Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
Presents

পার্টি না পেনশন

আজ ১০ এপ্রিল। বেতন বাড়ার চিঠি আসি-আসি। কোথায় ঢালবেন বাড়তি টাকা? শেয়ার, ব্যাঙ্ক, ডাকঘর নাকি ফ্ল্যাট কেনার কাজে? প্রাপ্তির আনন্দে পার্টি হতেই পারে। কিন্তু তার জন্য বুড়ো বয়সের পেনশনের কথা ভুলবেন না। লিখছেন শৈবাল বিশ্বাসএপ্রিল থেকে নতুন আর্থিক বছর শুরু। আর সাধারণত তা শুরুর মুখে কিংবা শুরুর কিছু দিন পরেই কর্মীদের হাতে ওই চিঠি দেয় অধিকাংশ সংস্থা। দুরুদুরু বুকে পরীক্ষার রেজাল্ট বেরনোর মতো টেনশন নিয়ে তা খুলতেই হয় মন খুশ নয়তো মুখ গোমড়া। জেনে গেলেন, নয়া আর্থিক বছরে বেতন কতটা বাড়ল আপনার। জানলেন, প্রমোশন এ বার জুটল কিনা।

শেষ আপডেট: ১০ এপ্রিল ২০১৪ ০১:৩৯
Share: Save:

মুখবন্ধ খামে কয়েক লাইনের চিঠি। কিন্তু তা হাতে পাওয়ার আগে এক-দেড় মাস অফিসের করিডর কিংবা ক্যান্টিনে আড্ডা-গুজগুজ-ফুসফুস। হাজারো জল্পনা। প্রত্যাশার ফানুস। কখনও আবার সহকর্মীকে হাল্কা টিপ্পনি, “তোর তো প্রমোশন এ বার হচ্ছেই। কিন্তু আমাদের মাইনে-পত্তর কেমন বাড়বে বল দেখি?...”

এপ্রিল থেকে নতুন আর্থিক বছর শুরু। আর সাধারণত তা শুরুর মুখে কিংবা শুরুর কিছু দিন পরেই কর্মীদের হাতে ওই চিঠি দেয় অধিকাংশ সংস্থা। দুরুদুরু বুকে পরীক্ষার রেজাল্ট বেরনোর মতো টেনশন নিয়ে তা খুলতেই হয় মন খুশ নয়তো মুখ গোমড়া। জেনে গেলেন, নয়া আর্থিক বছরে বেতন কতটা বাড়ল আপনার। জানলেন, প্রমোশন এ বার জুটল কিনা।

একটু ভাবুন

চিন্তা করে দেখুন, মাইনে-পত্তর যাতে একটু ভাল বাড়ে, সেই জন্যই তো বছরভর এত পরিশ্রম করেন আপনি। আপ্রাণ দৌড়ন ‘টার্গেট’ ছোঁয়ার লক্ষ্যে। ছুটির পরেও অফিস ছেড়ে নড়েন না। এমনকী অনেক সময় ছুটির দিনেও মেয়ে নয়, কোলে থাকে ল্যাপটপ। কিন্তু এই বেতন বাড়াতে যতটা মেহনত করেন, তার এক অংশও সেই বাড়তি টাকা সদ্ব্যবহারের জন্য করেন কি? ভাবেন, বেতনের ‘বাড়তি’ টাকা ঠিক কোথায় তুলে রাখলে সচ্ছল হবে অবসর জীবন? সঞ্চয়কে কী ভাবে ছড়িয়ে দিলে সঠিক ভারসাম্য থাকবে ঝুঁকি আর রিটার্নের মধ্যে?

আমাদের বেশিরভাগের জন্যই এর উত্তর হল, “না”। কারণ, কখনও বেতন বাড়ার আগেই তা খরচের বন্দোবস্ত করে ফেলি আমরা। মাসে অন্তত হাজার দশেক বাড়বে ধরে নিয়ে বরাত দিই এয়ারকন্ডিশনারের। কখনও আবার চেনা এজেন্টের পাল্লায় পড়ে টাকা ঢালি এমন বিমা-প্রকল্পে, যার ম্যাচিওরিটির অঙ্ক পাতে দেওয়ার মতো নয়, ভাল নয় কভারেজও।

কিন্তু এই এপ্রিল থেকে ওই একই ভুল আর নয়। আজ ১০ এপ্রিল। এ বারের মুখবন্ধ খাম হয় আপনারা ইতিমধ্যেই পেয়েছেন, নইলে হাতে পাবেন আজ-কাল। সুতরাং এখন থেকে কোমর বাঁধুন। সারা বছরের কষ্টের ফলকে বৃথা যেতে দেবেন কেন?

ক্যালকুলেটর কই?

চিঠি পাওয়ার পর প্রথমেই খাতা-কলম নিয়ে বসুন। সঙ্গে ক্যালকুলেটর থাকলে আরও ভাল। খুঁটিয়ে দেখুন, প্রতি মাসে নিট কতটা বেতন বাড়ল আপনার।

হয়তো বছরে চার লক্ষ টাকা পেতেন। এ বার তা বেড়ে হল চার লাখ ষাট হাজার। তার মানে কিন্তু এই নয় যে, এ বার থেকে মাসে ৫,০০০ টাকা বেশি পাবেন আপনি। কারণ, সেখান থেকে কর বাবদ কিছু টাকা কাটা যাবে। আগের থেকে বেশি টাকা কাটা হবে এমপ্লয়িজ প্রভিডেন্ট ফান্ডেও (ইপিএফ)। ফলে এই সব কিছুর পর নিট কত টাকা আপনার হাতে বেশি আসবে, আগে তার হিসাব কষুন।

একই সঙ্গে দেখে নিন, উৎসাহ ভাতা (পারফর্ম্যান্স বোনাস) বা অন্য কোনও খাতে কোনও থোক টাকা আপনি পাচ্ছেন কিনা। পেলে, তার অঙ্কই বা কত। আগে এই দুই টাকার অঙ্ক আপনার কাছে পরিষ্কার হলে, তবেই কিন্তু তা লগ্নির সঠিক কৌশল সাজাতে পারবেন আপনি।

সঞ্চয় করে তবে খরচ

শুরুতেই একটা ভুল শুধরে নেওয়া ভাল। সাধারণত বেতন বাড়লেই তা খরচের হাজারটা জায়গা চট করে খুঁজে পেয়ে যাই আমরা। তার মধ্যে কিছু এমন খরচ থাকে, যা সত্যিই এড়ানো যায় না। যেমন ধরুন, ছেলে-মেয়ের পড়াশোনা, আঁকা শেখা কিংবা সাঁতার শেখার খরচ। ওদের ঠিকঠাক বেড়ে ওঠার জন্য এগুলো ভীষণ ভাবে জরুরি। আপনার তরফ থেকে সবচেয়ে দামী বিনিয়োগও বটে।

কিন্তু তেমনই অনেক খরচে কিন্তু রাশ টানা সম্ভব। জীবনে বেড়ানো-আনন্দ-ফূর্তি সবই থাকুক। কিন্তু সবকিছুই করুন পকেট মেপে। গোড়াতেই চিনে নিন, কোন খরচ না-করলেই নয়, আর কোনটা না-হলেও চলে। সেই অনুসারে শুরুতেই নির্দিষ্ট লক্ষ্য বেঁধে দিন নিজেকে। ঠিক করে ফেলুন, এই যে মাসে হাজার দশেক টাকা বেতন বাড়বে, তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে সঞ্চয়ও অন্তত ছ’সাত হাজার টাকা বাড়াতেই হবে আমাকে।

অর্থাৎ, আগে সঞ্চয়ের লক্ষ্য ঠিক করে নিয়ে তবে খরচের পথে হাঁটুন। সব খরচের শেষে পড়ে থাকা টাকাটুকুকে সঞ্চয় বলে ভাববেন না। মনে রাখবেন, পেনশন ফান্ড না-খুলে ‘উইকএন্ড পার্টি’তে টাকা ওড়ানো কিন্তু তেমন বুদ্ধিমানের কাজ নয়।

লক্ষ্য চিনুন

তবে শুধু সঞ্চয় করব বললেই হবে না। তার জন্য আগে নিজের লক্ষ্য ঠিক করা জরুরি। যা করে হোক দু’পয়সা বিভিন্ন প্রকল্পে ঢেলে দিলে চলবে না। জানতে হবে, সঞ্চয়ের ক্ষেত্রে আমার লক্ষ্য কী? সেই রাস্তায় এখন ঠিক কোথায় দাঁড়িয়ে আছি আমি? সব থেকে বেশি খামতি কোথায়? কোন গর্ত সবচেয়ে আগে বোজাতে হবে আমাকে? তবেই কিন্তু সেই সঞ্চয় প্রয়োজনে কাজে আসবে। নইলে পুরোটাই ভস্মে ঘি ঢালা।

ধরুন, কেউ বুড়ো বয়সের কথা ভেবে পেনশন ফান্ডে প্রতি বছর মোটা টাকা ঢালছেন। অথচ তাঁর জীবনবিমা সে ভাবে নেই বললেই চলে। এখন হঠাৎ করে যদি তাঁর কিছু হয়, তা হলে পরিবার গিয়ে দাঁড়াবে কোথায়? কে ভোগ করবে ওই পেনশন ফান্ডের টাকা? তাই সমস্ত দিক বিবেচনা করে লগ্নির সিদ্ধান্ত নেওয়া জরুরি।

সঙ্গের সারণি দেখুন—

বয়স কম, ঝুঁকি বেশি বনাম ঝুঁকি নিয়েও সাবধানী। সবিস্তার...

ধাপে ধাপে ঝুঁকি ছাঁটাই। সবিস্তার...

আমার মতে, বেতন বাড়ার পর সেই বাড়তি টাকা আপনি ঠিক কোথায় ঢালবেন, তা নির্ভর করে মূলত তিনটি বিষয়ের উপর—

(১) বয়স

(২) ঝুঁকি নেওয়ার ক্ষমতা

(৩) মাইনে আগের তুলনায় কতটা (শতাংশে) বাড়ল

মনে রাখবেন, সব টাকা শেয়ার বাজারের ঝুঁকিতে ঠেলে দেওয়া যেমন বুদ্ধিমানের কাজ নয়, তেমনই ঝুঁকি এড়াতে পুরোটা ব্যাঙ্কে পাঠানোও কিন্তু কাজের কথা নয়। দু’য়ের মধ্যে ভারসাম্য একান্ত জরুরি।

ঝুঁকি একেবারেই না-নিলে এত কম রিটার্নে সন্তুষ্ট থাকতে হবে যে, টাকা হাতে পাওয়ার পর তা আপনি প্রায় চোখেই দেখতে পাবেন না। কষ্টের সঞ্চয় খেয়ে যাবে মূল্যবৃদ্ধির দানব। তেমনই আবার সব টাকাই ঝুঁকির মুখে ঠেলে দিলে, অবসরের পর মাথায় হাত পড়তে পারে আপনার।

তাই আগামী মাস থেকে যে বাড়তি টাকা পকেটে আসবে, সঞ্চয়ের জন্য ভেবেচিন্তে তা ছড়িয়ে রাখুন। কী ভাবে তা করা উচিত, সঙ্গের সারণিতে তার একটা ধারণা দিতে চেষ্টা করেছি আমি। কী ভাবে টাকা রাখলে, সব দিকের মধ্যে বেশ একটা ভারসাম্য রাখা যায়, এখান থেকে তার কিছুটা আঁচ পেতে পারেন।

দেখুন, প্রত্যেকের প্রয়োজন আলাদা। পরিস্থিতি ভিন্ন। হতেই পারে যে, আমি হয়তো মিউচুয়াল ফান্ডে টাকা রাখার কথা বলছি। আর আপনি হিমসিম খাচ্ছেন বৃদ্ধ বাবা-মায়ের চিকিৎসার খরচ সামলাতে। সে ক্ষেত্রে প্রথমে হয়তো চিকিৎসা বিমার কভারেজই বাড়াতে হবে আপনাকে। আমার অঙ্ক হুবহু আপনার জন্য খাটবে না। প্রত্যেককে একেবারে নিজের মতো করে সাজিয়ে নিতে হবে বিনিয়োগের চূড়ান্ত কৌশল। কিন্তু কী ভাবে তা করলে লাভ হবে, সেই সম্পর্কে একটা স্পষ্ট ধারণা অন্তত সঙ্গের সারণিতে পাওয়া যাবে বলে আমার বিশ্বাস।

রাখব কোথায়?

কষ্টের সঞ্চয়ের টাকা কেন ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রাখা উচিত, তা নিয়ে এতক্ষণ বিস্তর আলোচনা করলাম আমরা। আসুন, এ বার দেখি কোথায়-কোথায় ওই টাকা লগ্নি করা জরুরি

• জীবনবিমা: শুধু আয়কর ছাড়ের কথা মাথায় রেখে জীবনবিমা করবেন না। করুন প্রয়োজন মেপে।

উদাহরণ দিলে বিষয়টি হয়তো একটু খোলসা হতে পারে। ধরুন, কেউ এক জন বছরে নিট সাড়ে তিন লক্ষ টাকা আয় করছেন। আর বিমায় তাঁর মোট কভারেজ ২৫ লক্ষ। এ বার এই এপ্রিলে বছরে তাঁর নিট মাইনে বেড়ে দাঁড়াল চার লক্ষ টাকা। তা হলে তাঁর কভারেজ এখন কেমন হওয়া উচিত?

এ ক্ষেত্রে যা উচিত তা হল, এমন টাকার কভারেজ তৈরি রাখতে হবে, যা অন্তত তাঁর এখনকার জীবনযাত্রার মান ধরে রাখতে পারে। তার মানে, গ্রাহকের মৃত্যুর পর এমন টাকা হাতে আসতে হবে যা রেখে বছরে চার লক্ষ টাকা সুদ মেলে। সুতরাং সে ভাবে দেখলে বিমা সংস্থার কাছ থেকে ৫০ লক্ষ টাকা (৮% সুদ ধরে) পেতে হবে তাঁকে। সেখানে তাঁর বর্তমান কভারেজের অঙ্ক মাত্র ২৫ লক্ষ। ফলে আরও ২৫ লক্ষের টার্ম পলিসি তাঁর অবিলম্বে করা উচিত। মনে করিয়ে দেওয়া ভাল, এই ধরনের বিমা প্রকল্পে তুলনায় কম প্রিমিয়ামে বেশি কভারেজ মেলে। কিন্তু সাধারণত গ্রাহকের মৃত্যু না-হলে কোনও টাকাই ফেরত পাওয়া যায় না।

• স্বাস্থ্য বিমা: চিকিৎসার খরচ কী ভাবে লাফিয়ে বাড়ছে, তা নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না। বিশেষত বাড়িতে বয়স্ক মানুষ থাকলে তো কথাই নেই। তাই বেতন বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসা বিমার অঙ্ক বাড়ানোর চেষ্টা করুন। মনে রাখবেন, একটা ব্যয়সাপেক্ষ চিকিৎসাই আপনার দীর্ঘ দিনের সঞ্চয় কেড়ে নেওয়ার পক্ষে যথেষ্ট।

• রেকারিং বা এসআইপি: বেতন বাড়া মানে প্রতি মাসের শুরুতেই অ্যাকাউন্টে বাড়তি কিছু টাকা। তুলে ফেললে তা কখন খরচ হয়ে গিয়েছে, বুঝতেই পারবেন না। তাই শুরুতেই একটা রেকারিং করে ফেলতে পারলে মন্দ হয় না। সে ক্ষেত্রে মাসের শুরুতেই একটা নির্দিষ্ট টাকা আপনেই জমতে থাকবে আপনার।

এই টাকা যে ব্যাঙ্কেই জমাতে হবে, এমন কোনও কথা নেই। তা ঢালতে পারেন মিউচুয়াল ফান্ডেও। এসআইপি-র (সিস্টেমেটিক ইনভেস্টমেন্ট প্ল্যান) মাধ্যমে। সেখানেও কিস্তির মতো করে টাকা জমতে থাকবে আপনার। তবে চটজলদি লাভের আশা এখানে করবেন না। লগ্নি করুন দীর্ঘ মেয়াদের জন্য। যে রকম ঝুঁকি নিতে চান, সেই অনুযায়ী বেছে নিন পছন্দের ক্ষেত্রও। ঠিক করুন, ফান্ডের মাধ্যমে কতটা টাকা শেয়ারে লাগাবেন আপনি। আর কতটাই বা ঢালবেন ঋণপত্রে।

• দীর্ঘ মেয়াদি বিনিয়োগ: দীর্ঘ মেয়াদে টাকা রাখার জন্য পাবলিক প্রভিডেন্ট ফান্ড (পিপিএফ) কিংবা পেনশন ফান্ডে লগ্নির কথা তো আমরা জানিই। মাইনে বাড়লে, পিপিএফে আরও বেশি করে টাকা রাখার চেষ্টা করুন। মনে রাখবেন, এই প্রকল্পে আপনার বিনিয়োগ তো বটেই সেখান থেকে পাওয়া সুদও পুরোপুরি করমুক্ত।

এ ছাড়াও বেশ কয়েকটি আকর্ষণীয় প্রকল্প রয়েছে বাজারে। যেমন—

(১) ইনফ্লেশন ইনডেক্সড বন্ডের কথা ভেবে দেখতে পারেন। সরকারি এই বন্ড সুরক্ষিত। সেই সঙ্গে মূল্যবৃদ্ধির তুলনায় বেশি সুদ পাওয়া এখানে নিশ্চিত। ফলে তা লগ্নির আকর্ষণীয় গন্তব্য হতে পারে।

(২) বিভিন্ন সরকারি ও রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার ছাড়া বন্ড বা ঋণপত্রেও অনেক সময় করছাড় মেলে। তাদের রিটার্নও বেশ ভাল।

(৩) নামী, বিশ্বস্ত সংস্থার শেয়ার সরাসরি কিনতে পারেন। তবে তার জন্য আগে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া ভাল। মনে রাখবেন, রাতারাতি মুনাফার আশা এখানেও না-করাই ভাল।

(৪) টাকা রাখতে পারেন পাঁচ বছর মেয়াদের টাইম ডিপোজিটে। করছাড়ের সুবিধা এখানে রয়েছে। এই একই কারণে ইকুইটি লিঙ্কড সেভিংস স্কিমও (ইএলএসএস) লাভজনক হতে পারে আপনার পক্ষে।

(৫) মিউচুয়াল ফান্ড ভাল রিটার্ন দিতে পারে। বিশেষত সেই সব ফান্ডের খোঁজ করুন, যারা লগ্নি করছে বিদেশি সংস্থার শেয়ারে।

(৬) পণ্য বাজারের (কমোডিটি) ইটিএফে-ও টাকা ঢালতে পারেন।

আর থোক টাকা?

অনেকেই প্রশ্ন করেন, বর্দ্ধিত বেতন আর বোনাসের টাকা লগ্নির কৌশল আলাদা হওয়া উচিত কিনা। আমার মতে, তার পুরোটাই যে আলাদা হতে হবে, এমনটা নয়। তবে বোনাসে পাওয়া থোক টাকা কোনও মোটা খাতে লগ্নি করা ভাল। যেমন, হয়তো এক বারই প্রিমিয়াম দিতে হয় (সিঙ্গল প্রিমিয়াম), এমন কোনও বিমা প্রকল্প কিনলেন। কিংবা তা দিয়ে বাড়ি বা গাড়ি কেনার ধার মিটিয়ে দিলেন বেশ কিছুটা।

দীর্ঘ মেয়াদে শেয়ার কেনার জন্যও এই টাকা মন্দ নয়।

নেব কি নেব না?

আপনাদের অনেকেই হয়তো গত এক-দু’বছর আটকে আছেন দোটানায়। আর ক’টা টাকা মাইনে বাড়লেই বাড়ি বা গাড়ি কেনার ধারটা নিয়ে ফেলতে পারেন। মাসিক কিস্তি (ইএমআই) গুনতে অসুবিধা হয় না। তাই এ বার বেতন বাড়লে, ফের খাতা-পেন্সিল নিয়ে বসুন। প্রয়োজনে একপ্রস্ত আলোচনা করতে পারেন ব্যাঙ্কের সঙ্গে। দেখতে পারেন, খামোখা আর বাড়ি ভাড়ার টাকা না-গুনে নিজের বাড়ির বন্দোবস্ত এ বার করা যায় কিনা।

কিন্তু যদি...

সবথেকে খারাপটাও বোধহয় চিন্তা করে রাখা ভাল। যদি কোনও কারণে বেতন না-বাড়ে, তাতে খারাপ লাগবে ঠিকই কিন্তু ভেঙে পড়বেন না। বরং একটা বছরের জন্য কোমর বাঁধুন। যাতে অপ্রয়োজনীয় খরচ ছেঁটে ফেলে তার মধ্যেও সংসারের নৌকা বাইতে অসুবিধা না হয়। এ ক্ষেত্রেও আমার কয়েকটা ছোট্ট পরামর্শ রয়েছে

• আয় একই থাকছে। অথচ মূল্যস্ফীতির দৌলতে বাড়বে সংসার খরচ। সুতরাং শুরুতেই দেখুন, কোন কোন খাতে সামান্য খরচ ছেঁটে সেই টাকা তুলে রাখতে পারেন আপনি।

• জীবনবিমা কিংবা চিকিৎসা বিমার প্রিমিয়াম কখনওই বন্ধ করবেন না।

• এ বছরটার জন্য কোনও মারাত্মক উচ্চাকাঙ্খী সঞ্চয়-পরিকল্পনা না করাই ভাল। কোথাও মোটা টাকা লাগিয়ে ফেললে, হাঁসফাঁস করতে হতে পারে।

• নতুন কোনও প্রকল্পে টাকা ঢালার আগে অবশ্যই তার রিটার্ন আর করছাড়ের সুবিধা বিচার করুন।

• হাতে সময় থাকলে অন্য কোথাও থেকে আয় বাড়ানোর চেষ্টা করুন।

মোদ্দা কথা হল, বেতন তেমন না-বাড়লে, চোখধাঁধানো কিছু করতে না যাওয়াই ভাল। কোনও কারণে ব্যাটে-বলে না-হলে, অনেকটা ক্রিজ আঁকড়ে পড়ে থাকার মতো।

আমার তরফ থেকে অবশ্য শুভেচ্ছা ছক্কা হাঁকানোরই রইল।

(মতামত ব্যক্তিগত)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

pension saibal biswas
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE