এই সেই বিরলদর্শন মহাজাগতিক বস্তু। ছবি- আমেরিকান অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল সোসাইটির সৌজন্যে।
সুকুমার রায়ের কল্পনার ‘হাঁসজারু’ বা ‘বকচ্ছপ’-কে এ বার দেখা গেল মহাকাশে! দেখা গেল একই অঙ্গে দুই রূপের বিরল একটি মহাজাগতিক বস্তুকে।
যে মহাজাগতিক বস্তুটি একটি গ্রহাণু (‘অ্যাস্টারয়েড’)। আবার একটি ধূমকেতু (‘কামেট’)-ও বটে।
সৌরমণ্ডলের যে মুলুকে পাথুরে বস্তু ছাড়া বরফের মতো আর কিছু থাকা সম্ভব নয়, মঙ্গল ও বৃহস্পতির মাঝে থাকা সেই গ্রহাণুপুঞ্জ (‘অ্যাস্টারয়েড বেল্ট’)-এই সেই বিরলদর্শন মহাজাগতিক বস্তুটির হদিশ মিলল এই প্রথম।
যা নিয়ে ইতিমধ্যেই আলোড়িত বিশ্বের জ্যোতির্বিজ্ঞানী মহল। আবিষ্কারের গবেষণাপত্রটি পড়া হয়েছে সোমবার ‘আমেরিকান অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল সোসাইটি (এএএস)’-র ‘ডিভিশন ফর প্ল্যানেটারি সায়েন্সেস’-এর ৫৩ তম বার্ষিক বৈঠকে। প্রকাশের জন্য গবেষণাপত্রটি গৃহীত হয়েছে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান গবেষণা পত্রিকা ‘অ্যাস্ট্রোফিজিক্যাল জার্নাল লেটার্স’-এ।
জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা এই বিরলদর্শন মহাজাগতিক বস্তুটির নাম দিয়েছেন- ‘(248370) 2005 QN173’। বিজ্ঞানীরা দেখেছেন সূর্যের তাপে মূলত এই পাথুরে বস্তুটিকে আপাদমস্তক ঢেকে রাখা বরফ গলতে শুরু করেছে। আর সূর্যের জোরালো অভিকর্ষ বলের টানে সেই গলে যাওয়া বরফ বস্তুটি থেকে বেরিয়ে এসে মহাকাশে ছড়িয়ে পড়ছে। তার ফলে মহাকাশের এই বিরল ‘বকচ্ছপ’ মহাজাগতিক বস্তুটির একটি লম্বা লেজ (কামেট্স টেল)-ও গজিয়েছে। ধূমকেতুর মতো। এমনকি, ধূমকেতুর মাথার মতো বরফে মোড়া তার একটি মাথাও (কোমা) তৈরি হয়েছে সূর্যের তাপে আর অভিকর্ষ বলের টানে।
এ বছরের জুলাইয়ে সূর্যের সবচেয়ে কাছে আসার সময়েই এই বিরলদর্শন মহাজাগতিক বস্তুটি নজরে আসে জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের। এটি প্রথম ধরা পড়ে ‘অ্যাটলাস’ টেলিস্কোপে। গত ৭ জুলাই। পরে লাওয়েল ডিসকভারি টেলিস্কোপেও তার হদিশ মেলে। তখনই এর অস্তিত্ব সম্পর্কে নিশ্চিত হন জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা।
জুলাইয়ে বিজ্ঞানীরা যে মাপজোক করেছিলেন সেই হিসাবে এই মহাজাগতিক বস্তুটির লেজটি সাত লক্ষ ২০ হাজার কিলোমিটার (বা চার লক্ষ ৫০ হাজার মাইল) লম্বা। তবে চওড়ায় মাত্র এক হাজার ৪০০ কিলোমিটার (৯০০ মাইল)। চওড়ায় লেজটি কেন তেমন বড় কিছু নয়, তা এখনও বুঝে উঠতে পারেননি বিজ্ঞানীরা।
তবে কোনও ধূমকেতুর শরীর থেকে যে গতিতে বরফকণা বেরিয়ে এসে তার বিশাল লম্বা লেজ তৈরি করে, এই মহাজাগতিক বস্তুটির ক্ষেত্রে সেই বরফ-কণা বেরিয়ে আসার গতি অনেকটাই কম। কারণ এখনও বুঝে উঠতে পারেননি বিজ্ঞানীরা। ২০২৬ সালের ৩ সেপ্টেম্বর আবার এটি আসবে পৃথিবীর সবচেয়ে কাছে। এই সময়ের মধ্যেই বিরলদর্শন মহাজাগতিক বস্তুটির উপর কড়া নজর রেখে তাকে চিনে-বুঝে ফেলার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে জ্যোতির্বিজ্ঞানী মহল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy