301452 crore rupees wealth gap between Anil Ambani and Mukesh Ambani dgtl
Reliance
দাদা উঠছেন, ভাই নামছেন, মুকেশ-অনিলের সম্পত্তির ফারাক এখন...
সময়টা ভাল যাচ্ছে মুকেশ অম্বানীর। এশিয়ার সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি হিসাবে উঠে এসেছে তাঁর নাম। ছোট ভাই অনিলের জন্য অবশ্য এ বছরটা আরও এক বার খারাপ হয়েই থাকল। দাদার সঙ্গে ভাইয়ের সম্পত্তির ফারাক গিয়ে দাঁড়াল প্রায় ৪ হাজার ১০০ কোটি ডলার। ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ৩ লাখ ১ হাজার ৪৫২ কোটি টাকার কাছাকাছি।
নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১৯ অক্টোবর ২০১৮ ১৬:১৯
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৬
সময়টা ভাল যাচ্ছে মুকেশ অম্বানীর। এশিয়ার সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি হিসাবে উঠে এসেছে তাঁর নাম। ছোট ভাই অনিলের জন্য অবশ্য এ বছরটা আরও এক বার খারাপ হয়েই থাকল। দাদার সঙ্গে ভাইয়ের সম্পত্তির ফারাক গিয়ে দাঁড়াল প্রায় ৪ হাজার ১০০ কোটি ডলার। ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ৩ লাখ ১ হাজার ৪৫২ কোটি টাকার কাছাকাছি।
০২১৬
এই বছর মুকেশ অম্বানির ব্যক্তিগত সম্পত্তির পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৩১০ কোটি ডলারে। ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ৩ লাখ ১৬ হাজার ৮৯২ কোটি টাকা। সম্পত্তির পরিমানে তিনি ছাড়িয়ে গিয়েছেন চিনের আলিবাবা-র মালিক জ্যাক মা এবং মাইক্রোসফটের প্রাক্তন প্রধান স্টিভ বামারকেও।
০৩১৬
ধীরুভাই অম্বানীর ছোট ছেলে অর্থাৎ মুকেশের ভাই অনিলের ব্যবসায়িক ভাগ্য অবশ্য ততটা ভাল নয়। তাঁর বেশ কিছু ব্যবসা আইনি জটিলতায় ভুগছে। অনিলের কোম্পানির শেয়ারের দামও পড়েছে হুড়মুড়িয়ে। তাঁর ব্যক্তিগত সম্পত্তির পরিমাণ গিয়ে দাঁড়িয়েছে ১১ হাজার ২৮ কোটি টাকায়। বোঝাই যাচ্ছে ৬১ বছরের দাদার থেকে অনেকটাই পিছিয়ে ৫৯ বছরের ভাই।
০৪১৬
ইয়েমেনে একটি গ্যাস স্টেশনে সাধারণ পাম্পকর্মী হিসেবে জীবন শুরু করেছিলেন ধীরুভাই অম্বানী। তার পর নিজের হাতে গড়ে তুলেছিলেন রিলায়্যান্স সাম্রাজ্য। ১৬ বছর আগে হঠাৎ করে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছিলেন ধীরুভাই। উইল করে দিয়ে যেতে পারেননি তিনি। তাই সম্পত্তির দখল নিয়ে দুই ভাইয়ের মধ্যে বিরোধের শুরু তখনই।
০৫১৬
ধীরুভাইয়ের মৃত্যুর পর সম্পত্তির দখল নিয়ে দুই ভাই আইনি লড়াইতেও জড়িয়ে পড়েছিলেন। শেষ পর্যন্ত আসরে নামেন তাঁদের মা কোকিলাবেন অম্বানী। তাঁর মধ্যস্থতায় ২০০৫ সালে দুই ভাইয়ের মধ্যে বিরোধের শেষ হয়। যদিও ধীরুভাইয়ের রিলায়্যান্স সাম্রাজ্য ভাগ হয়ে যায় দুই ভাইয়ের মধ্যে।
০৬১৬
মুকেশের দখলে যায় তেল শোধনাগার আর পেট্রোকেমিক্যালস সংস্থাগুলি। অন্য দিকে অনিলের হাতে যায় বিদ্যুৎ উৎপাদন ও আর্থিক সংস্থাগুলি। ফোন আর মোবাইল কানেকশন একসঙ্গে দিয়ে এক সময় প্রতিযোগীদের পিছনে ফেলে দিয়েছিল মুকেশ নেতৃত্বাধীন রিলায়্যান্সের টেলিকমিউনিকেশন সংস্থা। সেই কোম্পানিও যায় ছোট ভাইয়ের কাছে।
০৭১৬
২০১৭ সাল থেকে বিদ্যুৎ গতিতে উত্থান শুরু হয় মুকেশ অম্বানীর। পাশের গ্রাফ থেকেই পরিষ্কার, এই সময় থেকে তাঁর সম্পত্তি বাড়তে থাকে উল্কাগতিতে। সম্পত্তির ব্যবধান বাড়তে বাড়তে এই মুহূর্তে দুই ভাইয়ের সম্পত্তির ফারাক গিয়ে দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ১০০ কোটি ডলার অর্থাৎ ৩ লাখ ১ হাজার ৪৫২ কোটি টাকায়।
০৮১৬
শুরুটা ভাল ছিল না মুকেশের। ২০০৫ সালে বিশ্ববাজারে তেলের দাম ছিল আকাশছোঁয়া। তাই সে ভাবে লাভ করতে পারেনি পেট্রোকেমিক্যালস সংস্থা। একটু পিছিয়েই পড়ছিলেন তখন মুকেশ। অন্য দিকে মোবাইল ফোনের বাজার তখন তুঙ্গে। এই সেক্টরে তখনও মুকেশের কোনও ভূমিকা ছিল না।
০৯১৬
যদিও ২০১০ সালে ফোনের বাজারে ফের ঢুকে পড়েন মুকেশ অম্বানী। তৈরি করেন রিলায়্যান্স জিও ইনফোকম। ৩ হাজার ৪০০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করে শুরু করেন ফোর জি ওয়্যারলেস নেটওয়ার্ক তৈরি করার কাজ। এই মাস্টারস্ট্রোকে বদলে যায় ভারতের ইন্টারনেট যোগাযোগ ব্যবস্থার সামগ্রিক পরিকাঠামো।
১০১৬
প্রাথমিক ধন্ধ কাটিয়ে ২০১৬ সালে এই বিনিয়োগের সুফল পেতে শুরু করেন মুকেশ অম্বানী। লাভ করতে শুরু করে রিলায়্যান্স জিও। ধীরুভাইয়ের যোগ্য উত্তরসূরি হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেন মুকেশ অম্বানি।
১১১৬
একই সময়ে পতন শুরু হয় অনিল অম্বানীর। বিনিয়োগকারীদের টাকা ফেরত দিতে নিজের কোম্পানির শেয়ার বিক্রি করতে শুরু করেন তিনি। তাঁর কোম্পানির শেয়ারের দামও পড়তে থাকে হুড়মুড়িয়ে। ঘুরে দাঁড়ানোর কোনও লক্ষণই তাঁর মধ্যে দেখতে পাচ্ছিলেন না কেউ।
১২১৬
শেষ বাজি হিসেবে যুদ্ধজাহাজ আর ডুবোজাহাজের ব্যবসায় নামেন অনিল। ২০১৫ সালে তৈরি করেন রিলায়্যান্স নাভাল আর ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি। কিন্তু মুখ থুবড়ে পড়ে তা-ও। যাঁর কাছ থেকে এই কোম্পানিটি কেনেন, তাঁর সঙ্গেই আইনি লড়াইতে নামেন তিনি। আরও অনিবার্য হয়ে দাঁড়ায় অনিলের পতন।
১৩১৬
২০১৬ সালে রাফাল চুক্তিতে অংশ নেয় রিলায়্যান্স ডিফেন্স। যদিও অন্যায্য ভাবে অনিলের এই সংস্থাকে ভারত-ফ্রান্স প্রতিরক্ষা চুক্তিতে সুযোগ দেওয়া হয়েছে, এই অভিযোগ ওঠে বিরোধীদের তরফে। পরিস্থিতি এতটাই ঘোরালো হয় যে, তাঁর কোম্পানির বিরুদ্ধে ওঠা সমস্ত অভিযোগ মিথ্যা বলে বিবৃতি দিতে হয় অনিল অম্বানীকে।
১৪১৬
মুম্বই মেট্রো নিয়ে সমস্যায় পড়ে অনিল নেতৃত্বাধীন রিলায়্যান্স ইনফ্রাস্ট্রাকচারও। পাওনাদারদের টাকা মেটাতে এতটাই সমস্যা হয় যে, পারিবারিক বন্ধু গৌতম আদানির কাছ থেকে আর্থিক সাহায্য নিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেন অনিল। এই মুহূর্তে রিয়েল এস্টেট সেক্টরে ভাল কিছু করার আশায় আছেন অনিল।
১৫১৬
অন্য দিকে বছরের শেষে কিছুটা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন মুকেশও। তেলের দাম ফের বাড়ছে। এ ছাড়া কোনও বেসরকারি সংস্থা দেশের নাগরিকদের জাতীয় বায়োমেট্রিক ডেটাবেস ব্যবহার করতে পারবে না, সুপ্রিম কোর্টের এই রায়ে বিপাকে পড়েছে রিলায়্যান্স জিও সংস্থাও। তার প্রভাব পড়ছে অনিলের সংস্থার শেয়ারেও।
১৬১৬
যদিও ছোট ভাইয়ের থেকে এখন বেশ কয়েক কদম এগিয়ে বড় ভাই। এশিয়ার সব থেকে ধনী হিসেবে যখন নিজেকে প্রতিষ্ঠা করছেন মুকেশ, তখন অস্তিত্ব রক্ষার লড়াইয়ে নেমেছেন অনিল অম্বানি।