবই রাখা হয়েছে প্রচুর হার্ড ড্রাইভে। কারণ, অত বিশাল পরিমাণ ডেটা (তথ্যাদি) ইন্টারনেটে পাঠানো সম্ভব নয়। আমরা ওই আটটি টেলিস্কোপের সব ডেটা নিয়ে সেগুলি জুড়ে জুড়ে ব্ল্যাক হোলের ইভেন্ট হরাইজনের আদত ছবিটা এ বার তুলতে পারব বলে আশা করছি। আর আমাদের সেই আশাটা যথেষ্টই জোরালো।’’

ব্ল্যাক হোলের অ্যাক্রিশন ডিস্কের ‘এঁটোকাঁটা’: দেখুন ভিডিও

সেই ছবি কবে নাগাদ প্রকাশের সম্ভাবনা?

প্রকল্পের অন্যতম গবেষক, জন্স হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যোতির্পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর ধ্রুবজ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘মূল অসুবিধাটা রয়েছে আন্টার্কটিকায় বসানো টেলিস্কোপটির জোগাড় করা তথ্যাদি পাওয়ার ক্ষেত্রে। সেখানে এখন শীত কাল। চলবে আরও প্রায় মাস ছ’য়েক। এই সময়ে সেখানে কোনও বিমান পাঠানো যাবে না। আর সেই ডেটা হাতে না পাওয়া পর্যন্ত পৃথিবীর সব প্রান্ত থেকে তোলা ব্ল্যাক হোলের ছবি সম্পূর্ণতাও পাবে না। আশা করছি, সেই সব তথ্য হাতে এসে পৌঁছলে এ বছরের শেষে বা আগামী বছরের (২০১৮) মার্চের মধ্যে আমরা মিল্কি ওয়ে গ্যালাক্সির কেন্দ্রে থাকা সুপার ম্যাসিভ ব্ল্যাক হোলটির ছবি প্রকাশ করতে পারব।’’

ইভেন্ট হরাইজন বলতে কী বোঝায়?


ব্ল্যাক হোলের কোনটা ইভেন্ট হরাইজন, কোনটা অ্যাক্রিশন ডিস্ক

ইভেন্ট হরাইজন হল ব্ল্যাক হোলের সেই এলাকা, অত্যন্ত জোরালো অভিকর্ষ বলের জন্য যেখান থেকে এমনকী, আলোও বেরিয়ে আসতে পারে না। আর ভাত খেয়ে আমরা যেমন থালার ধারে এঁটোকাঁটা ফেলি, ব্ল্যাক হোলও তেমন ভাবেই তারাদের খাওয়ার সময় তাদের শরীরের অংশগুলিকে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ফেলতে থাকে। সেটা যেখানে ঘটে সেই এলাকাটিকে বলা হয় ব্ল্যাক হোলের ‘অ্যাক্রিশন ডিস্ক’।

ছবি ও ভিডিও সৌজন্যে: নাসা

আরও পড়ুন- জলে ভাসছে বৃহস্পতি-শনির চাঁদ, প্রাণ মিলতে পারে এনসেলাডাস-এ

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE