Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
CERN

এসে গেল রঙিন এক্স-রে, এ বার রোগ নির্ণয় আরও সহজ

আর কোনও যন্ত্রই এত নির্ভুল ছবি তুলবে না। এত কাল সাদা-কালো দেখাত যা, এ বার তাকেই রাঙিয়ে তোলা যাবে।

নতুন যন্ত্রে এ ভাবেই হাড়ের রঙিন ছবি দেখা যাবে। ছবি: এএফপি।

নতুন যন্ত্রে এ ভাবেই হাড়ের রঙিন ছবি দেখা যাবে। ছবি: এএফপি।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১৯ জুলাই ২০১৮ ১৪:৩৫
Share: Save:

চিকিৎসা বিজ্ঞানে রোগ নির্ণয়ের পদ্ধতিকে আরও এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যেতে ত্রিমাত্রিক (থ্রি ডি), রঙিন এক্স-রে’র উদ্ভাবন করলেন বিজ্ঞানীরা। কুড়ি বছরের গবেষণায় এল সাফল্য। সার্ন (ইউরোপিয়ান অর্গানাইজেশন ফর নিউক্লিয়ার রিসার্চ)-এর গবেষকদের কৃতিত্ব এটাও যে, তাঁরা সেই পদ্ধতিকে আরও উন্নত করতে পেরেছেন।

মূলত কণা-সন্ধানী প্রযুক্তি (পার্টিকল ট্র্যাকিং টেকনোলজি)-কে কাজে লাগিয়ে এই আবিষ্কার করেছেন সার্ন-এর বিজ্ঞানীরা। গবেষকদের মতে, এই আবিষ্কারের ফলে শরীরের অভ্যন্তরীণ অংশের ছবি আরও স্পষ্ট ও নির্ভুল হবে। কারণ, এই পদ্ধতিতে শরীরের কোষ, কলা, অঙ্গপ্রত্যঙ্গের ত্রিমাত্রিক ছবি পাওয়া সম্ভব হবে। এক্স-রে’র চালু পদ্ধতিতে শুধুই দ্বিমাত্রিক (বাই ডাইমেনশনাল বা টু-ডি) ছবি পাওয়া সম্ভব হয়।

এই প্রসঙ্গে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ সুবর্ণ গোস্বামী বলেন, ‘‘সাদা-কালো ছবি ওঠায় অনেক সময়ই শরীরের ভিতরের প্রদাহ, রক্তজমা বা অস্বাভাবিক কোনও রং আমাদের চোখে ধরা পড়ত না। রঙিন এক্স-রে প্লেট হলে রোগ নির্ণয়ে অনেকটাই সুবিধা হবে।’’

আরও পড়ুন: মহাকাশে বেড়াতে যাবেন? খরচ করুন মাত্র...

সার্ন-এর দফতর। ছবি: পিক্সঅ্যাবে।

এই গবেষণা নিয়ে বিশিষ্ট কণা পদার্থ বিজ্ঞানী নবকুমার মণ্ডল বলেন, “মেডিপিক্স থ্রি-এর বিশেষ প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়েই এই রঙিন এক্স-রে’র দুয়ার খুলে দিলেন বিজ্ঞানীরা। আলোর কণা ফোটন ও কোনও পদার্থের পরমাণুর মধ্যে থাকা ইলেক্ট্রনের সংখ্যা নির্ণয়ের সঙ্গে তাদের শক্তির পরিমাপও করতে পারে এই প্রযুক্তি। সেই শক্তির তারতম্যের ভিত্তিতেই বানানো হয়েছে একটি কম্পিউটার প্রোগ্রাম। তাতে আলোর বিভিন্ন কম্পাঙ্কের কৃত্রিম রঙের মিশেল ঘটানো হয়েছে। এ ভাবেই ফোটনের শক্তিকে অনুধাবন করে এই প্রযুক্তিকে সামনে আনলেন সার্নের বিজ্ঞানীরা।”

রেডিওলজিস্ট অভীক ভট্টাচার্যের কথায়, “দৃশ্যমান আলোর সঙ্গে এক্স-রে’র তফাত আছে। একটি নেগেটিভ ইলেকট্রন অপর নেগেটিভ ইলেকট্রনের সঙ্গে ঘর্ষণের ফলে উচ্চশক্তি সম্পন্ন কক্ষে প্রবেশ করে। খানিক পরে তা ফের নিজের কক্ষে ফিরে এলে অতিরিক্ত শক্তি ত্যাগ করতে থাকে, এতেই জন্ম নেয় ‘এক্স-রে’। এতে রঙিন পিক্সেল ব্যবহার করা হচ্ছে। ফলে, হাড়ের গায়ে আলো লেগে ফিরে আসার যে প্রতিফলন এত কাল সাদা-কালো দেখাত, রঙিন পিক্সেলে এ বার তাকেই রাঙিয়ে তোলা যাবে।”

আরও পড়ুন: পাক মারছে একে অন্যকে, বিরল যমজ গ্রহাণুর হদিশ

সার্ন-এর গবেষকদলের প্রধান ফিল বাটলারের দাবি, আর কোনও যন্ত্রই এত নির্ভুল ছবি তুলবে না। অধরা হিগস-বোসন কণার সন্ধান দেওয়া সার্নের বিখ্যাত লার্জ হ্যাড্রন কোলাইডারের মাধ্যমেই এই আবিষ্কার করেছেন তাঁরা।

বিশেষ রঙিন এক্স-রে দেহের অস্থি, তরুণাস্থি ও পেশীগুলিকে আরও স্পষ্ট করে তুলে আঘাতের সঠিক উৎপাদনস্থল ও তার অবস্থা নির্ণয়ে সক্ষম হবে। শুধু তা-ই নয়, এর মাধ্যমে টিউমারের উপস্থিতিও শনাক্ত করা যাবে।

এই যন্ত্রের ব্যবহারে চিকিৎসাবিজ্ঞান অনেকটাই এগোবে বলে আশাপ্রকাশ করেছেন গবেষকরা। সার্নের এই প্রযুক্তিকে বাণিজ্যিক ভাবে কাজে লাগাচ্ছে নিউজিল্যান্ডের এক বহুজাতিক কোম্পানি। তাদের এই কাজে সাহায্য করছে ইউনিভার্সিটি অব ওটাগো এবং ইউনিভার্সিটি অব ক্যান্টারবেরি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE