Meet Former Model Sanjeev Kumar, who fighting against casteism in Bihar dgtl
Sanjeev Kumar
প্রাণের হুমকি এড়িয়ে বিহারের প্রত্যন্ত গ্রামে অস্পৃশ্যতা দূর করছেন মাওবাদীদের হাতে অপহৃত মডেল
দলিত। অস্পৃশ্য। অচ্ছ্যুত। ২০১৯ সালেও শব্দগুলো বড্ড চেনা। এখনও দেশের বেশ কিছু প্রত্যন্ত গ্রামে বিশেষ কিছু জাতিগোষ্ঠীর মানুষ অস্পৃশ্য। সেই অন্ধত্ব থেকেই আলোয় ফেরাতে চেষ্টা করছেন এক জন।
নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতাশেষ আপডেট: ০৫ এপ্রিল ২০১৯ ১২:১৭
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৭
দলিত। অস্পৃশ্য। অচ্ছ্যুত। ২০১৯ সালেও শব্দগুলো বড্ড চেনা। এখনও দেশের বেশ কিছু প্রত্যন্ত গ্রামে বিশেষ কিছু জাতিগোষ্ঠীর মানুষ অস্পৃশ্য। সেই অন্ধত্ব থেকেই আলোয় ফেরাতে চেষ্টা করছেন এক জন।
০২১৭
গত ১৪ বছর ধরে বিহারের প্রত্যন্ত এলাকায় কাজ করে চলেছেন প্রাক্তন এই মডেল। চেষ্টা করছেন, সমাজ থেকে এই ধরনের ভুল ধারণা মুছে ফেলতে।
০৩১৭
বিহারের খাগাড়িয়া জেলার পার্বত্য গ্রামে আদি বাড়ি হলেও দিল্লিতেই মানুষ তিনি। এমবিএ এই যুবক দিল্লিতে মডেলিং করতেন। কিন্তু আরামের চাকরি ছেড়ে এলেন একেবারে মাঠেঘাটে। শুরু করলেন সমাজ পাল্টানোর কাজ।
০৪১৭
২০০৫ সালে দিদির শাশুড়ির শেষকৃত্যের সময় সব কাজ মিটে যেতে কিছু কুকুর এসেছিল অবশিষ্টাংশ খাওয়ার জন্য। এর পর তাঁরা লক্ষ্য করেন, বেশ কিছু মানুষও এসেছেন সেই অবশিষ্টাংশ খেতে। শুধুমাত্র ডোম সম্প্রদায়ভুক্ত হওয়ার কারণে যাঁরা বাকিদের সঙ্গে এক আসনে বসতে পারেননি। সমাজের চোখে তাঁরা নাকি অপাঙ্ক্তেয়।
০৫১৭
গোটা গ্রামের মানুষকে সে দিন তাঁদের পরিবারের তরফে খাওয়ানো হয়েছিল। কিন্তু সেখানে বিশেষ কিছু সম্প্রদায়ের মানুষ আসেননি শুধু মাত্র ‘অস্পৃশ্য’ বলে, এটা জেনে চমকে ওঠে সঞ্জীবের পরিবার। এমনকি গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া গঙ্গার জলও তাঁরা ব্যবহার করতে পারেন না জেনে অবাক হয়ে যান সঞ্জীব।
০৬১৭
সঞ্জীব এই ঘটনা দেখার পর বেশ কয়েক দিন ঘুমতে পারেননি, কাজেও মন বসছিল না। দিল্লি ফিরে বাবা-মাকে জানান তাঁর অভিজ্ঞতা। মডেলিং কেরিয়ার ছেড়ে দিয়ে ডোম-সহ অন্যান্য পিছিয়ে পড়া সম্প্রদায়কে নিয়ে কাজের সিদ্ধান্ত নেন সঞ্জীব।
০৭১৭
তাঁদের সঙ্গে নিয়মিত মেলামেশা শুরু করেন। তা দেখেই এলাকার ব্লক ডেভলপমেন্ট অফিসার তাঁকে ডেকে পাঠান।
০৮১৭
যে সম্প্রদায়কে সবাই দূরে সরিয়ে রাখে, তাঁদের সন্তানদের পড়াশোনার দায়িত্ব নেন সঞ্জীব। বিডিও দু’টি ঘর দেন। ২৫টি বাচ্চার দায়িত্ব নেন তিনি। তার পর রটে যায় সঞ্জীব নকশাল রাজনীতি করেন। সিবিআই অফিসার কিংবা খুনি তিনি, রটে যায় এমনটাও।
০৯১৭
এর পরই প্রাণের হুমকিও দেওয়া হয় সঞ্জীবকে। সঞ্জীবের বোনের শ্বশুরবাড়িতেও হুমকি যায়। বাড়ির লোক তাঁকে কাজ ছেড়ে দিতে বলেন। কিন্তু থেমে থাকেননি সঞ্জীব। চাপ সত্ত্বেও লড়াই চালিয়ে যান।
১০১৭
সঞ্জীবকে ভয় দেখাতে তাঁর খুড়তুতো ভাইয়ের খাবারে বিষ মিশিয়ে প্রাণে মেরে ফেলার চেষ্টাও হয়। সেই সময় কাকার বাড়ি থাকতেন তিনি। বাধ্য হন বাড়ি ছাড়তে।
১১১৭
সঞ্জীবকে ভয় দেখাতে তাঁর খুড়তুতো ভাইয়ের খাবারে বিষ মিশিয়ে প্রাণে মেরে ফেলার চেষ্টাও হয়। সেই সময় কাকার বাড়ি থাকতেন তিনি। বাধ্য হন বাড়ি ছাড়তে।
১২১৭
একবার বিডিও তাঁর প্রাণ বাঁচান, জানান সঞ্জীব। ২০০৭ সালে লড়াই করে বহিষ্কৃত হিতকারী সংগঠন (বিএইচএস) গড়েন তিনি। প্রত্যেক দিন হুমকি, অপমান, পদবী বদলে সঞ্জীব ডোম নামে ডাকা— এই সব কিছুর মধ্যে দিয়ে গিয়েছেন সঞ্জীব।
১৩১৭
৪০টি গ্রামে গিয়ে প্রতিদিন প্রায় ১৬ কিলোমিটার হেঁটে মানুষকে সচেতন করার কাজ করেন তিনি। বোঝান, প্রতিটি মানুষ সমান। থেমথারাখা গ্রামের বিএইচএস ব্লক প্রেসিডেন্ট ঘুরো দেবী বলেন, সঞ্জীবের চেষ্টায় মৃতদেহ বহন বা নোংরা বহন করার জন্য জোর করাটা কমেছে অনেকটাই। তাঁরাও বুঝতে শিখছেন, যে কোনও কাজের জন্যই তাঁরা উপযুক্ত।
১৪১৭
এক বার ডোম সম্প্রদায়ের ৭৫ জন মহিলা এক সঙ্গে গঙ্গায় জল আনতে যান। এর প্রতিবাদে মুখর হয় গোটা গ্রাম। তখন ওই সম্প্রদায়ের অন্য গ্রামের মহিলাদেরও ডাকা হয়। তাঁদের বাধা দিতে পথে কাঁটা বিছিয়ে দেওয়া হয়। সেই পথেই যান তাঁরা। এই সম্প্রদায়ের রাধা মিরদা বলেন, সঞ্জীবই আসল চ্যাম্পিয়ন।
১৫১৭
২০১০ সালে সঞ্জীবকে অপহরণ করে সারা রাত ধরে অত্যাচার করে নকশালরা। সঞ্জীবের লড়াইয়ে কিছুটা বিরক্ত ছিল মাওবাদীরাও। কিন্তু গোটা গ্রাম লড়াই করে ফিরিয়ে আনে সঞ্জীবকে। তাঁর কিছু হলে গোটা গ্রামে আগুন জ্বলবে, এমন বার্তা ছড়িয়ে পড়ায় তাঁকে ফিরিয়ে দেয় নকশালরা।
১৬১৭
৩০০ টাকা বাড়ি ভাড়া দিয়ে গ্রামে থাকেন তিনি। বাবা-মা তাঁকে সাহায্য করেন। দিল্লির আরামের জীবন ছেড়ে এই পথ বেছে নেওয়াকে সমর্থন করতে পারেননি স্ত্রী। তবে সঞ্জীব নিজে স্কুলের ১০০টির বেশি বাচ্চার ভবিষ্যত্ নিয়েই ভাবতে চান, কারণ তিনিই সম্প্রদায়ের কাছে ‘ফাদার ফিগার’।
১৭১৭
তাঁর স্কুল থেকে পাশ করে ইঞ্জিনিয়ারও হয়েছেন কয়েক জন। তিনি অস্পৃশ্যতার মতো বদ্ধমূল কুৎসিত ধারণা থেকে মুক্তি দিতে চান বিহারের প্রত্যন্ত গ্রামের মানুষদের।