ধুলোময়। মহম্মদবাজারের পাঁচামিতে ক্রাশারে চলছে পাথর ভাঙার কাজ। —ফাইল চিত্র
বীরভূম এবং লাগোয়া ঝাড়খণ্ডের পাকুড় জেলায় অবৈধ পাথর খাদান ও ক্রাশার বন্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তা জানতে দুই রাজ্যের মুখ্য সচিবের কাছে রিপোর্ট চাইল জাতীয় পরিবেশ আদালতের পূর্বাঞ্চল বেঞ্চ।
বৃহস্পতিবার আইনজীবী জয়দীপ মুখোপাধ্যায়ের দায়ের করা একটি পিটিশনের শুনানিতে বিচারপতি প্রতাপকুমার রায় এবং পি সি মিশ্রের বেঞ্চ এই নির্দেশ দিয়েছে। জয়দীপবাবু বলেন, ‘‘দুই রাজ্যের মুখ্য সচিব, দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ এবং ওই দুই জেলার জেলাশাসককে নোটিস করেছে আদালত। আগামী এক মাসের মধ্যে তাঁদের ওই রিপোর্ট জমা করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’’ তিনি আরও জানান, দুই জেলায় ঠিক কতগুলি বৈধ ও অবৈধ খাদান-ক্রাশার রয়েছে, ওই সব পাথ ব্যবসায়ীদের প্রয়োজনীয় ট্রেড লাইসেন্স, দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের ছাড়পত্র রয়েছে কি না এবং খাদান-ক্রাশার ব্যবসা চালানোর জন্য যে সব সরকারি নির্দেশিকা রয়েছে, তা মানা হচ্ছে কি না, সে সব সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য ওই রিপোর্টে জানাতে বলেছে পরিবেশ আদালত। পাশাপাশি পাথর শিল্পাঞ্চলের শ্রমিকদের মধ্যে শ্বাসকষ্টজনিত রোগ (সিলিকোসিস প্রভৃতি) আটকাতে সরকার কী কী পদক্ষেপ করেছে, পরিবেশ বেঞ্চ তা-ও জানতে চেয়েছে। এ দিন আদালতে রাজ্য সরকার বা পর্ষদের তরফে কোনও আইনজীবী ছিলেন না বলে জয়দীপবাবুর দাবি।
দুই রাজ্যের পাথর শিল্পাঞ্চলগুলিতে পরিবেশ দূষণ নিয়ে অভিযোগ দীর্ঘ দিনের। জয়দীপবাবুর দাবি, দু’টি রাজ্যেই প্রশাসনের নাকের ডগাতেই দীর্ঘ দিন ধরে অজস্র বেআইনি খাদান তৈরি হয়েছে। প্রয়োজনীয় নির্দেশিকার তোয়াক্কা না করেই ওই সব এলাকায় রমরমিয়ে ক্রাশার ব্যবসা চলছে। ওই আইনজীবীর অভিযোগ, ‘‘বহু ক্ষেত্রে বেআইনি ভাবে আদিবাসীদের জমি হস্তান্তর করে ওই ব্যবসা চলছে। কোনও ধরনের সরকারি বিধি নিষেধের তোয়াক্কা না করায় সংশ্লিষ্ট এলাকাগুলির প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। সিলিকোসিসের মতো শ্বাসকষ্টজনিত নানা রোগও দেখা দিচ্ছে।’’ এ ছাড়াও ওভারলোডেড ট্রাক-লরির বেপরোয়া যাতায়াতে শিল্পাঞ্চলগুলির রাস্তাঘাটের হালও বেহাল হয়েছে।
আইনজীবী জানান, পাথর শিল্পাঞ্চলে দূষণ সংক্রান্ত মামলায় ২০১০ সালে রাজস্থান এবং ২০১৩ সালে মহারাষ্ট্র হাইকোর্টে তার রায়ে বেশ কিছু বিধি নিষেধ আরোপ করেছিল। খাদান ও ক্রাশার ব্যবসা চালাবার জন্য কতগুলি নির্দিষ্ট নির্দেশিকাও তৈরি করে দেওয়া হয়েছিল। জয়দীপবাবু এ দিন আদালতের কাছে অভিযোগ করেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গ ও ঝাড়খণ্ডের ক্ষেত্রে তার কোনওটাই মানা হচ্ছে না। এ ব্যাপারে স্থানীয় মানুষ দীর্ঘ দিন ধরে আন্দোলন করে আসলেও সরকারের তরফে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।’’
বাম আমলে পাথর শিল্পাঞ্চলের দূষণ রোধে অবৈধ খাদান ও ক্রাশার বন্ধের দাবিতে বীরভূম জেলা আদিবাসী গাঁওতা নামে একটি স্থানীয় সংগঠনের আন্দোলনের জেরে বহু দিন ধরে অশান্ত হয়েছিল পাঁচামি শিল্পাঞ্চল। সমস্যা মেটাতে ছুটে আসতে হয়েছিল খোদ তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকেও। সে সময় প্রয়োজনীয় আশ্বাস মেলার পরেও ছবিটা একটুও বদলায়নি বলে গাঁওতার অভিযোগ। এ দিন পরিবেশ আদালতের নির্দেশকে স্বাগত জানিয়ে সংগঠনের নেতা রবিন সোরেন দাবি করেন, ‘‘বীরভূমের অধিকাংশ খাদান ও ক্রাশারই অবৈধ। গুটি কয়েকেরই প্রয়োজনীয় ছাড়পত্র রয়েছে। ওরা কোনও নিয়ম-নীতিরই তোয়াক্কা করে না। চরম দূষিত পরিবেশেই এলাকার আদিবাসীদের জীবনযাপন করতে হচ্ছে।’’ তাঁর অভিযোগ, এর আগে জেলায় ঠিক কতগুলি অবৈধ খাদান-ক্রাশার রয়েছে জানতে চেয়ে তাঁরা একটি আরটিআই করেছিলেন। কিন্তু, ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতর তার জবাব দেয়নি।
এ দিন যোগাযোগ করা হলেও ফোন ধরেননি বীরভূমের জেলাশাসক পি মোহন গাঁধী। ফোন ছিল জেলা ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিক নীলকমল বিশ্বাসের। অন্য দিকে, ফোন করা হলেও পরিবেশ আদালতের নির্দেশের প্রসঙ্গে প্রতিক্রিয়া মেলেনি পাঁচামি ক্রাশার ও মাইন্স ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক নাজের হোসেন মল্লিকেরও। আগামী ২০ অগস্ট মামলার পরবর্তী শুনানি হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy