Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

রফি মিয়াঁ এক নম্বর কিশোর কুমার দু’নম্বর

লতা থেকে কিশোর। মান্না দে-র স্মৃতিচারণ। ব্লগ লিখছেন দেবপ্রসাদ চক্রবর্তীলতা থেকে কিশোর। মান্না দে-র স্মৃতিচারণ। ব্লগ লিখছেন দেবপ্রসাদ চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ২৪ ডিসেম্বর ২০১৫ ০০:০১
Share: Save:

মান্নাদা বলতেন, ‘লতা যদি শুধু ক্লাসিকাল গাইত, তা হলে সমান ভাবে সফল হত। সবার আগে ও-ই থাকত।’ আর মান্নাদা সম্পর্কে লতাজি কী বলছেন? লতাজি তো কয়েক প্রজন্মের শিল্পীর সঙ্গে কাজ করেছেন। সবার সম্পর্কে কিছু না কিছু কথা আমরা লতাজির মুখে শুনেছি। কিন্তু সব কিছু ছাপিয়ে যায় মান্নাদার জন্য লতাজির শ্রদ্ধা। মান্নাদা এবং লতাজি একশোর বেশি ডুয়েট গান গেয়েছেন হিন্দি ছবিতে। লতাজি বলছেন, ‘সংখ্যার দিক থেকে মান্নাদার সঙ্গে আমার ডুয়েট গান হয়তো মহঃ রফি বা কিশোর কুমারের থেকে কম, কিন্তু গুণগত মান বা মানুষের মনে যা চিরদিন রেখাপাত করবে, সেই বিচার করতে গেলে মান্নাদার গান তাঁদের থেকে কোনও অংশে কম নয়।’ সুরকারেরা মান্নাদাকে সুরটি দিয়ে যেতেন। সেই গান মান্নাদা তাঁর অসাধারণ ইম্প্রোভাইজেসনে এমন জায়গায় নিয়ে যেতেন, এক একটি নতুন সুর নতুন গান হয়ে যেত—অধিকাংশ ক্ষেত্রে। এ জন্য প্রায় সব সুরকার মান্নাদাকে সুরটি দিয়ে বলতেন, ‘একটু সাজিয়ে গুছিয়ে নেবেন মান্নাদা।’ লতাজি তো অহরহ দেখেছেন মান্নাদা তাঁর অনন্য সাংগীতিক বোধ দিয়ে এক একটি গানের রূপ নির্মাণ করতেন। মান্নাদার গুণমুগ্ধ লতাজি বলছেন, ‘একজন দক্ষ কনে সাজিয়ে যেমন বিয়ের দিন একজন সাধারণ জনকেও অসাধারণ সুন্দরী করে সাজিয়ে তোলেন, মান্নাদাও সুরকারদের দেওয়া অনেক গান নিজের মতো করে গেয়ে সেই গান সুপারহিট করিয়ে দিয়েছেন।’ একবার এক সঙ্গীত সমালোচক লতাজিকে জিজ্ঞাসা করলেন—সুরকাররা কেন অধিকাংশ ক্লাসিকাল গান মান্নাদাকে দিয়ে গাওয়ান?’ লতাজি বলছেন, ‘আমি তার কথার কোনও উত্তর দিতে পারিনি। উত্তর দেবই বা কী করে? ওই সব গান মান্নাদা ছাড়া কে-ই বা গাইতে পারবে? এ কথা যদি আমি বলি, অন্য শিল্পীরা তো দুঃখ পাবেন। তবে এটাই সত্যি। মান্নাদার মতো পাল্লা দিয়ে কে পারবে ভীমসেন যোশীর সঙ্গে গাইতে। সিচুয়েশন চাইছে ঠিক, তবু এমন তো গেয়েছিলেন মান্নাদাই, গানে জিতেছিলেন।

মান্নাদার প্রতি নরম শ্রদ্ধাশীল আশা ভোঁসলে এবং সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের দুঃখ কিন্তু একই জায়গায়। আশাজি তো বহু বার বলেছেন—‘হিন্দি সিনেমা মান্নাদাকে পুরোপুরি ব্যবহার করতে পারেনি। যদি পারত, তবে রফি-কিশোর কুমারের মতো মান্নাদার গানেরও একটা যুগ তৈরি হত। একবার সন্ধ্যাদি মান্নাদাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন ‘হিন্দি ছবিতে নায়কের লিপে আপনার এত কম গান কেন?’ মান্নাদা অন্ধকার মুখে উত্তর দিয়েছিলেন ! কী আর করব বলুন? তেমন গান না পেলে আমিই বা কি করি? যা করার তা করে দিয়েছেন। সন্ধ্যাদি বলছেন, ‘মান্নাদা একজন ভার্সেটাইল সিংগার। সব ধরনের গান গাইতে পারেন। ডেলিভারিটা দারুণ। নাটকীয়তা দারুণ। উচ্চারণ পরিষ্কার। গলায় সুর খোলে দারুণ।’

সহকর্মীদের ভীষণ ভাবে খেয়াল রাখতেন মান্নাদা। আশির দশকে কাকদ্বীপে বিরাট অনুষ্ঠান—সব নামী শিল্পী—সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায়। কিছু দিন আগে মান্নাদাও সেখানে অনুষ্ঠান করে গিয়েছিলেন। তখন এক বিপত্তি ঘটে। খোদ ডাকাতদের কবলে পড়েছিলেন মান্নাদা। যখন শুনলেন ওখানে অনুষ্ঠান করতে অন্য শিল্পীরা যাচ্ছেন, মান্নাদা ফোন করে সবাইকে সাবধান করে দিলেন, কোনও বিপদ যাতে না ঘটে তার জন্য আগাম কী কী করণীয় তাও বলে দিলেন। মান্নাদার গুণমুগ্ধ কে নয়! নিজের মতো করে সবাই শ্রদ্ধা জানিয়েছেন নানা সময়ে। ‘মধুবালা’র সুরকার জয়দেব খুব ভাল কথা বলেছিলেন— ‘মান্নাদাকে প্রথমে গাইতে দিন। তার পর মুকেশ, তালাত মেহমুদ, হেমন্তকুমার, কিশোরকুমার, এমনকী মহঃ রফিও গাইবার সাহস দেখাবে না।’

সব কিছু সত্ত্বেও হিন্দি গানে নিজের অবস্থান নিয়ে মান্নাদার মধ্যে একটা চাপা অভিমান কাজ করত। মজা করে বলতেন— ‘রফি মিঞা এক নম্বর, কিশোর কুমার দু নম্বর আর আমি নম্বর-টম্বরে নেই। আমি হলাম গিয়ে চিরকালের স্ট্রাগলার।’ মান্নাদা সঙ্গীত-জীবনের সুবর্ণ জয়ন্তী পালিত হয় নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে। মান্নাদা বলেছিলেন, ‘সঙ্গীত জীবনের পঞ্চাশ বছর নয়, বলা ভাল আমার সংগ্রামী জীবনের পঞ্চাশ বছর পূর্ণ হল।’

বেশ মজার ঘটনা ঘটেছিল ‘পড়োশন’ ছবির রেকর্ডিংয়ে। সিচুয়েশন অনুযায়ী ‘বসন্ত বাহার’ ছবিতে গানের লড়াইয়ে মান্নাদা হারিয়েছিলেন ভীমসেন যোশীকে। পড়োশনে মেহমুদের লিপে গাইছেন মান্নাদা আর কিশোর কুমার গাইছেন সুনীল দত্ত , নায়কের লিপে। নায়িকা সায়রা বানুর মন পেতে নায়ক সুনীল দত্তকে তো গানের লড়াইয়ে জিততে হবে। বেঁকে বসলেন মান্নাদা—‘কভি নেহি, কিশোরের কাছে আমি হেরে যাব, এটা কেমন করে হয়?’ শেষ পর্যন্ত মুশকিল আসান হয়ে এলেন স্বয়ং কিশোর কুমার। জিভ কেটে বললেন, ‘ও মান্নাদা, গান গেয়ে তো এ জন্মে আপনাকে হারাতে পারব না। সিনেমাতেই নয় মিথ্যে মিথ্যে আপনাক হারালাম।’ তার পর তো এই গান ইতিহাস হয়ে গেল। মান্নাদার সেই অসাধারণ দক্ষিণ ভারতীয় টানে গান, পরে মান্নাদাও বারবার স্বীকার করেছেন, ‘অমন করে গাইতে কিশোর ছাড়া আর কে পারবে?’

মান্নাদারা গায়কি তৈরিতে বিশেষ অবদান ছিল সুরকার অনিল বিশ্বাসের। মান্নাদা সম্পর্কে তিনি একটি অসাধারণ মন্তব্য করেছিলেন—‘অন্য শিল্পীরা যে সব গান গেয়েছে, সে সব গান সমান দক্ষতায় মান্না গেয়ে দিতে পারবে। কিন্তু যে সব গান মান্না গেয়েছে, অন্য কেউ সে ভাবে সে গান গাইতে পারবে না।’ ‘ঋতু যায়ে’ গানে একই সঙ্গে চারটি রাগে মান্নাদাকে দিয়ে গাইয়েছিলেন অনিল বিশ্বাস। আবার সেই মান্নাদাকে দিয়েই গাওয়ালেন অসম্ভব ভাল সেই সব রোম্যান্টিক গান—‘তেরা হাত হাতো মে আগয়া’, ‘মেরে মন কি ধড়কন’, ‘ও ঘায়েল করতে হ্যায়’। অনিল বিশ্বাস ঠিকই বলেছিলেন, এমন বৈচিত্রময় গায়কি একমাত্র মান্নাদারই ছিল, আর কারও নায়।

অপ্রিয় হলেও কথাটা সত্যি। এত প্রতিভা এবং যোগ্যতা কা সত্ত্বেও মান্নাদা কেন তুলনায় কম গান পেতেন? এ নিয়ে বহু দিন ধরে বহু চর্চা হয়েছে। অনেক কারণ ছিল। তার মধ্যে একটা অন্যতম কারণ কম আলোচিত। অনেক সুরকারই মান্নাদার কাছে আসতে ভয় পেতেন—পাছে তাদের অজ্ঞতা ধরা পড়ে যায়। মান্নাদার মতো এত সঙ্গীতবোধ তো আর কারও মধ্যে নেই। তিনি ছিলেন স্পষ্ট বক্তা। সত্যি কথা মুখের উপর বলে দিতে বাধত না। এই ভুল (?) কিন্তু অন্য শিল্পীরা করতেন না। চুপচাপ গানটা গেয়ে দিতেন। ভালই হয়েছে মান্নাদা এমন ভুল(?) করতেন, নইলে তিনি তো সবার সঙ্গে এক ব্রাকেটে থেকে যেতেন।

মান্নাদার নামটা একক হিসেবে সবার আগে থাকে। তার পর ব্রাকেট শুরু হয়।

জানান, কী ভাবে তা রক্ষা করা সম্ভব। কম দূরত্ব অতিক্রম করতে হলে মোটরসাইকেল নয়, সাইকেলের ব্যবহার করতে হবে। এ ভাবে বায়ু দূষণ রোধ করা যায়। এল ই ডি-র ব্যবহারে অর্থনৈতিক ভাবে লাভবান হবার পাশাপাশি রক্ষা পাবে পরিবেশও। ছিল ছাত্রছাত্রীদের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও। কুইজে অংশ নেন দর্শকরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE