গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান গবেষণা পত্রিকা ‘সেল ডেথ ডিসকভারি’-র সাম্প্রতিক সংখ্যায়।
গবেষণাপত্রটি পিয়ার রিভিউ করেছেন বিশেষজ্ঞদেরই একাংশ। তবে অন্য বিশেষজ্ঞরা এ-ও জানিয়েছেন, এই ধরনের বহু গবেষণা হচ্ছে। কোনও একটি গবেষণার ফলাফল যা জানাচ্ছে, অনেক ক্ষেত্রেই অন্য গবেষণার ফলাফলে তার বিপরীত ছবি বেরিয়ে আসছে। অল্প সময়ে কাজ করতে গিয়ে করোনা নিয়ে গবেষণার মান অন্য গবেষণার মানের চেয়েও কিছুটা নেমে গিয়েছে। অনেক সময় পিয়ার রিভিউ হওয়া কোনও গবেষণাপত্র নিয়েও তাই বিতর্ক দানা বাঁধছে। এই গবেষণার ফলাফল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (‘হু’) বা আমেরিকার ‘সেন্টার্স ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি)’ অনুমোদন করেছে কি না তা এখনও জানা যায়নি।
গত দু’বছরের অতিমারি পর্বে বহু গবেষণায় দেখা গিয়েছে, শুয়োরের দেহে সার্স-কোভ-২ ভাইরাসের কোনও প্রজাতি (‘স্ট্রেন’) বা রূপ (‘ভেরিয়্যান্ট’)-ই সংক্রমণ ঘটাতে পারে না। শুয়োরের শরীরে ঢুকতে পারে, শুয়োরের দেহকোষে পৌঁছে নিজের স্পাইক প্রোটিন দিয়ে নোঙরও ফেলতে পারে করোনাভাইরাস। কিন্তু তার পর আর শুয়োরের কোষের ভিতরে ঢুকতে পারে না। ফলে, নিজেদের বংশবৃদ্ধিও ঘটাতে পারে না। তাই কোভিডে সংক্রমিত হয় না শুয়োররা। অন্য শুয়োর বা অন্যান্য প্রাণীকে কোভিডে সংক্রমিতও করে না।
কিন্তু করোনাভাইরাস কেন পারে না শুয়োরকে সংক্রমিত করতে, তার কারণ জানা যায়নি এত দিন। সেই কারণটিই জানাল আমেরিকার আইওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের এই গবেষণা।
বিশেষজ্ঞদের একাংশের কথায়, ‘‘এর ফলে, কোভিড চিকিৎসায় একেবারে নতুন একটি পথ খুলে যেতে পারে ভবিষ্যতে। যার ফলে, শুয়োরের মতোই আর কোভিডে সংক্রমিত হবে না মানুষ।’’
গবেষকরা দেখেছেন, করোনাভাইরাস পরিবারের অন্য সদস্যরা এর আগেও শুয়োরের দেহে ঢুকেছে। কিন্তু তাদের সংক্রমিত করতে পারেনি। কারণ, শুয়োরের দেহকোষ বহিরাগত করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রুখতে লড়াইটা অন্য ভাবে করেছে।
কোন ভাবে? তা বুঝতে একটি পরীক্ষা চালান গবেষকরা। গবেষণাগারে শুয়োর ও মানুষের শ্বাসনালীর কালচার করা কোষগুলির একেবারে বাইরের স্তরে (‘এপিথেলিয়াল সেল্স’) করোনাভাইরাস ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। গবেষকরা দেখতে চেয়েছিলেন, ভাইরাসকে রুখতে শুয়োর আর মানুষের শ্বাসনালীর কোষগুলি কী কী কাজ করে। কী ভাবে করে।
গবেষকরা দেখেছেন, সেই সময় যে কোষগুলির উপর এসে বসেছে বহিরাগত ভাইরাস, সেগুলিকে মেরে ফেলার প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যায় দেহকোষে। আদতে যা কোষগুলির আত্মহননের প্রক্রিয়া। যার নাম— ‘সেল্স ডেথ প্রসেস’। সেটা যেমন শুয়োরের দেহকোষে হয়, হয় মানুষের দেহকোষেও। তবে একই ভাবে হয় না। একই হারেও হয় না। দেখা গিয়েছে, শুয়োরের শ্বাসনালীর বাইরের স্তরের কোষগুলিতে তখন একটি প্রক্রিয়া শুরু হয় যার নাম— ‘অ্যাপোপ্টোসিস’। কোষ মেরে ফেলার প্রক্রিয়া। কোষগুলির আত্মহননের প্রক্রিয়া। কিন্তু খুব নিয়ন্ত্রিত ভাবে। বেছে বেছে। ঠগ বাছতে গা উজাড় করে ফেলে না শুয়োরের শ্বাসনালীর বাইরের স্তরের কোষগুলি। উপদ্রুত কোষগুলিতে মারতে গিয়ে আশপাশের সুস্থ, সবল কোষগুলিরও মৃত্যুঘণ্টা বাজিয়ে দেয় না। উপদ্রুত কোষগুলিকে বেছে নিয়ে মেরে ফেলার প্রক্রিয়াটা যতটা নিয়ন্ত্রিত ভাবে হয় শুয়োরের দেহে, মানুষের শ্বাসনালীর কোষগুলির বাইরের স্তরে কাজটা সেই ভাবে হয় না।