জাহাজ থেকে বিমান, সব কিছুই স্রেফ গায়েব হয়ে যায় জাপানের সমুদ্রের এই অঞ্চলে!
জাপানের এই সমুদ্রে কি অশুভ শক্তি ভর করে?
সংবাদ সংস্থা
ওয়াশিংটনশেষ আপডেট: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ১০:৩০
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২১
এই সমুদ্র পথ দিয়ে গেলে আর কোনও জাহাজ নাকি ফিরে আসে না। উড়ন্ত বিমানও নাকি উধাও হয়ে যায়। না, বারমুডা ট্রায়াঙ্গল নয়। এ হল জাপানের ড্রাগন ট্রায়াঙ্গল। এখানে নাকি অশুভ শক্তি বাসা বেঁধেছে! তাই একে ‘ডেভিল সি’-ও বলা হয়ে থাকে।
০২২১
প্রশান্ত মহাসাগরে জাপানের উপকূলের কাছেই এই ‘ডেভিল সি’-র ভৌগোলিক অবস্থান। বারমুডা ট্রায়াঙ্গল উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরের পশ্চিমে। এটি জাপানের দক্ষিণে।
০৩২১
জাপানের রাজধানী টোকিও থেকে ১০০ কিমি দূরে মিয়াকের কাছেই নাকি আজব সব ঘটনা ঘটে।
০৪২১
সেই পঞ্চাশের দশক থেকেই নাকি এখানে অসংখ্য জাহাজ উধাও হয়ে গিয়েছে। খোঁজ করতে গিয়েও আর নাকি ফিরে আসেননি কেউ। তাই এশিয়ার বারমুডা ট্রায়াঙ্গলও বলা হয়ে থাকে জাপানের এই ‘ডেভিল সি’-কে।
০৫২১
জাপান ও ফিলিপিন্সের সীমান্তে জাপানের ইয়োকাহামা থেকে ফিলিপিন্সের গুয়াম পর্যন্ত, গুয়াম থেকে মারিয়ানা, আবার সেখান থেকে ইয়োকাহামা পর্যন্ত এই ‘মা নো উমি’ বা ‘ডেভিল সি’-র ড্রাগন ট্রায়াঙ্গলে নাকি অশুভ আত্মারা রয়েছে, অনেকেই এমনটা বলে থাকেন।
০৬২১
১৯৫২-১৯৫৪ সাল নাগাদ নাকি পরপর বেশ কয়েকটি জাহাজ হারিয়ে যাওয়ার সময় প্রায় ৭০০ জন সৈন্যও গায়েব হয়ে যান। কারও নাকি আর খোঁজই মেলেনি। এ ছাড়া দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ও নাকি ৫০০টি বিমান, ১০টি যুদ্ধজাহাজ, ১০টি নৌ-যান ওই এলাকাতেই ধ্বংস হয় বা হারিয়ে যায়।
০৭২১
আবহাওয়া একেবারেই প্রতিকূল ছিল না, তাও নাকি ওই এলাকার আশপাশে এলেই জাহাজ নিখোঁজ হয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু রেডিও সিগন্যালে নাকি বার্তা পাওয়া যায়নি।
০৮২১
রহস্য সন্ধানে কায়ো মারু নামে একটি জাহাজ পাঠিয়েছিল জাপান। সেখানে নাকি বিজ্ঞানীরাই ছিলেন। কিন্তু রহস্যভেদ করতে গিয়েও তাঁরাও আর ফিরে আসেননি। ‘ড্র্যাগনস ট্র্যায়াঙ্গল’-এর রহস্য নিয়ে চলেছে বিস্তর আলোচনা। নানা ব্যাখ্যা। পক্ষে-বিপক্ষে রয়েছে নানা যুক্তি।
০৯২১
৩১ জন বিজ্ঞানীর খোঁজ না মেলার কথা রটে যাওয়ার পর থেকেই অনেকেই বলতে থাকেন সমুদ্রের তলদেশে নাকি ড্রাগন রয়েছে। সেই থেকে নাম ‘ড্রাগন ট্রায়াঙ্গল’। তবে ঠিক কবে থেকে ডেভিল সি-’র এই অংশকে ‘ড্রাগনস ট্রায়াঙ্গল’ বলা শুরু হল, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।
১০২১
এমনটাও বলা হয়, কুবলাই খাঁ নাকি ১২০০ সালে ওই এলাকা দিয়ে জাহাজ নিয়ে যাচ্ছিলেন, তারপর নাকি জাহাজের ৪০ হাজার আরোহী সমুদ্রেই নিখোঁজ হয়ে যায়। ১৮০০ সালে এক রহস্যময়ী নারীকে নাকি ওই এলাকায় জাহাজ চালিয়ে নিয়ে যেতে দেখা গিয়েছে। এরপর আরও নানা ‘মিথ’ রটতে থাকে কয়েক দশক ধরে।
১১২১
১৯৮৯ সালে চার্লস বার্লিৎজ নামে এক লেখক ‘দ্য ড্রাগনস ট্রায়াঙ্গল’ বইয়ে লেখেন পঞ্চাশের দশকে জাহাজডুবি ও সৈন্য নিখোঁজের কথা। ১৯৯৫ সালে ল্যারি কুশে নামে এক লেখক বলেন, কায়ো মারু ১৯৫২ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর ধ্বংস হয়। পরে ধ্বংসাবশেষ মিলেছিল। ল্যারিই বলেন, এই অঞ্চলে মৎস্যজীবীদের নৌকা নিখোঁজ হয়েছিল, জাহাজ নয়।
১২২১
ল্যারি বলেন, অগ্ন্যুৎপাত ছাড়াও ভূমিকম্পের প্রবণতাও রয়েছে এই সব এলাকায়। সব মিলেই ‘অশুভ আত্মা’র কথা রটে গিয়েছিল। আর ছোট মাছ ধরার নৌকা গভীর সমুদ্রে হারিয়ে যাওয়ার ঘটনা খুবই স্বাভাবিক।
১৩২১
সমুদ্রের ঢেউয়ে ইলেকট্রোম্যাগনেটিক ফোর্সের কথাও উল্লেখ করেন কিছু বিজ্ঞানী। এর ফলে অনেক সময়ই ছোট দ্বীপও উধাও হয়ে যেতে পারে। আবার নতুন দ্বীপের জন্মও হতে পারে, দাবি তাঁদের।
১৪২১
ইভান টি স্যান্ডারসন বলেন, এটি বিশ্বের ১২টি ভাইল ভর্টেক্সের অন্যতম। ১৯৭২ সালে লন্ডনের সাগা ম্যাগাজিনে প্রকাশিত ‘দ্য টুয়েলভ ডেভিল’স গ্রেভ ইয়ার্ডস অ্যারাউন্ড দ্য ওয়ার্ল্ড’ বলছে, পৃথিবীতে মোট ১২টি জায়গায় তীব্র চৌম্বকীয় আকর্ষণ অনুভূত হয়। আর 'ডেভিলস সি' ড্রাগন ট্রায়াঙ্গলও তাই।
১৫২১
সায়েন্টিফিক আমেরিকানের তথ্য অনুযায়ী, ড্রাগন ট্রায়াঙ্গলের এই স্থানটিতে প্রায় ৩৭,০০০ মাইল এলাকা জুড়ে গভীর সামুদ্রিক খাদ রয়েছে এবং এখানে প্রচুর পরিমাণে গরম লাভা ও কার্বন ডাই অক্সাইড রয়েছে। এছাড়াও ৫০-এর দশকে রেডিও সিগন্যাল ব্যবস্থা শক্তিশালী ছিল না। তাই ওই ঘটনাগুলি রটে যায়।
১৬২১
১৯৭৩ সালে ল্যারি কুশ এবং আসাহি সিম্বুন (জাপানের একটি সংবাদপত্র) এর সহ-সম্পাদক শিগেরু কিমুরার যৌথ প্রয়াসে লেখা বই থেকে মায়োজিনশো নামক সক্রিয় আগ্নেয়গিরি সম্পর্কে জানা যায়। মারু নামক জাহাজটি যেখানে নিখোঁজ হয়েছিল এই আগ্নেয়গিরির অবস্থানও নাকি ঠিক সেখানেই।
১৭২১
পরিবেশবিদদের একাংশের মত, এমন অগ্ন্যুৎপাত বা ভূমিকম্পের কারণে সেখানকার প্রাকৃতিক পরিবেশ প্রতিনিয়ত বদলায়। এ ছাড়াও মাছ ধরার ছোট নৌকা হারিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে, রেডিও ট্রান্সমিটার না থাকার কথাও বলেছেন বিজ্ঞানীরা।
১৮২১
নিউ ইয়র্ক টাইমসে প্রকাশিত একটি আর্টিকল অনুযায়ী, ১৯৫৫ সালের ১৬ জানুয়ারি ওই এলাকার একটি জাহাজ থেকে রেডিও সিগন্যাল এসে পৌঁছনোর খবরও রয়েছে। এর আগে একবার ইউএফও-র কথাও শোনা গিয়েছিল এই এলাকা ঘিরে। বিজ্ঞানীরা যদিও এই ভিনগ্রহী যানের তত্ত্ব মানতে একেবারেই রাজি নন।
১৯২১
জাপানের উপকূলরক্ষী বাহিনীর কাছে নাকি এ রকম কোনও খবরই নেই, এমনটাই লিখেছিলেন ল্যারি কুশে। তাই ২ লক্ষ টনের সামরিক জাহাজ বা ৭০০ সৈন্য নিয়ে জাহাজ উধাও হয়ে যাওয়ার মতো খবরগুলি একেবারেই ভিত্তিহীন বলে দাবি করেন তিনি।
২০২১
কায়ো মারু জাহাজকে পাঠানোই হয়নি নিখোঁজ রহস্য সমাধানে, এমনটা উল্লেখ করা হয়েছিল আমেরিকার এক লেখকের বইয়েও। পরবর্তীতে তোশি মারু জাহাজটিকেও উদ্ধার করা হয়। সেটির যান্ত্রিক ত্রুটি ছিল, এমনটা বলেছেন জাপানের সাংবাদিক কিমুরা।
২১২১
যদিও সব ঘটনার ব্যাখ্যা এখনও মেলেনি, তবুও ড্রাগনস ট্রায়াঙ্গল নিয়ে তৈরি নানা মিথের সদুত্তর এ বার পাওয়া যাবে বলেই মনে করা হচ্ছে।