Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪
National News

আকাশে বিমানের কেবিনে বায়ুচাপ বাড়ানো জরুরি কেন

সমুদ্রপৃষ্ঠে বায়ুমণ্ডলে নাইট্রোজেন, কার্বন ডাই-অক্সাইডের মতো গ্যাসীয় পদার্থগুলির সঙ্গে শতাংশের হিসেবে যতটা থাকে অক্সিজেন, ক্রমশ ওপরে উঠলে, বাতাসে সেই অক্সিজেনের পরিমাণে কোনও হেরফের হয় না।

জেট এয়ারওয়েজের সেই বিমানের কেবিন। ছবি- সংগৃহীত।

জেট এয়ারওয়েজের সেই বিমানের কেবিন। ছবি- সংগৃহীত।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ১৭:৪৫
Share: Save:

কোনও বিমান আকাশে ওড়ার ঠিক আগের মুহূর্তে বিমানসেবিকা ঘোষণা করেন, ‘‘আপনার স্বাচ্ছন্দ্যের জন্য কেবিনের বায়ুচাপ বাড়ানো হল।’’ আর সেই ঘোষণাটা শোনার পরেই আমি, আপনি স্বস্তিতে পিঠ এলিয়ে দিই বিমানের সিটে।

ভাবি, যাক এ বার নিশ্চিন্ত হওয়া গেল। আকাশে আর ভুগতে হবে না শ্বাসকষ্টে।

কেন ওপরে উঠলে শ্বাসকষ্ট হয়?

কেন সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ক্রমশ ওপরে উঠলে শ্বাসকষ্টে ভুগি আমরা? বেশি উচ্চতায় বায়ুমণ্ডলে অক্সিজেনের মাত্রা কমে যায় বলে?

না, তা আদৌ নয়। বিজ্ঞান বলছে, সমুদ্রপৃষ্ঠে বায়ুমণ্ডলে নাইট্রোজেন, কার্বন ডাই-অক্সাইডের মতো গ্যাসীয় পদার্থগুলির সঙ্গে শতাংশের হিসেবে যতটা থাকে অক্সিজেন, ক্রমশ ওপরে উঠলে, বাতাসে সেই অক্সিজেনের পরিমাণে কোনও হেরফের হয় না।

আয়তনের নিরিখে শুকনো বায়ুতে নাইট্রোজেন থাকে ৭৮.০৯ শতাংশ, অক্সিজেন ২০.৯৫ শতাংশ, কার্বন ডাই-অক্সাইড ০.০৪ শতাংশ আর আর্গন গ্যাস থাকে ০.৯৩ শতাংশ। থাকে কয়েকটি অন্য গ্যাসও খুব সামান্য আয়তনের।

আয়তনের নিরিখে বায়ুমণ্ডলে থাকা এই গ্যাসীয় পদার্থগুলির শতাংশের হার সমুদ্রপৃষ্ঠে যতটা, এভারেস্টের চূড়াতেও ততটাই।

উচ্চতা বাড়লে কী হয়?

সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে উচ্চতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বায়ুমণ্ডল ধীরে ধীরে পাতলা হতে শুরু করে। ফলে, বায়ুমণ্ডলের চাপ (এয়ার প্রেসার) কমে যেতে শুরু করে। তখন শ্বাসের বাতাসে ঘাটতি দেখা দেয়। একটি এলাকায় (যার পরিমাপের ইউনিট ঘন মিটার বা ঘন ফুট) বায়ুমণ্ডলের চাপ কমলে স্বাভাবিক ভাবেই শ্বাসের জন্য প্রয়োজনীয় অক্সিজেনের অভাব দেখা দেবে। তার ফলে শ্বাসকষ্ট হবে।

আরও পড়ুন- সুইচ দিতেই ভুলে গেলেন বিমানকর্মী! যাত্রীদের নাক-কান দিয়ে রক্ত, জরুরি অবতরণে রক্ষা​

আরও পড়ুন- চকোলেট বোম বিক্রি করে কর্মী থেকে কোটিপতি মহিলা! তার পর...​

তাই বিমান আকাশে উড়লেই কেবিনের ভেতরে যাতে বায়ুচাপের ঘাটতি না হয়, সে জন্য যান্ত্রিক ভাবে বাড়তি বায়ু ঢোকানো হয় কেবিনে। ওই বায়ুকে বলা হয় ‘ব্লিড এয়ার’। বিমানসেবিকারা এই পদ্ধতিকে বলেন, ‘‘কেবিন প্রেসারাইজড হল।’’

কী ভাবে ‘ব্লিড এয়ার’ ঢোকানো হয় কেবিনে?

বায়ু গরম হলেই হাল্কা হয়ে যায়। আর তা উঠে যায় আকাশের দিকে। ঠান্ডা বায়ু থাকে ভূ বা সমুদ্রপৃষ্ঠের কাছাকাছি। তা তুলনায় ভারী হয় বলে। ফলে, আকাশে বিমানের কেবিনে বাড়তি বায়ু ঢোকানোর জন্য ঠান্ডা বায়ু পাওয়া যায় না। তাই আকাশে বায়ুমণ্ডল থেকে নেওয়া হয় গরম বায়ু। তা বিমানের ইঞ্জিনের মাধ্যমে পাঠানো হয় শক্তিশালী কুল্যান্টের ভেতরে। ওই কুল্যান্ট দিয়ে সেই গরম বায়ুকে ঠান্ডা করা হয়। তার পর উচ্চ চাপে সেই বাড়তি বায়ুকে ঢুকিয়ে দেওয়া হয় বিমানের কেবিনে। তার ফলে, কেবিনে বায়ুর চাপ বেড়ে যায়। সেই চাপটা এমন ভাবে বাড়ানো হয় যাতে তা ভূ বা সমুদ্রপৃষ্ঠে থাকা বায়ুমণ্ডলের চাপের সমান হয়। তার ফলে, ভূ বা সমুদ্রপৃষ্ঠে আমাদের যেমন শ্বাস নিতে অসুবিধা হয় না, আকাশে বিমানের কেবিনেও আমরা তেমনই স্বাচ্ছন্দ্যে শ্বাস নিতে পারি। আবার আকাশ থেকে নেমে এসে মাটি ছোঁয়ার সময় ধীরে ধীরে বাড়তি বায়ু বের করে দিয়ে কেবিনের এয়ার প্রেসার বা বায়ুচাপ স্বাভাবিক করে তোলা হয়। কারণ, মাটিতে নামার কিছু আগে থেকেই কেবিনের বায়ুচাপ আর বায়ুমণ্ডলের চাপ এক হয়ে যায়।

বিমানের কেবিনটা তাই বেলুনের মতো। যা আকাশে থাকার সময় একনাগাড়ে ফুলিয়ে যাওয়া হয়, আবার মাটি ছোঁয়ার আগে থেকেই সেই ‘বেলুন’-এর হাওয়াটা বের করে দেওয়া হয় ধীরে ধীরে। এটাকে বলা হয়, ‘ডিপ্রেসারাইজেশন অফ কেবিন’। বলতে পারেন, ওই সময় কেবিন ‘ডিপ্রেসারাইজড’ হল।

বিমানের কেবিনে বায়ুচাপ কমে গেলে কী হতে পারে?

স্মিথসোনিয়ান এয়ার অ্যান্ড স্পেস মিউজিয়াম জানাচ্ছে, বায়ুচাপ কমলে শ্বাসের জন্য প্রয়োজনীয় অক্সিজেনে ঘাটতি দেখা দেবে। তার ফলে, নাক-মুখ দিয়ে রক্ত বেরতে পারে। বায়ুচাপ অস্বাভাবিক ভাবে কমে গেলে রক্তে থাকা নাইট্রোজেন শিরা ও ধমনী থেকে গ্যাসীয় বুদবুদ হয়ে বেরিয়ে আসতে পারে। তার ফলে বিভিন্ন গ্রন্থিতে ব্যথা, প্যারালিসিস বা মৃত্যু হওয়ারও আশঙ্কা থাকে।

আকাশে কেবিনের বায়ুচাপ হঠাৎ কমেও যেতে পারে। কেন?

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোনও প্রযুক্তিগত সমস্যায় তা হতে পারে। বিমানের জানলায় চিড় ধরলে তা হতে পারে। বিমানের দরজাগুলি পুরোপুরি বন্ধ না করা হলে হতে পারে।

কী ঘটেছিল জেট এয়ারওয়েজের বিমানে?

প্রাথমিক ভাবে বিশেষজ্ঞদের মনে হয়েছে, বিমানটি ‘হেভি লোডেড’ হয়ে গিয়েছিল। যাত্রী আর তাঁদের লাগেজে। তাই আকাশে ওড়ার সময় কেবিনে ‘ব্লিড এয়ার’ পাঠানোর সুইচ বন্ধ করে দিয়েছিলেন পাইলট। তাতে বিমানে বায়ুচাপ বাড়লে বিমানটি আরও ভারী হয়ে যেত। তাতে আকাশে উঠতে অসুবিধা হত। কিন্তু পরে আকাশে উঠে সেই ‘ব্লিড এয়ার’-এর সুইচ আবার চালু করে দিলে বোধহয় এটা হত না। পাইলট সম্ভবত সেই সুইচ চালু করতে ভুলে গিয়েছিলেন আকাশে ওড়ার পর।

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE