Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
Hubble Space Telescope

Oldest Star Of Universe Discovered: ব্রহ্মাণ্ডে ভোরের আলো ফোটার সময়ের তারার খোঁজ মিলল প্রথম, ইতিহাস গড়ল হাব্‌ল

হাব্‌ল-এর এই অভূতপূর্ব আবিষ্কারের গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান গবেষণা পত্রিকা ‘নেচার’-এ। বুধবার।

ব্রহ্মাণ্ডের প্রাচীনতম তারার (লাল রং) হদিশ দিল হাব্‌ল। তিনটি আকারে তোলা সেই তারার ছবি- নাসার সৌজন্যে।

ব্রহ্মাণ্ডের প্রাচীনতম তারার (লাল রং) হদিশ দিল হাব্‌ল। তিনটি আকারে তোলা সেই তারার ছবি- নাসার সৌজন্যে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ৩১ মার্চ ২০২২ ১২:৩২
Share: Save:

আরও শক্তিশালী, আরও বেশি আধুনিক ‘অস্ত্রে’ সজ্জিত ‘প্রতিদ্বন্দ্বী’ জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ নেমে পড়েছে মহাকাশে।

এই সময় খেলা না দেখালে চলে! ঠিক সময়েই সেই কেরামতি করে দেখাল মহাকাশে নাসার তিন দশকেরও বেশি সময়ের পুরনো হাব্‌ল স্পেস টেলিস্কোপ।

হাব্‌ল-এর চোখে ধরা পড়ল প্রায় ১৪০০ কোটি বছর আগে বিগ ব্যাং বা মহা বিস্ফোরণের পর প্রথম যে তারাগুলির জন্ম হয়েছিল তাদেরই একটি। ‘ইয়ারেন্ডেল’। অ্যাঙ্গলো স্যাক্সন ভাষায় যার অর্থ, ভোরের তারা।

জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, এই তারার জন্ম হয়েছিল বিগ ব্যাং-এর পর ঘন জমাট অন্ধকার ফুঁড়ে ব্রহ্মাণ্ডে যখন সবে ভোরের আলো (‘কসমিক ডন’) ফুটছে।

ব্রহ্মাণ্ড সৃষ্টির পর থেকে সভ্যতা এখনও পর্যন্ত যে তারা বা নক্ষত্রগুলির হদিশ পেয়েছে তাদের মধ্যে সবচেয়ে প্রাচীন আর এই সৌরমণ্ডল থেকে সবচেয়ে দূরে রয়েছে এই ‘ইয়ারেন্ডেল’-ই।

তখন ব্রহ্মাণ্ডে সবে ভোরের আলো ফুটছে

জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, এই নক্ষত্রটির জন্ম হয়েছিল বিগ ব্যাং-এর পরের ৯০ কোটি বছরের মধ্যেই। জন্মের পর থেকে এই ব্রহ্মাণ্ড উত্তরোত্তর বেশি গতিতে চারপাশে ফুলেফেঁপে উঠছে বলে এই সদ্য আবিষ্কৃত নক্ষত্রটি এখন সৌরমণ্ডল থেকে রয়েছে ২ হাজার ৮০০ কোটি আলোকবর্ষ দূরে।

হাব্‌ল-এর এই অভূতপূর্ব আবিষ্কারের গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান গবেষণা পত্রিকা ‘নেচার’-এ। বুধবার।

চার বছর আগের রেকর্ড ভাঙল হাব্‌ল

আমেরিকার জন্স হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয় ও বাল্টিমোরের স্পেস টেলিস্কোপ সায়েন্স ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানী, গবেষকরা জানিয়েছেন, এই তারাটি এত দূরে রয়েছে যে তার আলো পৃথিবীতে পৌঁছতে সময় লেগেছে ১২৯০ কোটি বছর। ব্রহ্মাণ্ডের এই প্রাচীনতম নক্ষত্র আবিষ্কারের সঙ্গে সঙ্গে মহাকাশে হাব্‌ল টেলিস্কোপ চার বছর আগে গড়া তার পুরনো রেকর্ডও ভেঙে দিয়েছে বলে জানিয়েছেন গবেষকরা। ২০১৮ সালে হাব্‌ল টেলিস্কোপ ব্রহ্মাণ্ডের যে প্রাচীনতম নক্ষত্রের হদিশ দিয়েছিল তার জন্ম হয়েছিল বিগ ব্যাং-এর ৪০০ কোটি বছর পর। যখন এই ব্রহ্মাণ্ডের বয়স ছিল এখনকার বয়সের এক-তৃতীয়াংশেরও কম। আর সদ্য আবিষ্কৃত নক্ষত্র ইয়ারেন্ডেল-এর জন্ম হয়েছিল তার বহু বহু আগে। বিগ ব্যাং-এর পরের ৯০ কোটি বছরের মধ্যেই। যখন এই ব্রহ্মাণ্ডের বয়স ছিল এখনকার বয়সের মাত্র সাত শতাংশ।

এই নক্ষত্র কি অন্য ‘ধাতু’তে গড়া?

মূল গবেষক জন্স হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যোতির্বিজ্ঞানের অধ্যাপক ব্রায়ান ওয়েল্‌চ বলেছেন, ‘‘ব্রহ্মাণ্ডে ভোরের আলো ফোটার সময়ের একা কোনও নক্ষত্রের হদিশ এর আগে মেলেনি। ওই সময় ছায়াপথের হদিশ কিছু মিলেছে যদিও। তবে সেগুলির খুব আবছা আলো পাওয়া গিয়েছে এর আগে। যে আলো থেকে একক ভাবে কোনও তারাকে দেখা এর আগে কোনও টেলিস্কোপের পক্ষেই সম্ভব হয়নি। কারণ সেখানে লক্ষ কোটি তারার আলো মিলেমিশে থাকে। এগুলি একেবারে প্রথম প্রজন্মের তারা বা নক্ষত্র। এরা যে সব পদার্থ দিয়ে গঠিত হয়েছিল আমাদের সূর্যের মতো দ্বিতীয় বা তৃতীয় প্রজন্মের তারাগুলি সেই সব পদার্থ দিয়ে গড়া নয়। তাই এই আবিষ্কার সেই প্রথম প্রজন্মের তারারা কী কী পদার্থ দিয়ে গড়ে উঠেছিল সেই ইতিহাসও তুলে ধরবে আমাদের কাছে। তারাটিকে নিয়ে আরও অনুসন্ধানের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সদ্য মহাকাশে পাঠানো আরও শক্তিশালী জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপকে।’’

ভিডিয়ো সৌজন্যে- নাসা।

৫০টি সূর্য পুরে দেওয়া যায় ইয়ারেন্ডেলে!

প্রাথমিক তথ্যাদি থেকে গবেষকদের অনুমান, ব্রহ্মাণ্ডের এই প্রাচীনতম নক্ষত্রটি ৫০টি সূর্যের ভরের সমান। ব্রহ্মাণ্ডের সবচেয়ে ভারী নক্ষত্রগুলির চেয়েও কোটি গুণ উজ্জ্বল। এই নক্ষত্রটির হদিশ মিলেছে যে ছায়াপথের ঝাঁকে তার নাম— ‘ডব্লিউএইচএলও১৩৭-০৮’।

কী ভাবে ধরা পড়ল প্রাচীনতম তারা

মহাকাশ সব সময়েই চতুর্মাত্রিক। দৈর্ঘ্য, প্রস্থ, উচ্চতা নিয়ে তার স্থান (স্পেস)। সঙ্গে রয়েছে সময় (টাইম)। স্পেস-টাইম তার চতুর্মাত্রিক। এই চতুর্মাত্রিক ব্রহ্মাণ্ডে কোনও মহাজাগতিক বস্তুর টান থাকে আর একটি মহাজাগতিক বস্তুর উপর। একেই বলা হয় ‘গ্র্যাভিটেশনাল ফোর্স’ বা অভিকর্ষ বল। সেই বল আলোর পথও বাঁকিয়েচুরিয়ে দেয়।

ব্রহ্মাণ্ডে খুব দূরে থাকা বস্তু মহাকাশে থাকা বিভিন্ন টেলিস্কোপের চোখে ধরা পড়ে ওই অভিকর্ষ বল আর তার জেরে আলোর পথ বেঁকেচুরে যাওয়ার ফলেই। তার ফলে, অমেক দূরের আলোও আমাদের চোখে ধরা দেয়। সামনে কোনও মহাজাগতিক বস্তু এসে পড়ে কাজ করে অনেকটা আতশকাচের মতো। দূরের আলোকে টেনে নিয়ে আসে কাছে। তাকে উজ্জ্বল থেকে উজ্জ্বলতর করে তোলে। খুব দূরে থাকা বস্তুরও আকার বাড়িয়ে দেয় বহু গুণ। জ্যোতির্বিজ্ঞানের পরিভাষায় যাকে বলে, ‘গ্র্যাভিটেশনাল লেন্সিং’। এই ভাবেই হাব্‌লের চোখে ধরা দিল ইয়ারেন্ডেল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Hubble Space Telescope star
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE