ঝুঁকির দাঁড়িপাল্লা
ক্রেডিট রেটিং হল, কোনও সংস্থাকে বা তার কোনও প্রকল্পে ঋণ দেওয়া কতটা ঝুঁকির, তার মূল্যায়ন। যার রেটিং যত ভাল, তাকে ঋণ দেওয়া তত কম ঝুঁকির। অর্থাৎ আপনার টাকা সুদ-সমেত আপনার হাতে ফিরে আসার সম্ভাবনা তত বেশি। আর রেটিং কমার মানে ঋণের অর্থ ফেরত না-পাওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যাওয়া। যার অর্থ, লগ্নির আকাশে মেঘ থাকছেই।
ফিক্সড ডিপোজিট বা স্থায়ী আমানত প্রকল্প এবং বন্ড বা ঋণপত্র দু’টি লগ্নি মাধ্যমের ক্ষেত্রেই এটা প্রযোজ্য। কারণ দু’টিতেই লগ্নিকারী আসলে সংস্থাকে টাকা ধার দিচ্ছেন। সংস্থা ওই টাকা প্রয়োজন মতো খাটাচ্ছে। পরিবর্তে লগ্নিকারীকে সুদ দিচ্ছে নির্দিষ্ট মেয়াদ পর্যন্ত। মেয়াদ শেষে তাঁকে আসলের টাকাটা ফেরত দিয়ে দেওয়া হবে বলেও কথা দিচ্ছে। প্রকল্পে ঝুঁকি বেশি হওয়া বলতে এখানে বোঝাচ্ছে, ওই সুদ ও আসলের টাকা সময়ে কিংবা একেবারেই না-পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকা।
এটা ঠিক যে, এই সমস্ত লগ্নির ক্ষেত্রে সুদ কত মিলবে প্রাথমিক ভাবে সেটাই গুরুত্ব পায়। অর্থাৎ একটু বেশি সুদ দেবে কারা, সেই খোঁজখবর নিয়ে আপনি লগ্নি করতে নামবেন সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু এমন একটা প্রকল্প হয়তো বাছলেন যেটায় সুদের হার চড়া, তবে তার ক্রেডিট রেটিং তেমন সন্তোষজনক নয়। সে ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে আপনার লগ্নিতে দুর্যোগের আশঙ্কা তৈরি করে রাখলেন আপনি নিজেই। অতএব খোঁজখবরের তালিকায় শুধু সুদ থাকলে এখন আর কাজ চলবে না, থাকতে হবে রেটিংও।
রেটিং দেওয়া হয় ঋণপত্র ভিত্তিক মিউচুয়াল ফান্ডকেও। সে ক্ষেত্রে কোন কোন রেটিংয়ের ঋণপত্রে ফান্ড তহবিল খাটানোর সিদ্ধান্ত নিচ্ছে তার উপর নির্ভর করে সেটির ঝুঁকি নির্ধারিত হয়।
তবে একটা কথা মাথায় রাখবেন, উঁচু রেটিং মানে কিন্তু বেশি রিটার্ন নয়। বরং কম রেটিংয়ের ঋণপত্র, যাতে ঝুঁকি বেশি, সেখানেই রিটার্ন বেশি হওয়ার সম্ভাবনা। কারণ, এক অর্থে সুদ হল ঝুঁকির দাম। যেখানে যত বেশি ঝুঁকি, সেখানে সুদ বেশি না-দিলে মানুষ লগ্নি করবেন কেন? কাজেই ক্রেডিট রেটিং আপনাকে এটা বলে না যে, দিনের শেষে আপনি কতটা সুদ পাবেন। বরং তা আপনাকে বলে দেয় যে, যেখানে আপনি টাকা ঢালছেন, সেটি আসলে কতটা ঝুঁকির। এ বার আয় বাড়াতে কম রেটিংয়ের প্রকল্পে লগ্নি করে আপনি ঝুঁকি নেবেন, না কি তুলনায় কম আয় হলেও ঝুঁকির সঙ্গে আপোস করবেন না, সেটা সম্পূর্ণ আপনার সিদ্ধান্ত।
মাথায় রাখুন
এ পর্যন্ত এসে আপনি যদি ভাবেন যে, উঁচু রেটিংয়ের প্রকল্পে লগ্নি করা মানেই আমার আর কোনও আশঙ্কা রইল না, তা-ও কিন্তু ঠিক নয়। যে কোনও প্রকল্পের ক্রেডিট রেটিং বিচার করার সময় কয়েকটি কথা মাথায় রাখবেন—
১) এটি আসলে একটি লগ্নি প্রকল্প সম্পর্কে রেটিং সংস্থাটির মতামত। নির্দিষ্ট কারণের পরিপ্রেক্ষিতে প্রকল্পের ঝুঁকি সম্পর্কে আপনাকে সতর্ক করে দেওয়া।
২) রেটিংকে কোনও ভাবেই লগ্নির পরামর্শ বলা যাবে না। কোনও প্রকল্পকে উঁচু রেটিং দেওয়ার মানে সেটি আপনাকে কেনার সুপারিশ করা হচ্ছে, তা নয়।
৩) সব থেকে ভাল রেটিং করা হয়েছে এমন সংস্থা বা প্রকল্পও যে আগামী দিনে ডুববে না, এমন গ্যারান্টি কখনওই দেওয়া যায় না।
৪) একবার কোনও প্রকল্পে রেটিং দেওয়ার পর পরবর্তীকালে সংশ্লিষ্ট সংস্থার আর্থিক অবস্থা বা কোনও ঘটনার জেরে তা বদলাতেই পারে।
নিরাপত্তা না ঝুঁকি?
এ বার আমরা দেখব কেন রেটিং মানে লগ্নির উপদেশ বা সুপারিশ নয়, শুধুমাত্র ঝুঁকি মাপার একটি হাতিয়ার। যেটি লগ্নির সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করে সাধারণ মানুষকে।
এখানে আমরা রেটিং সংস্থা ক্রিসিলের তৈরি ঝুঁকির শ্রেণি বিভাগ নিয়েই আলোচনা করব। তাদের দেওয়া রেটিং অনুযায়ী—
‘AAA’ হল সব থেকে বেশি নিরাপদ। অর্থাৎ ঝুঁকি সব থেকে কম। একে বলা হয় ‘ট্রিপল এ’। কোনও প্রকল্পে এই রেটিং থাকার অর্থ হল, লগ্নিকারীর সময় মতো সুদ পাওয়া এবং মেয়াদ শেষে আসলের টাকা হাতে আসার সম্ভাবনা খুব বেশি। অন্য ভাবে ভাবলে টাকা বা সুদ মার যাওয়ার সম্ভাবনা কম।
এর পর ‘AA’ রেটিং। যার মানে, নিরাপত্তা উঁচু। তবে সময়মতো সুদ পাওয়া এবং মেয়াদ শেষে আসলের টাকা হাতে আসার সম্ভাবনা ‘AAA’-এর থেকে কম।