নুন আনতে পান্তা ফুরোয়— তিন মেয়ে, দুই ছেলেকে নিয়ে সংসার চালাতে হিমশিম জামবেড়িয়ার রাবেয়া বেগম। তবু স্বপ্ন দেখেন বড় ছেলে একদিন ডাক্তার হবে ঠিক। পড়াশোনা করে নিজের পায়ে দাঁড়াবে ছোট ছেলে, মেয়েরাও। দিনরাত এক করে তাই জরি বোনেন রাবেয়া। রঙিন শাড়ির উপর ঝলমলে কাজ— এক টুকরো আলো পড়লেই ঝিলিক দিয়ে ওঠে চারদিক। আশায় বাঁচেন রাবেয়া।
রাবেয়া বেগমের স্বামী ফৈজুল রহমান চটকলে শ্রমিকের কাজ করতেন। সামান্য রোজগারেও টেনে নিয়ে চলতেন সংসার। স্বপ্ন ছিল তাঁরও— ছেলেমেয়েরা পড়াশোনা করবে, করবেই। তাই আল আমিন মিশনে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন সকলকে। কিন্তু স্বপ্ন পূরণ হওয়ার আগেই এক দুর্ঘটনায় তাঁর মৃত্যু হয়। বছর চারেক আগে ফৈজুলের যখন মৃত্যু হয় বড় ছেলে হাসান তখনও দশম শ্রেণি পাশ করেনি। সেই ছেলে এখন শেখ মহম্মদ হাসানুর রহমান— সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্র।
‘‘ছেলের অনেক দিনের ইচ্ছে ছিল ডাক্তারি পড়বে। বছর দেড়েক আগে স্বামীর জমানো সব টাকা খরচ করে বড় মেয়ের বিয়ে দিয়েছি। তারপরই ছেলে জয়েন্টে ভাল ফল করল,’’ বলেন রাবেয়া। ডাক্তারি পড়ার খরচ অনেক। তার উপর রয়েছে কলকাতার হস্টেলে থাকা-খাওয়ার খরচ। সে সব জোগাড় হবে কোথা থেকে? তাই নাওয়া-খাওয়া ভুলে কাজ করেন রাবেয়া। মায়ের উপর ভরসা রেখে একাদশ শ্রেণির পড়াশোনা চালাচ্ছে মেজো রুকসনা ইয়াসমিন, ছোট ছেলে তৃতীয় শ্রেণির হোসাইন রহমান আর নার্সারির পড়ুয়া ছোট মেয়ে হাকিমা ইয়াসমিন।