Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

গ্রহণের চাঁদে গহ্বর খুঁজবে বাংলার চোখ

কাল, বুধবার পূর্ণগ্রাস চন্দ্রগ্রহণ। সেই গ্রহণের সময়েই পশ্চিম মেদিনীপুরের সীতাপুর থেকে টেলিস্কোপ দিয়ে চাঁদের গহ্বর খুঁজবেন ‘ইন্ডিয়ান সেন্টার ফর স্পেস ফিজিক্স’-এর গবেষকেরা।

যন্ত্রচোখ: এই টেলিস্কোপেই চাঁদের গহ্বরের ছবি ধরবেন বিজ্ঞানীরা। নিজস্ব চিত্র।

যন্ত্রচোখ: এই টেলিস্কোপেই চাঁদের গহ্বরের ছবি ধরবেন বিজ্ঞানীরা। নিজস্ব চিত্র।

কুন্তক চট্টোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ৩০ জানুয়ারি ২০১৮ ০৩:২১
Share: Save:

বঙ্গসন্তানের আফ্রিকা অভিযান মানেই বিভূতিভূষণের ‘চাঁদের পাহাড়’। তবে এ বার বাংলার মাটিতে বসেই চাঁদের গহ্বরে চোখ রাখতে চলেছেন এক দল বাঙালি বিজ্ঞানী। কাল, বুধবার পূর্ণগ্রাস চন্দ্রগ্রহণ। সেই গ্রহণের সময়েই পশ্চিম মেদিনীপুরের সীতাপুর থেকে টেলিস্কোপ দিয়ে চাঁদের গহ্বর খুঁজবেন ‘ইন্ডিয়ান সেন্টার ফর স্পেস ফিজিক্স’-এর গবেষকেরা।

ওই সংস্থার অধিকর্তা এবং কলকাতার এস এন বোস সেন্টার ফর বেসিক সায়েন্সেসের অ্যাস্ট্রোফিজিক্স বা জ্যোতিঃপদার্থবিদ্যার অধ্যাপক সন্দীপকুমার চক্রবর্তী জানান, চন্দ্রপৃষ্ঠে উল্কা বা গ্রহাণু আছড়ে পড়ে গহ্বর তৈরি করে। বহু গ্রহাণু এখনও মাঝেমধ্যে গহ্বর তৈরি করে চলেছে। সেই নতুন গহ্বরেরই খোঁজখবর করা হচ্ছে। মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ‘নাসা’ আগে এমন গবেষণা করলেও ভারতে এই প্রথম চাঁদের গহ্বর সন্ধান চলছে বলে জানান সন্দীপবাবু।

কেন্দ্রীয় সরকারি সংস্থা ‘পজিশন্যাল অ্যাস্ট্রোনমি সেন্টার’-এর অধিকর্তা সঞ্জীব সেন জানান, বুধবার কলকাতায় চন্দ্রোদয় হবে বিকেল ৫টা ১৭ মিনিটে। ৫টা ১৮ মিনিটে আংশিক চন্দ্রগ্রহণ শুরু হবে। পূর্ণগ্রাস শুরু হবে সন্ধ্যা ৬টা ২১ মিনিটে। পূর্ণগ্রাস শেষ হবে সন্ধ্যা ৭টা ৩৮ মিনিটে। রাত ৮টা ৪২ পর্যন্ত আংশিক গ্রহণ চলবে। ওই সময়ের পরেই পুরোপুরি মুক্তি পাবে চাঁদ। পশ্চিমবঙ্গ এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বাসিন্দারা গ্রহণের শুরু থেকে শেষ পুরোটাই দেখতে পাবেন। ভারতের পশ্চিম উপকূলের বাসিন্দারা পূর্ণগ্রাসের শুরুটা দেখতে পাবেন না।

আরও পড়ুন: স্বাস্থ্য ফিরছে ওজোন স্তরের

শুধু পূর্ণগ্রাস চন্দ্রগ্রহণ নয়, কাল, মাঘী পূর্ণিমার আরও বিশেষত্ব আছে। প্রথমত, চাঁদ ওই দিন পৃথিবীর সব থেকে কাছাকাছি আসবে অর্থাৎ ‘অনুভূ’ অবস্থানে থাকবে। যাকে বলা হয় ‘সুপারমুন’। দ্বিতীয়ত, এটা জানুয়ারির দ্বিতীয় পূর্ণিমা বা পূর্ণিমা-২! চলতি কথায় একে ‘ব্লু মুন’ বলা হলেও চাঁদ মোটেই নীলচে হবে না। তবে সব মিলিয়ে এটা বিজ্ঞানীদের কাছেও আকর্ষক এবং বিরল ঘটনা।

কিন্তু এত জায়গা থাকতে চাঁদে চোখ রাখতে সীতাপুরকে কেন বেছে নিলেন গবেষকেরা?

তাঁরা জানাচ্ছেন, পাঁশকুড়া ও ঘাটালের মাঝামাঝি সীতাপুরে ওই সংস্থার ভিন্‌গ্রহ নিয়ে গবেষণা চালানোর কেন্দ্র রয়েছে। সেখানে আছে উন্নত মানের টেলিস্কোপ। তার সাহায্যেই পূর্ণগ্রাস চলাকালীন ১০ সেকেন্ড অন্তর চাঁদের মাটির ছবি তোলা হবে। তাতেই ধরা পড়বে বিভিন্ন গহ্বর। কিন্তু চাঁদে এমন গহ্বর তৈরি হচ্ছে কেন?

‘ইন্ডিয়ান সেন্টার ফর স্পেস ফিজিক্স’-এর গবেষকদের ব্যাখ্যা, সৌরজগতের গঠন পর্বে প্রচুর গ্রহাণু ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ছিল। পরবর্তী কালে তাদের বেশির ভাগকেই নিজেদের দিকে টেনে নেয় বৃহস্পতি ও শনি। বাকিরা এখনও ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে। সেগুলি মাঝেমধ্যেই চাঁদের টানে সেখানে গিয়ে আছড়ে পড়ে। সন্দীপবাবু বলছেন, পৃথিবীর দিকে উল্কা ছুটে এলে বায়ুমণ্ডলে ঢোকার পরেই তা দ্রুত জ্বলে শেষ হয়ে যায়। কিন্তু চাঁদে বায়ুমণ্ডল না-থাকায় তুলনায় ছোট মাপের উল্কা বা গ্রহাণুও প্রবল গতিতে ছুটে গিয়ে আছ়়ড়ে প়ড়ে এবং প্রবল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে তৈরি করে নানা মাপের গহ্বর।

ওই সংস্থার অধিকর্তা বলছেন, ‘‘কপাল ভাল থাকলে সদ্যোজাত গহ্বর দেখা যাবে। এমনকী গহ্বর তৈরির বিভিন্ন পর্বও চাক্ষুষ করা সম্ভব হতে পারে। সে-ক্ষেত্রে নতুন চান্দ্র গহ্বরকে কোনও বাঙালি বিজ্ঞানীর নামে চিহ্নিত করা হতে পারে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE