সেই প্রায় বিরলতম চন্দ্রগ্রহণ শুক্রবার। পূর্ণিমার দিনে। খণ্ডগ্রাস চন্দ্রগ্রহণ। দেখা যাবে টানা তিন ঘণ্টা ২৮ মিনিট ২৩ সেকেন্ড।
যখন পুরোপুরি খণ্ডগ্রাস, তখন চাঁদের রং হবে প্রায় রক্তের মতো লাল। তাই তার নাম ‘ব্লাড মুন’ বা ‘বিভার মুন’ও। এই শতাব্দীতে আর এতটা সময় ধরে খণ্ডগ্রাসের ব্লাড মুন দেখা সম্ভব হবে না। এতটা সময় ধরে খণ্ডগ্রাসের ব্লাড মুন দেখা যায়নি গত ছয় শতাব্দীতেও।
এটাই এ বছরের দ্বিতীয় ও সর্বশেষ চন্দ্রগ্রহণ। প্রথমটি হয়েছিল গত ২৬ মে। এ বছরে সূর্যগ্রহণও হওয়ার কথা দু’টি। একটি হয়ে গিয়েছে গত জানুয়ারিতে। দ্বিতীয়টি হবে ডিসেম্বরের গোড়ায়।
৫৮০ বছরে দীর্ঘতম খণ্ডগ্রাসে ব্লাড মুন
আমেরিকার ইন্ডিয়ানায় বাটলার বিশ্ববিদ্যালয়ের হলকোম্ব অবজারভেটরি ও নাসা জানিয়েছে, ৫৮০ বছরের মধ্যে দীর্ঘতম খণ্ডগ্রাস চন্দ্রগ্রহণটি শুক্রবার দেখা যাবে চিন, জাপান, উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়া, তাইওয়ান, হংকং, মঙ্গোলিয়া, ম্যাকাও-সহ গোটা পূর্ব এশিয়ায়। অস্ট্রেলিয়া, উত্তর ইউরোপে। উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকায়। প্রশান্ত মহাসাগর ও লাগোয়া দেশগুলিতেও। খণ্ডগ্রাস চূড়ান্ত মুহূর্তে পৌঁছবে ভারতীয় সময় শুক্রবার দুপুর ২টো ৩২ মিনিটে। এই শতাব্দীতে এতটা বা এর চেয়ে বেশি সময় ধরে খণ্ডগ্রাস চন্দ্রগ্রহণ আর হবে না। তবে ভারত থেকে এই গ্রহণ দেখা যাবে না। খুবই সামান্য সময়ের জন্য দেখা যাবে অসম ও অরুণাচল প্রদেশের উত্তর-পূর্বে, বিকেল ৪টে ১৭ মিনিট নাগাদ। যে সময়ে ওই এলাকায় সূর্য ডুবে গিয়ে চাঁদ ওঠে আকাশে, তার সামান্য কিছু সময় আগেই শেষ হয়ে যাবে চাঁদের খণ্ডগ্রাস, জানিয়েছেন সল্টলেকের পজিশনাল অ্যাস্ট্রোনমি সেন্টারের অধিকর্তা সঞ্জীব সেন।
যেন পূর্ণগ্রাস চন্দ্রগ্রহণ!
পূর্ণিমার চাঁদের আকারের চেয়ে কিছুটা ছোট হবে শুক্রবারের চাঁদ। পৃথিবীর ছায়ায় সেই চাঁদের ৯৭.৪ শতাংশই ঢাকা পড়ে যাবে। ফলে, আক্ষরিক অর্থে খণ্ডগ্রাস হলেও শুক্রবারের চন্দ্রগ্রহণ অনেকটা যেন পূর্ণগ্রাসই।
শুক্রবারের পূর্ণিমার চাঁদের রং অবশ্য পুরোপুরি লাল হবে না। পৃথিবীর ছায়া ঢাকতে পারবে না বলে চাঁদের মাত্র ৩ শতাংশ আলোকিত হবে সূর্যালোকে।
প্রদক্ষিণের পথে পূর্ণিমার চাঁদ পৃথিবীর ছায়ার মধ্যে পুরোপুরি ঢুকে গেলেই হয় পূর্ণগ্রাস চন্দ্রগ্রহণ।
কেন প্রতি অমাবস্যা, পূর্ণিমায় হয় না গ্রহণ?
প্রতি মাসেই অমাবস্যার চাঁদ পৃথিবী আর সূর্যের মধ্যে থাকে। ফলে, চাঁদের এক পিঠে যখন সূর্যের আলো পড়ে তখন পৃথিবীর দিকে থাকা চাঁদের অন্য পিঠে সেই আলো পৌঁছয় না। তাই পৃথিবী থেকে দেখা যায় না অমাবস্যার চাঁদ। প্রদক্ষিণ করে সেই চাঁদ পৃথিবীর অন্য দিকে গেলে তা পূর্ণিমার চাঁদ হয়ে ওঠে। পৃথিবীর সেই দিকে তখন সূর্যের আলো পৌঁছয় না।
চাঁদ সূর্যকে পুরোপুরি ঢেকে দিতে পারলে হয় পূর্ণগ্রাস সূর্যগ্রহণ। না পারলে হয় আংশিক সূর্যগ্রহণ বা সূর্যের বলয়গ্রাস। কিন্তু চাঁদ তার কক্ষপথে একটু ঝুঁকে থাকে বলে অমাবস্যার চাঁদ সব সময়েই সূর্যের মুখ পুরোপুরি বা আংশিক ভাবে ঢেকে দিতে পারে না। তাই অমাবস্যায় সাধারণত আমরা চাঁদ দেখতে পাই না।
কিন্তু পূর্ণগ্রাস, আংশিক সূর্যগ্রহণ বা সূর্যের বলয়গ্রাস ফিমাসে দেখা যায় না। বছরে সূর্যগ্রহণ হয় বড়জোর দুই থেকে তিনটি। সর্বাধিক হতে পারে পাঁচটি। যেমন তা শেষবার হয়েছিল ১৯৩৫ সালে। আবার হবে ২২০৬-এ। একটি শতাব্দীতে গড়ে সূর্যগ্রহণ হয় ৬৬টি।
কক্ষপথে চাঁদ কিছুটা হেলে থাকায় প্রতি পূর্ণিমায় দেখা যায় না চন্দ্রগ্রহণও। পূর্ণগ্রাস, আংশিক— কোনওটাই নয়। অমাবস্যা থেকে পূর্ণিমায় পৌঁছতে পৃথিবীকে এক বার প্রদক্ষিণ করতে চাঁদের সাড়ে ২৯ দিন সময় লাগলেও তাই বছরে সাধারণত গড়ে দু’টি বা তিনটি চন্দ্রগ্রহণ হয়। কোনও বছরে একটিও হয় না।