Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪
gujarat

প্রাচীর গড়তে লুঠ পড়শি শহর, ‘অভিশাপে’ দুই দশকের মধ্যেই ধ্বংস হয় দেশের এই প্রাচীন জনপদ

শুধুই কি প্রাকৃতিক কারণে ভৌতিক হয়ে পড়ে লখপত? প্রচলিত লোকশ্রুতি বলে, এর পিছনে দায়ী এক অভিশাপ।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১৯ এপ্রিল ২০২০ ১৫:২৯
Share: Save:
০১ ১৪
গুজরাতের কচ্ছ জেলার জনবিরল উপজেলা লখপত। বিখ্যাত লবণাক্ত ভূমি কচ্ছের রনের পশ্চিম অংশে আরবসাগরের একটি খাঁড়ি হল কোরি। তার মুখেই গড়ে উঠেছিল প্রাচীন জনপদ, লখপত। সিন্ধু নদের সুবিশাল বদ্বীপের যেটুকু অংশ এখন ভারতের মধ্যে পড়ে, তার মধ্যেই একটি অংশ কোরি খাঁড়ি এবং লখপত।

গুজরাতের কচ্ছ জেলার জনবিরল উপজেলা লখপত। বিখ্যাত লবণাক্ত ভূমি কচ্ছের রনের পশ্চিম অংশে আরবসাগরের একটি খাঁড়ি হল কোরি। তার মুখেই গড়ে উঠেছিল প্রাচীন জনপদ, লখপত। সিন্ধু নদের সুবিশাল বদ্বীপের যেটুকু অংশ এখন ভারতের মধ্যে পড়ে, তার মধ্যেই একটি অংশ কোরি খাঁড়ি এবং লখপত।

০২ ১৪
ত্রয়োদশ শতকে এই জনপদ ছিল সিন্ধ প্রদেশের অংশ। সে সময় স্থানীয় শাসক ছিলেন রাও লাখা। তাঁর নামেই জনপদের নামকরণ, ‘লখপত’। ইতিহাসে লখপত একটি নামী ও সমৃদ্ধশালী বন্দর। এই বন্দর থেকে সুদূর পশ্চিমে ব্যবসা বাণিজ্য চলত। কৃষিকাজেও সমৃদ্ধ ছিল এই শহর।

ত্রয়োদশ শতকে এই জনপদ ছিল সিন্ধ প্রদেশের অংশ। সে সময় স্থানীয় শাসক ছিলেন রাও লাখা। তাঁর নামেই জনপদের নামকরণ, ‘লখপত’। ইতিহাসে লখপত একটি নামী ও সমৃদ্ধশালী বন্দর। এই বন্দর থেকে সুদূর পশ্চিমে ব্যবসা বাণিজ্য চলত। কৃষিকাজেও সমৃদ্ধ ছিল এই শহর।

০৩ ১৪
তবে নামকরণ নিয়ে দ্বিমত আছে। অনেকের মত, এই শহরে এত বিত্তবান বাসিন্দারা থাকতেন যে, ‘লাখপতি’ শব্দ থেকেই ‘লখপত’ নামের জন্ম।

তবে নামকরণ নিয়ে দ্বিমত আছে। অনেকের মত, এই শহরে এত বিত্তবান বাসিন্দারা থাকতেন যে, ‘লাখপতি’ শব্দ থেকেই ‘লখপত’ নামের জন্ম।

০৪ ১৪
অষ্টাদশ শতকে এই জনপদকে নতুন করে সাজান তৎকালীন শাসক ফতেহ মহম্মদ। ঘিরে ফেলেন দুর্ভেদ্য প্রাচীর দিয়ে‌। এখনও সেই প্রাচীরের বেশ কিছুটা অংশ ঘিরে রেখেছে লখপতকে। ১৮১৮ খ্রিস্টাব্দে এই শহরে বাস করতেন পনেরো হাজার বাসিন্দা। তাঁদের থেকে বার্ষিক রাজস্ব আদায় হত এখনকার হিসেবে প্রায় ৬০ হাজার টাকা।

অষ্টাদশ শতকে এই জনপদকে নতুন করে সাজান তৎকালীন শাসক ফতেহ মহম্মদ। ঘিরে ফেলেন দুর্ভেদ্য প্রাচীর দিয়ে‌। এখনও সেই প্রাচীরের বেশ কিছুটা অংশ ঘিরে রেখেছে লখপতকে। ১৮১৮ খ্রিস্টাব্দে এই শহরে বাস করতেন পনেরো হাজার বাসিন্দা। তাঁদের থেকে বার্ষিক রাজস্ব আদায় হত এখনকার হিসেবে প্রায় ৬০ হাজার টাকা।

০৫ ১৪
কিন্তু সুখের সময় বেশি দিন স্থায়ী হল না লখপতের কপালে। ১৮১৯ খ্রিস্টাব্দে বিধ্বংসী ভূমিকম্পের ফলে অনেকটাই সরে গেল সিন্ধু নদের গতিপথ। ফলে কৃষি ও ব্যবসা, দু’দিকেই নিজের গুরুত্ব হারাল লখপত। ক্রমশ কমতে লাগল জনসংখ্যা। ১৮৮০ খ্রিস্টাব্দে লখপতের জনসংখ্যা এসে ঠেকল মাত্র আড়াই হাজারে।

কিন্তু সুখের সময় বেশি দিন স্থায়ী হল না লখপতের কপালে। ১৮১৯ খ্রিস্টাব্দে বিধ্বংসী ভূমিকম্পের ফলে অনেকটাই সরে গেল সিন্ধু নদের গতিপথ। ফলে কৃষি ও ব্যবসা, দু’দিকেই নিজের গুরুত্ব হারাল লখপত। ক্রমশ কমতে লাগল জনসংখ্যা। ১৮৮০ খ্রিস্টাব্দে লখপতের জনসংখ্যা এসে ঠেকল মাত্র আড়াই হাজারে।

০৬ ১৪
লখপত জুড়ে বাড়তে লাগল পরিত্যক্ত বাড়ির সংখ্যা। আজও সেখানে গেলে দেখা যায় বহু পরিত্যক্ত ঘরবাড়ি। সেখানকার বাসিন্দারা হয় চলে গিয়েছেন অন্য শহরে, নতুন দিনের আশায়। নয়তো মারা গিয়েছেন জীবনযুদ্ধে জয়ী হতে না পেরে। তাঁদের দীর্ঘশ্বাস নিয়েই যেন এই জনপদ আজ ক্ষুধিত পাষাণ।

লখপত জুড়ে বাড়তে লাগল পরিত্যক্ত বাড়ির সংখ্যা। আজও সেখানে গেলে দেখা যায় বহু পরিত্যক্ত ঘরবাড়ি। সেখানকার বাসিন্দারা হয় চলে গিয়েছেন অন্য শহরে, নতুন দিনের আশায়। নয়তো মারা গিয়েছেন জীবনযুদ্ধে জয়ী হতে না পেরে। তাঁদের দীর্ঘশ্বাস নিয়েই যেন এই জনপদ আজ ক্ষুধিত পাষাণ।

০৭ ১৪
অতীতে সমৃদ্ধির কেন্দ্র লখপত পরিণত হল পরিত্যক্ত ভৌতিক জনপদে। স্থানীয় বাসিন্দাদের বিশ্বাস, ভূমিকম্পে যাঁরা প্রাণ হারিয়েছিলেন, তাঁদের অতৃপ্ত আত্মা এখনও এই শহরের মায়া কাটাতে পারেনি।

অতীতে সমৃদ্ধির কেন্দ্র লখপত পরিণত হল পরিত্যক্ত ভৌতিক জনপদে। স্থানীয় বাসিন্দাদের বিশ্বাস, ভূমিকম্পে যাঁরা প্রাণ হারিয়েছিলেন, তাঁদের অতৃপ্ত আত্মা এখনও এই শহরের মায়া কাটাতে পারেনি।

০৮ ১৪
শুধুই কি প্রাকৃতিক কারণে ভৌতিক হয়ে পড়ে লখপত?  প্রচলিত লোকশ্রুতি বলে, এর পিছনে দায়ী এক অভিশাপ।

শুধুই কি প্রাকৃতিক কারণে ভৌতিক হয়ে পড়ে লখপত? প্রচলিত লোকশ্রুতি বলে, এর পিছনে দায়ী এক অভিশাপ।

০৯ ১৪
১৭৮৬  থেকে ১৮০১ খ্রিস্টাব্দ অবধি লখপতের শাসক ছিলেন জায়গিরদার ফতেহ মহম্মদ। সে সময় বহিরাগত লুটেরার দল প্রায়ই হামলা চালাত সমৃদ্ধ এই জনপদে। এর হাত থেকে রক্ষা পেতে তিনি ঠিক করলেন পুরো জনপদকে ঘিরে দেবেন প্রাচীরে।

১৭৮৬ থেকে ১৮০১ খ্রিস্টাব্দ অবধি লখপতের শাসক ছিলেন জায়গিরদার ফতেহ মহম্মদ। সে সময় বহিরাগত লুটেরার দল প্রায়ই হামলা চালাত সমৃদ্ধ এই জনপদে। এর হাত থেকে রক্ষা পেতে তিনি ঠিক করলেন পুরো জনপদকে ঘিরে দেবেন প্রাচীরে।

১০ ১৪
১০। স্থানীয় শাসক রাজা রায়াধান তৃতীয়কে প্রস্তাব দিলেন ফতেহ মহম্মদ। কিন্তু রাজা জানালেন, অত ব্যয় করার মতো অর্থ রাজকোষে নেই। তখন মহমম্দ ঠিক করলেন প্রতিবেশী শহর পিরে গিয়ে লুঠপাট চালাবেন। সে সময় সেখানকার শাসক গিয়েছিলেন তীর্থক্ষেত্রে। ফলে অরক্ষিত পিরবাসীকে লুঠ করতে সমস্যা হল না।

১০। স্থানীয় শাসক রাজা রায়াধান তৃতীয়কে প্রস্তাব দিলেন ফতেহ মহম্মদ। কিন্তু রাজা জানালেন, অত ব্যয় করার মতো অর্থ রাজকোষে নেই। তখন মহমম্দ ঠিক করলেন প্রতিবেশী শহর পিরে গিয়ে লুঠপাট চালাবেন। সে সময় সেখানকার শাসক গিয়েছিলেন তীর্থক্ষেত্রে। ফলে অরক্ষিত পিরবাসীকে লুঠ করতে সমস্যা হল না।

১১ ১৪
এই মানসিক আঘাত সহ্য করতে পারেননি পিরের রাজা, মোসোপির। তিনি তীর্থ করে ফিরেই নিজের নগরীকে বিধ্বস্ত দেখে হতাশ হয়ে পড়েন। কয়েক দিনের মধ্যে তাঁর মৃত্যু হয়।

এই মানসিক আঘাত সহ্য করতে পারেননি পিরের রাজা, মোসোপির। তিনি তীর্থ করে ফিরেই নিজের নগরীকে বিধ্বস্ত দেখে হতাশ হয়ে পড়েন। কয়েক দিনের মধ্যে তাঁর মৃত্যু হয়।

১২ ১৪
অন্য দিকে লুঠের টাকায় প্রাচীর নির্মাণ শেষ হয় ১৮০১ খ্রিস্টাব্দে। তার ১৮ বছর পরে বিধ্বংসী ভূমিকম্প হয় লখপতে। মাঝে আঠেরো বছরের ব্যবধান থাকলেও এই দুই ঘটনার মধ্যে সম্পর্ক খুঁজে পান স্থানীয় মানুষ।

অন্য দিকে লুঠের টাকায় প্রাচীর নির্মাণ শেষ হয় ১৮০১ খ্রিস্টাব্দে। তার ১৮ বছর পরে বিধ্বংসী ভূমিকম্প হয় লখপতে। মাঝে আঠেরো বছরের ব্যবধান থাকলেও এই দুই ঘটনার মধ্যে সম্পর্ক খুঁজে পান স্থানীয় মানুষ।

১৩ ১৪
অতীতের সমৃদ্ধি হারালেও লখপত এখন হিন্দু, মুসলিম এবং শিখ, এই তিন ধর্মাবলম্বীদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ তীর্থস্থান।

অতীতের সমৃদ্ধি হারালেও লখপত এখন হিন্দু, মুসলিম এবং শিখ, এই তিন ধর্মাবলম্বীদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ তীর্থস্থান।

১৪ ১৪
তবে পর্যটন মানচিত্রে বেশ পিছিয়েই আছে এই জনপদ। খুব কম পর্যটকের গন্তব্য প্রাচীন লখপত। তবে যাঁরা অফবিট রুটে গিয়ে পা ফেলেন, তাঁদের মুগ্ধ করে ইতিহাসের এই ভৌতিক বন্দরনগরী। (ছবি: শাটারস্টক)

তবে পর্যটন মানচিত্রে বেশ পিছিয়েই আছে এই জনপদ। খুব কম পর্যটকের গন্তব্য প্রাচীন লখপত। তবে যাঁরা অফবিট রুটে গিয়ে পা ফেলেন, তাঁদের মুগ্ধ করে ইতিহাসের এই ভৌতিক বন্দরনগরী। (ছবি: শাটারস্টক)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE