সেদিনের সেই শিশু আজকের বিশ্বের পোলভল্টের আকাশে নতুন তারকা—আর্মান্দ ডুপ্লান্টিস। উচ্চতাকে ছোঁয়ার চেষ্টা তাঁর ছোট থেকেই। বয়সের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়তে লাগল ডানপিটেমি।
০৩১৯
দাদার সঙ্গে মিলে ডুপ্লান্টিস বাড়ির ঢালু ছাদ বেয়ে নীচে লাফ দিতেন পায়ে রোলার স্কেট লাগিয়ে। কিছুদিন পরে বাড়ির বসার ঘরে লম্বা ঝাড়ুকে সম্বল করে শুরু হল পোলভল্টের হাতেখড়ি।
০৪১৯
ছেলের আগ্রহ দেখে বাড়ির পিছনে উঠোনে বাবা তৈরি করিয়ে দিলেন ল্যান্ডিং পিট। যাতে সেখানে অনুশীলন করতে পারে বাড়ির সবার আদরের ‘মন্ডো’।
০৫১৯
এই বাড়ি ছিল আমেরিকার লুইজিনিয়ায়। সেই শহরেই আর্মান্দ ডুপ্লান্টিসের জন্ম ১৯৯৯ সালের ১০ নভেম্বর। বহুদিন ধরেই তাঁর পরিবারে খেলাধুলোর ধারা ছিল।
০৬১৯
আর্মান্দের বাবা গ্রেগ ছিলেন মার্কিন পোলভল্টার। মা হেলেনা ছিলেন সুইডেনের মেয়ে। তিনিও হেপ্টাথলন এবং ভলিবল খেলোয়াড় ছিলেন। আর্মান্দর সাফল্যের প্রধান কারিগর হেলেনা-ই।
০৭১৯
আর্মান্দের দুই দাদা আন্দ্রিজ ও আন্তোয়াইন এবং বোন জোহান্নাও খেলোয়াড়। কিন্তু তাঁরা কেউ সাফল্যের নিরিখে আর্মান্দের কাছে পৌঁছতে পারেননি।
০৮১৯
মার্কিন এবং সুইডিশ, দু’ ধরনের নাগরিকত্বই ছিল আর্মান্দের। ফলে দু’টি দেশের যে কোনও একটির হয়ে তিনি প্রতিনিধিত্ব করতে পারতেন আন্তর্জাতিক মঞ্চে। তিনি বেছে নেন মায়ের দেশ সুইডেনকে।
০৯১৯
২০১৫ সালে কলম্বিয়ায় বিশ্ব যুব চ্যাম্পিয়নশিপে তিনি প্রথম সুইডেনের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করেন। ৫.৩০ মিটার বা ১৭ ফিট ৪.৫ ইঞ্চি লাফিয়ে তিনি স্বর্ণপদকজয়ী হন। একইসঙ্গে তৈরি করেন নতুন বিশ্বরেকর্ড।
১০১৯
২০১৬-এ পোল্যান্ডে অনূর্ধ্ব-২০ বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে পান তৃতীয় স্থান। পরের বছরই চলে আসেন প্রথম স্থানে। ইটালিতে ইউরোপীয় অনূর্ধ্ব-২০ চ্যাম্পিয়নশিপে স্বর্ণপদক জয় করেন। সে বছর বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে অবশ্য খুশি থাকতে হয় নবম স্থান নিয়েই।
১১১৯
২০১৮-র শুরুটা খুব বেশি চমকপ্রদ হয়নি। ইংল্যান্ডে বিশ্ব ইন্ডোর চ্যাম্পিয়নশিপে পান অষ্টম স্থান। সে বছর বিশ্ব অনূর্ধ্ব কুড়ি চ্যাম্পিয়নশিপ এবং ইউরোপীয় চ্যাম্পিয়নশিপে অবশ্য পর পর দু’বার প্রথম স্থানে ছিলেন তিনি-ই।
১২১৯
সাফল্যের ধারা জারি ছিল ২০১৯-এও। আমেরিকার আরকানসাসে ট্র্যাক অ্যান্ড ফিল্ড চ্যাম্পিয়নশিপে ৬ মিটার উচ্চতা অবধি লাফিয়ে তিনি নতুন রেকর্ড তৈরি করেন। সে বছরই পোল্যান্ডে ওয়র্ল্ড অ্যাথলেটিক্স ইন্ডোর টুর-এ ৬.১৭ মিটার লাফিয়ে আবার নতুন রেকর্ডের শিরোপা তাঁর মাথায়।
১৩১৯
সে বছর কাতারের দোহায় বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে অবশ্য একটুর জন্য ফস্কে যায় প্রথম স্থান। ৫.৯৭ মিটার লাফিয়ে তিনি দ্বিতীয় হন তিনি।
১৪১৯
সারা পৃথিবী অতিমারি-বিধ্বস্ত হলেও চলতি বছরটা আর্মান্দের কিন্তু দুর্দান্ত কাটছে। প্রত্যেক প্রতিযোগিতাতে ৬ মিটারের উপর লাফিয়েছেন। শেষ পর্যন্ত রোমে এসে দ্বিতীয় প্রচেষ্টায় ভেঙে দিলেন বুবকার বিশ্বরেকর্ড।
১৫১৯
২৬ বছর ধরে অক্ষত ছিল খোলা স্টেডিয়ামে সের্গেই বুবকার বিশ্বরেকর্ড। ১৯৯৪ সালে এই রেকর্ড গড়েছিলেন ইউক্রেনের বুবকা। কিংবদন্তি পোল ভল্টার পেরিয়েছিলেন ৬ মিটার ১৪ সেন্টিমিটার (২০ ফুট দেড় ইঞ্চি)।
১৬১৯
ডুপ্লান্টিস রোমে লাফালেন ৬ মিটার ১৫ সেন্টিমিটার (২০ ফুট দুই ইঞ্চি)। এ বছরেরই ফেব্রুয়ারি মাসে গ্লাসগোতে ইন্ডোরে স্টেডিয়ামে বিশ্বরেকর্ড করেছিলেন সুইড-আমেরিকান এই অ্যাথলিট। সেখানে তিনি পেরিয়েছিলেন ৬ মিটার ১৮ সেন্টিমিটার (২০ ফুট ৩.২৫ ইঞ্চি)।
১৭১৯
বুবকার রেকর্ড ভাঙার অগ্নিপরীক্ষায় সসম্মানে উত্তীর্ণ আর্মান্দ বলেছেন, ‘‘অবশেষে এই বিশ্বরেকর্ডটা পেলাম। দারুণ তৃপ্তি লাগছে। খুব পরিশ্রম করেছিলাম এই রেকর্ডটা ভাঙার জন্য। প্রত্যাশা পূরণ করতে পারায় আনন্দের চেয়েও স্বস্তি হচ্ছে বেশি।’’
১৮১৯
করোনার জন্য খেলা বন্ধ থাকার প্রসঙ্গে তাঁর মন্তব্য, ‘‘চলতি বছরে এক সময় মনে হচ্ছিল, আর খেলা হবে না। জীবনের প্রথম অলিম্পিক্সেই যেতে পারলাম না। এই বিশ্বরেকর্ড গড়া তাই অন্য রকম আনন্দের।’’
১৯১৯
গত এক দশক ধরে তিনি পরিচিত পোল ভল্টের ‘বিস্ময় বালক’ হিসেবে। এখানেই থেমে যেতে নারাজ আর্মান্দ ডুপ্লান্টিস। বলছেন, আরও ভাল করতে পারেন। অসম্ভব বলে কিছুই নেই!