Indrani Mukerjea Gave Crucial Testimony in Implicating P Chidambaram dgtl
Indrani Mukerjea
চিদম্বরমের গ্রেফতারিতে কী করে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠলেন ইন্দ্রাণী ?
একদিন সঞ্জীবের সঙ্গে দাম্পত্যও পুরনো হয়ে গেল ইন্দ্রাণীর কাছে। একঘেয়ে মনে হল কলকাতাকে। যদিও কলকাতাতেই তাঁর সঙ্গে আলাপ হয়েছিল অ্যালেক পদমজির। তিনিই ইন্দ্রাণীর সামনে খুলে দেন মুম্বইয়ের রঙিন দুনিয়ার দরজা। নয়ের দশকের শেষে কলকাতাতেই নিজের চলার পথে লম্বা লাফ দিয়েছিলেন ইন্দ্রাণী। এরপর তাঁর গন্তব্য, মুম্বই।
নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২২ অগস্ট ২০১৯ ১৩:২৩
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২০
ছিলেন সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে। কিন্তু উচ্চাশার বশে ‘কুখ্যাত’ হয়ে গিয়ে শেষে কারাবন্দি। দেশের প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী তথা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে গ্রেফতারের পিছনে সেই ইন্দ্রাণী মুখোপাধ্যায়ই অনুঘটক।
০২২০
অসমের গুয়াহাটির সুন্দরপুরে জন্ম ইন্দ্রাণীর। ১৯৭২-এর ২২ নভেম্বর। উপেন্দ্রকুমার বরা ও দুর্গারানি বরার একমাত্র কন্যা। আদরের মেয়ের ডাকনাম ‘পরী’। পড়তেন অসমের প্রথম সারির স্কুলগুলির মধ্যে অন্যতম সেন্ট মেরিজ-এ। ছাত্রী হিসেবে ভালই ছিলেন।
০৩২০
একাদশ শ্রেণিতে ইন্দ্রাণী ভর্তি হন গুয়াহাটির কটন কলেজিয়েট স্কুলে। শহরের নামী চিকিৎসকের ছেলের সঙ্গে শোনা যায় তাঁর প্রণয়ের গুঞ্জন। কিন্তু সে সম্পর্ক ভেঙে যায়। এরপর ইন্দ্রাণীর গন্তব্য শিলঙের কলেজ। কলেজজীবনেই আলাপ সিদ্ধার্থ দাসের সঙ্গে।
০৪২০
সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ, ‘স্বামী’ পরিচয়েই ইন্দ্রাণীর সঙ্গে একই বাড়িতে থাকতেন সিদ্ধার্থ। তাঁদের বিয়ে হয়েছিল কি না, সে বিষয়ে কোনও প্রামাণ্য তথ্য নেই। ধীরে ধীরে সিদ্ধার্থের প্রতি মোহ কাটতে থাকে ইন্দ্রাণীর। তখন আরও সামনের দিকে তাকাতে চাইছেন এই উচ্চাকাঙ্ক্ষী।
০৫২০
একদিন বাড়ি থেকে কলকাতা চলে এলেন ইন্দ্রাণী। ভুলে গেলেন প্রেমিক সিদ্ধার্থকে। বাবা মায়ের কাছে ফেলে এলেন দুই শিশুসন্তান শিনা ও মিখাইলকে। তাদের দত্তক নিলেন দাদু-দিদিমা, উপেন্দ্রনাথ ও দুর্গারানি। সিদ্ধার্থ-ইন্দ্রাণীর সন্তানরা বড় হলেন ‘বরা’ পরিচয়ে।
নয়ের দশকের শেষে কলকাতাতেই নিজের চলার পথে লম্বা লাফ দিয়েছিলেন ইন্দ্রাণী। এরপর তাঁর গন্তব্য, মুম্বই। সঞ্জীব খন্নার সঙ্গে দাম্পত্য শেষ করে ইন্দ্রাণী পাড়ি দিলেন স্বপ্ননগরীতে।
০৮২০
বিভিন্ন পার্টিতে চেনা মুখ, এইচ আর কনসালটেন্সি ফার্ম চালানো ইন্দ্রাণীর বেশি সময় লাগেনি বাণিজ্যনগরী জয় করতে। এক পার্টিতে ইন্দ্রাণীর সঙ্গে আলাপের তিনদিনের মধ্যে প্রেমে পাগল পিটার মুখোপাধ্যায়। তিন মাসের মধ্যে তৎকালীন মিডিয়া-সম্রাট পিটারের ঘরনি হয়ে গেলেন ইন্দ্রাণী। গুয়াহাটির সুন্দরপুরের মেয়ের রূপ-গুণ এবং হাতের রান্নায় মুগ্ধ পিটার। তিনি দত্তকও নিয়ে নেন ইন্দ্রাণী-সঞ্জীবের মেয়ে বিধিকে।
০৯২০
১৯৯৬ সালে কলকাতায় ইন্দ্রাণী শুরু করেছিলেন ‘আইএনএক্স সার্ভিসেস প্রাইভেট লিমিটেড’। মাত্র দশজনকে নিয়ে পথ চলা শুরু এই রিক্রুটমেন্ট সংস্থার। সেই সংস্থাই মহীরুহ হয়ে দেখা দিল ২০০৬ সালে। স্বামী পিটারকে নিয়ে ইন্দ্রাণী তখন সংস্থার কর্ণধার। সেই আইএনএক্স-শামুকেই পা কাটল চিদম্বরমের। মূলত ইন্দ্রাণীর বয়ানেই চিদম্বরমকে গ্রেফতার করেছে সিবিআই।
১০২০
ইউপিএ জমানায় আইএনএক্স মিডিয়া ৩০৫ কোটি টাকার বিদেশি লগ্নি আনে। যদিও ৪.৬২ কোটি টাকা লগ্নির অনুমতি ছিল। অভিযোগ, ঘুরপথে বাড়তি লগ্নি আনার উপায় বলে দিয়েছিলেন চিদম্বরম।
১১২০
তবে বিনিময়ে চিদম্বরম তাঁর ছেলে কার্তির সংস্থাকে সাহায্য করতে বলেন বলে অভিযোগ। কার্তিকে সাড়ে তিন কোটি টাকা ঘুষও দেওয়া হয় বলে অভিযোগ উঠেছে। এই প্রসঙ্গে চিদম্বরমের দাবি, তাঁর বা তাঁর পরিবারের নামে অভিযোগ নেই। তা সত্ত্বেও ধারণা ছড়ানো হয়েছে, তাঁরা অপরাধ করেছেন। বক্তব্য প্রাক্তন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর।
১২২০
আইএনএক্স মিডিয়ার অন্যতম প্রাক্তন কর্ণধার ইন্দ্রাণী সিআইডি ও ইডি-র কাছে জেরায় দাবি করেছেন, তাঁরা যখন ২০০৬ সালে তৎকালীন অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরমের সঙ্গে নর্থ ব্লকের অফিসে সাক্ষাৎ করেছিলেন, তিনি তাঁদের বলেছিলেন ছেলে কার্তির সঙ্গে দেখা করার জন্য।
১৩২০
ইন্দ্রাণীর আরও দাবি, তাঁদের কাছে চিদম্বরম তাঁর ছেলেকে ব্যবসায় সাহায্য করার অনুরোধ জানিয়েছিলেন।তাঁর বয়ান রেকর্ড করা হয় ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে। সেই বয়ান এখন চিদম্বরমের গ্রেফতারিতে মূল নথি।
১৪২০
ইন্দ্রাণীর দাবি, কার্তির সঙ্গে তাঁরা দেখা করেছিলেন হায়াত হোটেলে। সেখানে নাকি পিটার ও ইন্দ্রাণীর কাছ থেকে কার্তি দশ লক্ষ ডলার(বর্তমানে ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ৭,১৯,৪১,৫০০ টাকা) ঘুষ চেয়েছিলেন।
১৫২০
কার্তির সংস্থা অ্যাডভান্টেজ স্ট্র্যাটেজিক কনসাল্টিং প্রাইভেট লিমিটেড ও তার সহযোগী সংস্থাগুলি ৩.১০ কোটি টাকার চারটি ইনভয়েস আইএনএক্স-এর নামে পাশ করায়।দাবি, ইন্দ্রাণী মুখোপাধ্যায়ের।
১৬২০
মেয়ে শিনা বরাকে খুনের অভিযোগে ইন্দ্রাণী নিজেও গত চার বছর ধরে কারাবন্দি। তাঁর সঙ্গে ষড়যন্ত্রী হওয়ার অভিযোগে শাস্তি ভোগ করছেন পিটার মুখোপাধ্যায়, ইন্দ্রাণীর প্রাক্তন স্বামী সঞ্জীব খন্না ও গাড়িচালক শ্যাম রাই। তদন্তকারী পুলিশের দাবি, ২০১২ সালের ২৪ এপ্রিল শিনা বরাকে খুন করা হয়েছিল। সঞ্জীব খন্না ও শ্যাম রাইয়ের সাহায্যে মেয়েকে ইন্দ্রাণী খুন করেছিলেন বলে দাবি পুলিশের। ষড়যন্ত্রের কথা পিটারও জানতেন বলে প্রকাশিত হয় তদন্তে।
১৭২০
গোয়েন্দাদের দাবি, গাড়িতে শ্বাসরোধ করে খুন করার পরে খোপলি-পেন রোডের ধারে প্রত্যন্ত জায়গায় পেট্রল ঢেলে পুড়িয়ে ফেলা হয় শিনার দেহ। ফেলে দেওয়া হয় ৪০ ফুট গভীর খাদানে।
১৮২০
যদিও শিনাকে নিজের বোন বলে পরিচয় দিতেন ইন্দ্রাণী। পিটারের প্রথম পক্ষের ছেলে রাহুলের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছিলেন শিনা। খুন করার পরেও শিনাকে ‘জীবন্ত’ প্রমাণ করার জন্য চেষ্টার কসুর করেননি ইন্দ্রাণী। সবাইকে বলেছিলেন শিনা আমেরিকায় পড়তে গিয়েছে। নিজে চালু রাখতেন মেয়ের ই-মেল আইডি। মেয়ের নামে মেল পাঠাতেন তিনি।
১৯২০
তবে তাঁর জারিজুরি বেশিদিন চলল না। ২০১২ সালের মে মাসে রায়গড়ের জঙ্গল থেকে একটি দগ্ধ দেহ উদ্ধার করে পুলিশ। দুর্ঘটনার মামলা দায়ের করা হয়। দাবিদারহীন দেহ থেকে নমুনা সংগ্রহ করে পাঠানো হয় ফরেন্সিক পরীক্ষার জন্য। সেই রিপোর্টকে হাতিয়ার করেই ঘটনার প্রায় সাড়ে তিন বছর পরে গ্রেফতার করা হয় অতীতের মিডিয়া ব্যারন পিটার মুখোপাধ্যায় ও তাঁর প্রভাবশালী, সুন্দরী, সপ্রতিভ স্ত্রীকে।
২০২০
চিদম্বরমের কাছেও জানতে চান গোয়েন্দারা। কীভাবে, কখন তাঁর সঙ্গে পিটার-ইন্দ্রাণীর সাক্ষাৎ হয়, সে বিষয়ে জেরা করা হয়। এই ঘটনায় কংগ্রেসের প্রশ্ন, একজন অভিযুক্ত খুনির বয়ানে কেন গ্রেফতার করা হল প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী তথা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে ?