Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
T N Seshan

শঙ্করাচার্যের নিষ্ঠাবান ভক্ত, অধরাই থাকল দোর্দণ্ডপ্রতাপ শেষনের শেষ ইচ্ছে

কঠোর নির্বাচনী বিধি চালু করার পাশাপাশি তাঁর কড়া নজর ছিল প্রার্থীদের নির্বাচনী ব্যয়ের দিকেও। তবে সবথেকে উল্লেখযোগ্য অবশ্যই দেশ জুড়ে সচিত্র ভোটার পরিচয়পত্র চালু করা।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১১ নভেম্বর ২০১৯ ১২:২৪
Share: Save:
০১ ১৫
নির্বাচন প্রক্রিয়ার উপর দেশবাসীর আস্থা বাড়াতে তাঁর ভূমিকা ছিল অগ্রণী। বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্রের নির্বাচন প্রক্রিয়ার খোলনলচে বদলে ফেলেছিলেন তিনি। আপসহীন, ঋজু এই ব্যক্তিত্ব রাজনীতিকদের বুঝিয়েছিলেন নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতার পরিধি কতটা। রাজনীতিকদের একাংশ বলতেন ‘শেষন বনাম নেশন’।

নির্বাচন প্রক্রিয়ার উপর দেশবাসীর আস্থা বাড়াতে তাঁর ভূমিকা ছিল অগ্রণী। বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্রের নির্বাচন প্রক্রিয়ার খোলনলচে বদলে ফেলেছিলেন তিনি। আপসহীন, ঋজু এই ব্যক্তিত্ব রাজনীতিকদের বুঝিয়েছিলেন নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতার পরিধি কতটা। রাজনীতিকদের একাংশ বলতেন ‘শেষন বনাম নেশন’।

০২ ১৫
পুরো নাম তিরুনেল্লাই  নারায়ণ আইয়ার শেষন। কেরলের পলক্কড় জেলার থিরুনেল্লাই-তে জন্ম ১৯৩২ এর ১৫ ডিসেম্বর। বাসেল ইভাঞ্জেলিক্যাল মিশন হায়ার সেকেন্ডারি স্কুলের পরে তিনি ইন্টারমিডিয়েট করেন ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে। তারপর মাদ্রাজ ক্রিশ্চান কলেজ থেকে পদার্থবিজ্ঞানে স্নাতক।

পুরো নাম তিরুনেল্লাই নারায়ণ আইয়ার শেষন। কেরলের পলক্কড় জেলার থিরুনেল্লাই-তে জন্ম ১৯৩২ এর ১৫ ডিসেম্বর। বাসেল ইভাঞ্জেলিক্যাল মিশন হায়ার সেকেন্ডারি স্কুলের পরে তিনি ইন্টারমিডিয়েট করেন ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে। তারপর মাদ্রাজ ক্রিশ্চান কলেজ থেকে পদার্থবিজ্ঞানে স্নাতক।

০৩ ১৫
পরবর্তী সময়ে নিজের কলেজে তিনি তিন বছর কাজও করেছেন ডেমনস্ট্রেটর হিসেবে। আইএএস অফিসার হয়ে ১৯৫৫ সালে যোগ দেন সিভিল সার্ভিসে। পরে এডওয়ার্ড ম্যাসন ফেলোশিপ পেয়ে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন পাবলিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন নিয়ে। ওই বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি পান ১৯৬৮ সালে।

পরবর্তী সময়ে নিজের কলেজে তিনি তিন বছর কাজও করেছেন ডেমনস্ট্রেটর হিসেবে। আইএএস অফিসার হয়ে ১৯৫৫ সালে যোগ দেন সিভিল সার্ভিসে। পরে এডওয়ার্ড ম্যাসন ফেলোশিপ পেয়ে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন পাবলিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন নিয়ে। ওই বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি পান ১৯৬৮ সালে।

০৪ ১৫
স্কুলে শেষনের সহপাঠী ছিলেন ই শ্রীধরণ। দু’জনেই সুযোগ পেয়েছিলেন ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার। শ্রীধরণ সেই শাখাতেই সম্পূর্ণ করেন উচ্চশিক্ষা। বন্ধু শেষন বেছে নেন পদার্থবিজ্ঞান।

স্কুলে শেষনের সহপাঠী ছিলেন ই শ্রীধরণ। দু’জনেই সুযোগ পেয়েছিলেন ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার। শ্রীধরণ সেই শাখাতেই সম্পূর্ণ করেন উচ্চশিক্ষা। বন্ধু শেষন বেছে নেন পদার্থবিজ্ঞান।

০৫ ১৫
শেষন যেমন নির্বাচন প্রক্রিয়া পাল্টে দিয়েছিলেন, বন্ধু শ্রীধরণের হাতে নতুন রূপ পেয়েছিল দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা। তাঁকে বলা হয় দেশের ‘মেট্রো ম্যান’।

শেষন যেমন নির্বাচন প্রক্রিয়া পাল্টে দিয়েছিলেন, বন্ধু শ্রীধরণের হাতে নতুন রূপ পেয়েছিল দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা। তাঁকে বলা হয় দেশের ‘মেট্রো ম্যান’।

০৬ ১৫
মুখ্য নির্বাচন কমিশনার হওয়ার আগে ক্যাবিনেট সচিবের দায়িত্ব সামলেছেন শেষন। ছিলেন যোজনা কমিশনের সদস্যও। তবে সবথেকে স্মরণীয় ১৯৯০ সালের ১২ ডিসেম্বর থেকে ১৯৯৬ সালের ১১ ডিসেম্বর পর্যন্ত মুখ্য নির্বাচন কমিশনার হিসেবে তাঁর কার্যকালই।

মুখ্য নির্বাচন কমিশনার হওয়ার আগে ক্যাবিনেট সচিবের দায়িত্ব সামলেছেন শেষন। ছিলেন যোজনা কমিশনের সদস্যও। তবে সবথেকে স্মরণীয় ১৯৯০ সালের ১২ ডিসেম্বর থেকে ১৯৯৬ সালের ১১ ডিসেম্বর পর্যন্ত মুখ্য নির্বাচন কমিশনার হিসেবে তাঁর কার্যকালই।

০৭ ১৫
দেশের দশম মুখ্য নির্বাচন কমিশনার টি এন শেষন ছিলেন সততা ও স্বচ্ছতার প্রতিক। কঠোর নির্বাচনী বিধি চালু করার পাশাপাশি তাঁর কড়া নজর ছিল প্রার্থীদের নির্বাচনী ব্যয়ের দিকেও। তবে সবথেকে উল্লেখযোগ্য অবশ্যই দেশ জুড়ে সচিত্র ভোটার পরিচয়পত্র চালু করা।

দেশের দশম মুখ্য নির্বাচন কমিশনার টি এন শেষন ছিলেন সততা ও স্বচ্ছতার প্রতিক। কঠোর নির্বাচনী বিধি চালু করার পাশাপাশি তাঁর কড়া নজর ছিল প্রার্থীদের নির্বাচনী ব্যয়ের দিকেও। তবে সবথেকে উল্লেখযোগ্য অবশ্যই দেশ জুড়ে সচিত্র ভোটার পরিচয়পত্র চালু করা।

০৮ ১৫
শেষনের কার্যকালে নির্বাচন সংক্রান্ত আরও বহু দিকে কঠোর বিধিনিষেধ জারি করা হয়। ভোটারদের ঘুষ দিয়ে প্রলুব্ধ করা, ভোট চলাকালীন মদ বিলি করা, সরকারি জিনিসপত্র নির্বাচন প্রচারে ব্যবহার করা, ধর্মস্থানে প্রচার করা, বিনা অনুমতিতে প্রচারে উচ্চগ্রামে লাউডস্পিকার ব্যবহার করা-সহ বিভিন্ন দিকে নির্বাচন কমিশনের শ্যেন দৃষ্টি জারি ছিল।

শেষনের কার্যকালে নির্বাচন সংক্রান্ত আরও বহু দিকে কঠোর বিধিনিষেধ জারি করা হয়। ভোটারদের ঘুষ দিয়ে প্রলুব্ধ করা, ভোট চলাকালীন মদ বিলি করা, সরকারি জিনিসপত্র নির্বাচন প্রচারে ব্যবহার করা, ধর্মস্থানে প্রচার করা, বিনা অনুমতিতে প্রচারে উচ্চগ্রামে লাউডস্পিকার ব্যবহার করা-সহ বিভিন্ন দিকে নির্বাচন কমিশনের শ্যেন দৃষ্টি জারি ছিল।

০৯ ১৫
শেষনকে প্রতি মুহূর্তে আক্রমণ করেছেন রাজনীতিকরা। তাঁর সঙ্গে রাজ্যের প্রয়াত প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুর মতান্তর উঠে এসেছিল সংবাদ শিরোনামে। তবে বহু সমস্যা সত্ত্বেও নিজের লক্ষ্য থেকে সরে যাননি শেষন।

শেষনকে প্রতি মুহূর্তে আক্রমণ করেছেন রাজনীতিকরা। তাঁর সঙ্গে রাজ্যের প্রয়াত প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুর মতান্তর উঠে এসেছিল সংবাদ শিরোনামে। তবে বহু সমস্যা সত্ত্বেও নিজের লক্ষ্য থেকে সরে যাননি শেষন।

১০ ১৫
বহু রাজনীতিকের বিরাগভাজন শেষন অবশ্য পরে নিজেই হয়ে উঠেছিলেন এক রাজনীতিক। গুজরাতের গাঁধীনগর কেন্দ্রে লালকৃষ্ণ আডবাণীর বিরুদ্ধে কংগ্রেস প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। তবে সেই লড়াইয়ে তিনি জয়ী হতে পারেননি।

বহু রাজনীতিকের বিরাগভাজন শেষন অবশ্য পরে নিজেই হয়ে উঠেছিলেন এক রাজনীতিক। গুজরাতের গাঁধীনগর কেন্দ্রে লালকৃষ্ণ আডবাণীর বিরুদ্ধে কংগ্রেস প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। তবে সেই লড়াইয়ে তিনি জয়ী হতে পারেননি।

১১ ১৫
১৯৯৭ সালে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের দৌড়ে প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন শেষন। কিন্তু তিনি পরাজিত হন কে আর নারায়ণনের কাছে।

১৯৯৭ সালে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের দৌড়ে প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন শেষন। কিন্তু তিনি পরাজিত হন কে আর নারায়ণনের কাছে।

১২ ১৫
সংস্কারক শেষন নয়ের দশকে ছিলেন দুর্নীতির বিরুদ্ধে সংগ্রামের অন্যতম প্রধান মুখ। সরকারি কাজের পরিসরে অবদানের জন্য তিনি ১৯৯৬ সালে ভূষিত হন র‌্যামন ম্যাগসাইসাই সম্মানে।

সংস্কারক শেষন নয়ের দশকে ছিলেন দুর্নীতির বিরুদ্ধে সংগ্রামের অন্যতম প্রধান মুখ। সরকারি কাজের পরিসরে অবদানের জন্য তিনি ১৯৯৬ সালে ভূষিত হন র‌্যামন ম্যাগসাইসাই সম্মানে।

১৩ ১৫
দোর্দণ্ডপ্রতাপ শেষন প্রশাসনিক দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি বইও লিখেছেন। ১৯৯৫ সালে প্রকাশিত হয় তাঁর লেখা বই ‘দ্য ডিজেনারেশন অব ইন্ডিয়া’ এবং ‘এ হার্ট ফুল অব বার্ডেন’।

দোর্দণ্ডপ্রতাপ শেষন প্রশাসনিক দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি বইও লিখেছেন। ১৯৯৫ সালে প্রকাশিত হয় তাঁর লেখা বই ‘দ্য ডিজেনারেশন অব ইন্ডিয়া’ এবং ‘এ হার্ট ফুল অব বার্ডেন’।

১৪ ১৫
২০১৮ সালে প্রয়াত হন তাঁর স্ত্রী জয়লক্ষ্মী। তার পর থেকে ব্যক্তিগত জীবনে নিঃসঙ্গ হয়ে পড়েন প্রাক্তন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার। গত কয়েক বছর তিনি অসুস্থ ছিলেন বার্ধক্যজনিত রোগে। তারমধ্যেও ভেবেছিলেন আত্মজীবনী লিখবেন। কিন্তু সেই ইচ্ছে অধরাই থেকে গেল।

২০১৮ সালে প্রয়াত হন তাঁর স্ত্রী জয়লক্ষ্মী। তার পর থেকে ব্যক্তিগত জীবনে নিঃসঙ্গ হয়ে পড়েন প্রাক্তন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার। গত কয়েক বছর তিনি অসুস্থ ছিলেন বার্ধক্যজনিত রোগে। তারমধ্যেও ভেবেছিলেন আত্মজীবনী লিখবেন। কিন্তু সেই ইচ্ছে অধরাই থেকে গেল।

১৫ ১৫
রবিবার রাত সওয়া ন’টা নাগাদ চেন্নাইয়ে নিজের বাসভবনে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে প্রয়াত হন ৮৬ বছর বয়সি শেষন। আদ্যন্ত রাশভারী এই প্রশাসক ব্যক্তিগত জীবনে ছিলেন কাঞ্চীর শঙ্করাচার্য মঠের নিষ্ঠাবান ভক্ত।

রবিবার রাত সওয়া ন’টা নাগাদ চেন্নাইয়ে নিজের বাসভবনে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে প্রয়াত হন ৮৬ বছর বয়সি শেষন। আদ্যন্ত রাশভারী এই প্রশাসক ব্যক্তিগত জীবনে ছিলেন কাঞ্চীর শঙ্করাচার্য মঠের নিষ্ঠাবান ভক্ত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE