Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
National news

৭ বছর বয়স থেকেই শৌচালয় পরিষ্কার করতেন, সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি বদলে ৪২ বছরে পদ্মশ্রী ইনি!

প্রথম প্রথম প্রচণ্ড ঘৃণা হত তাঁর। কিন্তু এটাই তাঁদের বংশগত পেশা। আশেপাশের কেউই তাঁদের সঙ্গে মিশতেন না।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ১১:৫৬
Share: Save:
০১ ১৫
রাজস্থানের ভরতপুর জেলায় এক দলিত পরিবারে জন্ম ঊষা চৌমারের। মাত্র সাত বছর বয়স থেকে মায়ের সঙ্গে কাজে যোগ দেন তিনি। তাঁদের কাজ ছিল বাড়ি বাড়ি গিয়ে নিজের হাতে শৌচালয় পরিষ্কার করা।

রাজস্থানের ভরতপুর জেলায় এক দলিত পরিবারে জন্ম ঊষা চৌমারের। মাত্র সাত বছর বয়স থেকে মায়ের সঙ্গে কাজে যোগ দেন তিনি। তাঁদের কাজ ছিল বাড়ি বাড়ি গিয়ে নিজের হাতে শৌচালয় পরিষ্কার করা।

০২ ১৫
প্রথম প্রথম প্রচণ্ড ঘৃণা হত তাঁর। কিন্তু এটাই তাঁদের বংশগত পেশা। আশেপাশের কেউই তাঁদের সঙ্গে মিশতেন না।

প্রথম প্রথম প্রচণ্ড ঘৃণা হত তাঁর। কিন্তু এটাই তাঁদের বংশগত পেশা। আশেপাশের কেউই তাঁদের সঙ্গে মিশতেন না।

০৩ ১৫
মাত্র ১০ বছর বয়সে রাজস্থানের আলওয়ারে এক পরিবারে বিয়ে হয় তাঁর। তাঁর শ্বশুরবাড়িও দলিত এবং সে পরিবারের সবাই ওই একই কাজ করে সংসার চালান। তাই বিয়ের পরও বাধ্য হয়ে তাঁকে এই পেশাই চালিয়ে যেতে হয়।

মাত্র ১০ বছর বয়সে রাজস্থানের আলওয়ারে এক পরিবারে বিয়ে হয় তাঁর। তাঁর শ্বশুরবাড়িও দলিত এবং সে পরিবারের সবাই ওই একই কাজ করে সংসার চালান। তাই বিয়ের পরও বাধ্য হয়ে তাঁকে এই পেশাই চালিয়ে যেতে হয়।

০৪ ১৫
রোজ সকাল হলেই ঝাড়ু আর বাতলি হাতে, অপরিষ্কার জামা পরে রওনা দিতেন। বাড়ি বাড়ি গিয়ে শৌচালয়ে জমে থাকা মল পরিষ্কার করতেন। তার বিনিময়ে ১০-২০ টাকা করে হাতে পেতেন। কোনও পরিবার দয়া করে পুরনো জামাকাপড় পরতে দিত তাঁকে। পুজোয় নতুন জামা পেলে আমরা যতটা খুশি হই, ওই পুরনো, মলিন জামাগুলো পেয়ে তিনিও ঠিক ততটাই খুশি হতেন।

রোজ সকাল হলেই ঝাড়ু আর বাতলি হাতে, অপরিষ্কার জামা পরে রওনা দিতেন। বাড়ি বাড়ি গিয়ে শৌচালয়ে জমে থাকা মল পরিষ্কার করতেন। তার বিনিময়ে ১০-২০ টাকা করে হাতে পেতেন। কোনও পরিবার দয়া করে পুরনো জামাকাপড় পরতে দিত তাঁকে। পুজোয় নতুন জামা পেলে আমরা যতটা খুশি হই, ওই পুরনো, মলিন জামাগুলো পেয়ে তিনিও ঠিক ততটাই খুশি হতেন।

০৫ ১৫
সেই ঊষাই আজ সমাজের আইকন। এতদিন তাঁকে যাঁরা ঘৃণা করতেন, দলিত বলে দূরত্ব বজায় রাখতেন, তাঁরাই আজ তাঁকে সম্মান করেন। তাঁর জীবনে যে কখনও এমন দিন আসবে, তা কল্পনাতেও আনতে পারেননি ঊষা।

সেই ঊষাই আজ সমাজের আইকন। এতদিন তাঁকে যাঁরা ঘৃণা করতেন, দলিত বলে দূরত্ব বজায় রাখতেন, তাঁরাই আজ তাঁকে সম্মান করেন। তাঁর জীবনে যে কখনও এমন দিন আসবে, তা কল্পনাতেও আনতে পারেননি ঊষা।

০৬ ১৫
২০০৩ সালের ওই একটা দিনই তাঁর জীবন বদলে দিয়েছিল। একটি অলাভজনক সংস্থা সুলভ ইন্টারন্যাশনাল তাঁর গ্রামে আসে মূলত তাঁর মতো পেশায় যুক্ত মহিলাদের সঙ্গে দেখা করতেই।

২০০৩ সালের ওই একটা দিনই তাঁর জীবন বদলে দিয়েছিল। একটি অলাভজনক সংস্থা সুলভ ইন্টারন্যাশনাল তাঁর গ্রামে আসে মূলত তাঁর মতো পেশায় যুক্ত মহিলাদের সঙ্গে দেখা করতেই।

০৭ ১৫
তাঁরা কী কাজ করেন? বিনিময়ে কত টাকা পান? এইসব জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় তাঁদের। বেশিরভাগ মহিলাই মুখে কিছু বলছিলেন না। বাধ্য হয়ে ঊষা ওই সংস্থার মালিক বিন্দেশ্বর পাঠককে তাঁদের দৈনন্দিন জীবনযাত্রা খুলে বলেন।

তাঁরা কী কাজ করেন? বিনিময়ে কত টাকা পান? এইসব জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় তাঁদের। বেশিরভাগ মহিলাই মুখে কিছু বলছিলেন না। বাধ্য হয়ে ঊষা ওই সংস্থার মালিক বিন্দেশ্বর পাঠককে তাঁদের দৈনন্দিন জীবনযাত্রা খুলে বলেন।

০৮ ১৫
তাঁদের দৈনন্দিন আয় শুনে অবাক হয়ে যান সংস্থার মালিক। তাঁদের অন্য কিছু কাজ করার প্রস্তাব দেন। কিন্তু তাঁদের কি সমাজ অন্যভাবে গ্রহণ করবে? তাঁরা যদি কাপড় সেলাই করেন, সেই কাপড় কি কেউ কিনবে? এই সব প্রশ্নই ভিড় করছিল ঊষার মনে।

তাঁদের দৈনন্দিন আয় শুনে অবাক হয়ে যান সংস্থার মালিক। তাঁদের অন্য কিছু কাজ করার প্রস্তাব দেন। কিন্তু তাঁদের কি সমাজ অন্যভাবে গ্রহণ করবে? তাঁরা যদি কাপড় সেলাই করেন, সেই কাপড় কি কেউ কিনবে? এই সব প্রশ্নই ভিড় করছিল ঊষার মনে।

০৯ ১৫
বিন্দেশ্বর পাঠক স্বয়ং তাঁকে আশ্বাস দিয়েছিলেন। ঊষাও মনের জোর নিয়ে সমাজের মূল স্রোতের দিকে পা বাড়িয়ে দেন। সুলভ ইন্টারন্যাশনালের সঙ্গে তিনি যুক্ত হন। কাপড় সেলাই, ব্যাগ সেলাই, আচার বানানো-- এরকম নানা হাতের কাজ শেখেন। পরে সেগুলো বানাতে শুরু করেন।

বিন্দেশ্বর পাঠক স্বয়ং তাঁকে আশ্বাস দিয়েছিলেন। ঊষাও মনের জোর নিয়ে সমাজের মূল স্রোতের দিকে পা বাড়িয়ে দেন। সুলভ ইন্টারন্যাশনালের সঙ্গে তিনি যুক্ত হন। কাপড় সেলাই, ব্যাগ সেলাই, আচার বানানো-- এরকম নানা হাতের কাজ শেখেন। পরে সেগুলো বানাতে শুরু করেন।

১০ ১৫
ঊষার নিজেকে অন্য মানুষ মনে হচ্ছিল। রোজ সকালে ছেঁড়া জামা পরে ঝাড়ু-বালতি হাতে শৌচালয় পরিষ্কারের বদলে এখন স্নান করে ভাল জামা পরে কাজে যেতে শুরু করলেন তিনি। তাঁর তৈরি জিনিসপত্র বেচার দায়িত্ব ছিল ওই সংস্থার উপরে।

ঊষার নিজেকে অন্য মানুষ মনে হচ্ছিল। রোজ সকালে ছেঁড়া জামা পরে ঝাড়ু-বালতি হাতে শৌচালয় পরিষ্কারের বদলে এখন স্নান করে ভাল জামা পরে কাজে যেতে শুরু করলেন তিনি। তাঁর তৈরি জিনিসপত্র বেচার দায়িত্ব ছিল ওই সংস্থার উপরে।

১১ ১৫
আগে যেখানে মাসে মাত্র ১০০-২০০ টাকা উপার্জন হত, এখন প্রতি মাসে ১৫০০ টাকা হাতে পেতে শুরু করেন তিনি। ছেলে-মেয়েদের স্কুলেও বর্তি করলেন।

আগে যেখানে মাসে মাত্র ১০০-২০০ টাকা উপার্জন হত, এখন প্রতি মাসে ১৫০০ টাকা হাতে পেতে শুরু করেন তিনি। ছেলে-মেয়েদের স্কুলেও বর্তি করলেন।

১২ ১৫
ঊষার বারবারই চেষ্টা ছিল, তাঁর মতো অন্য মহিলাদেরও এই সংস্থায় যুক্ত করা। প্রতিদিন তাঁদের বোঝানোর জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করতেন তিনি। কাজের বাইরে যখনই সময় পেতেন, তাঁর মতো কারোকে না কারোকে তিনি বোঝাতেন। অনেকে ভাল দিকটা বুঝতেন, অনেকে আবার তাঁকে ভুল বুঝতেন।

ঊষার বারবারই চেষ্টা ছিল, তাঁর মতো অন্য মহিলাদেরও এই সংস্থায় যুক্ত করা। প্রতিদিন তাঁদের বোঝানোর জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করতেন তিনি। কাজের বাইরে যখনই সময় পেতেন, তাঁর মতো কারোকে না কারোকে তিনি বোঝাতেন। অনেকে ভাল দিকটা বুঝতেন, অনেকে আবার তাঁকে ভুল বুঝতেন।

১৩ ১৫
কর্মসূত্রে তিনি দেশ-বিদেশ ঘুরে বেড়িয়েছেন। ভরা গ্যালারির মাঝে দাঁড়িয়ে নিজের কাহিনি বলেছেন। ক্রমে নিজের প্রতি আস্থা বেড়েছে। ঊষা এত দ্রুত উন্নতি করতে শুরু করেন যে, খুব তাড়াতাড়ি তাঁকে ওই সংস্থার প্রেসিডেন্ট করে দেওয়া হয়। এই মুহূর্তে তাঁর অধীনে কয়েকশো মহিলা কাজ করেন।

কর্মসূত্রে তিনি দেশ-বিদেশ ঘুরে বেড়িয়েছেন। ভরা গ্যালারির মাঝে দাঁড়িয়ে নিজের কাহিনি বলেছেন। ক্রমে নিজের প্রতি আস্থা বেড়েছে। ঊষা এত দ্রুত উন্নতি করতে শুরু করেন যে, খুব তাড়াতাড়ি তাঁকে ওই সংস্থার প্রেসিডেন্ট করে দেওয়া হয়। এই মুহূর্তে তাঁর অধীনে কয়েকশো মহিলা কাজ করেন।

১৪ ১৫
২০২০ সালের ২৫ জানুয়ারি ৪২ বছর বয়সে তিনি পদ্মশ্রী সম্মান পান। যে দিন দিল্লি থেকে তাঁর কাছে এই ফোনটা এসেছিল, পদ্মশ্রী সম্মান কী তা জানতেন না ঊষা। সঙ্গে সঙ্গেই তিনি ফোনে বিন্দেশ্বর পাঠককে জানিয়েছিলেন। তারপরই বুঝতে পারেন এই সম্মানের মর্ম।

২০২০ সালের ২৫ জানুয়ারি ৪২ বছর বয়সে তিনি পদ্মশ্রী সম্মান পান। যে দিন দিল্লি থেকে তাঁর কাছে এই ফোনটা এসেছিল, পদ্মশ্রী সম্মান কী তা জানতেন না ঊষা। সঙ্গে সঙ্গেই তিনি ফোনে বিন্দেশ্বর পাঠককে জানিয়েছিলেন। তারপরই বুঝতে পারেন এই সম্মানের মর্ম।

১৫ ১৫
নিজের এলাকায় একটি স্কুল করার ইচ্ছা তাঁর। সকাল হলেই যেন কোনও মেয়েকেই আর বালতি-ঝাড়ু হাতে বর্জ্য পরিষ্কারে যেতে না হয়, সেটা নিশ্চিত করতে চান তিনি। তাঁর মতো যেন কোনও মেয়েরই আর ছোট বয়সে বিয়ে না হয়, সেটাও নিশ্চিত করতে চান। আর চান, তাঁর মতো দলিতরা যেন মাথা উঁচু করে চলাফেরা করতে পারেন।

নিজের এলাকায় একটি স্কুল করার ইচ্ছা তাঁর। সকাল হলেই যেন কোনও মেয়েকেই আর বালতি-ঝাড়ু হাতে বর্জ্য পরিষ্কারে যেতে না হয়, সেটা নিশ্চিত করতে চান তিনি। তাঁর মতো যেন কোনও মেয়েরই আর ছোট বয়সে বিয়ে না হয়, সেটাও নিশ্চিত করতে চান। আর চান, তাঁর মতো দলিতরা যেন মাথা উঁচু করে চলাফেরা করতে পারেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE