বিশ্বের কিছু নামকরা স্যালাডের গপ্প বলতে গেলে শুরুতেই বলতে হয় সিজার স্যালাডের কথা। না এর সঙ্গে সম্রাট সিজারের কোনও সম্পর্ক নেই— এই স্যালাডের আবিষ্কর্তা মেক্সিকোর তিজুয়ানা শহরের এক রেস্তরাঁ মালিক: সিজার কার্দিনি। সারা পৃথিবীব্যাপী জনপ্রিয় এই স্যালাডের বয়স এখনও ১০০ পার করেনি, কিন্তু ইতিমধ্যেই এর উত্স-রহস্য নিয়ে নানা মুনির নানা মত। স্বয়ং সিজারের মেয়ের বক্তব্য অনুযায়ী, ৪ জুলাই ১৯২৪-এ রেস্তরাঁতে এত ভিড় হয়েছিল যে রেস্তরাঁর হেঁশেলে সবজি কম পড়ে গিয়েছিল। বেগতিক দেখে অবস্থা সামাল দিতে হাতের কাছে যা সবজি আর ড্রেসিং ছিল, তাই দিয়ে এক পাঁচমিশেলি স্যালাড বানিয়েছিলেন সিজার সাহেব, আর তাড়াহুড়ো করে বানানো সেই স্যালাড ভীষণ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল রাতারাতি, আর তার নামকরণ করা হয়েছিল সিজার সাহেবের নামে। আবার সিজারের রেস্তরাঁর এক অংশীদারের বক্তব্য: রোমেইন, রসুন, পার্মেসান চিজ, সেদ্ধ ডিম, অলিভ তেল, উস্টারশায়ার সস দিয়ে তৈরি সিজার স্যালাডের আসল নাম অ্যাভিয়েটর্স স্যালাড, আর তা বানানো হয়েছিল সান দিয়াগোর এক আমেরিকান পাইলটের সম্মানে। সিজারের রেস্তরাঁ এই স্যালাডকে জনপ্রিয় করে, আর সময়ের সঙ্গে এর নাম বদলে হয় ‘সিজার স্যালাড’।
রেস্তরাঁর মালিকের নাম থেকে স্যালাডের নামকরণ কব্ স্যালাডের ক্ষেত্রেও। বব কব্ ১৯২৬ সালে তাঁর লস অ্যাঞ্জেলেসের রেস্তরাঁয় রান্না করতে বেঁচে যাওয়া আভাকাদো, সেলেরি, টমেটো, সেদ্ধ ডিম, চিকেন, রকফোর্থ চিজ আর বেকন দিয়ে এই স্যালাড বানান। এই রেস্তরাঁ েআজও চালু— এখন এর নাম ব্রাউন ডার্বি।
ষোড়শ শতাব্দীতে ইউরোপকে আলুর সঙ্গে পরিচয় করান স্প্যানিশ অভিযাত্রীরা আমেরিকা থেকে ফিরে, আর পটেটো স্যালাড তাঁরাই বানাতে শেখান। প্রথম জমানায় পটেটো স্যালাড তৈরি হত ওয়াইন-এ আলু সেদ্ধ করে— ভিনিগারে আলু সেদ্ধ করে পটেটো স্যালাড বানানো শুরু হয় অনেক পরে।
গ্রিক স্যালাডের নামকরণে কী করে ‘গ্রিক’ শব্দটা প্রবেশ করল, সেটা বেশ রহস্যের। কারণ, কোনও ভাবেই গ্রিক স্যালাড খানদানি গ্রিক রান্না-ঘরানার মধ্যে পড়ে না। কারণ গ্রিক স্যালাডের মূল উপাদান ‘টমেটো’, সেটা গ্রিসে প্রবেশই করেছে হালে উনিশ শতকে।
এ বার কয়েকটা ড্রেসিং-এর গপ্প। গ্রিন গডেস ড্রেসিং বানানো হয়েছিল সান ফ্রান্সিসকো’র প্যালেস হোটেলে ১৯২০-তে, অভিনেতা জর্জ আর্লিস-এর সম্মানে। তিনি সেখানে থাকতেন ‘দ্য গ্রিন গডেস’ নাটকে অভিনয় করার সময়।
সবুজ অলিভ, গোলমরিচ, আচার, পেঁয়াজ,আর সেদ্ধ ডিম দিয়ে তৈরি খাট্টামিঠা থাউজেন্ড আইল্যান্ড ড্রেসিং-এর নামকরণ হয়েছিল সেন্ট লরেন্স নদীর থাউজেন্ড আইল্যান্ডসকে মনে রেখে।
ডিমের কুসুম আর তেল দিয়ে তৈরি মেয়নিজ ড্রেসিং তৈরি হয়েছিল ১৭৫৬ সালে ফরাসিদের স্পেনের অধীন মিনর্কা দ্বীপের মেয়ন শহর জয় করার আনন্দ উদ্যাপন করতে। এই যুদ্ধে ফরাসি ফৌজের সেনাপতি ছিলেন রিচেলিউ’র ডিউক, যাঁর বীরত্ব নিয়ে অনেক প্রবাদ ছিল। এই ডিউক ছিলেন ভোজনরসিক, খাওয়াতেও ভালবাসতেন। তাঁরই শেফের হাতে প্রথম তৈরি হয়েছিল মেয়নিজ ড্রেসিং। বলতে ভুলেছি— রিচেলিউ’র ডিউকের ভোজের পোশাকবিধি ছিল অনন্য— উলঙ্গ হয়ে সেই ভোজসভায় খেতে যেতে হত!
pinakee.bhattacharya@gmail.com
‘খানাতল্লাশি’ কেমন লাগছে? ১৪০ ক্যারেক্টারের মধ্যে লিখে, এসএমএস করুন ABP<SPACE>আপনার নাম, আপনার মতামত। পাঠিয়ে দিন 5667711 নম্বরে
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy