Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

ভাবনা বদলেছে পৃথিবী, বদল তরুণ প্রজন্মেরও

বন্ধুদের পথ চলার ভাবনা বদলে দিয়েছে পৃথিবী। বন্ধুদের তামাম জীবনও! সেই পথে হেঁটেই বিখ্যাত হতে চাইছে উনিশ বছরের কাইজার আলি-তেরো বছরের চয়ন দত্তেরা। ২০০৪ সাল, হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্ক জুকেরবার্গ ও তাঁর চার বন্ধু মিলে তৈরি করছেন এক সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইট। নাম দিলেন, ফেসবুক।

কুন্তক চট্টোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ মে ২০১৪ ০১:২৩
Share: Save:

বন্ধুদের পথ চলার ভাবনা বদলে দিয়েছে পৃথিবী। বন্ধুদের তামাম জীবনও! সেই পথে হেঁটেই বিখ্যাত হতে চাইছে উনিশ বছরের কাইজার আলি-তেরো বছরের চয়ন দত্তেরা।

২০০৪ সাল, হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্ক জুকেরবার্গ ও তাঁর চার বন্ধু মিলে তৈরি করছেন এক সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইট। নাম দিলেন, ফেসবুক। তারও আগে ১৯৯৮ সালে ল্যারি পেজ-সের্গেই বিন নামে স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই গবেষক-ছাত্র তৈরি করেছিলেন এক সার্চ ইঞ্জিন, গুগল।

জন্মের ষোলো বছর পরে গুগল আর ইন্টারনেট আজ সমার্থক। এক দশকে হার্ভার্ডের ডর্মিটরি ছাড়িয়ে ফেসবুকে জুড়ে গিয়েছে হলদিয়া থেকে হনলুলু। স্ট্যানফোর্ড-হার্ভার্ডের পড়ুয়া জীবনের স্বপ্নের ডানায় ভর করে বিশ্বের নবীন প্রজন্মের কাছে ল্যারি পেজ-জুকেরবার্গরাও আজ ‘রোল-মডেল’। রোল মডেলদের এই ভাবনাই স্বপ্ন দেখতে শিখিয়েছে বাগুইআটি-হাতিয়াড়ার চয়ন দত্তকে। সপ্তম শ্রেণির এই ছাত্র চলতি বছরের গোড়াতেই একটি সোশ্যাল নেটওয়ার্ক সাইট তৈরি করেছে। বন্ধুদের মধ্যে এ নিয়ে প্রচারও চালাচ্ছে। “ফেসবুক দেখে মনে হয়েছিল, আমি-ও যদি এমন একটা সাইট তৈরি করতে পারি!”বলছে চয়ন। বছর তেরোর কিশোরের কাছে অবশ্য এটা খুব সোজা ছিল না। চয়নের দাবি, একটি সংস্থা থেকে ওয়েবপেজ তৈরি করার প্রশিক্ষণ নিয়েছে সে। তার পর ইন্টারনেট থেকে বই ডাউনলোড করে প্রোগ্রামিং শিখেছে।

বছর উনিশের লখনউয়ের কাইজারও জুকেরবার্গ-মডেলের ভক্ত। ইচ্ছে ছিল আইআইটি-তে পড়বেন। কিন্তু দু’বার চেষ্টা করেও সফল হননি লখনউয়ের এই তরুণ। তবে আঠারো বছর বয়সেই খুলে ফেলেছিলেন একটি সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইট। ইতিমধ্যে যথেষ্ট জনপ্রিয় হয়েছে সেটি। ভবিষ্যতে জুকেরবার্গের মতো কোটিপতি ব্যবসায়ী হতে চান কাইজার। মাস কয়েক আগেই রেকর্ড দরে মেসেজ পাঠানোর অ্যাপস ‘হোয়্যাটসঅ্যাপ’ কিনেছে ফেসবুক। কাইজারও এখন ব্যস্ত একটি বন্ধুত্ব বাড়ানোর অ্যাপস তৈরিতে। ম্যানেজমেন্ট বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কৈশোর কিংবা তারুণ্যের গোড়াতেই উদ্যোগপতি হওয়ার বাসনা কিন্তু দেশের নবীন প্রজন্মের মধ্যে বেড়েছে। নামী ম্যানেজমেন্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে পাশ করলে মোটা মাইনের চাকরি বাঁধা, বছর দশেক আগেও এমনটাই ভাবতেন সবাই। কিন্তু ম্যানেজমেন্ট ডিগ্রি যে নেহাত চাকরি জোটানোর জন্য নয়, গত কয়েক বছরে তা ধীরে ধীরে স্পষ্ট হচ্ছে। এখন ম্যানেজমেন্ট পড়ুয়ারা অনেকেই ব্যবসার পথে পা বাড়ান।

মানবসম্পদ বিশেষজ্ঞ বীর্যেন্দু গুপ্তের কথায়, “এটা একটি ইতিবাচক দিক। নবীন প্রজন্ম এখন অনেক বেশি ঝুঁকি নিতে প্রস্তুত।” অনেকে মনে করেন, মার্ক জুকেরবার্গ কিংবা গুগলের অন্যতম সৃষ্টিকর্তা ল্যারি পেজের মতো রোল মডেলদের দেখেই এই মনোভাব। যদিও অনেকে আবার এই মত মেনে নিতে নারাজ। “অত দূরে যাবে কেন! নিজের কলেজের সিনিয়রদের দেখেও অনুপ্রাণিত হতে পারে।”মন্তব্য বীর্যেন্দুবাবুর। গুগল-ইন্ডিয়ার জনসংযোগ প্রধান পরমা রায়চৌধুরী মনে করেন, অনলাইন ব্যবসা করার পিছনে মূল অনুপ্রেরণা ইন্টারনেট-প্রযুক্তির উন্নতি। তাঁর কথায়, “অনলাইনে ব্যবসা করার জন্য জমি কিংবা প্রচুর শ্রমিক লাগে না। তাই ছোট-ছোট ব্যবসা দেশ জুড়ে বাড়ছে।”

এই কথার সূত্র ধরেই বলা যায়, ইন্টারনেট দুনিয়ায় চয়ন-কাইজারের সংখ্যাটা কিন্তু কম নয়। অনেকেই নিজের নানা ধরনের সাইট খোলায় ব্যস্ত। কিন্তু নেট-দুনিয়ার এই নতুন প্রজন্মের অনেকেই বয়সের ঝোঁকে বিপত্তি বাঁধিয়ে বসেন। যেমন, মঙ্গলবারই প্রধানমন্ত্রীর দফতরের টুইটার অ্যাকাউন্ট আধ ঘণ্টার জন্য নিজের দখলে নিয়েছিলেন কাইজার। পরে অবশ্য ভুল বুঝতে পেরে ক্ষমাও চেয়েছেন।

চয়নও জানিয়েছে, সে এক বার খোদ মার্ক জুকেরবার্গের ফেসবুক-পেজ ‘ঘেঁটে’ দেখতে গিয়েছিল। কিন্তু সফল হয়নি। নবীন প্রজন্মের বক্তব্য, ক্লাসের পড়া বাস্তবে মাটিতে কতটা কাজে লাগে, তা দেখার জন্যই অন্যের সাইট-ফেসবুক-ট্যুইটার হ্যাক করা। কারও আবার বক্তব্য, নিজের সুরক্ষা-কবচ কী ভাবে জোরদার করা যায়, সেটা শিখতেও এটা কাজে লাগে।

যদিও তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞদের একাংশ বলছেন, হ্যাকিং ভাল কাজ হতে পারে না। কারণ, বয়সের ঝোঁকে এই কাজ শুরু করলেও পরে অনেকেই অপরাধে যুক্ত হতে পারেন। “কোনও বাড়িতে তালা ভেঙে ঢোকাটাই অপরাধ। হ্যাকিংটাও তেমনই।”মন্তব্য এক তথ্যপ্রযুক্তি শিক্ষকের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

social network website security
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE