Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

ভালবাসার ভাষা

নতুন বউঠান ও রবীন্দ্রনাথ-বিড়লা সভাঘরে। লিখছেন বারীন মজুমদারনতুন বউঠান কাদম্বরী দেবী প্রসঙ্গে রবীন্দ্রনাথ যত কথা বলেছেন চিঠি ও কবিতায়, তাতে তার বালক ভাবটাই ফুটে উঠেছে বেশি। জীবনস্মৃতিতে রবীন্দ্রনাথ এক জায়গায় লিখেছেন, আলো বাতাস তাঁর যেমন দরকার, তেমনই মেয়েদের আদরও তাহার পক্ষে আবশ্যক। আদর, যত্ন, আবদার, সেবা, অভিমান এই শব্দগুলো অবধারিত ভাবে তাঁর লেখায় এসে যেত যখন তিনি নতুন বউঠানকে স্মরণ করে কিছু লিখতেন। কৈশোর থেকেই রবীন্দ্রনাথের জীবনে বহু নারীর আগমন। অনেকেই এসেছেন ক্ষণকালের জন্য।

ছবি: কৌশিক সরকার

ছবি: কৌশিক সরকার

শেষ আপডেট: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ২০:৩৬
Share: Save:

নতুন বউঠান কাদম্বরী দেবী প্রসঙ্গে রবীন্দ্রনাথ যত কথা বলেছেন চিঠি ও কবিতায়, তাতে তার বালক ভাবটাই ফুটে উঠেছে বেশি। জীবনস্মৃতিতে রবীন্দ্রনাথ এক জায়গায় লিখেছেন, আলো বাতাস তাঁর যেমন দরকার, তেমনই মেয়েদের আদরও তাহার পক্ষে আবশ্যক। আদর, যত্ন, আবদার, সেবা, অভিমান এই শব্দগুলো অবধারিত ভাবে তাঁর লেখায় এসে যেত যখন তিনি নতুন বউঠানকে স্মরণ করে কিছু লিখতেন। কৈশোর থেকেই রবীন্দ্রনাথের জীবনে বহু নারীর আগমন। অনেকেই এসেছেন ক্ষণকালের জন্য। হয়তো সেই সময় তাঁর জানা ছিল না ভালবাসার ভাষা। পরবর্তী সময়ে মুম্বইয়ের আনাতরখর (যাঁকে নলিনী নাম দিয়েছিলেন)। লন্ডনের স্কট দুহিতার আকর্ষণে দূরে চলে গিয়েছেন কিন্তু কাদম্বরীর আকর্ষণে আবার ফিরেও এসেছেন। আবার শেষ জীবনে লেডি রাণু মুখোপাধ্যায়ের (তখন তিনি রাণু অধিকারী) সান্নিধ্যে তিনি পেয়েছিলেন তাঁর নতুন বউঠানের ছায়া— আর তাতেই লিখেছিলেন ‘এই বুঝি মোর ভোরের তারা এল সাঁঝের তারার বেশে’। ভিক্টোরিয়া ওকাম্পোও এসেছিলেন তাঁর জীবনে। এই নিয়েই গীতি আলেখ্য ‘ভালবাসি ভালবাসি’। গানে ও পাঠে ছিলেন শ্রীকান্ত আচার্য, শ্রাবণী সেন, সত্যম রায়চৌধুরী ও ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত। শ্রীকান্ত ও শ্রাবণীর যুগ্মকণ্ঠে ‘ভালবাসি ভালবাসি’ দিয়ে শুরু। এর পরেই শ্রীকান্তের ‘তোমার কাছে এ বর মাগি’।

গানের পরে সত্যমের পাঠ ‘শুন নলিনী মেলো গো আঁখি’। আলেখ্যর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে পুরো গান, কখনও বা অর্ধেক আবার কখনও কোনও গানের সঞ্চারী থেকে। শ্রীকান্তের গান হৃদয় ছুঁয়ে যায়। বিশেষ করে ‘তুমি কোন কাননের ফুল’ ও ‘আমার প্রাণের পরে’। তেমনই শ্রাবণী। ‘জীবন মরণের সীমানা ছাড়ায়ে’ হৃদয়ের গভীরে বড় নাড়া দেয়। ঋতুপর্ণা পাঠ্যাভিনয়ে নিজের দক্ষতা ফের প্রমাণ করলেন। টুকরো টুকরো হাসি, অভিমান, আত্মসচেতনতা সুন্দর ভাবে ফুটে উঠেছে তাঁর পাঠে। সত্যমের কণ্ঠের আওয়াজটি বেশ ভালো।

‘খোলা হাওয়া’র গান

পিনাকী চৌধুরী

ছবি: কৌশিক সরকার

বিড়লা অ্যাকাডেমিতে অনুষ্ঠিত হল সুন্দর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, যার আয়োজক ‘খোলা হাওয়া’। মোট ন’টি বিষয়-ভাবনায় সমৃদ্ধ ছিল এই অনুষ্ঠান। ‘স্বপ্ন’, ‘আকাশ’, ‘ভ্রমর’, ‘চোখ’, ‘হৃদয়’, ‘প্রেম’, ‘বৃষ্টি’, ‘পথ’ ও ‘রঙ’। শুরুতেই সমবেত সঙ্গীতে অংশ নিয়েছিলেন রাজয়িতা বন্দ্যোপাধ্যায়, অরুণ গঙ্গোপাধ্যায় প্রমুখ। এর পরেই রাজয়িতার একটি গান বেশ মন কাড়ে। কারণ, রাজয়িতার এই গানের সঙ্গে জীবনের কোথায় যেন একটা সুন্দর মিল খুঁজে পাওয়া যায়। কখনও স্বপ্নই তার রসদ যোগায়। তাই তো বহ্নি ঘোষ গাইলেন ‘কোন সে আলোর স্বপ্ন’। বিভিন্ন পর্ব নিয়ে কয়েক জনের গান সত্যিই ভাল লেগেছে। যেমন সুরঞ্জনা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘এত বড় আকাশটাকে’ মন্দ নয়। শঙ্খ ঘোষের একটি কবিতা থেকে শোনালেন কাকলী। দেবাংশু বসু শোনালেন ‘নয়ন সরসী কেন’। ‘তোমায় হৃদমাঝারে রাখব’ সুদর্শনের কণ্ঠে অপূর্ব। একই ভাবনায় শিবাশিস ও অরুণের দ্বৈত সঙ্গীতও মন্দ লাগেনি। সুতপা চট্টোপাধ্যায়ের ‘আহা তোমার সঙ্গে’ বেশ মননশীল। জীবনের লক্ষ্য সুদূর এক অনন্ত পথ। কী আছে সেই পথের শেষে? শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের ‘যেতে পারি’ পাঠ করলেন সুতপা সরকার। সুতপা চট্টোপাধ্যায় গাইলেন ‘আমার এ পথ’। এ ছাড়াও সেই সব নতুন শিল্পী গান শোনালেন যা শ্রোতাদের মুগ্ধ করেছে। সব শেষে তবলা বাদক শুভেন চট্টোপাধ্যায়ের এমন প্রয়াসকে অভিনন্দন জানাতেই হয়।

নাম অভিমন্যু

অম্বালী প্রহরাজ

সম্প্রতি রবীন্দ্রসদনে দর্পণী মঞ্চস্থ করল নৃত্য-নাটক ‘যুগান্ত’। ব্যাপক নৈতিক অবক্ষয় যখন শাশ্বত মূল্যবোধকে গ্রাস করছে, তখনও মহাভারতের জনপ্রিয়তা নতুন করে বাড়ছে। বর্তমানে সমাজে বাহিত হচ্ছে একটি দুরূহ রোগ যার নাম ‘ক্ষমতা’। সমাজও হয়ে উঠছে স্বার্থপর, লোভী, সুযোগসন্ধানী। মহাভারতও একই রকম দুর্বৃত্ত, ক্ষমতালিপ্সু মূল্যবোধহীন এক সমাজের প্রতিনিধিত্ব করে। কবি বেদব্যাস ব্যাধিগ্রস্ত সমাজের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে মনুষ্যত্বকেই অস্ত্র করলেন। নাম অভিমন্যু। তারুণ্যের প্রতীক। তারাই পারবে জাগতিক কামনা-বাসনামুক্ত নির্লোভ সমাজ গড়ে তুলতে। সমগ্র বিষয়টি বিন্যস্ত হয়েছে অর্নব বন্দ্যোপাধ্যায়ের দক্ষ ও সুচারু নৃত্যপরিকল্পনায়। অর্ণ মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গীত ভাবনা নিখুঁতভাবে প্রয়োগ হয়েছে। চিত্রনাট্য বিশ্বজিৎ দাস, গ্রন্থনায় বরুণ চন্দ। উত্তরা, অভিমন্যু, দ্রৌপদী, অর্জুনের ভূমিকায় সংযুক্তা, সুমিত, সৌমিলি, অর্ণব-এর অভিনয় মুগ্ধ করে। তবে ‘থিয়েটার’ শব্দটি ব্যবহৃত হলে সংলাপের প্রয়োগ অনিবার্য এবং তা মঞ্চে উপস্থিত চরিত্রগুলোর মুখে। থিয়েট্রিক্যাল শরীরী ভঙ্গিমার মঞ্চায়ন অনেকগুলি দৃশ্যকে মান্যতা দিয়েছে।

সেনিয়া ঘরানায়

দ্য ক্যালকাটা স্কুল অব মিউজিক পাশ্চাত্য-উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের উপরে প্রাধান্য থাকলেও এখন ভারতীয় মার্গ সঙ্গীত ও নৃত্যের ধারাটিকেও বজায় রেখেছে তারা। সম্প্রতি একটি অনুষ্ঠানে প্রথম শিল্পী ছিলেন জয়পুর সেনিয়া ঘরানার সেতারশিল্পী সপ্তর্ষি হাজরা। তাঁর প্রথম নিবেদন ছিল রাগ মিঞামল্লারে আলাপ-জোড় ও ঝালা। সেনিয়া ঘরানার নিজস্ব বৈশিষ্ট্যবাহী ১৭ পর্দার সেতারে ধ্রুপদী অঙ্গের এই আলাপ ছিল রাগানুসারী ও মনোগ্রাহী। এর পরের শিল্পী বাজালেন রাগ গৌড়মল্লার। অতি সংক্ষিপ্ত আলাপের পর তিনতালে মধ্যলয়ের গৎ ধরেন সপ্তর্ষি। মধ্যলয়ের ছন্দের কাজ ও পরে দ্রুত লয়ে তান-তোড়া যেন আসর জমিয়ে দেয়। সঙ্গে যথাযথ তবলা সঙ্গত করেন অরবিন্দ ভট্টাচার্য। এর পর ভরতনাট্যমে নৈপুণ্যের ছাপ রাখলেন নৃত্যশিল্পী জিতা রায়চৌধুরী।

এখনও তিনি সতেজ কণ্ঠে

সুরঙ্গমা কলা কেন্দ্রের অনুষ্ঠানে গৌতম মিত্র গাইলেন ‘আমার হৃদয় তোমার আপন’। সতেজ কণ্ঠে তাঁর গান এক অন্য মাত্রা পেয়েছে। রচয়িতা রায় শোনালেন ‘শেষ নাহি যে’। সুরঋদ্ধ গান। এর পরে সুচিন সিংহের কণ্ঠে শোনা গেল ‘কবে আমি বাহির হলেম’। অন্যান্য শিল্পীর মধ্যে বাসবী বাগচির ‘আমি তোমায় যত’, বেলা সাধুখাঁর ‘আমার বেলা যে যায়’, চন্দ্রা মহলানবীশ-এর ‘জানি নাই গো সাধন’ গানগুলি শুনতে মন্দ লাগেনি। এ ছাড়াও অনুষ্ঠানে গান শোনালেন অন্যান্যরা। রবীন্দ্র কবিতা আবৃত্তিতে কৃষ্ণকলি বসু ও সাধনা মজুমদার স্বরক্ষেপণে মুন্সিয়ানার পরিচয় রেখেছেন।

নতুন করে

সম্প্রতি একটি অনুষ্ঠানে বেলা সাধুখাঁ শোনালেন বেশ কয়েকটি বাংলা গান। তার মধ্যে অবশ্যই উল্লেখযোগ্য ‘তখন তোমার একুশ বছর বোধহয়’, ‘আমি মিস ক্যালকাটা’, ‘কিনে দে রেশমি চুড়ি’ প্রভৃতি জনপ্রিয় বাংলা গান। তবে এ দিনের শ্রেষ্ঠ নিবেদন ছিল ‘খুব চেনা চেনা মুখখানি তোমার’ গানটি। শিল্পীর গানে কুড়ি বছর উত্তীর্ণ। বিভিন্ন ধরনের গানে তিনি সুনাম অর্জন করেছেন। সেই উপলক্ষেই ছিল এই অনুষ্ঠান।

সুরধ্বনি: ছাব্বিশ বছর পরে পুজোয় ফিরে পাওয়া সেই জাদুঝরা কণ্ঠ। আর তিনি

যখন লতা মঙ্গেশকর। গীতিকার সলিল চৌধুরী। নস্টালজিক অনুভূতি প্রতিটি গানেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE