Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
ফিরে দেখা.....

একা একা একাশি

এক সময় সবাই নাকি একা থাকার ক্ষমতা পেয়ে যায়। তবে কেন জীবন থেকে ভিড় সরে গেলে অভিশাপ হয়ে দাঁড়ায় কারও? ৭ ডিসেম্বর তিনি একাশি। ফেলে আসা সময়ের অলিগলিতে হাঁটতে হাঁটতে উপলব্ধি ও অনুভবের আখ্যান লিখছেন শংকর।এক সময় সবাই নাকি একা থাকার ক্ষমতা পেয়ে যায়। তবে কেন জীবন থেকে ভিড় সরে গেলে অভিশাপ হয়ে দাঁড়ায় কারও? ৭ ডিসেম্বর তিনি একাশি। ফেলে আসা সময়ের অলিগলিতে হাঁটতে হাঁটতে উপলব্ধি ও অনুভবের আখ্যান লিখছেন শংকর।

শেষ আপডেট: ০৬ ডিসেম্বর ২০১৪ ০১:০০
Share: Save:

খেয়ালি সৃষ্টিকর্তার ততোধিক খেয়ালি টাইমটেবল অনুযায়ী জীবনের রেলগাড়ি ৭ ডিসেম্বর ৮১ নম্বর প্ল্যাটফর্মে প্রবেশ করতে প্রস্তুত।

সেই কবে ১৯৩৩ সালে যাত্রা শুরু করে প্রতিবছর প্রতি প্ল্যাটফর্মে বড্ড বেশি ভিড় দেখে দেখে যখন ক্লান্ত হয়ে পড়তাম, তখন কখনও ভাবিনি একদিন বয়সের হিমালয়শিখরে আরোহণ করে এমন একা হয়ে পড়ব।

মা-বাবা, স্ত্রী-পুত্র কেউ সঙ্গে নেই, সবাই তাঁদের সময়সারণি অনুযায়ী কখনও নোটিস দিয়ে, কখনও আচমকা বিদায় নিয়েছেন।

এক সময় মরণসাগরের ওপারে আর এক সুখী জনমে বিশ্বাস ছিল, যাঁরা ছেড়ে চলে গিয়েছেন তাঁদের সঙ্গে পুনর্মিলন হবে এমন একটা দৃঢ় প্রত্যাশাও ছিল। কিন্তু একাশির দ্বারপ্রান্তে একা একা দাঁড়িয়ে কেমন ভয় হয় বহু প্রচারিত পুনর্জন্মটা ছেলেভুলনো ছড়া। যাঁরা গেছেন তাঁরা চিরদিনের জন্যই গিয়েছেন। ওঁ পূর্ণমদঃ পূর্ণমিদং পূর্ণাত্‌ পূর্ণাত্‌মুচ্যতে ....ইত্যাদি উপনিষদের মহাকবির মিথ্যা স্তোকবাক্য, হতাশ শোকার্তকে ভেঙে পড়ার হাত থেকে রক্ষা করার জন্য বৈদিক প্রেসক্রিপশন।

আমার প্রিয় লেখক বিমল মিত্র বলতেন, আশি পেরোনো বা অশীতিপর হওয়ার দুটি নিশ্চিত লক্ষণসারাক্ষণ অতীতের দিকে তাকিয়ে থাকা এবং কারণে অকারণে কমবয়সিদের অযাচিত উপদেশ দেওয়া।

বিমল মিত্রের নিজস্ব টাইমটেবলে আশি বছর আসেনি, তিনি কিন্তু সারাক্ষণই সমকালের অসত্‌ মানুষদের তীক্ষ্ন সমালোচনা করে নানা উপদেশ দিয়ে গিয়েছেন, যা আমার আর একজন প্রিয় সমকালীন স্রষ্টা ভাল চোখে দেখতেন না। তিনি বলতেন, হোলটাইম অডিটর বা ভিজিল্যান্স অফিসার হবার জন্যে বড় লেখকরা কলম ধরেন না। তা যদি হত তাহলে থানার ওসি-রাই তো প্রাতঃস্মরণীয় লেখক হতেন। এই মন্তব্যের রিপোর্ট যথাসময়ে বিমল মিত্রের কাছেও পৌঁছেছিল। বিরক্তভাবে আমাকে বলেছিলেন, শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে বেশি যাবেন না, শরীরে ব্রাক্ষ্মণোচিত গুণ বেশি থাকলে বড় কথাশিল্পী হওয়া যায় না।

আমার পরম সৌভাগ্য, বাংলা সাহিত্য তারকাদের স্নেহপ্রশ্রয় থেকে কখনও বঞ্চিত হইনি। তাঁদেরই একজন মদ্যপান করতে করতে বলেছিলেন, “এক সময় কলকাতা মহানগরীর খিদিরপুর অঞ্চলে বাঙালি বাউনের সঙ্গে বাঙালি কায়েতের ভয়াবহ রায়ট বাঁধত, অ্যাংলো ইন্ডিয়ান পুলিশ সার্জেন্টরা অনেক কষ্টে সেইসব দাঙ্গা আটকেছেন, স্বয়ং স্বামী বিবেকানন্দ কায়েতদের উপবীত ধারণে উত্‌সাহ দিয়েছেন। আমার ধারণা, বাঙালি মুসলমান লেখকই একসময় সেরা ঔপন্যাসিকের শিরোপা পাবে। শ্রীশ্রীচণ্ডী, গীতা, বাইবেল, কোরান ইত্যাদি সব মন্থন করে আমি যে সারসত্যটি বুঝেছি, হে পরমেশ্বর, আপনি পরমকরুণাময় হতে পারেন, কিন্তু আপনার বিন্দুমাত্র সময়জ্ঞান নেই, তাই আপনি বৃদ্ধদের তরুণী ভার্যা দেন, যাঁদের দাঁত নেই তাঁদেরও জীবনসায়াহ্নে রেস্তোরাঁয় মটনকারি খাবার অর্থপ্রাচুর্য দেন।” এই লেখকের নাম সৈয়দ মুজতবা আলী।

কলেজ স্ট্রিট বইপাড়ায় একের পর এক মহালেখকের স্নেহ-সান্নিধ্য লাভ করেছি। ভেবেছি এ সব যে কোনও তরুণ লেখকেরই পাওনা-গণ্ডা। যত দিন বাঁচব তত দিন কড়ায়-গণ্ডায় উপভোগ করব। কিন্তু উপরের কর্তা একদিন যে নিজের খেয়ালে এঁদের দূরে সরিয়ে দিয়ে আমাকে সান্নিধ্যের ভিখারি করে তুলবেন, তা কে জানত?

পেট থেকে পড়েই কেউ লেখক হয় না, এ কথা বলতেন আর এক দিগ্বিজয়ী লেখক বনফুল বা বলাইচাঁদ মুখোপাধ্যায়। তিনি বলতেন, “লেখক হবার জন্য অনেক কাঠখড় পুড়োতে হয়, অনেক সাধ্য-সাধনার প্রয়োজন।” সেই মন্তব্য শুনে আর এক ক্ষণজন্মা বাঙালি লেখক শিব্রাম চক্রবর্তী বলেছিলেন, “ওরে বাবা, সবই বাপমায়ের সুকৃতি। তাঁরা বুঝে নিয়েছেন যতই কেমিক্যাল সার দাও, আমড়া গাছে কিছুতেই আম হবে না।”

তাহলে ঘুরেফিরে আবার পূর্বজন্মের এবং পরজন্মের কথা এসে যাচ্ছে। যে-বনগ্রাম শহরে আমার জন্ম তার এক এবং আজও অদ্বিতীয় লেখকের নাম বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বিড়ি খেতেন। প্রায়শই ধবধবে ধুতি-পাঞ্জাবি পরতেন না এবং প্রাণ খুলে পরলোকের কথা লিখতেন।

কলেজ স্ট্রিটের বইপাড়ায় গুজব ছিল, বন্ধু পরিমল গোস্বামীর সঙ্গে তিনি মৌখিক চুক্তি করেছিলেন যে, দুই বন্ধুর মধ্যে যিনি আগে দেহরক্ষা করবেন তিনি যে করেই হোক মর্তে একটা মেসেজ পাঠাবেন পরলোকে আছেন জানিয়ে।

বন্ধু পরিমল গোস্বামী বেশ কিছু কাল প্রয়াত বিভূতিভূষণের মেসেজের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে, কোনও খবরাখবর না পেয়ে নিশ্চিত হয়েছিলেন, পরলোক বলে কিছু নেই। এর পর তিনি যে স্ত্রীবিয়োগের পরে তাঁর শ্রাদ্ধশান্তি ইত্যাদি পারলৌকিক ক্রিয়ায় তেমন আগ্রহী হবেন না, এটাই তো স্বাভাবিক।

এই নিয়ে বইপাড়ায় কিছু নিন্দাও রটেছিল, কিন্তু আমি তাতে যোগদান করিনি। কারণ যুগান্তর পত্রিকায় তিনি রবিবারের সংখ্যায় অধমরচিত বড়বাজারনিবাসী এক ষাঁড়ের সিরিয়াস সাক্ষাত্‌কার ছেপেছিলেন খুবই যত্নসহকারে এবং লেখককে হাওড়ায় চিঠি লিখে বাগবাজারে নিয়ে গিয়ে ওখানকার বিখ্যাত তেলেভাজা ও মিষ্টি খাইয়েছিলেন। এ সব আদর-আপ্যায়ন করার দূরদৃষ্টি পরিমল গোস্বামী যখন দেখিয়েছিলেন তখনও আমি ‘কত অজানারে’ লিখিনি।

কী বলতে শুরু করে কোথায় সরে এলাম! অশীতিপরদের এইটাই স্বভাব। বরিষ্ঠের বয়োধর্মঠিকানা ভুলে যাওয়া, পথ হারিয়ে ফেলা, হাওড়া স্টেশন থেকে বাগবাজারের বাস খুঁজতে খুঁজতে নিজের অজান্তে গড়িয়াহাটায় হাজির হওয়া। বিমল মিত্র এসব ঢিলেমি খুব অপছন্দ করতেন। বলতেন, “বাড়ি থেকে বেরোবার আগে ঠিক করে নিতে হবে কোথায় যাবে। যে সব লেখক তা করে না তারা নিজেকেও ঠকায়, পাঠককেও ঠকায়!”

বিমল মিত্র প্রায়ই সাবধান করে দিতেন, “পাঠক আপনার মনিব। কাব্য করে বলতে গেলে আপনার জীবনদেবতা, তাঁর সময়ের দাম আছে, তাঁকে কিছুতেই ঠকানো চলবে না, সওয়ারি যেখানে যেতে চায় রিকশাওয়ালা হিসেবে তাকে সেখানেই পৌঁছে দিতে হবে।”

অতএব সেই পুরনো প্রশ্নে ফিরে আসা একা একা কী করে এই একাশিতে পৌঁছোনো গেল? দুর্গম সেই শিখরে চেনা-জানা কাউকে উপস্থিত থাকতে দেখা যাচ্ছে না কেন?

একাশি বছর আগের জন্মদিনের কোনও কথাই মনে পড়ার কথা নয়। পিতৃদেব হরিপদ মুখোপাধ্যায় ছিলেন কম কথার মানুষ। ছেলেদের কাছে কোনও ব্যাপারেই প্রায় মুখ খুলতেন না। সব কিছুই শোনা, গর্ভধারিণীর মুখে। তিনিই বলেছিলেন, বনগ্রামের ননীবাবুর ভাড়াটে বাড়ির কথা। অনেক দিন পর যখন একা একা বনগ্রামে গিয়েছিলাম, তখনও ননীবাবুর বাড়িটা টিকে ছিল। এখন আছে কি না জানি না। প্রতিবেশী পাঁচু স্বর্ণকারের বাড়িতে দুই প্রতিবেশীর মধ্যে খুব ভাব।

আমার মায়ের আদি নাম গৌরী। তাঁর মেজাজি পিতৃদেব ক্ষীরোদ ব্যানার্জি আচমকা চাকরি খুইয়ে তিনটি অসামান্যা সুন্দরী অবিবাহিতা কন্যাকে নিয়ে অথৈ জলে পড়ে গিয়েছিলেন। আমার উকিল পিতা এই সময় তাঁর প্রথমা স্ত্রীকে হারালেনএঁদের এক কন্যা ও দুই পুত্র।

দ্বিতীয় বিবাহকালে বাবার বয়স বোধহয় তেতাল্লিশ। সমস্যা দাঁড়ালআমার বৈমাত্রেয় দাদার নামও গৌরী। সামাজিক আপত্তি উঠল, পুত্র ও সত্‌ মায়ের এক নাম হওয়া উচিত নয়। তাই দুর্ভাগ্যের দুর্বিষহ জালে চিরদিনের মতন জড়িয়ে পড়ার আগে আমার দুর্ভাগা জননী নিজের নামটিও হারালেন। যিনি রূপে গৌরী নামে গৌরী ছিলেন তিনি ভাগ্যের পরিহাসে এ বার হলেন অভয়া। কে এই নামটি নির্বাচন করেছিলেন তা জানি না, কিন্তু এমন যোগ্য নাম আর হয় না।

জ্যেষ্ঠপুত্র ভূমিষ্ঠ হবার পরেই আমার মা বড় ধাক্কা খেলেন, পড়শিরা নবজাতককে দেখতে এসে বলতে লাগল, মা অমন ফুটফুটে সুন্দরী, আর তার ছেলে কী কালো! আঁতুড়ঘরেই মা অসহায় ভাবে কাঁদতে লাগলেন।

খবর পেয়ে দাদু ক্ষীরোদ ব্যানার্জি পিংক রঙের জার্মান পাউডারের কৌটো হাতে নিয়ে নাতিকে দেখতে এলেন। যাবার সময় মেয়েকে বললেন, “অভি, কাঁদিস না। তোর ছেলে স্যর আশুতোষ মুখার্জি হবে।”

জজ এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর স্যার আশুতোষের তখনও বেজায় নামডাক। আমার মা তাঁর বাবার কথাকে এমন বিশ্বাস করে বসলেন যে, বনগাঁ হাট থেকে প্রয়াত আশুতোষের একটা ছবিও কিনে আনালেন। বাবার কথার যে ভুল হবে না, ছেলে রূপে যাই হোক, গুণে সরস্বতীর বরপুত্র আশুতোষ হয়ে মায়ের সব দুঃখ মুছে দেবে, সে বিষয়ে অভয়ার কোনও সন্দেহ রইল না।

বাবার ওকালতির ভাগ্যসন্ধানে আমরা সপরিবার হাওড়ায় চলে এলাম। নতুন ঠিকানা চৌধুরীবাগানের কানাগলি, যা কাশীর গলিকেও হার মানায়। আমার সব ভাইবোনের তখনও জন্ম হয়নি। কিন্তু বৈমাত্রেয় দুই দাদা ও আমার ভাইবোনদের নিয়ে দু’খানা শোবার ঘরে বেজায় ভিড়।

এই সময় আমি প্রথম যে সমস্যার সৃষ্টি করলাম তা আজও মনে আছে। আমার দুই দাদা একদিন সেজেগুজে চৌধুরীবাগান থেকে বউবাজারে তাঁদের দিদির বাড়িতে ভাইফোঁটা নিতে চলেছেন। আমিও ওঁদের সঙ্গে যাবার জন্য এমন কান্নাকাটি শুরু করলাম যে মা ভীষণ লজ্জা পেয়ে গেলেন। অথচ আমার নিমন্ত্রণ নেই। শেষ পর্যন্ত আমার প্রিয় ছোটদা বউবাজারে গেলেন না, মা খুব বিরক্ত হয়ে আমাকে মারলেন।

পড়শিদের সঙ্গসুখে আমার একাকীত্বের সাময়িক অবসান হয়েছিল। বিশেষ করে অকৃতদার বাদলকাকু এবং তাঁর কনিষ্ঠভ্রাতা পচুকাকাই আমার ভরসা।

নিজের বাড়িতে এতই ভিড় যে বাবা-মায়ের কোনও সময়ই নেই আমার দিকে নজর দেওয়ার। তখনই আর একটা ঘটনা ঘটল, যা না-ঘটলে পরবর্তী সময়ে আমার খুবই অসুবিধা হত।

পচুকাকুর বন্ধু ছিলেন হাওড়া জেলা ইস্কুলের শিক্ষক সতীশবাবু। আমাকে নিয়ে বেড়াতে বেড়াতে একদিন বিখ্যাত এই ইস্কুলে বন্ধুর খোঁজ নিতে এসে পচুকাকা দেখলেন ভর্তি হবার পরীক্ষা চলছে।

১৯৪০ সালে স্কুলে ভর্তি হওয়া আজকের মতন কঠিন ব্যাপার ছিল না। কী ভেবে পচুকাকু আমাকে পরীক্ষায় বসিয়ে দিলেন মাকে সারপ্রাইজ দেবেন বলে।

আরও যা করলেন! এক সময় হলঘরে ঢুকে দেখলেন, আমি অঙ্কের খাতা নিয়ে হাত গুটিয়ে চুপচাপ বসে আছি। পচুকাকু ঝটপট অঙ্কের উত্তরগুলি নিজের হাতে বসিয়ে দিলেন। রেজাল্ট সঙ্গে সঙ্গে বেরুলো। কিন্তু জানা গেল জেলা ইস্কুলে ক্লাস ওয়ান, টু নেই। ওখানে শুরু ক্লাস থ্রি থেকে। অথচ আমার বয়স মাত্র সাত। কোনও তোয়াক্কা না করে ‘অকালপক্ব’ আমাকে ক্লাস থ্রিতে ভর্তি করে, নিজের পকেট থেকে টাকা জমা দিয়ে বীরবিক্রমে পচুকাকু চৌধুরীবাগানে ফিরে এলেন।

আমি অঙ্কে চিরদুর্বল হয়ে রইলাম। সেই সঙ্গে সহপাঠীদের বদনাম, বয়সের তুলনায় আমি নিতান্তই বেঁটে। পচুকাকু না জেনে মস্ত উপকার করে দিয়েছিলেন, কারণ ১৯৪৭ সালে বাবা যখন আকস্মিক ভাবে মারা গেলেন তখন ক্লাস টেনের ছাত্র হিসেবে আমার বয়স মাত্র তেরো প্লাস।

জেলা ইস্কুলে প্রতিদিনের সব দুঃখ ভুলে যাওয়া যেত ফ্রি টিফিনের দৌলতে। কৌটোয় পোরা সেই লুচি-আলুর দমের স্বাদ এত দিন পরে আজও মনে আছে। কিন্তু সেই টিফিনের সৌভাগ্য বেশি দিন সহ্য হল না।

মহাযুদ্ধের বিদেশি সৈন্যদের আশ্রয় দিতে গিয়ে আমাদের ইস্কুল মাসের পর মাস বন্ধ হয়ে রইল। ক্লাস ফাইভে কোনও ক্রমে প্রমোশন পাওয়ার পর রটে গেল, জেলা স্কুল যুদ্ধ শেষ না হলে আর খুলবে না। এই যুদ্ধ কবে শেষ হবে তা কেউ জানে না। অনেকে তখন লুকিয়ে-লুকিয়ে জাপানি ভাষা শিখছে! স্কুল নিয়ে কারও চিন্তা নেই, কারণ জাপানি বোমার ভয়ে অনেকের শহর ছেড়ে পালাচ্ছে এবং বাংলাভাষায় ‘ইভাকুয়েশন’ নামে একটি নতুন শব্দ সংযোজিত হয়েছে।

হাওড়ার মুখার্জি পরিবার তখন বনগ্রামে ফিরে গিয়েছে, বাদলকাকুর পরামর্শে আমি কিন্তু বাবার সঙ্গে চৌধুরীবাগানে থেকে গিয়েছি। নতুন ইস্কুলের সন্ধানে নিতান্ত কম বয়সে আমি একা-একাই পথে বেরিয়ে পড়লাম।

একরত্তি ছেলে একা একাই ভর্তি হবার জন্য এসেছে দেখে খুরুট রোডের বিবেকানন্দ ইনস্টিটিউশনের প্রধান শিক্ষক সুধাংশু শেখর ভট্টাচার্য এতই খুশি হলেন যে আমার অ্যাডমিশন টেস্ট হল না। হলে অঙ্কের পরীক্ষায় কী হত তা ভাবতে আজও আতঙ্ক হয়।

বিবেকানন্দ ইস্কুলে বিশেষ হতাশার কারণ, এখানে ফ্রি টিফিন নেই। স্কুলের একজন বেয়ারা টিফিনের সময় গামছায় ঢাকা ঝুড়ি থেকে কচুরি, শিঙাড়া ও দরবেশ বিক্রি করে। আর সচ্ছল পরিবারের কর্মচারীরা তাঁদের খোকাবাবুদের জন্য বাড়ি থেকে টিফিন নিয়ে আসে, যা একলা একলা খেতে লজ্জা লাগে বলে ভাগ্যবান সহপাঠীরা দেওয়ালের দিকে মুখ করে, কারও দিকে নজর না দিয়ে অতিদ্রুত টিফিন খেয়ে ফেলে।

প্রায় একই সময়ে হেডমাস্টার হাঁদুদা আমাদের স্বামীজির রান্নাবান্না-খাওয়াদাওয়ার গল্প বলতেন। বেদান্তের সঙ্গে বিরিয়ানির প্রচার কী ভাবে স্বামী বিবেকানন্দ মার্কিন দেশে করতেন এবং কেমন ভাবে তাঁর বাল্যবন্ধু রাখাল স্বামী ব্রহ্মানন্দ হওয়ার আগে এক সের কচুরি ব্রেকফাস্ট করতেন, তার বর্ণনা দিতেন।

বনগ্রাম থেকে ইভাকুয়েশনের হাঙ্গামা সামাল দিয়ে মা আবার চৌধুরীবাগানে ফিরে এসেছেন। সব দুঃখ সহ্য করে মা তখনও আশা করে বসে আছেন, তাঁর বড় ছেলে আশু মুখুজ্জে হবে। খোঁজখবর নিয়ে আমি জেনে ফেলেছি ছোটবেলা থেকেই আশুতোষ অঙ্কশাস্ত্রে মহাপণ্ডিত ছিলেন। আমার লজ্জার শেষ নেই। সেবার ভেবেছিলাম অঙ্ক পরীক্ষায় অন্তত একাশি পাব, কিন্তু কেন যে মাত্র বারো পেলাম তা আজও আমার কাছে স্পষ্ট নয়। মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে আমার ভীষণ কষ্ট হত।

অনেক ভেবে চিন্তে এর পরেই ঠিক করেছিলাম, দুনিয়ার সব নামী লোককে অঙ্কশাস্ত্রে পারদর্শী হতে হবে এমন কোনও কথা নেই। আমি বিখ্যাত আর্টিস্ট হয়ে মায়ের মুখোজ্জ্বল করব।

এই প্রচেষ্টার কথা আগেও লিখেছি। রং-তুলি-কাগজ কিনলাম। মায়ের কাছ থেকে পয়সা নিয়ে ‘বসে আঁকো’ প্রতিযোগিতায় সগর্বে নাম দিলাম। সেই প্রতিযোগিতায় বলা হল, মানুষের মুখ আঁকো। কাজ সেরে আমি কাগজ জমা দিয়ে দিলাম বিপুল উত্‌সাহে।

অগতির গতি পচুকাকু একটু আগাম খবর নিতে গিয়ে গম্ভীর মুখে ফিরে এসে খবর দিলেন, পুরস্কার তো নয়ই, আমার জন্য অপেক্ষা করছে বিরাট এক তিরস্কার! কারণ আমি মানুষের মুখের বদলে একটা বড় সাইজের পাকা পেঁপে এঁকে দিয়ে চলে এসেছি।

দোষ অবশ্যই আমার নয়, বড় শিল্পীরা ভিড়ের মধ্যেও একা এবং আমি শিল্পী হিসেবে সেই বয়সে দেখতাম, প্রত্যেক মানুষই কাঁঠাল, বেল, লাউ, ডাবের মতো দেখতে। আমি বুঝলাম, আমি সময়ের থেকে একটু বেশি এগিয়ে। পিকাসোকে মুখ আঁকতে দিলে তিনি যে-কুমড়োটি আঁকবেন তার দাম লাখখানেক ডলার। শিল্পীর স্বাধীনতা বিষয়টি তখনও আমাদের হাওড়ায় পৌঁছয়নি।

কিন্তু নানা যন্ত্রণায় জর্জরিত মায়ের চোখে জল দেখে আমার খুব কষ্ট হত। ভেবে পেতাম না কী ভাবে তাঁর প্রত্যাশার যোগ্য হয়ে উঠব। শেষ পর্যন্ত নানা ঘাটের জল খেয়ে শেষ পর্যন্ত যেখানে হাজির হলাম তা আমার হিসেবের মধ্যে ছিল না।

সেই বয়সেই বাড়ির অত্যধিক ভিড় আমার ভাল লাগত না। পাশের বসু পরিবারের পরিবেশ আমার খুব পছন্দ হত। বাদলকাকুর ছোট ভাই আমার পচু কাকু তখন দাদার সঙ্গে ঝগড়া করে বাড়ি ছেড়ে চলে গিয়েছেন। ঠাকুমা একা ঘরে বসে বসে কাঁদেন, আর অন্য এক ঘরে চোখের জল চাপা দিতে বাদলকাকু তাঁর কালামাজু লুজলিফ কোম্পানির বড়সাহেব লিভিংস্টোন সায়েবের ছবির দিকে আপন খেয়ালে তাকিয়ে থাকেন। বলেন, এই মহাযুদ্ধে ইংরেজকে জিততেই হবে, না হলে বিশ্বসংসার রসাতলে যাবে।

ইভাকুয়েশনের দৌলতে কলকাতা শহর তখন প্রায় ফাঁকা। আদালতে যাবার আগে বাবা নিজেই তখন হাঁড়ি চড়িয়ে পিতাপুত্রের জন্য ভাতে-ভাত রান্না করেন। বিকেলে বাবার আদালতের কয়েকজন বন্ধু এসে তাঁর সঙ্গে থিয়েটারজীবনের গল্প করেনবিশেষ করে বিডন স্ট্রিটের হারিয়ে-যাওয়া কোহিনুর থিয়েটারের কথা এবং গিরিশ ঘোষের গল্প।

নাটকের নেশায় পড়ে অকারণে যৌবনে অনেক সময় নষ্ট হল, এই বলে বাবা তাঁর বন্ধুদের কাছে যে সব স্মৃতিচারণ করতেন তা পুত্রের কাছে এত দিন অজানা ছিল। বাবা চাইতেন না, নাট্যজগতের বেয়াড়া ভূত যেন তাঁর সন্তানদের মধ্যে প্রবেশ করে। আর আমি তাঁর অগোচরে হেডমাস্টারমশায়ের উত্‌সাহে সাহিত্যিক হবার স্বপ্ন দেখছি!

কলকাতার নাট্যজগতে তেমন উপার্জনে অক্ষম হয়ে বাবা বনগাঁয় ওকালতি শুরু করেন। পরে প্রথম প্রচেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে হাওড়ায় হাজির হয়েছেন। হাঁড়ি চড়িয়ে ওকালতি শুরু করা যায় না নতুন জায়গায়। বাবার ভরসা তখন একজন অনুরাগী হাকিম, যিনি হাওড়ার জেলা জজ হয়েছেন।

অমূল্যধন বলে গেলেন এখনই হাওড়ায় চলে আসুন, আমি আপনাকে একটা জমিদারির রিসিভারের দায়িত্ব দিতে পারব। মাসিক দেড়শো টাকা উপার্জন আপনার বাঁধা কয়েক বছরের জন্য, ততক্ষণে আপনি নিজের প্রতিভায় ভালভাবে গুছিয়ে নিতে পারবেন।

অনেক বছর পরে কোর্টের আমলা প্রফুল্লবাবু বাবাকে মনে করিয়ে দিলেন, মনে আছে সেই বিভ্রাটের কথা? রিসিভারের কাগজপত্র জজসায়েবের দফতরে জমা দিয়ে বাবা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন, কিন্তু আদালতের ডাক আর আসে না।

বাধ্য হয়ে বাবা জজসায়েবের সঙ্গে দেখা করতে গেলেন। অমূল্যধন বললেন, সে কী! হরিপদ মুখোপাধ্যায় তো নিয়োগপত্র সই করে দিয়েছেন। আমলা প্রফুল্লবাবুর ডাক পড়ল। তিনি বুঝতে পারলেন, কাগজটা গুঁফো হরির কাছে না গিয়ে ভুল করে অন্য এক হরিপদর কাছে চলে গিয়েছে।

অন্য হরি বিশেষ ভদ্রলোক। ভুল হয়েছে জেনে তিনি নিয়োগপত্র ফিরিয়ে দিলেন এবং সেই ‘লাইফ সেভিং’ কাগজ শেষ পর্যন্ত গুঁফো হরির হাতে এসে গেল। আমাদের বাইরের ঘরে তখন সে কী হাসাহাসি! দূর থেকে বাবা ও তাঁর বন্ধুদের জন্য তামাক সাজতে সাজতে আমি অবশ্য এই গল্প শুনেছি বেশ কয়েক বছর পরে।

ইস্কুলে হাঁদুদা’কে জিজ্ঞেস করেছি, উকিলরা কি ভাল লোক হয় না? হাঁদুদা’র উত্তরঠাকুর রামকৃষ্ণ উকিল-ডাক্তারদের নিয়ে রসিকতা করতেন, কিন্তু প্রিয় শিষ্য স্বামী বিবেকানন্দের সাতপুরুষ তো উকিল! স্বামীজি

নিজেও তো ধর্মতলা থেকে ওকালতি পোশাক কিনে এক সময় হাইকোর্টপাড়ায় অ্যাটর্নি অফিসে কর্মজীবন শুরু করেছিলেন।

হাঁদুদা মাঝেমাঝে কমবয়সি ছাত্রদেরও বলতেন স্বামীজির কথা। সতত প্রতিকূল অবস্থামালার বিরুদ্ধে আত্মপ্রকাশ ও বিকাশের প্রচেষ্টার নামই জীবন। চরম দুঃখের মধ্যেও স্বামীজি পরাজয় স্বীকার করে নেননি। বিশ্বাস করেছেনজয় হবে, জয় হবে, হবে জয়। তখনই শুনেছি, নরেন দত্তের পিতা হার্ট অ্যাটাকে অকস্মাত্‌-মৃত হয়েছিলেন। আমার ভাগ্যেও যে এমন এক অঘটন ঘটতে চলেছে তার কোনও ইঙ্গিত কিন্তু কোথাও ছিল না।

দুঃসহ এই সময়, বাড়িতে বড্ড ভিড়। দুটো ছোট্ট ঘর, দশ-বারো জন মানুষকে টানা বিছানায় শুতে হয়। তোষক পাতা, মশারি টাঙানো, কে কোথায় পজিশন নেবে তা ঠিক করা ইত্যাদি নানা সমস্যা ও হাঙ্গামা।

এরই মধ্যে একবার বাবার নাটক রানি দুর্গাবতী অভিনয় দেখতে বনগাঁয় গিয়েছিলাম। সন্ধ্যা নেমেছে। আমরা দু’জনে ফিরছি। রেলগাড়িতে তেমন ভিড় নেই। যিনি সব সময়ে দূরে থাকতেন, সেদিন চলমান রেলে তাঁকে খুব কাছে পেয়ে ভীষণ ভাল লাগল।

হঠাত্‌ বলে বসলাম, একা থাকতে বড় ভয় লাগে। বাবা সেদিন বকাবকি করলেন না। বললেন, “এই তো আমি একা রয়েছি, সেই ছোটবেলায় কবে আমার বাবা চলে গিয়েছেন। এক সময় সবাই একা থাকার ক্ষমতা পেয়ে যায়, একটুও কষ্ট হয় না।”

বাবা সেদিন অনাগত দিনের কোন ইঙ্গিত আমাকে পৌঁছে দিতে চেয়েছিলেন তা তিনিই জানেন। একদিন হাওড়ার বাড়িতে গভীর রাতে কান্নার আওয়াজ উঠল। তাড়াতাড়ি যখন অন্য ঘরটায় উপস্থিত হলাম তখন আটটি নাবালক ছেলেমেয়ে এবং আমার মাকে ভাড়াটে বাড়িতে রেখে বাবা চলে গিয়েছেন সেই অজানা জগতে, যেখান থেকে শত চেষ্টা করলেও ফেরা যায় না।

সে এক অদ্ভুত পরিস্থিতির শুরু। ১৯৪০ সালে পচুকাকুর দূরদৃষ্টিতে নিতান্ত কম বয়সে আটচল্লিশ সালের ম্যাট্রিক পরীক্ষায় বসা গেল। বন্ধু বলতে প্রতিবেশী বাদলকাকু ও হেডমাস্টার হাঁদুদা, যাঁর দেওয়া বিবেকানন্দ মন্ত্রটিই সতত প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যে আমার আত্মপ্রকাশের স্পর্ধাকে বাঁচিয়ে রেখেছিল।

এই পরিস্থিতির কোনও দিন অবসান হবে ভাবিনি। কিন্তু ভাগ্যচক্রে অনেক কিছুই একে একে ঘটে যায়। উকিলের ছেলের সঙ্গে বিলিতি ব্যারিস্টার বারওয়েলের দেখা হয়ে গেল। যার আশু মুখার্জি হওয়ার কথা সে হল ব্যারিস্টারের বাবু। মৃত্যু নোয়েল বারওয়েলকেও অসময়ে টেনে নিয়ে গেল আমাকে একাকীত্বের অভিশাপে চিরদিনের জন্য বন্দি করে রাখার জন্য। কিন্তু কোনও ষড়যন্ত্রই শেষ পর্যন্ত সফল হল না।

আমি সাহিত্যের পথে একজন অতিপ্রিয় বিদেশি মানুষের স্মৃতিতর্পণ করতে গিয়ে আমার প্রথম বইটা লিখে ফেললাম। ক্ষীরোদ ব্যানার্জির প্রতিশ্রুত আশু মুখুজ্জেকে না পেয়েও মা বোধহয় পুত্রকে পিতৃধারায় ফিরতে দেখে তুষ্ট হলেন। নেই মামার চেয়ে কানা মামাই ভাল, তিনি নিজেই তো মাঝে মাঝে বলতেন।

আর আমি? ক্রমশই নিঃসঙ্গ থেকে আরও নিঃসঙ্গ। রবিঠাকুরের একটা কবিতার দুটো লাইন সামান্য পরিবর্তন করে বারবার আবৃত্তি করাটা জীবনের এক পর্যায়ে অভ্যাসে দাঁড়িয়ে গিয়েছিল।যদি তোর দুঃখ দেখে কেউ না আসে একলা চলো একলা চলোরে!

চোদ্দো বছর বয়স থেকে কিছু না কিছু উপার্জনের প্রাণান্ত চেষ্টা করে মনটা যথাসময়ে পুড়ে ঝামা হয়ে গিয়েছিল বোধহয়। জীবনের সহজ আনন্দগুলো প্রাণভরে উপভোগ করার শক্তিও পরম করুণাময় বোধহয় কেড়ে নিয়েছিলেন।

আরও অনেক বছর পরে আমি সবিস্ময়ে আবিষ্কার করেছিলাম, বাবার আকস্মিক অকাল মৃত্যুর পরে শৈশব থেকে আমি সোজা বার্ধক্যে হাজির হয়েছিলাম। যৌবনের জংশন স্টেশনে জীবনের রেল ইঞ্জিনটা কিছুক্ষণের জন্যও থামতে পারেনি। মা তাঁর বড়ছেলেকে বলতেন অকালপক্ব, আর পরবর্তী কালে স্ত্রী বন্দনা আমারই কোনও লেখায় পড়েছিলেন, ‘কারও কারও দরজায় কয়েক বার কড়া নেড়ে খেয়ালি যৌবন অপমানিত হয়ে ফিরে যায়।’ আত্মরক্ষার প্রচেষ্টায় আমি বঙ্কিমচন্দ্রের শরণাপন্ন হয়ে বন্দনাকে বলেছিলাম আমরা অবস্থার দাস, অবস্থা কবে আমাদের দাস হবে?

এত দিন পরে স্বীকার করে নেওয়া যেতে পারে বঙ্কিম, রবীন্দ্রনাথ ও বিবেকানন্দের আশীর্বাদে একাকীত্বের সব বেদনা সহ্য করে একা একা দুর্গম একাশিতে পৌঁছনো সম্ভব হয়েছে।

যাঁরা আমার এই নির্জন দুঃসহ পথে আলো দেখিয়েছেন বাবা-মা, বাদলকাকু, পচুকাকু, হাঁদুদা, বারওয়েল সায়েব, বিভূতিদা, এবং শেষ প্রান্তের সঙ্গিনী বন্দনা জন্মদিনের অভিনন্দন জানাবার জন্য তাঁদের কেউ আজ বেঁচে নেই।

তবু তাঁদের বলা যেতে পারে, একদিন আপনারা ছিলেন বলেই আজকের একাশিতে পৌঁছনো সম্ভব হল। পরলোক বলে কিছুই নেই আশঙ্কা হয়, যদি থাকে তাহলে আমার সব আপনজনকে কোনও সময়ে কিছুক্ষণের জন্য একত্র দেখতে পেলে মন্দ হবে না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

shankar patrika
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE