Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

উনো মাঠের বুনো ফুল

ভরা মাঘের শীত। পুরুলিয়ার বাঘমুন্ডি বাজার থেকে খোঁজখবর নিয়ে বিকেলের মুখে রওনা দেওয়া গেল মাদলা গ্রামে। বাঁ দিকে সারবদ্ধ অযোধ্যা পাহাড়। তার গর্ভে লুকোনো টুর্গা এবং বামনি দুই ঝরনা। সেই সঙ্গে জঙ্গলের আড়ম্বর। পাহাড় থেকে হুহু হিমেল বাতাস ছুটে আসছে। বাঘমুন্ডি থেকে মাদলা মাইল দুই পথ। গ্রামটি আড়ে বহরে বেশ টানটান। ‘দুলি মাছুয়ার’ নামটা শুনেই গ্রামের মাতব্বর প্রশ্ন করলেন ‘উয়াঁখে কি প্রয়জন?’

ছবি :  সুমন চৌধুরী

ছবি : সুমন চৌধুরী

জগন্নাথ ঘোষ
শেষ আপডেট: ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০০:০৩
Share: Save:

ভরা মাঘের শীত। পুরুলিয়ার বাঘমুন্ডি বাজার থেকে খোঁজখবর নিয়ে বিকেলের মুখে রওনা দেওয়া গেল মাদলা গ্রামে। বাঁ দিকে সারবদ্ধ অযোধ্যা পাহাড়। তার গর্ভে লুকোনো টুর্গা এবং বামনি দুই ঝরনা। সেই সঙ্গে জঙ্গলের আড়ম্বর। পাহাড় থেকে হুহু হিমেল বাতাস ছুটে আসছে। বাঘমুন্ডি থেকে মাদলা মাইল দুই পথ। গ্রামটি আড়ে বহরে বেশ টানটান। ‘দুলি মাছুয়ার’ নামটা শুনেই গ্রামের মাতব্বর প্রশ্ন করলেন ‘উয়াঁখে কি প্রয়জন?’ স্থানীয় সঙ্গীটি বলেন, ‘সে কথা উয়াঁখেই বলব্য।’ মাতব্বর এ বারে খরখরে গলায় বলেন, ‘আমাকে বলতে লাগব্যে। এ গাঁয়ের হিত্-মঙ্গলের বেবস্তা আমার উপ্রে।’ মাতব্বরকে বুঝিয়ে বলা হল প্রয়োজনটা। তিনি কিছু একটা বুঝলেন। গলা নামিয়ে গ্রাম থেকে বিচ্ছিন্ন একটি মেটে ঘর দেখিয়ে বলেন, ‘অই কুঁড়হাটা ভব মুড়ার।’ কিন্তু আমরা তো খুঁজছি দুলি মাছুয়ারকে। তিনি বাধা দিয়ে বলেন ‘অই একেই হঁল্য। ভব রসিকের নাচনি লাগছে দুলিটা।’

তাঁর নির্দেশমত দুলিকে খুঁজে পাওয়া গেল। ঘরেই ছিলেন। সঙ্গে ছিলেন ভবও। দুলির বয়স ৫০-এর ঘরে। দীর্ঘ দিনের অবহেলায় শরীরটা ভাঙলেও, বয়সকালে যে কলাপ- মেলা সুন্দরী ছিলেন, তার ছড়ানো-ছিটানো নমুনা এখনও দিব্যি বোঝা যায়। বিশেষ করে তাঁর আয়ত চোখ দুটিতে বিস্ময় নিয়ে যখন প্রশ্ন করেন ‘তুমরা কথা হঁথ্যে আস্ছ বাপ?’ চাহনটি বড়ই আন্তরিক মনে হয়।

খড়-চালা, মেটে দেওয়াল কুঁড়েটিতে একটিই কামরা। এক পাশে একটি কাঠের বাক্স। বাঁশের আড়ায় ছেঁড়া মলিন জামাকাপড়। ঘরে একটা ভ্যাপসা গন্ধ ঘুরছে। এক পাশে মাটির দেওয়াল তুলে রসুইয়ের ব্যবস্থা। ছেঁড়া খেজুর চাটাইয়ে ভব মুড়া বসে ছিলেন জড়বস্তুটি হয়ে। সমুখে দারুর বোতল। মুখে কাঁচা-পাকা খড়-কাটা দাড়ি। মাথার ঝপকা চুল, অধিকটাই পাকা। দারিদ্রের চরম অভিঘাতে জর্জরিত তাঁর শরীর ও চেহারা। আনুমানিক ষাটোর্দ্ধ বয়স। বেশ জোরালো গলায় বলেন ‘তুমরা কন লঁক বটে, ঘর-দুয়ারে উঠে আসেছ্য?’ দুলি ওঁকে থামা দিয়ে বলেন, ‘উয়াঁরা ভদ্দরজন, কথা করতে আসেছ্যে।’ ‘কী কথা? আমাদেরকে উমর আছে কথা করার? আসর করব্য? মানভুঁইয়ে অখন দমে রসক্যা নাচনি হঁয়েছ্যেন। টাকা বিতালে মদ-মাংস রং-ফুর্তি হরদম চলছ্যে।’ ভবকে পুরোদস্তুর মাপে পাওয়া গেল।

দুলিকে বলি, ‘এই দমবন্ধ ঘরে বসে কী করছিলেন?’ তিনি লাজুক হেসে বলেন ‘কী করব্য, ঢুকু-ঢুকু ইয়াঁ চলছিল।’ তিনি দারুর বোতলটি তুলে ধরেন। ‘এখন নাচের ডাক হয় না বুঝি?’ ‘কে লিঁবে বুড়া-বুড়িকে? এ লাচের ধম্মো হঁল্য উমর। বাঁশটি পাকল ত ভমরটি বসবেক নাই। কিন্তুক রসক্যা আম্কে রস বিথাঁঞ চলছ্যেন। বস, শুন, উঁয়ার বিক্ষটি হঁথে সদাই ঝরছ্যেন।’ ভব যে ভাবে আছেন, দিব্যি প্রকাশ পায়। একটা টিনের বাটিতে বুট-চানা নুনের টাক্না, কাঁচা মরিচ আর অযোধ্যা ভাটির সিক্সটি আপ-এ দুরন্ত হর্স পাওয়ার হয়ে আছেন। তাঁকে একটু বাজাতে চেষ্টা করি। বলি, ‘আপনার রসিক জীবনের গল্প শোনান তো ভবখুড়া। তার পর ঢালাও মদ খাওয়াব।’

তিনি দুলিকে দেখিয়ে বলেন, ‘ভবর ওই ভব-লদিটি সুখাঁঞ গেঁলি, তাহার পর ইঁথে আর কনই গল্ফ নাই।’ এ বারে কথায় সুর জুড়লেন ‘জলে কত কুমির কামট দংশিল হায়! সে বেথা নাহি পায়/ তাহাকে প্রেমসর্পটি দংশিলে মরে গো জ্বালায়।’ দুলি নাচনি চোখে ঝিলিক হেনে ইশারায় বোঝাতে চান, দেখছ ত বাপ, ভব-লদিটি অখনঅ সুখাঁয় নাই। ব্যাদম ঠিকেই আছেন। অবশ্যই। যেমন তাঁর গলায় ধার, তেমন রস রচনা, তেমনটাই ভাবের ঘরে আনাগোনা। দুলিকে হঠাৎই প্রশ্নটা করা ‘নাচনি হলেন কেন?’ একটু আচ্ছন্ন গলায় বলেন ‘সে বাপ পূর্ব জনমের গল্ফ।’

দুলি যা বলতে চাইলেন, তা হল তখন তাঁর কিশোর বয়স। সন্ধ্যার ঝোঁকে ঘরের সামনে দাঁড়িয়ে আনমনা হয়ে ঝুমুর গাইছিলেন। ওই পথে চলেছিলেন স-পারিষদ শশ মাহাত। গান শুনে শশ দাঁড়িয়ে পড়েন। মানভূম ভূখণ্ডে রসের দুনিয়ায় তিনি তখন দুরন্ত খলিফা। একাধারে রসিক, পদকর্তা, তেমনই গাহক। তাঁর মাথার উপরে রাজা মান্কিদের ছত্রছায়া। ফলত টাঁড় বাহালে তিনিও এক ছোটখাটো প্রতাপশালী সামন্তপ্রভু। এ হেন শশ মাস্টার হাঁকা দেন ‘দেখ ত পীতম্বর, সাঁঝকালে কে ঝুমর গাহা করে।’ পীতম্বর ঘুরে এসে বলেন, ‘ভুভন মাছুয়ার বিটিছানাট হুজর।’ তাঁর এক হুকুমে বাগানডি গাঁয়ের সন্ধ্যাতারাটি লুঠ হয়ে গেলেন শ্রাবণডি গাঁয়ে সেই রাতেই।

শশ মাস্টার তাঁকে ঘরে রেখে নাচের তালিম দেন। তিনি পদ রচেন ‘প্রেম পিরিতি সবাই করে/ সে অনলে ক’জন মরে হায় সজনী।’ ঘরে দুই নাচনি পুষে রেখে সদ্য এক চিড়িয়াকে খাঁচায় ধরে তাঁর ডানার ঝাপট শোনেন আর আখর রচেন শশ। কচি পালকের নরম ডানা যত ঝাপটায়, রসিক লেখেন ‘আমি পিঁজরায় পুষ্যেছি এক পাখি/ চানা-দানা দিলাম কত/ সে দিথে চায় ফাঁকি/ আমি ক্যাম্নে ঘরে রাখি/ হায় সজনী...’ সেই পদ ঝুমুর গান হয়ে প্রাণ পায় শশর কণ্ঠে। তাঁর নাচনি আসর মাতান নাচের দাপটে।

দুলি তখনও নাচে এবং শরীরী কলায় পরিপক্ব হয়ে ওঠেননি। শশর ঘরে ‘জাইতের’ বউ-বাচ্চা সকলেই আছেন। তাঁদের ছায়া অবশ্য পড়ে না রসের এই কুঞ্জবনে। সেখানে দূরান্ত থেকে ‘রসক্যারা’ আসেন তালিম নিতে। গান-বাজনা, পদ রচনা, আর বায়না এই নিয়ে শশ মাস্টার তাঁদের সঙ্গে সময় বিতান। ভব তখন সদ্য যুবক। তিনিও যে ঝুমুর রসের সন্ধানী। শশ মাস্টারের তালিম তাঁর মনেও ধরে। সেই থেকে মাস্টারের আখড়ায় তাঁর নিত্য গতায়াত। ভবটির লাজুক মুখ, ভাবুক চোখ আর প্রেমিক মন। মাস্টারের আখড়ায় বসে এক দিন হঠাৎ কিশোরী কণ্ঠের ঝুমুর তাঁর কানে গেল ‘আমি পিঁজরায় পুষা পাখি। হায়! কেমোনে দিই ফাঁকি।’ আড়াল আবছায়ের সেই সুধাকণ্ঠটি ছত্রভঙ্গ করল তাঁকে। অভিলাষ হল কুসুমটিকে ধরা-ছোঁয়ার মধ্যে পেতে।

কী ছিল বিধাতার মনে। এক দিন দুটিতে মুখোমুখি হলেন। আসর থেকে বেরোবার মুখে ভব দেখেন, চাঁদের আলোয় অস্ফুট কুসুমটি বিভোর হয়ে গাইছেন ‘আমার হিয়ায় কে দংশিল হায়!/ মদন কালিয়ায়।’

দুলিকে থামিয়ে দিয়ে পরবর্তী অংশটি ভবর মুখেই শোনার বড় লোভ হল। তাঁকে উসকে দিয়ে বলি, ‘আপনার মনে পড়ছে সেই সব দিনের কথা?’ রসের বোতল গলায় ঢেলে স্মৃতি ওগরান ভব। বলেন, ‘ভমরটি বুঝলেন, কুসুমটি বিকশিত হঁচ্ছেন। চখে চখে ভাব, মনে ভালবাসা। দুজনার বুক ফাটছে মুখেতে বাক্য নাহি সরে। অহো! তাহার পর এক দিন ভমরটি ফুলের গুড় (মধু) খাঁতে তাহার উপ্রে বসলেন। ভব রসক্যা ব্যক্ত করলেন উয়াঁকে ভালবাসেন।’ চোদ্দো বছরের পুষ্পটি দ্বিতীয় দফায় লুঠ হলেন। শ্রাবণডির বাগিচা থেকে মাদলা মাটিতে।

‘শশ মাস্টার খেপলেন। লাঠিয়াল ছুটালেন।’ বাঘমুন্ডির রাজা তাঁর অনুগত। মানভুঁইয়ের বেবাগ আসরে শশর লাঠিয়াল খুঁজে বেড়ায় দুই পলাতককে। ‘পিরিতি কি রাজা সান্ত্রি লাঠি বরলমে বাগ মানে ভাবেছ? ভব মুড়া ত্যাখন প্রেমের ভিয়েনে ডুবছেন উঠছেন ভাসছেন। দুলি নামে রসকলি ক্রেমাগত ফুটছেন।’ ভব চুপ হলেন। পরের ঘটনা সকলেরই জানা। রুখা টাঁড়ের উনো মাটিতে নতুন যে বুনো ফুলটি ফুটল, তাঁর নাম দুলি নাচনি। ভব তখন দস্তুরমতন রসিক হয়ে উঠেছেন। সেই থেকে দুটিতে ভাসাল দোঁহারে প্রেমের জোয়ারে। সেই সঙ্গে ভাসলেন রাঢ়ভূমের রসিককুল, ভব-দুলির যুগলবন্ধনে।

দিন ফুরিয়ে শীতের সন্ধ্যা নেমেছে। ঘরে কুপির শিখায় আলো থেকে ধোঁয়ার প্রকোপ বেশি। সেই স্বল্প আলো-ছায়ায় ধরা দেয় দুলির ভাঙা প্রোফাইল। ভব মুড়া এক পাঁইটেই চড়া মাত্রায় চড়ে বসেছেন। দুজনে অতীতের রোমন্থনে যান। কত নাচের আসরে দর্শক-অভিনন্দন, পুরস্কার, মদ-মাংস, নোটের হর্রা, নষ্ট লোকের কু-প্রস্তাব, ধান্দাবাজি সব পেরিয়ে দুলি নাচনি ভব মুড়াকে আঁকড়ে থেকেছেন বাকিটা কাল।

কিন্তু এখন করবেনটা কী? নাচনির বাজারে আকাল, তায় বয়সের বেলা গড়িয়েছে। দেহ-নদী মরে এসেছে। রূপের তেজ অস্তাচলে। আর তো বাজার পাবেন না। দুলি মাছুয়ার রীতিমত কেঁপে ওঠেন ‘হাঁ বাপ! বলছ্য কী বটে।’ ‘সত্যি কথা সহজ করে বলছি।’ ‘তা হলে রসিক-নাচনির সম্সার আন্ধার হঁয়ে গেঁলি! হঁ রসক্যাট উয়াঁরা কী বলছে শুন বটে।’ ভব মুড়া গলা তুলে বলেন ‘উয়াঁদের ধম্মোকথা ছাড় কেনে। তুয়াঁর বিহা নাই, হামার ভি বিহা নাই। দুটাতে এমনমত ভাসব্য প্রেম-পিরিতি, কারণ-রসে।’ খানিক কাঁচা মদ গলায় ঢেলে ঝুমুর গাহেন ভব রসিক ‘আমার অঙ্গ জ্বলে সুধা জলে/ আমার প্রেম ধারাটি শতেক বলে/ সখি হেঁ..হেঁ..হে।ঁ’

রাঢ়ভূমের শীত-রাতে নিরন্ন দুই খ্যাপার ঘরে আলো-আঁধারে এ কোন খেলা চলে। মানুষের সাধারণ বোধ-বিবেক, বিশ্বাস-বিবেচনাকে নস্যাৎ করে দিয়ে দুই শিল্পী ভিখ মেগে কখনও দুটি অন্ন, কখনও বুট মুড়ি কাঁচা রসের মন্ত্রে কত সহজে জীবন-পানসি ভাসিয়ে নিয়ে চলেন। একই সঙ্গে নাচ-গানের হড়কা বানে দুটাতে ভাসাভাসি হন। মানভূমের হিম রাতে সামান্য ঠেঠনি (হেঁটো ধুতি) আর পারিয়ার (খাটো শাড়ি) অকিঞ্চিৎকর বসনে দুই জীবনকে তপ্ত রাখে প্রেমের ওম। এ জীবন যেমন ভাষায় পায় না প্রকাশ, এ ভাব লেখনীতে যায় না ধরা। এ তসবির রং বুরুশে ফোটে না যে! শুধু মর্মের গোপন কোটরে ক্ষয়কীটের মতো কুরে কুরে খেয়ে কখনও তা নষ্ট করে, কখনও তা স্পষ্ট করে।

সে দিন বেশি রাতে ফিরে আসা হল মাদলা গ্রাম ছেড়ে। কিন্তু মাদলা ছাড়েনি। ঘুরে-ফিরে হানা দেয় আলো-আঁধারে বসে থাকা সেই পাণ্ডুুর মুখ দুটি। কত বার ও দিকে গিয়েও ভয়ে যাওয়া হয়নি গ্রামটিতে। যদি বিষাক্ত তিরের মতো ছুটে আসে বার্তাটি ‘ভব নাই, দুলি নাই!’

বছর সাত পরে এক পূর্ণিমায় ফের অযোধ্যা পাহাড়ে। সে বারে ভরা বসন্ত। ফাগুয়া লেগেছে পলাশ বনে। গর্গা পাহাড়ের শীর্ষে স্থির হয়ে আছে দোলের চাঁদ।

রাঙা গ্রামের মজলিশ ভেঙে পাহাড়ের অবরোহের মুখে টাঁড়পানিয়া গ্রাম ছেড়ে জঙ্গল শুরু হয়। পাতলা ঠান্ডা আছে বাতাসে। অনেক নীচে লহরিয়া ড্যাম দৃশ্যের আড়ালে গেল। ও পাশে কুঁদ্না গ্রাম। দূরে মাঠের মধ্যে দু-দুটো ন্যাড়া পুড়ছে। বাঁশ লতা শুকনো ডালের কাঠামো ঘিরে কমলা আগুন লাফিয়ে উঠছে। বাঁকে এসে জঙ্গলটা খানিক তফাত হলেও, শ্বাপদের ভয়ে গাড়ি থেকে নামতে সাহস হয় না।

গাড়ির চালকটি বলে, দেখেন দাদা, দুই আগুন দুই কিসিমের। বড় আগুনটায় পুড়ছে শুকনো ডাল-পাতা-লতা। কমজোরি আগুনে পুড়ছে মানুষের হাড়-মাস-চামড়া।

তার মানে!

সেই মাদলা গাঁয়ের মেয়েছেলেটা পুড়ছে যে। কাল রাতে মরে ছিল ঘরেতে। কেউ তো ছুঁবে না, নাচনি জাত যে। ঘাসি ঘরের ধানু বুড়াকে ধরা হল। সে এক পাঁইট চড়িয়ে পা-দুটাতে চিহড় দড়ি বাঁধা করে অই ডাঁহিটাতে টেনে লিঁয়ে বেশ করে তেল মেড়ে দিল, আর টায়ারে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিল।

মাদলা গ্রামে তো এক জনই নাচনি, দুলি মাছুয়ার। ওরই লাশ পুড়ছে টায়ারে! পাশে ছেলেদের ন্যাড়া পোড়ে। আকাশে পুড়ছে দোলের চাঁদ। একেবারে ত্র্যহস্পর্শ!

চালকটির গলায় স্বগতোক্তি শোনা যায় বুড়াটা আগেই মরেছিল, অখন বুড়িটাও গেল। কাল মরলে লগ্দা লগ্দি সগ্গ পেত মেয়েছেলেটা। কী দাদা, পেত না?

কেন, কাল কী?

কাল যে হোলি!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

anandabazar rabibasariya jagannath ghosh
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE