Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
Nawanagar Necklace

বিরল কালো মুক্তো, বিশাল হিরে... রঞ্জিত সিংহের রত্নসম্ভারে চমকে গিয়েছিল ব্রিটিশরাও

ভারত থেকে লুঠ হয়ে যাওয়া মূল্যবান রত্ন এবং গয়নার কথা উঠলেই কোহিনুর এবং ময়ূর সিংহাসনের কথা মাথায় আসে আমাদের। কিন্তু তার চেয়ে ঢের দুর্মূল্য রত্ন ও গয়না সঞ্চিত ছিল নওয়ানগরের রাজপরিবারে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ৩১ অক্টোবর ২০২০ ১৫:১৮
Share: Save:
০১ ১২
পরাধীন ভারতে ক্রিকেট নিয়ে আবেগের সূত্রপাত তাঁর হাত ধরেই। মৃত্যুর প্রায় এক শতক পরেও, আজও ভারতীয় ক্রিকেটের সঙ্গে তাঁর নাম জড়িয়ে রয়েছে। তবে নওয়ানগরের (অধুনা জামনগর) প্রাক্তন মহারাজা রঞ্জিত সিংহজি বিভাজি জাডেজার এটুকু পরিচয় যথেষ্ট নয়। বহুমূল্য রত্ন এবং গয়নার প্রতি তাঁর আসক্তির কথাও সর্বজনবিদিত।

পরাধীন ভারতে ক্রিকেট নিয়ে আবেগের সূত্রপাত তাঁর হাত ধরেই। মৃত্যুর প্রায় এক শতক পরেও, আজও ভারতীয় ক্রিকেটের সঙ্গে তাঁর নাম জড়িয়ে রয়েছে। তবে নওয়ানগরের (অধুনা জামনগর) প্রাক্তন মহারাজা রঞ্জিত সিংহজি বিভাজি জাডেজার এটুকু পরিচয় যথেষ্ট নয়। বহুমূল্য রত্ন এবং গয়নার প্রতি তাঁর আসক্তির কথাও সর্বজনবিদিত।

০২ ১২
ভারত থেকে লুঠ হয়ে যাওয়া মূল্যবান রত্ন এবং গয়নার কথা উঠলেই কোহিনুর এবং ময়ূর সিংহাসনের কথা মাথায় আসে আমাদের। কিন্তু তার চেয়ে ঢের দুর্মূল্য রত্ন ও গয়না সঞ্চিত ছিল নওয়ানগরের রাজপরিবারে। আর এর অন্যতম হোতা ছিলেন রঞ্জিতসিংহজি বিভাজি জাডেজা ওরফে রঞ্জি।

ভারত থেকে লুঠ হয়ে যাওয়া মূল্যবান রত্ন এবং গয়নার কথা উঠলেই কোহিনুর এবং ময়ূর সিংহাসনের কথা মাথায় আসে আমাদের। কিন্তু তার চেয়ে ঢের দুর্মূল্য রত্ন ও গয়না সঞ্চিত ছিল নওয়ানগরের রাজপরিবারে। আর এর অন্যতম হোতা ছিলেন রঞ্জিতসিংহজি বিভাজি জাডেজা ওরফে রঞ্জি।

০৩ ১২
কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটির হয়ে ফার্স্ট ক্লাস ক্রিকেট খেলতেন রঞ্জিতসিংহজি। সাসেক্সের হয়ে কাউন্টি ক্রিকেটও খেলেছেন। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলা প্রথম ভারতীয় ক্রিকেটার তিনি। তাঁর নামেই রঞ্জি ট্রফির নামকরণ হয় পরবর্তী কালে।

কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটির হয়ে ফার্স্ট ক্লাস ক্রিকেট খেলতেন রঞ্জিতসিংহজি। সাসেক্সের হয়ে কাউন্টি ক্রিকেটও খেলেছেন। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলা প্রথম ভারতীয় ক্রিকেটার তিনি। তাঁর নামেই রঞ্জি ট্রফির নামকরণ হয় পরবর্তী কালে।

০৪ ১২
ক্রিকেট খেলার পাশাপাশি মূল্যবান রত্ন ও গয়না সংগ্রহ করাও নেশা ছিল রঞ্জিতসিংহজির। রত্ন ও গয়নাশিল্পের জন্য বিশ্ব জোড়া খ্যাতি রয়েছে গুজরাতের। সেই সূত্রেই তাঁর এই আসক্তি জন্মায় বলে শোনা যায়। সেই সময় প্রখ্যাত ফরাসি রত্নশিল্পী জ়াক কার্টিয়ারের সঙ্গে বন্ধুত্ব হয় তাঁর।

ক্রিকেট খেলার পাশাপাশি মূল্যবান রত্ন ও গয়না সংগ্রহ করাও নেশা ছিল রঞ্জিতসিংহজির। রত্ন ও গয়নাশিল্পের জন্য বিশ্ব জোড়া খ্যাতি রয়েছে গুজরাতের। সেই সূত্রেই তাঁর এই আসক্তি জন্মায় বলে শোনা যায়। সেই সময় প্রখ্যাত ফরাসি রত্নশিল্পী জ়াক কার্টিয়ারের সঙ্গে বন্ধুত্ব হয় তাঁর।

০৫ ১২
হায়দরাবাদ, বদোদরা, ইনদওরের রাজপরিবাররে সংগ্রহে থাকা রত্ন ও গয়নার কথা সেই সময় বিদেশ বিভুঁইয়েও গিয়ে পৌঁছেছিল। এর মধ্যে নওয়ানগরের রাজপরিবারের সংগ্রহে থাকা গয়না নিয়ে কৌতুহল ছিল সীমাহীন। শোনা যায়, সেই সময় তাঁদের সংগ্রহে বিরল প্রকৃতির কালো কৃষ্ণবর্ণ মুক্তা, খোদাই করা পান্না এবং চুণীখচিত একাধিক নেকলেস ছিল। হলুদ রংয়ের একটি বিশেষ হিরের তৈরি গয়নাও ছিল তাঁদের সংগ্রহে, সেটিকে ‘টাইগার্স আই’ বলা হতো।

হায়দরাবাদ, বদোদরা, ইনদওরের রাজপরিবাররে সংগ্রহে থাকা রত্ন ও গয়নার কথা সেই সময় বিদেশ বিভুঁইয়েও গিয়ে পৌঁছেছিল। এর মধ্যে নওয়ানগরের রাজপরিবারের সংগ্রহে থাকা গয়না নিয়ে কৌতুহল ছিল সীমাহীন। শোনা যায়, সেই সময় তাঁদের সংগ্রহে বিরল প্রকৃতির কালো কৃষ্ণবর্ণ মুক্তা, খোদাই করা পান্না এবং চুণীখচিত একাধিক নেকলেস ছিল। হলুদ রংয়ের একটি বিশেষ হিরের তৈরি গয়নাও ছিল তাঁদের সংগ্রহে, সেটিকে ‘টাইগার্স আই’ বলা হতো।

০৬ ১২
রঙিন হিরের প্রতি বিশেষ আসক্তি ছিল রঞ্জিতসিংহজির। তাঁর সংগ্রহে গোলাপি, নীল, সবুজ এমনকি বিরল প্রকৃতির কালো রংয়ের হিরেও ছিল। কার্টিয়ারকে নিয়ে লেখা একটি বইয়ে রঞ্জিতসিংহজির কাছে থাকা একটি বিরল প্রকৃতির রক্তবর্ণ হিরের কথাও উল্লেখ করেছেন হান্স নেডেলহফার।

রঙিন হিরের প্রতি বিশেষ আসক্তি ছিল রঞ্জিতসিংহজির। তাঁর সংগ্রহে গোলাপি, নীল, সবুজ এমনকি বিরল প্রকৃতির কালো রংয়ের হিরেও ছিল। কার্টিয়ারকে নিয়ে লেখা একটি বইয়ে রঞ্জিতসিংহজির কাছে থাকা একটি বিরল প্রকৃতির রক্তবর্ণ হিরের কথাও উল্লেখ করেছেন হান্স নেডেলহফার।

০৭ ১২
আমেরিকার বিত্তশালী পরিবার এবং রাশিয়ার জ়ারদের জন্য গয়না তৈরি করতেন কার্টিয়ার। ১৯৩১ সালে কার্টিয়ারকে রঙিন হিরে দিয়ে একটি নেকলেস তৈরি করে দিতে বলে রঞ্জিতসিংহজি। নেকলেসটি কেমন হবে, তার যে বর্ণনা তিনি দেন, তাতে নাকি চোখ ছানাবড়া হয়ে যায় কার্টিয়ারেরও।

আমেরিকার বিত্তশালী পরিবার এবং রাশিয়ার জ়ারদের জন্য গয়না তৈরি করতেন কার্টিয়ার। ১৯৩১ সালে কার্টিয়ারকে রঙিন হিরে দিয়ে একটি নেকলেস তৈরি করে দিতে বলে রঞ্জিতসিংহজি। নেকলেসটি কেমন হবে, তার যে বর্ণনা তিনি দেন, তাতে নাকি চোখ ছানাবড়া হয়ে যায় কার্টিয়ারেরও।

০৮ ১২
নেকলেসটির সামনের অংশে দু’টি স্ট্র্যান্ট রাখা হয়। পিছনের দিকে একটিই। তবে শুধুমাত্র মূল্যবান ধাতু নয়, গা ঘেঁষাঘেঁষি করে ফার্স-ক্লাস হিরে বসিয়ে স্ট্র্যান্ডগুলি তৈরি করা হয়। সামনের দু’টি স্ট্র্যান্ড জুড়তে গোলাপি রংয়ের দু’টি চৌকো আকারের হিরে ব্যবহার করা হয়। মাঝখানের পেনডেন্টটি তৈরি করতে ২৬ ক্যারাটের একটি নীল রংয়ের হিরে, একাধিক গোলাপি হিরে এবং একটি ১২ ক্যারাটের সবুজ হিরে ব্যবহার করা হয়। তাদের মাঝখানে বসানো হয় কুইন অব হল্যান্ডের বিখ্যাত একটি হিরে, যা আকারে ১০৫ ক্যারাটেরও বড় ছিল।

নেকলেসটির সামনের অংশে দু’টি স্ট্র্যান্ট রাখা হয়। পিছনের দিকে একটিই। তবে শুধুমাত্র মূল্যবান ধাতু নয়, গা ঘেঁষাঘেঁষি করে ফার্স-ক্লাস হিরে বসিয়ে স্ট্র্যান্ডগুলি তৈরি করা হয়। সামনের দু’টি স্ট্র্যান্ড জুড়তে গোলাপি রংয়ের দু’টি চৌকো আকারের হিরে ব্যবহার করা হয়। মাঝখানের পেনডেন্টটি তৈরি করতে ২৬ ক্যারাটের একটি নীল রংয়ের হিরে, একাধিক গোলাপি হিরে এবং একটি ১২ ক্যারাটের সবুজ হিরে ব্যবহার করা হয়। তাদের মাঝখানে বসানো হয় কুইন অব হল্যান্ডের বিখ্যাত একটি হিরে, যা আকারে ১০৫ ক্যারাটেরও বড় ছিল।

০৯ ১২
বেঁচে থাকতে ওই নেকলেস হাতে পাননি রঞ্জিতসিংহজি। ১৯৩৩ সালে মারা যান তিনি। পরবর্তী কালে তাঁর ভাইপো তথা উত্তরাধিকারী দিগ্বিজয়সংহজি জাডেজা সেটি হাতে পান। গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠানে ওই নেকলেস পরতেন তিনি। একাধিক ছবিতেও ওই নেকলেস পরে তাঁকে দেখা গিয়েছে।

বেঁচে থাকতে ওই নেকলেস হাতে পাননি রঞ্জিতসিংহজি। ১৯৩৩ সালে মারা যান তিনি। পরবর্তী কালে তাঁর ভাইপো তথা উত্তরাধিকারী দিগ্বিজয়সংহজি জাডেজা সেটি হাতে পান। গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠানে ওই নেকলেস পরতেন তিনি। একাধিক ছবিতেও ওই নেকলেস পরে তাঁকে দেখা গিয়েছে।

১০ ১২
কাকার মতো গয়নার নেশা ছিল দিগ্বিজয় সিংহজিরও। দিল্লিতে অশোকা হোটেল, ডিগজ্যাম স্যুটিং, দিগ্বিজয় সিমেন্ট এবং জামএয়ার নামের উড়ান পরিষেবার ব্যবসা থেকে যা আয় হতো, তা গয়না কিনতেই খরচ করতেন তিনি।

কাকার মতো গয়নার নেশা ছিল দিগ্বিজয় সিংহজিরও। দিল্লিতে অশোকা হোটেল, ডিগজ্যাম স্যুটিং, দিগ্বিজয় সিমেন্ট এবং জামএয়ার নামের উড়ান পরিষেবার ব্যবসা থেকে যা আয় হতো, তা গয়না কিনতেই খরচ করতেন তিনি।

১১ ১২
কিন্তু ১৯৪৭ সালে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর পরিস্থিতিত বদলে যায়। সরকার সব কিছু দখল করে নিতে পারে, এই আশঙ্কায় রাতারাতি মূল্যবান রত্ন ও সম্পত্তি বিক্রি করতে শুরু করে দেয় রাজপরিবারগুলি। নওয়ানগরের রাজপরিবারও সেই দলে নাম লেখায়। শোনা যায়, ছয়ের দশকে তাঁদের কাছ থেকে ওই নেকলেসটি কিনে নেন কার্টিয়ার। পরবর্তী কালে সেটি ভেঙে আলাদা ভাবে হিরেগুলি বিক্রি করা হয়।

কিন্তু ১৯৪৭ সালে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর পরিস্থিতিত বদলে যায়। সরকার সব কিছু দখল করে নিতে পারে, এই আশঙ্কায় রাতারাতি মূল্যবান রত্ন ও সম্পত্তি বিক্রি করতে শুরু করে দেয় রাজপরিবারগুলি। নওয়ানগরের রাজপরিবারও সেই দলে নাম লেখায়। শোনা যায়, ছয়ের দশকে তাঁদের কাছ থেকে ওই নেকলেসটি কিনে নেন কার্টিয়ার। পরবর্তী কালে সেটি ভেঙে আলাদা ভাবে হিরেগুলি বিক্রি করা হয়।

১২ ১২
তবে বর্তমানে নেকসলেসটির অস্তিত্ব না থাকলেও, লোকমুখে আজও প্রচলিত সেটি। সম্প্রতি হলিউডের ‘ওশিয়ানজ এইট’ ছবিতে ওই নেকলেসটির অনুরূপ একটি নেকলেস দেখানো হয়। সেটিকে ঘিরেই ছবির কাহিনি আবর্তিত হয়। ছবিতে অ্যান হ্যাথওয়েকে ওই নেকলেসটি পরে দেখাও যায়।

তবে বর্তমানে নেকসলেসটির অস্তিত্ব না থাকলেও, লোকমুখে আজও প্রচলিত সেটি। সম্প্রতি হলিউডের ‘ওশিয়ানজ এইট’ ছবিতে ওই নেকলেসটির অনুরূপ একটি নেকলেস দেখানো হয়। সেটিকে ঘিরেই ছবির কাহিনি আবর্তিত হয়। ছবিতে অ্যান হ্যাথওয়েকে ওই নেকলেসটি পরে দেখাও যায়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE