Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

রেজোলিউশনগুলো এক্কেবারে গুপি না করে ফেলার রেজোলিউশন নিন

এমনিতেই বাঙালিরা চিরকাল প্রতিশ্রুতির মামলায় যে কোনও দিন বলে বলে গোল দেয় যে কাউকে। এখন তো আবার ভোটের ভরা মরসুম। প্রতিশ্রুতি এখন এ বঙ্গের আকাশ-বাতাস থেকে টুপটাপ ঝরে পড়ছে। এর মাঝেই বেশ ঝাক্কাস কায়দায় চলে আসছে আস্ত একটা নতুন বছর। রাতটা টুক করে টপকালেই চোদ্দোশোর ফুরফুরে ২৩-এ পা। তার জওয়ানি এখন ফুলটুস জানেমন। মোদ্দা কথায় যৌবনের মধ্যগগনে আরও বেশ কিছু দিন বহাল তবিয়তে রাজত্ব করার ভরপুর পারমিশন নিয়ে আসছে সে।

রায়া দেবনাথ
শেষ আপডেট: ১৩ এপ্রিল ২০১৬ ২২:২৭
Share: Save:

এমনিতেই বাঙালিরা চিরকাল প্রতিশ্রুতির মামলায় যে কোনও দিন বলে বলে গোল দেয় যে কাউকে। এখন তো আবার ভোটের ভরা মরসুম। প্রতিশ্রুতি এখন এ বঙ্গের আকাশ-বাতাস থেকে টুপটাপ ঝরে পড়ছে। এর মাঝেই বেশ ঝাক্কাস কায়দায় চলে আসছে আস্ত একটা নতুন বছর। রাতটা টুক করে টপকালেই চোদ্দোশোর ফুরফুরে ২৩-এ পা। তার জওয়ানি এখন ফুলটুস জানেমন। মোদ্দা কথায় যৌবনের মধ্যগগনে আরও বেশ কিছু দিন বহাল তবিয়তে রাজত্ব করার ভরপুর পারমিশন নিয়ে আসছে সে। নতুন বচ্ছর আসছে আর বাঙালিদের তাজা রেজোলিউশন থাকবে না? ধুর, তা-ও আবার হয় নাকি? প্রতিশ্রুতি কি শুধুই অন্যদের জন্য? কে বললে? নিজেকে চাট্টি মিষ্টি মিষ্টি প্রতিশ্রুতি দেওয়ার এমন সোনার সুযোগ কিন্তু ওই নতুন বছরটা এনে দেয়। নামটাও তার ভারী গালভরা। নিউ ইয়ার রেজোলিউশন। রেজোলিউশন অবশ্যই আপনার। তাই বলে তাতে অন্যরা নাক গলাবে না, এম্মা, তা-ও কি কখনও হয়? নাকের সাইজ যতই খ্যাঁদার দিকে হোক না কেন, যত্রতত্র তার পুটুস করে গলে যাওয়ার ইচ্ছার দৈর্ঘ্য যে এভারেস্টের সঙ্গে পাল্লা দিতে পারে! নাক গলানোর সেই বিপুল ইচ্ছে-সহ আপনার রেজোলিউশনে আমাদের কিছু ব্যাপক টিপস:

১) বাংলায় এই বছরটা ১৪২৩। প্রতিজ্ঞা করুন, বছরের মাঝামাঝি গিয়েও অন্তত এই বার বাংলার এটা কোন সাল বলতে গিয়ে পৌনে চোদ্দো বার হোঁচট খাবেন না।

২) কাফকা থেকে পিকেত্তি, মন দিয়ে উদ্ধৃতি দিন, কিন্তু শুধু শেষ পাতার সামারি নয়, এ বছরটা অন্তত গোটা বইটা পড়ার সংকল্প নিন। অ্যাটলিস্ট চেষ্টা করুন।

৩) কাঁকড়া শিল্পে আপনার দক্ষতা আকাশচুম্বী, তবে এ বছরটা বসের পিছনে মাখনের আড়তটা উপুড় করার বদলে একটু-আধটু নিজের কর্মদক্ষতা বাড়ানোর প্রতিজ্ঞাটা করেই ফেলুন।

৪) পোচুর পড়াশোনা করে কেই বা কবে কোন মহাভারতটা উদ্ধার করেছে? আপনারও সে চান্স বিশেষ নেই। শুধু ঠিক করুন পরীক্ষার সময় অন্যের খাতায় টুকিটা এ বার খানিক কম মারবেন।

৫) পর‘স্ত্রী’কাতরতা বঙ্গ জীবনের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ, শুধু এই বছরটায় রেজোলিউশন নিন, নিজেরটির দিকেও মাঝেসাঝে সময় পেলেই তাকাবেন।

৬) ইয়ে, যে বছর ‘২৩’-এর চড়তি জবানিতে চড়ে আছে তা তো বাই ডিফল্ট নেশাতুর। নেশা করুন, শুধু এর ওর গায়ে সে নেশার রেশ বিশেষ না ছড়ানোর প্রতিজ্ঞা করেই ফেলুন।

৭) শুধু ফেসবুক নয়, হ্যান করেঙ্গা ত্যান করেঙ্গা থেকে যে কোনও বিপ্লব বা সব কিছু বদলে ফেলার ইচ্ছাটা এ বার রাস্তাতেও নামিয়ে আনার শপথটা মনে মনে বছরের শুরুতেই করে ফেলুন।

৮) এ বছরটা অন্তত গরিব রিকশাচালকের সঙ্গে দু’টাকা বেশি ভাড়া নিয়ে তক্কোটা তাকে তুলে রাখুন।

৯) শপথ করুন, অটোর লম্বা লাইন ভেঙে গায়ের জোরে সামনে ঢুকে পড়বেন না।

১০) পিএনপিসি-র স্বর্গীয় সুখ থেকে নিজেকে বঞ্চিত করার মানেই হয় না। শুধু শপথ নিন এ বারে তাতে কিঞ্চিত্ কম জল মেশাবেন।

১১) পরিচ্ছন্নতা নিয়ে পাড়ার ঠেলাওয়ালার দিকে তাকিয়ে আপনার কুঞ্চিত নাকের একটা কুঞ্চনও কমানোর সাধ্যি আমাদের নেই। শুধু, এই বছরটায় ঠিক করুন, সাত সকালেই রাস্তার মধ্যে বালতি ভর্তি বাড়ির সব ময়লা উপুড় করার আগে সাড়ে ২৫ বার ভাববেন।

১২) মেয়ের ক্লাস ফাইভের রিপোর্ট কার্ড হাতে পেয়ে, কম নম্বর তার রকেট সায়েন্টিস্ট হওয়ার পথে কত বড় বাধা সে বিষয়ে বিস্তারিত জ্ঞান বিতরণের আগে নিজের ক্লাস ফাইভের নম্বরটা এক বার স্মরণ করে নেবেন।

১৩) কার প্রেমিক কার দিকে টুকি করেছেন, কার মেয়ে কার ভাইপোর সঙ্গে ইন্টুপিন্টু করছেন, কার ব্লাউজের ঝুল কত, কার উরুতে কীসের ট্যাটু, তা নিয়ে এই বছরটা কম মাথা ঘামাবেন।

১৪) রোজ সকালে উঠে দৌড়তে যাবেন, বাড়ি ফিরে এসে কিছুতেই আলুর পরোটা দিয়ে ব্রেকফাস্ট করবেন না।

১৫) শুধু অন্যের পকেট কেটেই খ্যাঁটন নয়, মাঝে মাঝে নিজের পকেট কেটে অন্যদেরও খাওয়াবেন।

১৬) বাইরে সম-অধিকার নিয়ে মস্ত বড় লেকচার ঝেড়ে আপিস থেকে বউয়ের সঙ্গে প্রায় একই সময়ে বাড়ি ফিরে এক কাপ চায়ের জন্য সেই বউয়ের উপরেই ভরসা করে থাকবেন না।

১৭) শপথ নিন ‘‘ওহ, আমার না টুডে ভেরি হট লাগছে’’ বদলে ‘‘আমার ভারী গরম লাগছে’’ বলায় জোর দেবেন। বাংরেজির বদলে কথা বলার সময় শুধু বাংলা অথবা ইংরেজি বলা প্র্যাকটিস করুন।

১৮) শুধু সিনেমায় নয়, ছেলেমেয়েকে বইয়ের গুপি-বাঘার সঙ্গেও এ বছর পরিচয় করাবেনই, শপথ নিন। কুমড়োপটাশ, রামগড়ুর, হিজবিজবিজ-এর অমর স্রষ্টা ‘ত্রিকালদর্শী’ সুকুমার রায় নামক এক কবির লেখাগুলো আশপাশের কুঁচোকাঁচাকে পড়তে শেখাবেন, এবং বাংলাতেই।

১৯) কেউ ক্যাপিটালিজম নিয়ে তক্কো করতে এলে তাকে মন দিয়ে বোঝান সোশ্যালিজম ঠিক কতটা ভাল, আর কেউ সোশ্যালিজম কপচালে তাকে স্ট্রেট জানান ও সব ইউটোপিয়া, ক্যাপিটালিজম ছাড়া গতি নেই।মোট কথা ডান বাম নয় আপনি মধ্যপথের বিশ্বাসী। মনে যাই থাকুক এলিটিজম বোঝাতে নিজেকে এপলিটিকল বলতেই ভালবাসেন আপনি। এ বছর, গা না বাঁচিয়ে দিক বাছবেন, মনে মনে সংকল্প করুন।

২০) অসহিষ্ণুতা ইস্যুতে আরও একটু কম অসহিষ্ণু হবেন।

২১) টিমম্বাকটুতে ভূমিকম্প হলে কলকাতায় বসে নিজেকে ফেসবুকে সেফমার্ক করবেন না।

২২) উড়ালপুরের উপর বা নীচ দিয়ে যাওয়ার সময় প্রাণটাকে টিফিনবাক্সে পুরে রাখবেন।

২৩) কথায় না পারলে কার কান কত্ত বড়, দাঁতটা কত খুদি, বাঁ দিকের চুল গুলো একটু বেশি কোঁচকানো, কার মেজ ভাসুরের পিসতুতো শালির খুড় শ্বশুরের মাছের দোকান আছে সে সব প্রসঙ্গ টেনে আনবেন না। একটু যুক্তির মুখাপেক্ষী হবেন।

২৫) নিজের পিএইচডি ডিগ্রি নিয়ে ‘মুখ্য’ পন্থী হবেন না।

তবে কিনা নববর্ষ সংকল্পের একটা বৈশিষ্ট্য আছে। এই সব রে়জোলিউশনই জন্ম নেয় মাঝরাস্তায় হঠাত্ করে উধাও হয়ে যাওয়ার জন্যই। ১৪২৩ সালটা নয়া এক রেজোলিউশন নিয়েই ফেলুন। রেজোলিউশনগুলো এক্কেবারে গুপি না করে ফেলার রেজোলিউশন! (ওই ২৩ থেকে এক লাফে ২৫ আসার সময়, ২৪ কে যে ভাবে নাকগলানো উপদেশ মালা থেকে ঝেপে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে, সেখানে এইটে চাইলে বসিয়ে নিতেই পারেন।)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE